প্রবন্ধ রচনা

জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর রচনা 600 শব্দের মধ্যে

জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর প্রবন্ধ রচনা

জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর অর্থাৎ জীব সেবাই ঈশ্বর সেবা। জীব সেবা ব্যতীত ঈশ্বর সেবা সম্ভব নয় উক্তিটি স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন। নিম্নে জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর প্রবন্ধ রচনা শেয়ার করা হল।

জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর প্রবন্ধ অনুসারে অনুরূপ প্রবন্ধ লেখা যাবে জনসেবাব্রত; লোকহিত ; সমাজকল্যাণ বিবেকানন্দের সেবাধর্ম, জীবনাদর্শভিত্তিক প্রবন্ধ রচনা ইত্যাদি।

জীবে প্রেম করে যেইজন

সেইজন সেবিছে ঈশ্বর

[প্রসঙ্গসুত্রঃ ভূমিকা; ঈশ্বর সাধনার শাস্ত্রনির্দিষ্ট পথ। জীবই শিব; নরই নারায়ণ: মানুষের সেবাই ঈশ্বরে সেবা: ভারতীয় আদর্শ: নতুন যুগের বাণী—রবীন্দ্রনাথ, শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ; সেবামূলক প্রতিষ্ঠান: আর্ডরাণ, পরহিতসাধন ঈশ্বরলাভের ব্যবহারিক প্রকাশঃ বনের বেদান্তকে ঘরে আনা উপসংহার।]

“তোমরা কি মানুষকে ভালবাস? ঈশ্বরের অন্বেষণে কোথায় যাইতেছ? দরিদ্র, দুঃখী, দুর্বল—সকলেই কি তোমার ঈশ্বর নহে? অগ্রে তাহাদের উপাসনা কর না কেন? গঙ্গাতীরে বাস করিয়া কূপ খনন করিতেছ কেন?”

স্বামী বিবেকানন্দ

ভূমিকা

উপরে রচনার বিষয় হিসেবে যে অমৃত-বাণীটি প্রদত্ত হয়েছে, এটি স্বামী বিবেকানন্দের একটি বিখ্যাত কবিতার অংশ বিশেষ। এই বিষয়টি আরও পরিস্ফুট হয়েছে তাঁর পত্রাবলী থেকে উদ্ধৃত ক’টি বাক্যে। বিষয়টির সহজ শিরোনাম হতে পারতো ‘জনসেবা’। কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দ জনসেবাকে যে মহৎ আধ্যাত্মিক মর্যাদায় উন্নীত করেছেন, তাতে জীবপ্রেম ঈশ্বরপ্রেমের সমার্থক হয়ে উঠেছে। আর এই জীবপ্রেমের শ্রেষ্ঠ প্রকাশ মানুষের প্রতি প্রেমে, মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করার মধ্যে।

ঈশ্বর সাধনার শাস্ত্ৰনিৰ্দিষ্ট পথ

আমাদের প্রাচীন শাস্ত্রে ধর্মসাধনার দু’টি উপায় নির্দিষ্ট আছে। একটি হচ্ছে শাস্ত্রনির্দিষ্ট আচার-আচরণ এবং উপাসনা। যজ্ঞ, দানধ্যান ইত্যাদি এই অংশের অন্তর্ভুক্ত। আর একটি উপায় হচ্ছে গভীর ধ্যানযোগে ঈশ্বরসত্তাকে নিজের মধ্যে উপলব্ধি করে নিজেই ঈশ্বরে বিলীন হয়ে যাওয়া। কিন্তু আমাদের ভারতীয় অধ্যাত্মচিন্তার বড় বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে জীবনের সার্থকতা ঈশ্বরলাভের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করা। ভোগ নয়, ত্যাগেই সেই আদর্শের প্রতিষ্ঠা। জপ-তপ, নিয়ম, পূজা-অৰ্চনা, যজ্ঞাদি নিমিত্তমাত্র, উদ্দেশ্য ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ।

