কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে প্রবন্ধ রচনা

অনুচ্ছেদ সমূহ
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ( Rabindranath Tagore ) শুধু বাংলার কবি নন, তিনি বিশ্বেরও একজন কালজয়ী কবি। তিনি অসংখ্য কবিতা, গল্প, নাটক, উপন্যাস, ছোট গল্প ইত্যাদি লেখেছেন। যুগে যুগে যে সকল মনীষী জন্ম গ্রহণ করে বাঙালী জাতির মুখোজ্জ্বল করেছেন তাঁদের মধ্যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অন্যতম। তিনি শুধু বাংলার নন, ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা
রবীন্দ্রনাথের সর্ব ব্যাপী প্রতিভা দেশকালের সীমা লঙ্ঘন করে চিরকালের মর্যাদা পেয়েছে। আজ যদি তাকে কবি সার্বভৌম বলে ভূষিত করা যায়, তবে বধ করি, একালের কবিদেরও আর আপত্তির কারণ থাকবে না। কাব্য ও সাহিত্যের সমস্ত বিভাগের এমন অনায়াস সৃষ্টি ক্ষমতা সাহিত্যের ইতিহাসে দুর্লভ। বুদ্ধদের বসুর মতো রবীন্দ্রসমাচোলক কবি পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে, ভাবে ও ভাষায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখনো আধুনিক বাঙালি কবিদের গুরুস্থানীয়। তাঁর কবিগুরু অভিধাটি শুধু একটি অলংকার নয়- সার্থক শিরোভূষণ।
জনপ্রিয়তার কারনঃ
তাঁর এই সর্বতো মুখী প্রভাবের তাৎপর্য বিশেষভাবে উপলব্ধ হয়েছে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁর আবির্ভাবের ১২৫ বছর পুর্তি উপলক্ষে দেশ- বিদেশে তাকে নিয়ে উৎসাহ – উদ্দীপনার মধ্যে থেকে। বাংলায় তোঁ তাঁর সাহিত্য ও কর্মাদর্শ প্রচারের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বিদেশেও তাঁর সাহিত্যের প্রচার ও প্রসার ঘটেছে নতুন করে। সোভিয়েত রশিয়া, চীন প্রভৃতি দেশে তাঁর সাহিত্যের অনুবাদ নতুন করে শুরু হয়েছে। স্বর্বভাবতই তাঁরই বিশ্বমৈত্রী এবং আন্তর্জাতিকতার আদর্শ পৃথিবীর মানুষ এখনো শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে। এ যুগে এই সমস্ত আদর্শের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। কারণ সারা পৃথিবীতে শক্তির লড়াই চলছে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কায় সবাই দিন গুনছে।
রবিন্দ্রসাহিত্যের ঐশ্বর্য অজস্র বৈচিত্রে পরিপুর্ন। কাব্য তোঁ বটেই, উপন্যাস, নাটক, ছোটো গল্প, চিন্তা মূলক গদ্য প্রবন্ধ এবং মৌলিক সাহিত্য- সমালোচনা- সব ক্ষেত্রেই তাঁর অবাধ সঞ্চরণ। কিন্তু সমস্ত বৈচিত্রের মধ্যেও তাঁর ব্যক্তিত্ব একটি স্থির বিশ্বাসে দীপ্ত- সেটি হল মানুষের মহত্ব ও পৃথিবীর প্রাণশক্তির উপর প্রত্যয়। আর সেই প্রত্যয় সবচেয়ে বেশি প্রকাশলাভ করেছে তাঁর কাব্যে।
কাব্যের বৈশিষ্ট্যঃ
রবীন্দ্রকাব্যের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিশিষ্ট এর গতিশিলতা ও বিবর্তন। কবিপ্রতিভার উন্মেষ পর্বে গৃহবন্দী কবি মুক্তির আকাঙ্খা ব্যক্ত করেছিলেন। ‘সন্ধ্যা সঙ্গিত’, ‘প্রভাত সঙ্গিত’, প্রতিভার যুগ পেরিয়ে ‘মানসী’, ‘সোনার তরী’, ‘চিত্রা’, পর্বে তাঁর কবি মানস প্রকৃতি ও মানবসংসারে সঙ্গে নব নব পরিচয়ে বিকশিত। গিতাঞ্জলির ঈশ্বরনিষ্ঠ মানবচেতনা ‘ বলাকায় এসে গতির চাঞ্চল্য দূরপথের অভিযাত্রী। ঈশ্বর, মানুষ ও প্রকৃতির সমনয়ে তাঁর যে কবি প্রত্যয় ক্রমবিকশিত হল, জীবনের