জীবনীজানা অজানাপ্রবন্ধ রচনা

প্রণব মুখোপাধ্যায় এর বর্ণময় অধ্যায়

প্রণব মুখোপাধ্যায়ঃ প্রণব কুমার মুখোপাধ্যায় ( প্রণব মুখার্জি] ): (১১ ডিসেম্বর ১৯৩৫ — ৩১ আগস্ট ২০২০) ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি (জুলাই, ২০১২-এ কার্যভার গ্রহণকারী) ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক কর্মজীবন ছয় দশকব্যাপী। তিনি ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা। বিভিন্ন সময়ে ভারত সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছিলেন। ২০১২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে প্রণব মুখোপাধ্যায় ছিলেন ভারতের অর্থমন্ত্রী ও কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় সমস্যা-সমাধানকারী নেতা। ভারতের ১৩ তম রাষ্ট্রপতি ৩১ আগস্ট ২০২০ জীবন যুদ্ধে হেরে যান।

প্রণব মুখোপাধ্যায় এর বর্ণময় অধ্যায়

জন্ম : ১৯৩৫ সালের ১১ ডিসেম্বর (মিরাট গ্রাম, বীরভূম জেলা, বাংলা প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত) (এখন পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)।

মৃত্যু : ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট (ভারতীয় সেনা হাসপাতাল, নয়াদিল্লি)।

  •  বাংলা কংগ্রেস’এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন।
  • ১৯৬৯ সালের জুলাইয়ে বাংলা কংগ্রেসের টিকিটে রাজ্যসভার (ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ) সদস্য হন।
  • তারপরই, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’এ তাকে নিয়ােগ দিয়েছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ১৯৭৫, ১৯৮১, ১৯৯৩ ও ১৯৯৯ সালে আবার রাজ্যসভায় নির্বাচিত হন তিনি।
  • ১৯৭৩ সালে ইন্দিরা গান্ধীর মন্ত্রিসভায় ডেপুটি শিল্প উন্নয়ন মন্ত্রী ছিলেন তিনি।
  • ১৯৮০ সালে জাতীয় কংগ্রেসের রাজ্যসভার প্রধান নেতা হন।
  • ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ভারতের অর্থমন্ত্রী ছিলেন।
  • অর্থমন্ত্রী হিসাবে, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর হিসাবে ড.মনমোহন সিংয়ের নিযুক্তি পত্র সই করেছিলেন প্রণব।
  • এরপর ২০০৯ সালের ২৪ জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের ২৬ জুন পর্যন্ত দ্বিতীয়বারের জন্য ভারতের অর্থমন্ত্রী হন তিনি।
  • ১৯৮৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে, ‘রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস নামে নিজের দল প্রতিষ্ঠা করেন।
  • প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পামুলাপারথি ভেঙ্কটা নরসিমহা রাও (১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন) ১৯৯১ সালে তাকে পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান (১৯৯১ সালের ২৪ জুন থেকে ১৯৯৬ সালের ১৫ মে পর্যন্ত) পদে নিযুক্ত করেন। পরে, নরসিমহা সময়েই ১৯৯৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৯৬ সালের ১৬ মে পর্যন্ত বিদেশমন্ত্রকের দায়িত্বভার সামলান তিনি। এরপর ২০০৬ সালের ২৪ অক্টোবর থেকে ২০০৯ সালের ২২ মে পর্যন্ত, দ্বিতীয়বারের জন্য বিদেশমন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেন। এইসময় বিদেশমন্ত্রী থাকার সময় মার্কিন সরকারের সঙ্গে, ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অসামরিক পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন তিনি।
  • সোনিয়া গান্ধী কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সময়, ১৯৯৮ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সারা ভারত জাতীয় কংগ্রেস’এর জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন।
  • ২০০০ সালে ফের পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট হন (এর আগে ১৯৮৫ সালে এই পদে ছিলেন)। তারপর টানা ১০ বছর এই পদে বহাল ছিলেন।
  • পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গীপুর লোকসভা থেকে জিতে ২০০৪ সালে লোকসভার নেতা হন। ২০০৯ সালে ফের সেই কেন্দ্র থেকে জেতেন।
  • সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে, ২০১২ সালের ২৫ জুলাই ভারতের রাষ্ট্রপতি হন। ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর, নতুন রাষ্ট্রপতি হন রামনাথ কোবিন্দ।

