
অনুচ্ছেদ সমূহ
রসুন এর ঔষধিঃ রসুন হল পিঁয়াজ জাতীয় একটি ঝাঁঝালো সবজি যা রান্নার মশলা ও ভেষজ ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। গাছ একটি সপুষ্পক একবীজপত্রী লিলি শ্রেণীর বহুবর্ষজীবী গুল্ম। বৈজ্ঞানিক নাম অ্যালিয়াম স্যাটিভাম (Allium sativum)।
রসুন
মানব দেহের বিভিন্ন উপকারে রসুন একান্ত প্রয়োজনীয়। রসুন দুই প্রকার, (১) বহুকোষী রসুন, যার বোটানিক্যাল নাম Allium Sativum linn. (২) এককোষী রসুন। এর বোটানিক্যাল নাম Allium Ampeloprasum linn. এককোষী রসুনের উপকার বেশী। রসুনে আছে ভিটামিন A.B.C.D. ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, আয়োডিন, এবং উগ্র শক্তির জীবানুনাশক ৬ টি শক্তি। কয়েক বছর পূর্বে রসুন কেন্দ্র করে একটি সিম্পসিয়াম বা আলোচনা চক্রের আয়োজন করা হয়েছিল। ক্যালিফোর্নিয়া শহরে। এই আলোচনাচক্রে বিশ্বের রসুন বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীরা উপস্থিত ছিলেন। এক এক দেশে এক একটি বিশেষ রোগের উপর তারা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। তাতে জানা যায়- ব্যহ্যপ্রয়ােগে সর্বপ্রকার (ফোড়ায়, বোলতা এবং বিছের কামড়ে রসুন প্রয়োগে ভালো ফল পাওয়া যায়। অভ্যন্তরীণ প্রয়োগের— ধমনীর সংকোচন (arteriosclerosis) কোষ্ঠবদ্ধতায়, হাতে পায়ে খিল ধরা, ইনফ্লুয়েঞ্জায়, সর্দি কাশির প্রবণতায়, হাঁপানিতে, গলা বুক জ্বালায়, অগ্নিমান্দ্য, অন্ত্র প্রদাহ, পিত্তথলির পাথর, হাই ব্লাড প্রেসারে, অর্শ রোগে, যকৃত দোষে, স্নায়বিক দুর্বলতার, গলক্ষতে, ফেরিনজাইটিস, ডিপথিরিয়া, নানাপ্রকার চর্মরোগে, ক্ষয়রোগে, গলগন্ড, ক্রিমিতে, হুপিং কাশিতে, জমিতে, বুকধড়ফড়ানিতে প্রয়োগ করে ভালো ফল পাওয়া গেছে।
রসুন খাবার পদ্ধতি
(১) ঘিয়ে বা তেলে ভেজে শাক কিংবা তরকারীর সাথে খাওয়া যায়। 2) আটা বা ময়দায় সাথে রসুন বেটে রুটি বা লুচি করে খাওয়া যায়। (৩) তোর সাথে রসুন বাটা খাওয়া যায়। (৪) গরম দুধের সাথে রসুন বাটা খাওয়া য। (৫) কাঁচা রসুন বা রসুন সিদ্ধ করে আহারের প্রথম গ্রাসের সাথে। ওয়া যায়।
রসুনের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়
রসুনের খোসা ছাড়িয়ে টুকরো করে টক দইয়ের মধ্যে ডুবিয়ে রেখে এদিন খাবার আগে জলে ধুয়ে নিয়ে খেলে গন্ধ লাগবে না ও খাদ্যগুণ জয় থাকবে।
বিভিন্ন রোগ সারাতে রসুনের ব্যবহার
(১) বাতের বেদনায়– প্রতিদিন ১ কোয়া রসুন গরম ভাতের সঙ্গে বয়ে খেতে হবে। এছাড়া ৫০ গ্রাম সরষের তেলে ১০ কোয়া রসুন ভেজে ই তেল দিনে দুবার করে মালিশ করতে হবে আক্রান্ত যায়গায়।
(২) অকাল বার্ধক্য রোধ- প্রতিদিন ২ কোয়া করে রসুন ভেজে বা ট তরকারীর সাথে বা আটা, ময়দা, ছাতুর সাথে মিশিয়ে খেতে হবে।