শেষ পর্বে তা কর্মমুখর মানবসংসারের প্রতি সুতীব্র আকর্ষণের রুপ নিল। রবীন্দ্রনাথে ঠাকুর এর শেষ পর্বের কবিতায় যে মানবপ্রীতি দেখি, তা আমাদের বিস্ময়ে অভিভূত করে। ‘গীতাঞ্জলীর’ মানুষের সঙ্গে এযুগের কর্মী মানুষের লক্ষণীয় পার্থক্য। এখানে আপন শক্তিতে বলিষ্ঠ মানুষ যুগে যুগে সভ্যতার রুপ বদলায়, ইতিহাসের স্রষ্টা এরাই। ‘ঐকতান’, ‘ওরা কাজ করে’, ইত্যাদি কবিতায় শ্রমজীবী মানুষের শ্রমের স্বীকৃতি ঘটেছে ইতিহাসের গতিধারার প্রেক্ষাপটে। রবীন্দ্রনাথের মানবপ্রেমিক কবিসত্তার বিবর্তন জীবনের শেষ পর্যায় অবধি বজায় ছিল। সঙ্গে সঙ্গে কবিতার ছন্দ ও ভাষায় অনবরত পরিক্ষা ও পরিবর্তন। রবীন্দ্রকাব্য ‘পরিশেষ’ বলে কিছু নেই, বার বার দেখা গেছে ‘পুনশ্চের আগমন’।
কবি ও কর্মীঃ
রবীন্দ্রপ্রতিভার মহত্ব ও এদিকে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কর্মধারার মধ্যে। তিনি শুধু ভাবুক ছিলেন না।, ছিলেন অক্লান্ত কর্মী। দেশের ও বিদেশের যে কোন সমস্যায় তিনি ভাবিত। এদেশের অর্থনীতি ও শিক্ষানীতির তিনি ছিলেন নতুন পথপ্রদর্শক। কিন্তু ভাবুক কবির কথায় সেদিন কেউ গুরুত্ব দেয়নি। তিনি নিজে শান্তিনিকেতনে ও শ্রীনিকেতনে নিজের চিন্তাকে কাজে রুপায়িত করার অনলস উদ্যম দেখিয়ে গেছেন।
উপসংহারঃ
কোন দেশেই রবীন্দ্রনাথে ঠাকুর এর মত ব্যক্তিত্ব সুলভ নয়। হাজার বছরের ব্যবধানেও এমন সর্বস্পর্শী মহৎ মানুষের সাক্ষাৎ ঘটেনা। ইদানীং তাই রবীন্দ্র- বিরোধিদের মধ্যেও যে রবীন্দ্রানুরাগ দেখা যাচ্ছে, তাতে আশা হয় দেশবাসী তাঁর কাব্য ও কর্মের মুল্য বুঝতে শুরু করেছে। কবি বলতেন, কবিকে তাঁর জীবনচরিতে পাওয়া যাবে না। ‘জীবনস্মৃতি’, ‘ছেলেবেলা’, ‘আত্মপরিচয়’ প্রভৃতি আত্মচরিতে কবির উপলব্ধি কিভাবে বিভিন্ন ঘাত সঙ্ঘাতের মধ্য দিয়ে পরিনতির পথে এগিয়েছে, তাঁরই সাক্ষাৎ পাই। তাই তাঁর কাব্যের নিবিষ্ট পাঠ এবং কর্মের নিবিড় অনুশীলনই তাকে জানার প্রকৃষ্ট পন্থা। তাঁর কাব্য তথা সমগ্র সাহিত্য পাঠই তাঁর জীবনচরিত পাঠের সমপর্যায়ভুক্ত।
অথবা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ভূমিকা :
যুগে যুগে যে সকল মনীষী জন্ম গ্রহণ করে বাঙালী জাতির মুখোজ্জ্বল করেছেন তাঁদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অন্যতম। তিনি শুধু বাংলার নন, বিশ্বেরও একজন কালজয়ী কবি। কি কাব্য, কি ছোটগল্প, কি প্রবন্ধ, কি ভাষাতত্ত্ব, কি সঙ্গীত, বাংলা সাহিত্যের সর্ববিভাগে তিনি তাঁর যাদুকরী স্পর্শ বুলিয়ে ওর ঐশ্বর্য-ভাণ্ডার পরিপূর্ণ করেছে। বস্তুত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেন একাই একটি যুগ, তাই তাঁর অফুরন্ত দানে বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতি সমৃদ্ধ হয়েছে; বাঙালী জাতি জগতের বুকে শ্রদ্ধার পাত্র হয়েছে। আর বিশেষ আনন্দের কথা যে, আজকের স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশে যে সঙ্গীতটি জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা লাভ করেছে তার স্রষ্টা এই কালজয়ী মহাকবি।
জন্ম ও বংশ পরিচয় :
