কৃষিকর্ম-শিক্ষা

টবে চাষ পদ্ধতি পদ্ম, বেলি, শিউলি, তরুলতা ইত্যাদি

টবে বিভিন্ন রকম ফুল চাষ

টবে চাষ পদ্ধতিঃ  ফুল সকলের প্রিয়।কমবেশি সকলেই ফুল চাষ করতে ভালো বাসেন। ফুল চাষ প্রেমীদের জন্য এই পোষ্টে কিছু জনপ্রিয় ফুল কিভাবে টবে চাষ করা যায়, তার সঠিক পদ্ধতি শেয়ার করছি। এ আগের পোষ্টে শীত কালীন মরশুমে টবে ফুল চাষ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল চাইলে দেখে নিতে পারেন।

Rose

টবে চাষ পদ্ধতি পদ্ম

পদ্ম কন্দ জাতীয় উদ্ভিদ। এর চাষও ঘরােয়া ভিত্তিতে সম্ভব। প্রয়ােজনীয় উপাদান সম্পর্কে এখানে বলা হল।

পাত্র—একটি এক ঘন মিটার আয়তনের সিমেন্ট নির্মিত চৌবাচ্চা পাত্র হিসাবে নেওয়া উচিত, যার গভীরতা হবে ৬০-৯০ সে. মি।

মাটিঃ কাদা মাটি।

সারঃ কম্পােস্ট।

সার মাটি তৈরী —১৫০০ গ্রাম স্টেরামিল, ১৫ কেজি করে কম্পােস্ট ও বালি এবং ৩৫ কেজি কাদামাটি নিয়ে সারমাটি তৈরী করুন।

চাষের নিয়ম—চৌবাচ্চাটির ২৫ সেমি গভীরতায় সারমাটি বসাতে হবে। মূল বসাতে হবে গ্রীষ্ম কাল বা বর্ষাকালে। এই সময় একমাস সারমাটি ভিজে রাখতে হবে। গাছের পাতা গজাতে শুরু করলে ধীরে ধীরে চৌবাচ্চাটা জল ঢেলে ভর্তি করে ফেলতে হবে।

সার প্রদান—কাদা মাটি, গুঁড়ােখােল, কাষ্টভম্ম, সুপার ফসফেট মিশিয়ে নিয়ে একটা করে ২৫০ গ্রাম ওজন বিশিষ্ট গােল্লা বানিয়ে রােদে শুকিয়ে নিয়ে চৌবাচ্চার প্রতি বর্গমিটার তিনটি করে পুঁতে দিতে হবে চাপান সার হিসাবে।

ছাঁটাই—বসন্তকাল নাগাদ চৌবাচ্চার মাটিতে মূল ভরে গেলে তার অর্ধেকটা কেটে ফেলে দিতে হবে। পাপড়ি ঝলে গেলে ফুলের বৃত্তকে ছেঁটে বাদ দিয়ে দিতে হবে।

টবে চাষ পদ্ধতি বেলি

বেলি বা বেলী ( Arabian jasmine) জেসমিন গণের এক প্রকারের সুগন্ধী সাদা ফুল। এই প্রজাতির গাছের উচ্চতা এক মিটার হতে পারে। এদের কচি ডাল রোমশ। পাতা একক, ডিম্বাকার, ৪-৮ সেমি লম্বা হয়। পাতা গাঢ়-সবুজ এবং মসৃণ। গ্রীষ্ম ও বর্ষায় একটি থোকায় কয়েকটি ফুল ফোটে। ফুলের আকার ও গড়ন অনুসারে কয়েকটি জাত আছে।

মার্চ-অক্টোবর ফুলের মরসুম।

মতুরিয়া, মােতিয়া, মাগরা প্রভৃতি এর প্রজাতি। এর চাষ টবে করতে গেলে প্রয়ােজন

টব -মােটামুটি বড় ধরণের টব।

মাটি—দো-আঁশ।

সার—গােবর সার।

ছাঁটাই—জানুয়ারী মাসের শেষে এমন ভাবে ছাঁটাই করতে হবে যাতে গাছে একটাও পাতা না থাকে। কীটনাশক—নতুন শাখা গজালে, ১৫ দিন ছাড়া ২/৩ বার মনােসিল দিন।

সার প্রদান—জানুয়ারীতে ছাঁটাই-এর সময় চাপান সার দেবেন।

টবে চাষ পদ্ধতি শিউলি

এটি ছােট থেকে মাঝারি ধরণের পর্ণ মােচী তরু। এর-টবে চাষের জন্য

প্রয়ােজন-

টব—বড়-আকৃতির টব।

মাটি—দো-আঁশ।

সারঃ গােবর সার।

চারা তৈরী—বীজ থেকে, কাটিং বা গুটি কলমের সাহায্যে চারা তৈরী করতে পারেন।

চাষের নিয়ম—বীজ পুঁতবেন এপ্রিলে, বর্ষাকালের শেষ নাগাদ তাহলে ফুল পাওয়া যেতে পারে। চারা ১০ সে. মি. মতাে হলে মাথা খুঁটে গুল্মের আকার দিতে হবে চারাকে।

ছাঁটাই—গাছের উচ্চতার অর্ধেকটা গ্রীষ্মকালে ছেঁটে দেবেন, ফুল ফোটা শেষ হলে মঞ্জুরী কেটে দেবেন। এক বছর অন্তর বর্ষাকালের সূত্রপাতে শিকড় ছেঁটে দিতে হবে।

সার প্রদানঃ গাছের উচ্চতার অর্ধেকটা ছাঁটাই করার পর চাপানি সার দেবেন। তরল সার দেবেন বর্ষাকাল থেকে হেমন্ত কাল পর্যন্ত প্রতিমাসে।