জীবই শিব নরই নারায়ণ

ঈশোপনিষদের প্রথম শ্লোকেই আছে—“এ জগতের সবকিছু ঈশ্বরের দ্বারা আচ্ছাদিত। তাই ত্যাগের দ্বারা ভোগ কর, এ জগতের ধনসম্পত্তি কার?” এই ঈশ্বরের দ্বারা আচ্ছাদিত জগতের সমস্ত কিছুতেই তাঁর অস্তিত্ব। কিন্তু ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ প্রকাশ মানুষের মধ্যে। উপনিষদের ঋষি সেই সুপ্রাচীনকাল থেকেই মানুষকে ‘অমৃতের পুত্র’ বলে আহ্বান জানিয়েছেন। অতএব আমাদের অধ্যাত্মদৃষ্টির আলোকিত পথে জীবকেই শিব, নরকে নারায়ণরূপে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে।

মানুষের সেবাই ঈশ্বর সেবা

এই দৃষ্টিতে মানুষকে দেখলে, তাকে অবহেলা বা অবজ্ঞা করা ঈশ্বরকেই অস্বীকার করার নামান্তর। মানুষ বিভিন্ন বেশে, বিভিন্ন রূপে আমাদের সেবাপ্রার্থী। তাকে ভালবাসলে ঈশ্বরকেই ভালবাসা হয়, তার সেবা করলে ঈশ্বরকেই পূজা করা হয়। কাজেই ‘জনসেবা’ কথাটি আমাদের দেশে শুধু পাশ্চাত্যের লোকহিত বা Philanthrophy-র সমগোত্র নয়, এর তাৎপর্য অনেক গভীর।

ভারতীয় আদর্শ

ভারতীয় জনসেবার আদর্শ সম্পর্কে প্রবন্ধের সূচনাতেই উল্লেখ করা হয়েছে। ভারত চিরকাল নিজের মুক্তি এবং জগতের হিতকে শ্রেষ্ঠ ধর্ম বলে বিবেচনা করে এসেছে। আত্মনো মোক্ষার্থং জগদ্ধিতায় চ’—এই হল এদেশের সুপ্রাচীন আদর্শ। এই আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সাধক তপস্যা করেছেন, রাজপুত্র ছিন্নকস্থা পরিধান করে পথে বেরিয়েছেন, পায়ে বিধেছে কাঁটা, রক্ত ঝরেছে। তবু আলোর পথে মানবযাত্রীর যাত্রা থামেনি।

এই আদর্শেই চণ্ডাশোক ধর্মাশোক হয়ে বহুবিধ জনহিতকর কর্মানুষ্ঠান করেছেন। আমাদের দেশের রাজারা পথের ধারে পাহশালা নির্মাণ করেছেন, বিশ্রামের জন্য ছায়াসুনিবিড় বৃক্ষ রোপণ করেছেন, তৃষ্ণা নিবারণের জন্য পুষ্করিণী আর কূপ খনন করেছেন। বুদ্ধের করুণার আদর্শ মাথায় নিয়ে শ্রমণেরা লোককল্যাণে নিরত থেকেছেন, গ্রেমের ঠাকুর শ্রীচৈতন্যের প্রেমকে বুকে নিয়ে বৈষ্ণবসাধকগণ অমানীকে মানদান করেছেন, অভুক্তকে মহাপ্রসাদদানে ধন্য করেছেন। আর এ সবকিছুই করেছেন অন্তরের তাগিদে, ঈশ্বরবুদ্ধির প্রেরণায়।

এটিও জেনে রাখুন – কম্পিউটার প্রবন্ধ রচনা 600 শব্দের মধ্যে

নতুন যুগের বাণী রবীন্দ্রনাথ, শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ:

আমাদের শাশ্বত আদর্শ এক সময় ধুলায় অবলুণ্ঠিত হয়ে সমাজে মানুষকে অবহেলার অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছিল। লোকাচার, অস্পৃশ্যতা ধর্মের স্থানে আসন গ্রহণ করেছিল। উচ্চ-নীচ, অভিজাত-অনভিজাত ইত্যাদি বিভেদের প্রাচীর তুলে মানুষের নারায়ণকে আমরা দূরে ঠেলে দিয়েছিলাম। ঊনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণের দিনে আমাদের হারানো সম্পদকে পুনরুদ্ধার করেছিলেন যে-সব মনীষী এবং সাধক তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মানবপ্রেমিক কবি রবীন্দ্রনাথ, পরম সাধক শ্রীরামকৃষ্ণ এবং প্রেমিক সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ। রবীন্দ্রনাথ ঘোষণা করলেন—

