খাদ্যে ভেজালমিশ্রণে ক্ষতি তার প্রতিকার ও পরামর্শ জানিয়ে সংবাদপত্রের সম্পাদককে চিঠি
খাদ্যে ভেজালমিশ্রণের ফলে ক্ষতি ও তার প্রতিকার সম্বন্ধে তােমার অভিমত ও পরামর্শ জানিয়ে দৈনিক সংবাদপত্রের সম্পাদককে একটি চিঠি লেখাে।

এই পোষ্টে খাদ্যে ভেজালমিশ্রণের ফলে ক্ষতি ও তার প্রতিকার সম্বন্ধে তােমার অভিমত ও পরামর্শ জানিয়ে দৈনিক সংবাদপত্রের সম্পাদককে একটি চিঠি লেখাে। এর আগের পোষ্টে সাধারণ নির্বাচনে তরুণ সমাজের ভূমিকা প্রবন্ধ রচনা শেয়ার করা হয়েছে চাইলে দেখে নিতে পারেন।
খাদ্যে ভেজালমিশ্রণে ক্ষতি তার প্রতিকার ও পরামর্শ জানিয়ে পত্র
মাননীয় সম্পাদক মহাশয় সমীপেষু
আনন্দবাজার পত্রিকা
হরেন মুখার্জি রােড,
শিলিগুড়ি – ৭৩৮০০১
সবিনয় নিবেদন,
আপনার পত্রিকার ‘জনমত’ বিভাগে খাদ্যে ভেজালমিশ্রণের ফলে ক্ষতি ও তার প্রতিকার সম্বন্ধে আমি দু-একটি কথা নিবেদন করতে চাই। অনুগ্রহ করে আমার পত্রটি যদি প্রকাশ করেন তাহলে বাধিত হব।
আমাদের আজকের জীবনে একটি চরম আতঙ্কের বিষয় হল ভেজাল। প্রাণধারণের জন্য, স্বাস্থ্যের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য খাদ্যগ্রহণ আবশ্যিক। অথচ বাজারে বিশুদ্ধ খাদ্যদ্রব্যের একান্ত অভাব। আমরা খাদাবুপে যে সমস্ত বস্তু বাজার থেকে কিনে আনছি, সেগুলি অনেক ক্ষেত্রেই ভেজালমিশ্রিত। আর ভেজালমিশ্রিত খাদ্য মানেই তা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। স্বাস্থ্যরক্ষার নামে আমরা জেনে বা না-জেনে অনেকটা বাধ্য হয়েই ক্ষতি করছি স্বাস্থ্যের। মানুষের দেহমনে যে এত জটিল ব্যাধির প্রকোপ ক্রমশ বেড়ে চলেছে, ভেজালমিশ্রিত খাদ্যগ্রহণ তার অন্যতম একটি কারণ। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লােভে খাদ্যবস্তুতে ভেজাল মেশায়। তারা একবারও ভেবে দেখে না, এর ফল কত মারাত্মক হতে পারে। নৈতিকতাহীন মানবিক মুল্যবােধবর্জিত এই ভেজালদারেরা চোখের সামনে শুধু টাকা ছাড়া আর কিছু দেখতে পায় না। ফলে বাজার ছেয়ে যাচ্ছে ভেজালে।
ভেজাল-মেশানাের ক্ষেত্রে এতটুকু বিবেকের দংশন অনুভব করে না ভেজালদাররা। তারা চায়ের সঙ্গে মেশাচ্ছে কাঠ বা চামড়ার গুঁড়াে। ইটের গুঁড়া মেশাচ্ছে লক্কাগুঁড়ােতে। সরযের তেলে থাকছে শিয়ালকাটা বা তুলাের বীজের তেল। আটা বা ময়দাতে দেওয়া হচ্ছে তেঁতুলবিচির গুড়াে। এরকম আরও কত ভেজাল যে কত খাদ্যবস্তুতে মেশানাে হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। এমন ব্যাধি থেকে আরােগ্যলাভের জন্য যেসব ওষুধ আমরা খাচ্ছি, সেগুলিও অনেক সময় ভেজাল কবলিত।
ভেজালদৈত্য আজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করতে উদ্যত। কিন্তু এ বিষয়ে জেনেশুনে যদি আমরা হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকি তাহলে এর আক্রমণ ক্রমশ আরও ভয়ংকর হয়ে উঠবে। সুতরাং এর প্রতিকারের জন্যও আমাদের সচেষ্ট হতে হবে। ভেজাল প্রতিরােধের জন্য প্রশাসনের একটি বড় ভূমিকা আছে। ভেজাল নিরােধক আইনকে কঠোরভাবে বাস্তবায়িত করা দরকার। সেইসঙ্গে খাদ্যদ্রব্যের বিশুদ্ধতা পরীক্ষার জন্য নিযুক্ত সরকারি কর্মচারীদেরকে সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রশাসনের সঙ্গে সাধারণ মানুষেরও সচেতন ও সক্রিয় হয়ে ওঠা দরকার। খাদ্যে ভেজালের প্রমাণ পেয়েও আমরা প্রায়শ চুপচাপ সেটা মেনে নিই। বড় জোর এ নিয়ে মৌখিকভাবে কিছু কিছু উষ্মা প্রকাশ করি মাত্র। কিন্তু এতে কাজের কাজ কিছু হয় না। খাদ্যে ভেজাল রয়েছে জানতে পারলে আমরা যদি যৌথভাবে তা প্রশাসনের গােচরে আনি তাহলে আশা করি তার ফল ভালাে হবে। অনেক খাদ্যবস্তুতে এমন সুকৌশলে ভেজাল মেশানাে হয় যে, সাধারণভাবে বােঝার কোনাে উপায় থাকে না। তাই ভেজাল পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে যাতে আধুনিক পরীক্ষাগার তৈরি হয় তার ব্যবস্থা করা প্রয়ােজন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের ভূমিকাই বেশি। তবে সাধারণ মানুষকেই এই দাবি তুলতে হবে।
নমস্কারান্তে
বিনীত
কমল দাস
সারদাপল্লী
রায়গঞ্জ