বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা

অনুচ্ছেদ সমূহ
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য (Natural beauty of Bangladesh) বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আশীর্বাদ রয়েছে যা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়। সিলেটের সবুজ পাহাড় থেকে শুরু করে কক্সবাজারের বালুকাময় সমুদ্র সৈকত এবং সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বন থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের স্ফটিক-স্বচ্ছ নদী পর্যন্ত, এমন অনেক মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য রয়েছে যা সারা বিশ্বের পর্যটকদের আকর্ষণ করে। [বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা]
বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হল সুন্দরবন, যা বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। এটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কুমির, দাগযুক্ত হরিণ, বানর এবং অন্যান্য অনেক প্রজাতির বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। দর্শনার্থীরা ঘন বন অন্বেষণ করতে এবং এটিকে বাড়ি বলে এমন কিছু অনন্য প্রাণী দেখতে সরু খাঁড়ি এবং জলপথের মাধ্যমে নৌকা ভ্রমণ করতে পারেন। [বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা]
প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য আরেকটি জনপ্রিয় গন্তব্য হল কক্সবাজার, যা বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত নিয়ে গর্ব করে। সোনালি বালি বঙ্গোপসাগর বরাবর মাইলের পর মাইল প্রসারিত এবং সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় সমুদ্রের একটি মনোরম দৃশ্য প্রদান করে। এছাড়াও দর্শনার্থীরা সমুদ্রে ডুব দিতে পারেন বা কাছাকাছি বাজারগুলিতে স্থানীয় সামুদ্রিক খাবার উপভোগ করতে পারেন। [বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা]
সিলেট ও বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকাও তাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। সবুজ চা বাগান, জলপ্রপাত এবং ঘুরতে থাকা রাস্তাগুলি প্রকৃতির মাঝে প্রশান্তি খোঁজার দর্শকদের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ পশ্চাদপসরণ অফার করে। সিলেটের মাধবপুর লেক এবং রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টও তাদের অনন্য ইকোসিস্টেম এবং মনোরম দৃশ্যের জন্য জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। [বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা]
সামগ্রিকভাবে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অনেক কিছু দেওয়ার আছে, এবং আরও অনেক লুকানো রত্ন পর্যটকদের দ্বারা অন্বেষণের অপেক্ষায় রয়েছে যারা পিটানো পথে ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
ভূমিকা:
সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশকে প্রকৃতির লীলানিকেতন বলা যায়। অপূর্ব সৌন্দর্যে, শস্য-সম্পদে ও নানা প্রকার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ভরা এইরূপ দেশ পৃথিবীতে বিরল। ফুলে-ফলে ও সৌন্দর্যে ভরা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে মুগ্ধ নিয়ে কবি গেয়েছেন-
“কোন্ বনেতে জানিনে ফুল
গন্ধে এমন করে আকুল ।
কোন্ গগনে উঠিবে চাঁদ এমন হাসি হেসে,
আঁখি মেলে তোমার আলো
দেখে আমার চোখ জুড়ালো।
ঐ আলোকেই নয়ন রেখে মুদবো নয়ন শেষে।”
সীমা ও ভূ-প্রকৃতি :
বাংলাদেশ একটি নবগঠিত দেশ। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। এর উত্তর দিকে পশ্চিম বঙ্গের বনময় জলপাইগুড়ি ও কুচবিহার জেলা, উত্তর-পূর্বদিকে, আসামের পার্বত্য অঞ্চলও বৈচিত্র্যময় ব্রহ্মদেশ, দক্ষিণে চির-প্রবহমান বঙ্গোপসাগর, পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের সমভূমি। [বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা]
