নদীর ভাঙন ও নীড়হারা মানুষ প্রবন্ধ রচনা

নদীর ভাঙন ও নীড়হারা মানুষ: এই পোষ্টে নদীর ভাঙন ও নীড়হারা মানুষ সম্পর্কে প্রবন্ধ রচনা শেয়ার করা হয়েছে। সকল শিক্ষার্থী বন্ধুদের নদীর ভাঙন ও নীড়হারা মানুষ প্রবন্ধ রচনাটি কাজে আসবে। এই প্রবন্ধ রচনার অবলম্বনে যে সকল প্রবন্ধ রচনা লেখা যাবে তা হল –
অনুরূপ প্রবন্ধ ১. জনজীবনে গঙ্গা-পদ্মার ভাঙন, ২. জনজীবনে নদীভাঙ্গনের প্রভাব, ৩, ভাঙছে তাঁর ভাঙছে নীড়।
নদীর ভাঙন ও নীড়হারা মানুষ
রচনা-সংকেত : ভূমিকা—নদীর ভাঙন অঞ্চল-ভাওনের প্রভাব-ভান রােধের আজিও প্রশাসনিক উদ্যো–ভাঙন ঠেকানাের প্রচেষ্টা-উপসংহার।
ভূমিকা
গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র ও তাদের উপনদী ও শাখানদী বাহিত পলিমাটি গঠিত ভূমি বঙ্গভূমি। বাংলা নরম পলিমাটির দেশ। সেজন্য এখানে নদীর ভাঙাগড়ার খেলা বড়াে বিচিত্র। এক তীর ভাঙে তাে আর এক তীর গড়ে। এক তীরের মানুষ যখন ঘর-বাড়ি, জমি-জায়গা সর্বস্ব হারিয়ে নীড়হারা, অপর তীরের জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ চরে তখন চাষের জমিজিরেত, সােনালি ফসলের সম্ভার, নতুন নীড় গড়ার স্বপ্ন। নদীর এই খেয়ালিপনার সঙ্গে নীড়হারা মানুষের ঠিকানা বদলায়। নতুন করে শুরু হয় বাঁচার লড়াই। মালদহ ও মুরশিদাবাদ জেলার, এমনকি নদিয়া বর্ধমানের পদ্মা ও গঙ্গার বিস্তীর্ণ তীরবর্তী অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষের ভাগ্যের ঠিকুজি হল এই।
নদীর ভাঙ্গন অঞ্চল
ভারত তখনও পরাধীন, তখন থেকে ভাঙছে মালদহ ও মুরশিদাবাদের গঙ্গা ও পদ্মার তীর। ওখানকার বয়ােবৃদ্ধদের মুখে শােনা যায় ওই ভাঙন চলছে চুয়াত্তর বছর ধরে। মালদহ জেলার মানিকচকের ১৯টি মৌজা ও কালিয়াচক ২৯ টি মৌজা ইতিমধ্যে গঙ্গা গর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে পশ্চিমবঙ্গে গত চুয়াত্তর বছরে মালদহ ও মুরশিদাবাদ জেলায় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে সর্বসাকুল্যে ৬৭ টি মৌজা। সরকারিভাবে নদীর ভাঙন রােধের চেষ্টা চললেও মালদহ ও মুরশিদাবাদের গঙ্গা ও পদ্মার ভাঙন ঘটে ফি বছর প্রতি বর্ষায়। মালদহের পঞ্চনন্দপুর ও খাসখােলের ভাঙনের তীব্রতা কিছুটা হ্রাস পেলে হরিশচন্দ্রপুর, রাতুয়া, ইংরেজবাজার ও কালিয়াচকের গঙ্গাতীরবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভাঙনের তীব্রতা ভয়াবহ। বর্ষা এলেই নদীপারের ঘরে ঘরে ছড়ায় নীড়হারানাের আতঙ্ক, ঠিকানা বদলের আয়ােজন। মুরশিদাবাদের ফারাক্কা থেকে লালগোলা পর্যন্ত পদ্মার তীরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ভাঙনের ত্রাস ও ইতিহাস প্রায় একইরকম। তা ছাড়া জলঙ্গির টলটলি, পরাশপুর, দয়ারামপুর প্রভৃতি মৌজাও বর্ষায় ভাঙতে ভাঙতে নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে নদীগর্ভে। পরাশপুরের অস্তিত্ব তাে মুছেই গেছে। সম্প্রতি বর্ধমান জেলার কাটোয়ার অন্তর্গত অগ্রনদ্বীপের গঙ্গাতীরবর্তী রাজ্য সড়কের অনেকখানি ভাঙনের মুখােমুখি, কিছুটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম। গঙ্গা ও পদ্মার ওই ভাঙনের ফলে বহু মানুষ জমিজায়গা, ঘরবাড়ি ও রুজিরােজগার হারিয়ে পথে বসেছে। উদ্বাস্তু মানুষের মতাে মাথাগোঁজার ঠাইটুকুর জন্য কী দুঃসহ দুঃখ-কষ্টই না ভােগ করতে হচ্ছে তাদের।
