কান্তজীউ মন্দির এর জানা অজানা

কান্তজীউ মন্দির বা কান্তজির মন্দির বা কান্তনগর মন্দির বাংলাদেশের দিনাজপুরে অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির। এটি নবরত্ন মন্দির নামেও পরিচিত কারণ তিনতলাবিশিষ্ট এই মন্দিরের নয়টি চূড়া বা রত্ন ছিলো। কান্তজীউ মন্দির ১৮ শতকে নির্মিত একটি চমৎকার ধর্মীয় স্থাপনা। মন্দিরটি হিন্দু ধর্মের কান্ত বা কৃষ্ণের মন্দির হিসেবে পরিচিত যা অতিলৌকিক রাধা-কৃষ্ণের ধর্মীয় প্রথা হিসেবে বাংলায় প্রচলিত। ধারণা করা হয়, মহারাজা সুমিত ধর শান্ত এখানেই জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।[১] ২০১৭ সালের কলকাতা বইমেলায় এই মন্দিরের আদলে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন করা হয়। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে এই মন্দির ধ্বংস হওয়ার আগে রাবণেষু, জন হেনরি এর ১৮৭১ সালে তোলা ছবিতে মন্দিরের নয়টি রত্ন বর্তমান।

কান্তজীউ মন্দির ইতিহাস
মন্দিরের উত্তর দিকের ভিত্তিবেদীর শিলালিপি থেকে জানা যায়, তৎকালীন দিনাজপুরের মহারাজা জমিদার প্রাণনাথ রায় তার শেষ বয়সে মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ১৭২২ খ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যুর পরে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার পোষ্যপুত্র মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে মন্দিরটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। শুরুতে মন্দিরের চূড়ার উচ্চতা ছিলো ৭০ ফুট। ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে মন্দিরটি ভূমিকম্পের কবলে পড়লে এর চূড়াগুলো ভেঙে যায়। মহারাজা গিরিজানাথ মন্দিরের ব্যাপক সংস্কার করলেও মন্দিরের চূড়াগুলো আর সংস্কার করা হয়নি। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মহারাজা গিরিজানাথ বাহাদুর ধ্বংস হয়ে যাওয়া নয়টি শিখর বাদে মন্দিরটির ব্যাপক পুনর্গঠন করেছিলেন। ধারণা করা হয়, গঙারামপুরের (দিনাজপুর) নিকট বাননগরের প্রাচীর ধ্বংসাবশেষ থেকে নির্মাণ উপকরণ এনে এটি তৈরি করা হয়েছিল। প্রচলিত ধারণা মতে মহারাজ প্রাণনাথ ১৭০৪ সালে এ মন্দিরটি তৈরি করে এখানে কৃষ্ণের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি সাময়িকভাবে বৃন্দাবন থেকে আনা হয়েছিল। নবরত্ন মন্দির তৈরি সমাপ্ত হলে এ মূর্তিটি এখানে স্থানান্তর করা হয়। এটি এখন একটি পরিত্যক্ত দেবালয়। এ মন্দিরটি ছিল ১৬ পার্শ্ব সম্বলিত সৌধ এবং এর উচ্চতা ছিল ৪০ ফুট এবং এর দক্ষিণ দিকে প্রবেশ পথে ছিল বহু খাঁজবিশিষ্ট খিলান।
কীভাবে যাবেন কান্তজীউ মন্দির
দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার (১২ মাইল) উত্তরে এবং কাহারোল উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সুন্দরপুর ইউনিয়নে, দিনাজপুর-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পশ্চিমে ঢেঁপা নদীর তীরে এক শান্ত নিভৃতগ্রাম কান্তনগরে অবস্থিত এই প্রাচীন মন্দির।