(৩) যৌন শক্তি ধরে রাখার জন্য- প্রতিদিন ২ চামচ আমলকির রস ২ কোয়া রসুন বাটা মিশিয়ে খেতে হবে অন্তত দুমাস। এই ব্যবস্থা স্ত্রী ও ষ উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
৪) পেটের বায়ুতে— ১ কাপ ঠান্ডা জলে ৩/৪ ফোটা রসুনের রস যে প্রতিদিন সকালে খেতে হবে।
৫) শরীর ক্ষয়ে- এককাপ দুধে ২ কোয়া রসুন সিদ্ধ করে সেই দুধ = হবে প্রতিদিন। এতে ক্ষয় বন্ধ হয়ে শরীরের শক্তি ও ওজন বৃদ্ধি হয়।
৬) শুক্রতারল্যে— এককাপ গরম দুধের সাথে ২ কোয়া রসুন বাটা শুক্রতারল্য দূর হয়। অস্থির বল বাড়ে। অস্থির ক্ষয় বন্ধ হয়।
৭) পুরনো ঘা বা ক্ষতে- ২/৩ কোয়া রসুন বাটা ক্ষতে লাগাতে হবে রি কয়েকদিন।
(৮) গরু মহিষের ঘা এবং ঘা-এর পাকায়— ৫/৬ কোয়া রসুন বেটে ক্ষতে লাগাতে হবে পর পর কয়েকদিন।। |
(৯) পায়ের তলায় গুলাে বা কড়াতে রসুনের ১ টি কোয়া আধখান। করে কেটে করার ওপর লাগিয়ে লিউকোপ্লাস্ট দিয়ে আটকে দিতে হবে। এভাবে পর পর কয়েকদিন করলে কড়া সেরে যাবে।। |
(১০) পুরাতন জ্বরে— জ্বর বাড়ছে কমছে কিন্তু ছাড়ছেনা এরকম অবস্থায় ৪/৫ ফোটা রসুনের রস ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে রােজ একবার করে পরপর তিনদিন।
(১১) মাথা ধরা— বায়ুর জন্য মাথা ধরলে ১/২ ফোটা রসুনের রস নস্যির মতে নাকে টানলে মাথা ধরা সেরে যাবে।
(১২) মদ খাওয়ার জন্য পেট ব্যথায়— মদ খাওয়ার জন্য পেট ব্যথা হলে এবং মদ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে না পারলে মদের সঙ্গে ২ কোয়া রসুন চিবিয়ে খেতে হবে।
(১৩) টি. বি.প্রতিরােধে প্রতিদিন ১ কোয়া করে রসুন বাটা গরমদুধে মিশিয়ে খেলে টি, বি, হওয়ার ভয় থাকে না।
(১৪) কুকুর কামড়ালে—প্রতিদিন ৫/৬ ফোটা রসুনের রস গরম দুধের সঙ্গে খেলে উপকার হয়। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন আছে।
(১৫) রুগ্ন শিশুর জন্য শরীরে কোন রোগ নেই। অনেক ভালো ভালাে খাবার খাচ্ছে কিন্তু স্বাস্থ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না এরকম অবস্থায়। আধা কোয়া রসুন বেটে টাটকা ঘাটালের সাথে খেতে হবে প্রতিদিন ১ বার করে।
(১৬) এমফাইসিমা এক ধরনের হাঁপানি রোগ যাতে রোগীর নিঃশ্বাস ছাড়তে কষ্ট হয়। ৪/৫ ফোটা রসুনের রস জ্বাল দেওয়া ঠান্ডা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে রোজ একবার করে খেলে উপকার হয়। |
(১৭) আর্টারিও স্কেলেরােসিস বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুক্ষ্ম ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা কমে যাওয়ার জন্য রক্তের চাপ বা প্রেসার বৃদ্ধি পায়, এই অবস্থায় রােজ ১ কোয়া করে রসুন যে কোন খাবারের সঙ্গে চিবিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
One Comment