ভাঙনের প্রভাব
অনেকে পলিথিনের ছাবড়া ফেলে তাতেই স্ত্রী-পুত্র পরিবার নিয়ে দিন কাটাচ্ছে। অনেক চাষিবাসী মধ্যবিত্ত মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে দিনমজুরের বৃত্তি নিতে বাধ্য হয়েছে। কারাে কারাে কাঁধে উঠেছে। ভিক্ষার ঝুলি। নদী একসময় তাদের যেমন হাত ভরে দিয়েছে, নদীর তেমনি তাদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে নিঃস্ব রিক্ত করে পথের ভিখারি করেছে। নদীর ভাঙনের খেয়ালিপনায় নীড়হারা মানুষগুলাের ঠিকানা বদলাচ্ছে। বদলাচ্ছে জীবিকা।
ভাঙন রােধের আর্জি ও প্রশাসনিক উদ্যোগ
গঙ্গা ও পদ্মার ওই ভাঙন রােধের জন্য নদীতীরবর্তী মানুষের দাবি বহুদিনের। সরকারের দরবারে আর্জির পর আর্জি, জনপ্রতিনিধিদের কাছে আবেদন-নিবেদন, প্রশাসনের কাছে বিক্ষোভ ও মিছিল, কী না করেছে ওই বিপন্ন ভাগ্যহত মানুষ গুলো। ভাঙন রােধের আশ্বাস যে মেলেনি তা নয়। ভােটের মরশুমে প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে গেছে গঙ্গা-পদ্মার প্রবাহকে হার মানিয়ে। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য ও অর্থবরাদ্দও মিলেছে সময় বিশেষে। প্রশাসনিক উদ্যোগে হঠাৎ হঠাৎ কাজের তৎপরতা দেখে বিপন্ন মানুষগুলাে জমিজিরেত ঘর-বাড়ি রক্ষার খােয়াব দেখেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য মানুষগুলাের পেছন ছাড়েনি। দানবীয় গ্রাসে পদ্মা ও গঙ্গা গ্রামের পর গ্রাম গ্রাস করে সব আশা আকাঙ্ক্ষা আর স্বপ্ন মুছে দিয়েছে ও দিচ্ছে।
ভাঙন ঠেকানাের প্রচেষ্টা
ভাঙন রােধে সম্প্রতি কোটি কোটি টাকার প্রকল্প রূপায়ণের কাজ চলছে। ভাঙন মেরামতের কাজে সেচ দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ারদের পরিকল্পনা ও নির্দেশ মতাে বােলডার ফেলে বাধের কাজ চলছে। তবু নাকি বর্ষা এলেই ভাঙন ঠেকানাে সম্ভব হচ্ছে না। অবশ্য এ ব্যাপারে ভাঙন তীরবর্তী মানুষের অভিজ্ঞতা নাকি বিষতিক্ত। খবরে প্রকাশ অসাধু ঠিকাদারদের গাফিলতি, মাফিয়াদের কালো হাতের থাবা কাজের পেছনে নাকি বড়ােবেশি সক্রিয়। সুতরাং বিপন্ন গ্রামের মানুষ যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরে।
উপসংহার
অভিযােগের সত্যাসত্যের বিচার র্যাদের করার, তাঁরা করুন। সেই সঙ্গে যারা সর্বস্ব খুইয়ে দিশেহারা, যাদের পথ হয়েছে ঠিকানা, সেই দুঃস্থ নিরন্ন মানুষগুলাের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হােক। ভাঙন এগােতে এগােতে যাদের শিয়রে হাজির, প্রতি মুহূর্তে সর্বস্ব হারানাের দুঃস্বপ্নে রাতের ঘুম গেছে হারিয়ে, যাতে আর তাদের দুর্ভাগ্যের বলি না হতে হয়, সেজন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে নদীর ভাঙন রােধের যথােপযুক্ত ব্যবস্থা করা হােক সামান্যতম কালক্ষেপ না করে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিকের এ আশা-আকাঙ্ক্ষা ও দাবি তা অন্যায্য নয়। সোর্স- ইন্টারনেট
এটিও পড়ুন – প্রণব মুখোপাধ্যায় এর বর্ণময় অধ্যায়