টবে চাষ পদ্ধতি তরুলতা

একটি বর্ষজীবি লতার নাম হল তরুলতা। এর টবে চাষের জন্য

প্রয়ােজন—

মাটি—দো-আঁশ মাটি।

সারঃ গােবর সার।

টব—বড় টব চাই।

অবলম্বন—টবের পাশে গ্রিল থাকলে সেটাই হবে সব থেকে ভাল অবলম্বন।

চারা তৈরী বীজ থেকে চারা তৈরী হয়।

টবে চাষ পদ্ধতি চন্দ্রমল্লিকা

চন্দ্র মল্লিকার সাধারণতঃ টবেই চাষ করা হয়, এর জন্য

প্রয়ােজনঃ

টব-৮ সে. মি. টব ও ২৫ সে. মির টব। (প্রদর্শনীর জন্য একটি ১৫  সে. মির টবও প্রয়ােজন)

মাটি—দো-আঁশ মাটি।

সারঃ গােবর সার ও রাসায়নিক সার ।

সার মাটি তৈরী—৪ কেজি জৈব সার (১ ভাগ পাতাসার), ২ ভাগ গােবর সার, ১০ কেজি ভারী দো-আঁশ মাটি, ৩ চা-চামচ গুঁড়াে খড়ি মাটি, ৬ মুঠো স্টেরামিল নিয়ে প্রথমে ১০ মি. মি. পরে ৫ মি. মি. চালুনিতে যথাক্রমে এক ও দুবার চেলে নিন। এবার এই মিশ্রণকে আর্দ্র অবস্থায় এক মাস রাখুন।

চারা তৈরী—এর শাখার মাথা থেকে ৮ সে. মি. লম্বা নরম কাটিং নিয়ে হরমােন পাউডার (Seradix BI) লাগিয়ে বালি ভর্তি টবে রাখুন। শিকড় গজিয়ে ১ সে. মি. মতাে হলে তা ৮ সে. মি. টবে ১০ কেজি বালতি) ভারী দো-আঁশ মাটি, ১/৩ বালতি জৈব সার (১ভাগ পাতা সার, ২ ভাগ গােবর সার) ২ মুঠো করে সুপার ফসফেট ও গুড়ােহাড়, ৩ মুঠো গুড়াে খুর ও শিং, ৩চা চামচ গুঁড়াে খড়িমাটি ও মিউরিয়েট অফ পটাশ এবং ২ চা চামচ ম্যাগনেসিয়াম সালফেট-এর সারমাটি দিয়ে বসিয়ে দিন। এবার শিকড়ের বৃদ্ধি দেখে নিয়ে ১৫ সেমি ও শেষ কালে ২৫ সে. মি. টবে বসাবেন।

পরিচর্যা—ছােট থেকে লােহার কনডুইট পাইপ বা ঐ জাতীয় শক্ত কিছু দিয়ে ঠেকনা দিতে হবে। এর উচ্চতা ১৫/২০ সেমি লম্বা হলে মাথাটা খুঁটে দেবেন। এদের সবল শাখাগুলাে রেখে অন্য শাখাও বাদ দিতে হবে। চন্দ্রমল্লিকার বড় জাতের ক্ষেত্রে শাখাগুলাের প্রধান কুঁড়িটা রেখে অন্য কুঁড়িগুলাে ফেলে দিতে হবে। বর্ষায় গাছকে পলি শেডে রাখবেন।

সার প্রদান—৮ সেমির টবে প্রদেয় সারই ১৫ ও ২৫ সেমি টবেও দেওয়া যায়, কুঁড়ি গজালে ইউরিয়া, ডি. এ. পি. অ্যামােনিয়াম সালফেট কমমাত্রায় দেবেন। তরল সার হিসাবে ১০ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম সালফেট, ২০ গ্রাম সালফেট অফ পটাশ ১০ কেজি জল, ২০০ গ্রাম সরষে খােল দেবেন। চাপান সার রূপে মীন সার (শুটকী মাছের গুড়াে) ও গােবর সার ২৪১ হিসাবে মিশিয়ে দিয়ে দেবেন। কুঁড়িতে রং ধরলে সামান্য ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ও পটাসিয়াম সালফেট তরল সার রূপে দেবেন। অল্প রক্ত সার (রক্তকে ভালভাবে সেদ্ধ করে শুকনাে করে নিয়ে গুঁড়াে করা) এ সময়ে দিতে হবে

কীট নাশক নেমাটো সাইড প্রয়ােগ করবেন।

টবে চাষ পদ্ধতি চামেলী

চামেলী একটু সুখী ধরণের গাছ। টবে এর চাষের জন্য প্রয়ােজন টব-বড় টব নেওয়াই ভাল।

মাটি—দো-আঁশ মাটি।
সার-গােবর সার।

চারা তৈরী—কাটিং, দাবা কলম ও ক্ষেত্র বিশেষে বীজ থেকে চারা তৈরী করা হয়। এদের বায়বীয় মূল সহ শাখা থেকেও চারা তৈরী করা সম্ভব।

কীটনাশক–মাঝে মাঝেই কীট নাশক ছড়াবেন।

শিকড় ছাঁটাই-এক বছর ছাড়া শিকড় ছাঁটবেন। ডাল ছাঁটাই—প্রতি বছর ডাল ছেটে দেবেন। সার প্রদান—চাপান সার বসন্তে একবার ও তরল সার বর্ষা শুরু হওয়ার পর ২১ দিন অন্তর প্রয়ােগ করবেন।

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button