সাম্প্রদায়িকতা অভিশাপ ও তার প্রতিরোধে ছাত্রসমাজের ভূমিকা
সাম্প্রদায়িকতার অভিশাপ ও তার প্রতিরোধে ছাত্রসমাজের ভূমিকা প্রবন্ধ রচনা

সাম্প্রদায়িকতা অভিশাপ ও তার প্রতিরোধে ছাত্রসমাজের ভূমিকা নিয়ে প্রবন্ধ রচনা। বিভিন্ন স্কুল / বিদ্যালয়, কলেজ পরীক্ষা এমনকি বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষাতেও সাম্প্রদায়িকতা অভিশাপ বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা আসে।
সাম্প্রদায়িকতার অভিশাপ প্রবন্ধ রচনা অনুসরণে যে সকল প্রবন্ধ রচনা লেখা যাবে তা হল – সাম্প্রদায়িকতা অভিশাপ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ, সাম্প্রদায়িকতা একটি অভিশাপ : ছাত্রসমাজের কর্তব্য, সাম্প্রদায়িকতার অভিশাপ ও তার প্রতিরোধে ছাত্রসমাজের ভূমিকা (The curse of communalism and its prevention ) ইত্যাদি।
সাম্প্রদায়িকতা অভিশাপ সম্পর্কে প্রবন্ধ রচনা
[ রচনা-সংকেত – ভূমিকা–সাম্প্রদায়িকতার স্বরূপ— সাম্প্রদায়িকতার কারণ সাম্প্রদায়িকতার পরিণাম ছাত্রসমাজের ভূমিকা—উপসংহার। ]
ভূমিকা
যেসব সামাজিক সমস্যা মানবসভ্যতাকে আজও কলঙ্কিত করে, সাম্প্রদায়িকতা তার অন্যতম। মানুষের মধ্যে ভাষা, জাতি, ধর্ম প্রভৃতির ভিত্তিতে ভিন্নতা থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই ভিন্নতার ভিত্তিতে কখনোই একে অপরের শত্রু হয়ে উঠতে পারে না। অথচ বাস্তবে সেরকমটাই ঘটতে দেখা যায়। এক সম্প্রদায়ের কাছে অন্য সম্প্রদায় হয়ে ওঠে বিদ্বেষ ও ঘৃণার পাত্র। একের প্রতি অপরের অবিশ্বাস, অবজ্ঞা আর অসহিয়ুতায় বিষিয়ে ওঠে পারস্পরিক সম্পর্ক। সাম্প্রদায়িক কলহ ও সংঘর্ষে আবিল হয়ে ওঠে তিল তিল করে গড়ে তোলা সমাজ তথা সমগ্র মানবসভ্যতা।
সাম্প্রদায়িকতার স্বরূপ
বিভিন্ন কালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাম্প্রদায়িকতা এক ভয়ংকর সমস্যারূপে দেখা দিয়েছে। এখনও এর অভিশাপ থেকে মানুষ মুক্তি পায়নি। বরং দিকে দিকে এই সমস্যা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করছে। কোথাও ধর্মের ভিত্তিতে কোথাও ভাষার ভিত্তিতে কোথাও বা জাতি পরিচয়কে কেন্দ্র করে সম্প্রদায়গত ভেদাভেদ প্রকট হয়ে উঠছে। ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িকতার উগ্র করাল মূর্তির প্রকাশ প্রায়শই ঘনিয়ে তুলছে আশঙ্কার ছায়া। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান প্রভৃতি ধর্ম-সম্প্রদায়ের মধ্যে তো বটেই, অন্যান্য দিক থেকেও সাম্প্রদায়িকতার বিষে ভারতবর্ষ আজ জর্জরিত। কখনও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে প্রাদেশিক সংকীর্ণতা, কখনও লড়াই বাধছে এক ভাষাগোষ্ঠীর সঙ্গে আর এক ভাষাগোষ্ঠীর।
সাম্প্রদায়িকতার কারণ
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুণ্ণ হওয়ার নেপথ্যে আছে বিভিন্ন কারণ। সাধারণভাবে অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি অসহিয়ুতা থেকেই এর উৎপত্তি। অন্যের থেকে নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা থেকেই মূলত এই অসহিয়ুতার জন্ম। কোনো বিশেষ ধর্ম সম্প্রদায়, জাতি বা ভাষা-গোষ্ঠী যখন অপরকে নিজের থেকে নিকৃষ্ট মনে করে, অপরের উপর প্রাধান্য বিস্তার করতে চায়, তখনই দেখা দেয় বিরোধ। এই সংকীর্ণ মানসিকতাকে উসকে দেয় ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নেতারা। ধর্মাচরণের লক্ষ্য যেখানে মঙ্গল ও কল্যাণ, সেখানে প্রকৃত ধর্মবোধহীন কিছু কিছু ধর্মীয় নেতা নিজের নিজের ধর্ম সম্প্রদায়কে অন্য ধর্মসম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে। ধর্মভীরু সাধারণ মানুষ তখন হয়ে ওঠে ধর্মান্ধ, হয়ে ওঠে আক্রমণাত্মক। রাজনৈতিক নেতারা সাম্প্রদায়িকতাকে সম্বল করে বহুক্ষেত্রেই স্বার্থসিদ্ধির পথ পরিষ্কার করার চেষ্টা করে। ইংরেজরা একসময়ে আমাদের দেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্বেষ জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করত। মূলত হিন্দু-মুসলমানের বিরোধকে তারা দেশ শাসনের অন্যতম উপায় হিসেবে গ্রহণ করেছিল। স্বাধীনতার পরে ইংরেজরা নেই, তবু এদেশের রাজনৈতিক নেতারাও বিভিন্ন সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে।
এটিও পড়ুন – দুগ্ধ সংরক্ষণ পদ্ধতি, বাড়ীতেই দুধ সংরক্ষণ করুন
