স্বাস্থ্য

এইডস কী? এইডস প্রতিরোধের উপায় এবং করণীয় কী? AIDS

এইচআইভি উপসর্গ । কীভাবে সংক্রামিত হয়। এইডস কীভাবে সংক্রামিত হয় না

এইডস (AIDS এর পুরো নাম Acquired Immuno Deficiency Syndrome বাংলায় অর্জিত প্রতিরক্ষার অভাবজনিত রোগলক্ষণসমষ্টি )। এইডস হচ্ছে এইচ.আই.ভি. (HIV এর পুরো নাম Human Immunodeficiency Virus) তথা “মানব প্রতিরক্ষা অভাবসৃষ্টিকারী ভাইরাস।

এইডস কী?

এইডস কথাটি কতকগুলো ইংরাজি শব্দের সমষ্টি। ‘AIDS’ কথাটি Acquired Immuno Deficiency Syndrome, এই চারটি শব্দের প্রথম অক্ষরগুলি নিয়ে গঠিত হয়েছে। এইডস-এর প্রতিশব্দ হলো অর্জিত প্রতিরোধ ক্ষমতার শক্তি হীনতার লক্ষণসমূহ। এইডস একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। দেখা যায় এইডস বংশগত নয়, তবে সংক্রামক।

হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, রক্তরস, বীর্য অন্য কোনো সুস্থ ব্যক্তির রক্ত, রক্তরস বা বীর্যের সংস্পর্শে এলে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহ থেকে এই ভাইরাস সুস্থ ব্যক্তির দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সুস্থ ব্যক্তির দেহে এই ভাইরাস প্রবেশ করবার পর লিম্ফোসাইট কোশগুলিকে ধ্বংস করে দেয়। যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। প্রথম অবস্থায় রোগ লক্ষণগুলো প্রচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে এবং আক্রান্ত ব্যক্তি রোগের বাহক হিসাবে কাজ করে। এই প্রচ্ছন্ন রোগ লক্ষণকালীন দশা ব্যক্তিভেদে পাঁচ থেকে দশ বছর কাল পর্যন্ত হতে পারে। এই অবস্থায় রক্ত পরীক্ষা করলে রোগ সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া যায়।

জেনে নিন – গর্ভবতী মায়ের খিঁচুনি হলে করণীয় । Eclampsia এক্লাশসিয়া

হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করে দেওয়ার ফলে ব্যক্তি যে কোনো সাধারণ রোগে আক্রান্ত হলেও তার কোনো রোগই সারে না এবং ক্রমশ রোগ লক্ষণগুলি প্রকাশ পেতে থাকে। শরীরে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন একটানা অনেকদিন ঘুসঘুসে জ্বর, অনবরত কাশি, উদরাময়, মুখের ভিতরে সাদা সাদা ছোপ, ঘা, দেহের ওজন হ্রাস প্রভৃতি রোগলক্ষণাবলিযুক্ত অবস্থাকে এককথায় এইডস বলা হয়।

AIDS রোগের ভাইরাস হলো হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস। HIV হলো লেন্টিভাইরাস পরিবারভুক্ত একপ্রকার RNA ভাইরাস। HIV ভাইরাস একটি ক্যানসার গোষ্ঠীর ভাইরাস। তাই মানুষ বা বানরসহ সকল প্রাণীজগৎ এইডসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

এইডসের উপসর্গ :

  • একটানা ঘুসঘুসে জ্বর।
  • একমাসের বেশি সময় ধরে পেটের গণ্ডগোল।
  • মাসাধিক কালব্যাপী অনবরত কাশি।
  • বহু পুরোনো ক্ষত বা ঘা।
  • রক্তের শ্বেতকণিকার সংখ্যার দ্রুত হ্রাস।
  • দেহের ওজন ১০ শতাংশ দ্রুত কমে যাওয়া।
  • ঘুমের সময় অতিরিক্ত ঘাম।
  • মুখের ভিতরে সাদাসাদা ছোপ ছোপ দাগ।
  • এছাড়াও কিছু গৌণ লক্ষণও আছে।

এইডস কীভাবে সংক্রামিত হয় :

  • যখন রোগাক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, রক্তরস, শুক্র বা স্ত্রীযোনিক্ষরণ কোনো একজন সুস্থ ব্যক্তির রক্ত বা রক্তরসের সংস্পর্শে আসে তখনই হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (HIV) অপরের দেহে সংক্রামিত হয়।
  • সমকামী বা বিপরীতকামী যৌন সংযোগের মাধ্যমেও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।
  • যে রক্তে HIV ভাইরাস আছে সেই রক্ত নিলেও AIDS হতে পারে।
  • সংক্রামিত ব্যক্তির ব্যবহৃত সুঁচে ইনজেকশন নিলেও সুস্থ ব্যক্তির দেহে এই রোগ ছড়াতে পারে।
  • অসংরক্ষিত যৌন সংস্রব-এর ফলে AIDS ছড়াতে পারে।
  • সংক্রামিত জননী থেকে গর্ভস্থ শিশুর দেহে সংক্রমণের সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ।

এইডস কীভাবে সংক্রামিত হয় না :

এইডস রোগীর সংস্পর্শে আসলেও এই সংক্রামিত হয় না, এমন ক্ষেত্রগুলি হলো

  • একই গৃহে বাস।
  • করমর্দন।
  • একই শৌচাগার ব্যবহার।
  • সর্দি, কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে।
  • একত্রে কাজ বা ভ্রমণের মাধ্যমে। একত্রে জলপান ও ভোজন।
  • দরজার হাতল বা একই টেলিফোন ব্যবহার।
  • মশা, মাছি ও কীটপতঙ্গের মাধ্যমে।
  • একত্রে খেলাধুলা ও পড়াশোনা করলে।

রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত থাকতে হবে

রক্ত পরীক্ষাই একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে এইচ আই ভি সংক্রমণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। এই রক্ত পরীক্ষা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সকল স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, মহকুমা হাসপাতাল এবং গ্রামীণ হাসপাতালের আই সি টি সি (ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সিলিং অ্যান্ড টেস্টিং সেন্টার)-তে করা হয়। পরীক্ষার ফলাফল সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয়।

এইচ আই ভি সংক্রমিত হলে কী করতে হবে

বিনামূল্যে এ আর টি চিকিৎসা পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সরকারি হাসপাতালের এ আর টি (অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি) কেন্দ্রে নাম নথিভুক্ত করতে হয়। এই চিকিৎসা দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনযাপন করতে সাহায্য করে। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা সমাজকে সচেতন করবে।

এ আর টি কি এইচ আই ভি / এইডস সম্পূর্ণ নিরাময় করে

এ আর টি, এইচ আই ভি কে সম্পূর্ণ নিরাময় করতে পারে না। এ আর টি শুধুমাত্র এইচ আই ভি বৃদ্ধির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। প্রত্যেক দিন নির্দিষ্ট সময়ানুযায়ী ওষুধ অবশ্যই খেতে হবে। তবে এইচ আই ভি পজিটিভ জানা গেলেই যে এ আর টি ওষুধ শুরু করতে হবে তা নয়, শুধুমাত্র যখন সি ডি 4 কোষের পরিমাণ কমে যাবে বা সুযোগসন্ধানী সংক্রমণ হতে থাকবে তখন চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া শুরু করতে হবে।

এ আর টি-র সুবিধাগুলি কী কী

  • দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনযাপন করতে সাহায্য করে।
  • উপার্জনক্ষম থাকতে সাহায্য করে।
  • গর্ভবতী মা থেকে শিশুর মধ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।

এইচআইভি/ এইডস সংক্রমণ হলেও সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার উপায় কী

  • পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং নিজের স্বাভাবিক ওজন ঠিক রাখতে হবে।
  • রান্না না করা, না ধোয়া শাক-সবজি ও ফল-মূল খাওয়া বিপজ্জনক।
  • ধূমপান নিষিদ্ধ। নেশা এড়িয়ে চলতে হবে কারণ নেশা করলে দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, তাতে দেহ ও মন দুইই ভালো থাকবে।
  • চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। নিয়মিত ঘুমাতে হবে ও বিশ্রাম নিতে হবে।
  • সুরক্ষিত যৌন জীবনযাপন করতে হবে।

এইডস প্রতিরোধের পন্থা আছে।

বর্তমানে ‘এইডস’-এর কোনো প্রতিরোধক টিকা নেই এবং অদূর ভবিষ্যতেও টিকা আবিষ্কারের সম্ভাবনা খুবই কম।

এইডস বিষয়ক সেমিনার, পথসভা, র‍্যালি, শিক্ষামূলক কর্মশালা, বিভিন্ন রকমের প্রচারমাধ্যমের প্রচার দ্বারা শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক ও জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলাই হবে AIDS-এর প্রতিরোধ কর্মসূচি। এছাড়াও যে সকল ঘটনাক্রম বা ব্যবহার মানুষকে এইডস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির দিকে ঠেলে দেয়, তা থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন—

  • নিরাপদ যৌন সংস্পর্শ, কনডোম ব্যবহার সুনিশ্চিত করা।
  • রক্তদান বা গ্রহণের সময় নতুন সিরিঞ্জ ব্যবহার করা।
  • ইনজেকশন নেওয়ার সময় ডিসপোজাল সিরিঞ্জ ব্যবহার করা এবং ব্যবহারের পরে তা নষ্ট করে দেওয়া।
  • রক্ত নেওয়ার সময় HIV Free এই লেবেল অবশ্যই দেখে নিতে হবে।
  • শল্য চিকিৎসায় ব্যবহৃত ছুরি, কাঁচি, অটোক্লেভে উচ্চ তাপমাত্রায় নির্জীবকরণ করে ব্যবহার করতে হবে।
  • সেলুনে প্রত্যেকের ক্ষেত্রে নতুন ব্লেডে চুল-দাড়ি কাটতে হবে।
  • নিরাপদ যৌনসম্পর্ক সুনিশ্চিত করা।
  • একই সিরিঞ্জে ড্রাগ নেওয়া ও শরীরে উলকি আঁকা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • স্বাস্থ্য বিভাজনের কাজে যুক্ত ব্যক্তিদের আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসবার আগে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • অন্তঃসত্ত্বা মহিলার সন্তানধারণের ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ সময়ে বিশেষ ধরনের চিকিৎসা ও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • জীবনকে ভালোবেসে AIDS প্রতিরোধ করতে হবে। এইডসকে ঘৃণা করুন, এইডস রোগীকে নয়—এই কথাটিই হোক এইডস প্রতিরোধের মূলমন্ত্র।

এবিষয়ে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ টোলফ্রি নম্বর ১০৯৭ ফোন করলে সহায়তা পাওয়া যাবে।

কিছু প্রয়োজনীয় ওয়েবসাইট –

  • Source: WBCHSE (Health & Physical Education)
  • https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/hiv-aids
এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button