যেথায় থাকে সবার অধম দীনের হতে দীন
সেইখানে যে চরণ তোমার রাজে
সবার পিছে, সবার নীচে,
সব-হারাদের মাঝে।

শ্রীরামকৃষ্ণ জানালেন, ‘যত্র জীব তত্র শিব’; আর তাঁরই শ্রেষ্ঠ শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ উদাত্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন—

‘বহুরূপে সম্মুখে তোমার, ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর?
জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।’

তাঁদের বাণীতে ভারতের সুপ্রাচীন আধ্যাত্মিকতা নবরূপে প্রচারিত। মানুষ পুনরায় ঐশ্বরিক মর্যাদায় ভূষিত হল। মানবপ্রেম এবং জনসেবা আধুনিককালের যুগধর্ম হিসেবে সর্বত্র স্বীকৃতি পেল।

সেবামূলক প্রতিষ্ঠান

এই যুগধর্মকে বাস্তবে রূপদান করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নানা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। স্বামী বিবেকানন্দ ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষলগ্নে প্রতিষ্ঠা করলেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন। এই রামকৃষ্ণ মিশন ভারতে এবং বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বহুবিধ জনকল্যাণকর কাজের জন্য প্রাণপণ প্রয়াস চালাচ্ছে। তাছাড়া ভারত সেবাশ্রম সংঘ, কাশী বিশ্বনাথ সেবাসমিতি, মাড়োয়ারী রিলিফ সোসাইটি, মাদার টেরিজার জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানসমূহ, রোটারী ক্লাব, লায়ন্স ক্লাব, গান্ধীজীর সেবাশ্রম ও হরিজন কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানাদি ভারতে জনসেবার অসংখ্য ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে দুটি বিখ্যাত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়-রেড ক্রস এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অনেকগুলি খ্রীস্টান মিশনারি প্রতিষ্ঠানও এরকম কাজে নিযুক্ত আছে।

আতত্রাণ, পরহিত সাধন ঈশ্বরলাভের ব্যবহারিক প্রকাশ

দুঃখীর দুঃখ দূর করা, আর্তের সেবা, ভূমিকম্প, বন্যা, খরা, মহামারী, ঘূর্ণিঝড়, দাঙ্গায় বিধ্বস্ত মানুষের দুর্দশা লাঘব করা, অশিক্ষিতকে শিক্ষাদান করা, নিরন্নকে অন্নদান প্রভৃতি সব কিছুই পরহিতব্রতপালন এবং ঈশ্বর লাভের বাহ্যিক এবং ব্যবহারিক প্রকাশ। দুঃখী, আর্ড, দরিদ্ররূপে ভগবান আমাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তাদের সেবা এবং পরিচর্যার মতো ধর্মাচরণ আর কী হতে পারে?

বনের বেদাস্তকে ধরে আনা

অরণ্যে, পর্বতের গুহায় সাধনার যে ঐতিহ্য ছিল, তাকে মানবজীবনের কেন্দ্রে এনে স্থাপন করেছেন এ যুগের শ্রেষ্ঠ সাধক স্বামী বিবেকানন্দ। তিনি মানবপ্রেম এবং‘নরনারায়ণ’ সেবাধর্মকে ‘বনের বেদাস্তকে ঘরে আনা’ বলে চিহ্নিত করেছেন।

উপসংহার

আজকের যুগে মানুষের দুঃখ-যন্ত্রণার অবধি নেই। এক শ্রেণীর লোকের স্বার্থপরতাও সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বিচ্ছিন্নতার শিকার হচ্ছে অনেক নিরীহ মানুষ। আবার আমরা আমাদের সুমহান ধর্মীয় ঐতিহ্য ভুলে যেতে বসেছি। সামাজিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়ার মুখে। এই অবস্থায় হিংসা-দ্বেষ ভুলে মানবপ্রেমের এবং জনসেবার আদর্শকে আবার জীবনে প্রয়োগ করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। অন্যথায় ‘মহতী বিনষ্টি’ আমাদের সবকিছু গ্রাস করে নেবে।

ট্যাগ-

জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর রচনা, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর রচনা, জেনে নিন জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর উক্তিটির পুরো কথা, জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর প্রবন্ধ রচনা PDF সহ , এখানে জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর ইংরেজি প্রবন্ধ রচনা

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button