সাম্প্রদায়িকতার পরিণাম
সাম্প্রদায়িকতার পরিণাম যে কত মারাত্মক হতে পারে, ইতিহাসে বারবার তার প্রমাণ মিলেছে। অন্য দেশের দৃষ্টান্তস্বরূপ উল্লেখ করা যায়, হিটলারের ইহুদি নিধন এবং কৃয়াঙ্গদের উপর শ্বেতাঙ্গদের অত্যাচারের কথা। আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িকতার ভয়াবহ পরিণতির দৃষ্টান্ত প্রচুর। স্বাধীনতার আগে এবং পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গায় কত মানুষ যে প্রাণ হারিয়েছে তার আর ইয়ত্তা নেই। এখনও রামমন্দির ও বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র করে মাঝে মাঝেই উত্তাল হয়ে উঠছে সমস্ত দেশ। এছাড়াও সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ভারতের আকাশকে আচ্ছন্ন করে তুলেছে আরও বহুক্ষেত্রে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, পাঞ্জাবের খলিস্তানি আন্দোলন, দার্জিলিঙের গোর্খা আন্দোলন, পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়খণ্ডি আন্দোলন, অসম থেকে বিদেশি বিতাড়ন প্রভৃতির কথা। এসবই সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির প্রকারভেদ মাত্র। এসবের মধ্য দিয়ে ঘটেছে বহু রক্তপাত, বিপন্ন হয়ে উঠেছে জাতীয় সংহতি।
ছাত্রদের ভূমিকা
সাম্প্রদায়িকতাকে প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে দেশের প্রতিটি মানুষেরই দায়িত্ব আছে। তবু এ বিষয়ে ছাত্র সম্প্রদায়ের ভূমিকার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। ছাত্রছাত্রীরা সংখ্যায় যেমন বিপুল তেমনি তারাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। সংঘবদ্ধভাবে তারা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে দেশের মাটি থেকে এই বিষবৃক্ষকে সমূলে উৎপাটিত করা অসম্ভব নয়। স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে বহু ছাত্রছাত্রীর সমাবেশ ঘটে। তাদের নিজেদের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক। অর্থাৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছত্রছায়ায় নবীন ছাত্রছাত্রীর দল নিজেদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বজায় রাখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। কে হিন্দু, কে মুসলমান, কে খ্রিস্টান এই ভেদচেতনা তাদের কাছে কোনো গুরুত্বই পায় না। সুতরাং ছাত্রজীবনের এই দৃষ্টান্তকে খুব সহজেই তারা বৃহত্তর জনসমাজে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরতে পারে। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ যদি জনমত গঠনের কাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে তাহলে নিঃসন্দেহে সুফল পাওয়া যাবে। এর জন্য তাদেরকে কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ হয়ে থাকলে চলবে না। যেতে হবে সাধারণ মানুষের কাছে। মানুষের অন্ধ বিশ্বাস এবং সংকীর্ণতা দূর করার জন্য নানাভাবে উদ্যোগী হতে হবে। দেশের ঐতিহ্য ও সাম্প্রদায়িকতার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবহিত করার দায়িত্ব নিতে হবে ছাত্রসমাজকে। এর জন্য তারা বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা সভা ও বক্তৃতার ব্যবস্থা করতে পারে। ব্যবস্থা করতে পারে প্রদর্শনীর। দলবদ্ধভাবে বেরোতে পারে প্রচার অভিযানেও।
উপসংহার
আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ আজ অভাবনীয় উন্নতি করেছে। শিল্প, সাহিত্য, সংগীত, দর্শন প্রভৃতিতে তার সমৃদ্ধি ঘটেছে প্রচুর। অথচ আশ্চর্যের বিষয়, মানুষ আজও সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি। এখনও সাম্প্রদায়িক বিষয়কে কেন্দ্র করে অসহিয়ু অন্ধ আবেগে তার ধৈর্যচ্যুতি ঘটে, এখনও তার ভদ্র আবরণ ভেদ করে বেরিয়ে আসে বর্বরতা। মনুষ্যত্বের এই নিদারুণ অপমান নীরবে সহ্য করাও অন্যায়। তাই ছাত্রসমাজকে শুধু অধ্যয়নে নিবিষ্ট না থেকে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হবে। উদ্ধার করতে হবে মনুষ্যত্বকে।
ট্যাগঃ সাম্প্রদায়িকতা অভিশাপ প্রবন্ধ রচনা, সাম্প্রদায়িকতা অভিশাপ বিষয়ে রচনা, সাম্প্রদায়িকতা অভিশাপ সম্পর্কে প্রবন্ধ রচনা ৬০০ শব্দের মধ্যে, সাম্প্রদায়িকতা অভিশাপ PDF।
লেখা পাঠিয়েছে – হারান বিশ্বাস , কুশমন্ডি , দক্ষিন দিনাজপুর