প্রণব মুখোপাধ্যায় এর রচিত বইগুলো হল-

  • Beyond Survival ( বিয়ন্ড সারভাইভ্যাল ): Emerging Dimensions of Indian Economy’ ( এমার্জিং ডাইমেনশনস অফ ইন্ডিয়ান ইকোনমি ), ‘Off the Track (অফ দ্য ট্র্যাক):  A Few Comments on Current Affairs, ‘Challenges Before the Nation : Saga of Struggle and Sacrifice (Indian National Congress)(সাগা অফ স্ট্রাগল অ্যান্ড স্যাক্রিফাইস ), Thoughts and Reflections’, The Dramatic Decade : The Indira Gandhi Years’, The Turbulent Years: 1980 – 1996′, The Coalition Years : 1996 – 2012.’ মিডটার্ম পোল, চ্যালেঞ্জ বিফোর নেশন

এটিও পড়ুন – রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস মনে রাখার সহজ উপায় 100% কার্যকারী

আন্তর্জাতিক ভূমিকা

  • ২০০৮ সালের ১০ অক্টোবর, প্রণব মুখোপাধ্যায় (তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ও তখনকার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিজা রাইস, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ১২৩টি চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
  • আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক ও আফ্রিকান উন্নয়ন ব্যাঙ্কের বাের্ড অফ গভর্নরসের সদস্য ছিলেন।
  • ১৯৮৪ সালে প্রণব মুখোপাধ্যায় আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার’ ও বিশ্বব্যাংক’এর সঙ্গে যুক্ত ‘গ্রুপ অফ ২৪’এর সভাপতিত্ব করেন।
  • ১৯১৫ সালের মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সাউথ এশিয়ান অ্যাসােসিয়েশন ফর রিজিওনাল কো অপারেশন (SAARC) মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন তিনি।

প্রণব মুখোপাধ্যায় যেসব সম্মান পেয়েছেন

দেশর মধ্যে

  • ২০০৮ সালে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘পদ্ম বিভূষণ’ পান।
  • ২০১১ সালে ভারতে পান।

দেশের বাইরে ( বিদেশ)

  • ২০১৬ সালের জুনে, আইভরি কোস্টের সাম্মানিক নাগরিকত্ব পান।
  • ২০১৭ সালের ২৮ এপ্রিল, সাইপ্রাসের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ অসামরিক সম্মান অর্ডার অফ মাকারিওস পান।
  • ২০১১ সালে “উলভারহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়’ তাকে সাম্মানিক ডক্টর অফ লেটারস’ ডিগ্রি দেয়।
  • ২০১৩ সালের ৫ মার্চ, বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মান পান।
  • ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ, মরিশাস বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডক্টর অফ ল সম্মান দেয়।

অন্যান্য প্রাপ্তি

  •  যুক্তরাজ্য ভিত্তিক, ব্যবসা ও অর্থায়ন সংক্রান্ত মাসিকপত্রিকা ইউরােমানি’র সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৯৮৪ সালে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ৫ অর্থমন্ত্রীর মধ্যে অন্যতম এর শিরোপা পান।
  • ২০১০ সালে, যুক্তরাজ্য ভিত্তিক, ‘বিশ্ব ব্যাঙ্ক’ ও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল’এর দৈনিক সংবাদপত্র এনার্জি মার্কেট থেকে ‘এশিয়ার সেরা অর্থমন্ত্রীর শিরোপা দেয়।
  • ২০১০ সালের ডিসেম্বরে, যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মাসিক বাণিজ্য পত্রিকা ‘দ্য ব্যাঙ্কার তাকে বর্ষসেরা অর্থমন্ত্রীর শিরোপা দেয়।

এটিও পড়ুনঃ 100+ প্রণব মুখোপাধ্যায় এর বর্ণময় অধ্যায় সম্পর্কে জিকে  

সোর্স- ইন্টারনেট

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button