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আদি ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠাতা ধর্মপ্রাণ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র। তিনি ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫শে বৈশাখ (১৮৬১) কলকাতার মহানগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর কলকাতার তদানীন্তন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের অগ্রগণ্য ছিলেন।
বাল্যাজীবন ও শিক্ষা :
চার বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের শিক্ষারম্ভ হয়। পঞ্চম বর্ষ বয়সেই তিনি সুরু করে মহাভারত পাঠ করে শ্রোতৃবর্গকে চমৎকৃত করতেন। অতি শৈশবেই তাঁর সুতীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও মেধা শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। অষ্টম বর্ষ বয়ঃক্রমকালে তিনি কলকাতা নর্মাল স্কুলে প্রবিষ্ট হন। নর্মাল স্কুলে অধ্যয়নকালে নবম বর্ষ বয়স্ক বালক রবীন্দ্রনাথ কবিতা রচনা করে শিক্ষকমণ্ডলীকে চমৎকৃত করে ছিলেন, তাঁর শিক্ষকদের কবিতা রচনায় তাঁকে উৎসাহিত করতেন।
নর্মাল স্কুলে পাঠ সমাপন করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পিতার সাথে বোলপুর গমন করেন এবং তথা হতে ডালহৌসী পাহাড়ে গিয়ে পিতৃসকাশে সংস্কৃত ব্যাকরণ ও জ্যোতিষ শাস্ত্র শিক্ষা করতে প্রবৃত্ত হন। ষোড়শ বর্ষ বয়সে তিনি মধ্যম অগ্রজ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মস্থল আহমদাবাদ গমন করেন। এই সময় তিনি দাদার বইপত্রের সামনে বসে অভিনিবেশ সহকারে ইংরেজী কবিতা অধ্যয়ন করেন এবং অল্পকালের মধ্যেই ইংরেজী ভাষায় সবিশেষ ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। অতঃপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংল্যাণ্ডে গিয়ে ওখানকার ইউনিভার্সিটি কলেজে লর্ড মর্সির ইংরেজী সাহিত্য বিভাগে যোগদান করেন এবং কয়েক বছরের মধ্যেই পাশ্চাত্য সাহিত্যে জ্ঞান লাভ করেন। অতঃপর ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তাঁর ‘ইউরোপ প্রবাসীর পত্র’ এই সময় রচিত ।
সাহিত্য চর্চা :
ইউরোপ হইতে প্রত্যাবর্তন করিয়া রবীন্দ্রনাথ বাংলাসাহিত্যের অনুশীলনে যত্নবান হন। অল্পদিনের মধ্যে তাঁহার প্রতিভার কথা দেশের সর্বত্র ছড়াইয়া পড়ে। কি উপন্যাস, কি গীতি কবিতা, কি উচ্চ ভাবাপন্ন কবিতা, কি নাটক, কি সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রবন্ধ সর্ববিষয়েই রবীন্দ্রনাথের আশ্চর্য দক্ষতা প্রকাশ পায়।
তাঁহার কবিতা ও গানগুলি সুরুচিপূর্ণ, উচ্চ ভাবব্যঞ্জক ও হৃদয়স্পর্শী। রবীন্দ্রনাথের রোমান্টিক কবিসত্তা কখনও ভাবাবেগের নিশ্চল স্থিতির মধ্যে থামিয়া থাকে নাই। কবি আদর্শ, সৌন্দর্য ও বিশুদ্ধ প্রেমের অনুসন্ধানে সব সময় অতৃপ্তি অনুভব করিয়াছিলেন। কবি-মনের এই অতৃপ্তিতেই তাঁহাকে এক ভাববৃত্ত হইতে অন্য ভাববৃত্তে লইয়া গিয়াছে। রবীন্দ্রকাব্যের সূচনাপর্বে ‘সন্ধ্যাসঙ্গীত’, ‘প্রভান্ত সঙ্গীত’, ‘ছবি ও গান’, ‘কড়ি ও কোমল’ এবং ‘মানসী’ কাব্য রচিত হইয়াছে। বস্তুত, ইহা তাঁহার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্ব।
কিন্তু পরবর্তী পর্বে অর্থাৎ ‘সোনার তরী’ ও ‘চিত্রা’ রচনার যুগে কবি পৃথিবীর সৌন্দর্যসুধায় অবগাহন করিয়াছেন এবং সৌন্দর্যরস সম্ভোগের পরিচয় এই দুই কাব্যের কবিতায় দিয়েছেন। বিশেষত ‘চিত্রাঙদা’ কাব্য-নাটো কবির নিবিড় সৌন্দর্য উপলব্ধি প্রবলতর। পৃথিবীর প্রেম, প্রীতি, ভালবাসা, স্নেহমমতা সবকিছুতেই কবির তীব্র আকর্ষণ লক্ষণীয়। ধরণীর মানুষের জন্য তিনি স্বর্গকে পর্যন্ত পরিত্যাগ রয়েছেন।