বহু নদ-নদী এর বুকের উপর দিয়ে প্রবাহিত। ভূ-প্রকৃতি অনুসারে একে দুই অঞ্চলে বিভক্ত করা যায়- পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের উচ্চভূমি ও পলিমাটি গঠিত সমভূমি। পার্বত্য চট্টগ্রামের শৈলশ্রেণী, জলপ্রপাত ও কানন কান্তার একে অপূর্ব সৌন্দর্য দান করেছে। [বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা]
গ্রাম্য দৃশ্য :
আমাদের বাংলাদেশ গ্রামবহুল এক দেশ। এর এক একটি গ্রাম যেন প্রকৃতির লীলানিকেতন। যেদিকে দৃষ্টিপাত করি না কেন, দেখা যায় সবুজ মাঠ, ফল-ফুলময় বৃক্ষ, তৃণগুলা শোভিত অরণ্যানীর মনোরম শোভা, আর শস্য-শ্যামল ক্ষেত্র। এই অপূর্ব সৌন্দর্য দর্শন করে আমরা মুগ্ধ হই। কোথাও প্রাকৃতিক সবুজ অবগুণ্ঠনের মধ্য থেকে পর শস্যের স্বর্ণ-সুন্দর মুখখানি বের হচ্ছে, কোথাও দীর্ঘ বটবৃক্ষ মৌন প্রান্তরের ভিতর ঊর্ধ্ববাহ হয়ে নির্বাক তাপসের ন্যায় দারিয়ে সুশীতল ছায়া প্রদানে প্রাণ শীতল করছে আর নানাদিকে শস্য-শ্যামল প্রান্তর নয়নুমন তৃপ্ত করছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ হয়ে গেয়েছিলেন-
“অবারিত মাঠ গগন ললাট চুমে তব পদধূলি
ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলি।
পল্লবঘন আম্র কানন রাখালের খেলা গেহ
স্তব্ধ অতল দীঘি কালো জল নিশীথ শীতল স্নেহ। “
নদ-নদীর দৃশ্য :
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এদেশের ন্যায় এত নদ-নদী পৃথিবীর খুব অল্প দেশেই আছে। মেঘনা, পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, কর্ণফুলী, শীতলক্ষ্যা প্রভৃতি নদী বাংলাদেশের বুকের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এর সমভূমি এলাকাকে শস্য শ্যামল করেছে এবং নৌকাপথে যাতায়াতের সুবিধা করে দিয়েছে। এই সকল নদীর দৃশ্য বড় মনোরম। নদীপথে যখন অসংখ্য সারি সারি নৌকা পাল তুলে চলতে থাকে এবং বাষ্পীয় পোতসমূহ যখন ধূম্র উদ্গীরণ করতে করতে ধাবিত হয়, তখন নদী তরঙ্গায়িত হয়ে এক অপূর্ব শোভা ধারণ করে। বাংলাদেশে পদ্মা নদীর শোভা দর্শনে আনন্দিত হয়ে একে লক্ষ্য করে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন
“কত গ্রাম কত মাঠ কত ঝাউ ঝাড়
কত বালুচর কত ভেঙ্গে পড়া পাড়
পার হ’য়ে এই ঠাই আসিবে যখন
জেগে উঠিল না কেন, গভীর চেতন?”
বিভিন্ন ঋতুতে দৃশ্য :
বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য এখানকার নৈসর্গিক দৃশ্যের অনেক পরিবর্তন ঘটায়। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ হেমন্ত, শীত ও বসন্ত এই ছয়টি ঋতু নিরন্তর চক্রাকারে আবর্তিত হয়ে চলে। গ্রীষ্মের প্রখর সূর্যতাপে তরুলতা, মাঠ-ঘাট দণ্ডপ্রায় হয়ে উঠে। এই সময়ে বাগানে আম, কাঁঠাল, লিচু প্রভৃতি ফল পাকতে শুরু করে।
বর্ষার আগমনে খাল-বিল, নদী-নালা পানিতে থৈ থৈ করে। প্রবল জলোচ্ছ্বাস পাট ক্ষেত, ধানক্ষেত, মাঠ-ঘাট পূর্ণ করিয়া তোলে। এই সময়ে আকাশ হইতে বিপুল বর্ষণধারা নামে, কুহুকেকার আনন্দধ্বনি জাগে। বনে বনে যূথী, কেয়া ও কদম্ব ফুলের স্নিগ্ধ সৌরভ ভাসিয়া বেড়ায়।
বর্ষার পর শরৎ তাহর শুভ্র জ্যোৎঙ্গা নিয়ে আগমন করে। তখন জলহারা সাদা মেঘ আকাশে ভেসে বেড়ায়। এই সময়ে শেফালিকা, কামিনী প্রভৃতি ফুল ফুটে সৌন্দর্য সৃষ্টি করে।
অতঃপর হেমন্তের আগমনে শস্য ক্ষেত্র ধীরে ধীরে হরিদ্রাবর্ণ ধারণ করে, তখন প্রকৃতি অপরূপ শোভায় সজ্জিত হয়। এই সময় রাত্রিতে খুব শিশিরপাত হয়। প্রাতঃকালে শিশিরস্নাত তৃণগুলির উপর সূর্যরশ্মি পড়লে এক মনোহর দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
শীতের আগমনে সমস্ত গাছপালা শুষ্ক, বিবর্ণ ও শ্রীহীন হয়ে যায়। শ্যামল প্রকৃতি যেন সহসা রুক্ষমূর্তি ধারণ করে। বসন্তকালে বৃক্ষাদি, তরুলতা নব পুষ্প-পল্লবে সুশোভিত হয়। এই সময়ে নানারকম ফুল থেকে মধুমক্ষিকা গুন গুন রবে মধু আহরণ করে। কোকিলের সুমিষ্ট কাকলি ও নানাবিধ মুকুলের মদির-সুবাসে মন-প্রাণ চঞ্চল হয়ে ওঠে। [বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা]