আর্সেনিক কি? আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধের উপায়
স্বাস্থ্যের ওপর আর্সেনিক দূষণের প্রভাব? আর্সেনিক বিষয়ক সচেতনতা

অনুচ্ছেদ সমূহ
আর্সেনিক দূষণ দিন দিন বেরেই চলেছে। আর্সেনিক (Arsenic) একটি মৌলিক পদার্থ যার সঙ্কেত হল As এবং পারমাণবিক সংখ্যা হল 33। আর্সেনিক এর পারমাণবিক ভর 74.92160 (সাধারণ কাজে 75 ব্যবহার করা হয়) । পর্যায় সারণীর চতুর্থ পর্যায়ে, পঞ্চদশ গ্রুপে As (আর্সেনিক) অবস্থিত। এটি একটি অর্ধধাতু বা উপধাতু। আর্সেনিকের বহুরূপ বিদ্যমান। কিন্তু শুধু ধূসর রঙের আর্সেনিকেরই ধাতব ধর্ম রয়েছে। তাই , শিল্পক্ষেত্রে শুধু এই রূপটিই গুরুত্বপূর্ণ।
আর্সেনিক দূষণ
ভূ-গর্ভস্থ জলে আর্সেনিক (Arsenic) দূষণ ভারতবর্ষে ইদানীংকালের গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানীয় জলে আর্সেনিক দূষণের ফলে মানব শরীরের চর্মরোগ যেমন হাইপার পিগমেন্টেশন, কেরাটেসিস প্রভৃতি দেখা দেয়। চামড়ার ও শরীরের অভ্যন্তরে কর্কটরোগের ঘটনাও দেখা দিচ্ছে। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেকং নদীর অববাহিকা অঞ্চলেই আর্সেনিক দূষণের মাত্রা বেশি। আর্সেনিক (Arsenic) দূষণ থেকে সাবধান। আর্সেনিক দূষিত জল খেলে নানা রোগ ও মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গের আর্সেনিক সমস্যা
পশ্চিমবঙ্গের ৮টি জেলার ৮১টি ব্লকে গঙ্গা বদ্বীপ অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ জলে আর্সেনিকের প্রকোপ সব থেকে বেশি। কলকাতা ও সন্নিহিত শহরগুলিও ভূ-গর্ভস্থ জলে আর্সেনিকের সম্ভাবনা মুক্ত নয়। তবে এখানে পানীয় জল সরবরাহ করা হয় গঙ্গা (হুগলি) নদীর জল পরিশোধন করে। তাই এই জল নিরাপদ ও সুরক্ষিত।
এটিও পড়ুন – শরীর সুস্থ ও রোগ মুক্ত রাখার টিপস ১০০% কার্যকারী
স্বাস্থ্যের ওপর আর্সেনিক দূষণের প্রভাব :
- ক্যানসার (কর্কট রোগ) দেখা দিতে পারে। মৃত্যুও হতে পারে।
- হাইপার পিগমেন্টেশন হতে পারে।
- কেরাটোসিম রোগ হতে পারে। হাত গায়ের চামড়া কালো হয়। শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায় ও গোটা ওঠে পায়ের আঙুল খষে পড়ে। পেটে ও ফুসফুসে রোগ হয়।
আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধে কয়েকটি অবশ্য কর্তব্যঃ
- পানীয় জলের গুণগত মান পরীক্ষা ও নিয়মিত নজরদারী ব্যবস্থা এবং আর্সেনিক জনিত রোগে স্বাস্থ্যের ক্ষতির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা।
- আর্সেনিকযুক্ত এবং আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের উৎস চিহ্নিত করা।
- স্থানীয়স্তরে আর্সেনিকের তথ্য সম্বলিত মানচিত্র তৈরি করা এবং শুদ্ধ নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া।
- জনসাধারণকে সচেতন করা।
- আর্সেনিক আক্রান্ত লোকেদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
- আর্সেনিক আক্রান্ত অঞ্চলের চিকিৎসকদের বিশেষভাবে আর্সেনিক রোগ প্রতিরোধ সংক্রান্ত চিকিৎসার ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
- ভূ-গর্ভস্থ জলের ব্যবহার করে কৃষিকার্য ও জলসেচ ব্যবস্থা ক্রমশ কমিয়ে আনা।
- আর্সেনিক দূষিত টিউবওয়েল লাল রং করতে হবে। আর্সেনিক দূষিত নয় এমন টিউবওয়েলগুলি সবুজ রং লাগাতে হবে।
- আর্সেনিক ধরা পড়লে সেই টিউবওয়েলে জল খাবে না এবং অন্যকে খেতেও দেবে না।
আর্সেনিকের আক্রমণ ঠেকাতে প্রতিদিন শাক সবজি, মাছ মাংস খেতে হবে। আর্সেনিক দূষণের ফলে শরীরে রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। আর্সেনিক দূষণের ফলে যে রোগ হয় তা ছোঁয়াচে নয়, কুষ্ঠও নয়। রোগীকে আলাদা রাখার দরকার নেই। রোগীকে সঠিক চিকিৎসা পরিসেবা দিতে হবে।