তারপর ‘খেয়া’ কাব্য থেকে কবির জীবনের পরবর্তী পর্ব শুরু হয়। কবি ধীরে ধীরে রূপ ও প্রেমের জগৎ থেকে অধ্যাত্মলোকের দিকে যাত্রা আরম্ভ করেন। পরবর্তী পবং ‘গীতাঞ্জলি’ ও ‘গীতিমাল্যের দ্বারা চিহ্নিত। অধ্যাত্ম সাধনা ও তপন প্রেমময়তা এই কবিতাগুলির মধ্যে অভিব্যক্ত হয়েছে। এই সময়ে তিনি দীনহীন দরিদ্রের মধ্যে বিশ্বদেবতাকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন।
পরবর্তী পর্বে বলাকা কাব্য বিরচিত। অধ্যাত্মজগৎ থেকে কবি ফিরে এসে পুনরায় মানুষের জয়গান গেয়ে উঠেছেন এতসঙ্গে কবি জীবনের গতি ও ছন্দ সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। কবি হঠাৎ আত্মসচেতন হয়ে গেয়ে উঠেছেন ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।
শেষ পর্বে লিখেছেন, ‘পরিশেষ’, ‘পুনশ্চ’, ‘সানাই’, ‘নবজাতক’, ‘রোগ শয্যায়’, ‘আরোগ্য’, ‘জন্মদিনে’, ‘শেষ লেখা’ ইত্যাদি। এই কাৰ্য্যগুলির মধ্যে কবির মৃত্যু-চেতনা স্পষ্ট হয়েছে। রবীন্দ্রনাথে থাকুরের কবি-মানস ও কাব্য সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া গেল। এবার প্রসঙ্গান্তরে যাওয়া যাক।
কথা সাহিত্য বা উপন্যাস রচনার ক্ষেত্রেও তিনি তুল্যভাবে কৃতিত্বের অধিকারী। প্রথম জীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্কিমচন্দ্রের অনুসরণে রোমান্স কাহিনী রচনা করেছেন কিন্তু পরে তিনি সামাজিক উপন্যাস রচনা করেন এবং এক্ষেত্রে তার রচনা-কৌশল শ্রেষ্ঠতর। ‘গোরা’ তাঁর শ্রেষ্ঠ উপন্যাস; ‘গোরা’র পর তিনি রচনা করেন ‘চার অধ্যায়’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘যোগাযোগ’, ‘শেষের কবিতা’, ‘মালঞ্চ’, ‘দুই বোন’, ‘চতুরঙ্গ’ প্রভৃতি উপন্যাস। এই উপন্যাসগুলি বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। উপন্যাস ব্যতীত কবি কয়েক শত ছোটগল্পও রচনা করেছেন। গল্পগুলির ভাষার চমৎকারিত্ব ও বর্ণনা-কৌশল প্রশংসনীয়।
রবীন্দ্রনাথের নাট্যাবলীর বিষয়-বৈচিত্র্য অভিনব। তাঁর নাটকগুলি প্রধানত গীতিনাট্য, কাব্যনাট্য, ঋতুনাট্য, সাংকেতিক নাটক, সামাজিক নাটক এবং প্রহসন প্রধান। ‘বাল্মীকি প্রতিভা’, ‘মায়ার খেলা’ প্রভৃতি গীতিনাট্য : ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘নটির পুজা’, ‘চণ্ডালিকা’ প্রভৃতি নৃত্যনাট্য : ‘শেষ বর্ষণ’, ‘বসন্ত’, ‘শ্রাবণ ধারা’, ‘নটরাজ’, ‘ঋতুরঙ্গশালা’ প্রভৃতি ঋতুনাট্য এবং ‘চিরকুমার সভা’, ‘শেষ রক্ষা’ প্রভৃতি প্রহসন রবীন্দ্রনাথের রচনা বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল।
বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথই রূপক সংকেতধর্মী নাটক রচনা করেন। তাঁর সাংকেতিক নাটকের অন্তরালে যে গূঢ় সত্য লুক্কায়িত থাকে তা বাংলা সাহিত্যে সম্পূর্ণ নতুন এবং অভিনব। যাই হক, রবীন্দ্রনাথের লোকোত্তর কবি-প্রতিভার পরিচয় পেয়ে অবশেষে পাশ্চাত্য জগৎ ১৯১৩ খ্রীস্টাব্দে তাঁর ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য বিশ্ববিশ্রুত ‘নোবেল প্রাইজ’ পুরস্কারস্বরূপ প্রদান করে তাঁকে সম্মানিত করেন।
ইউরোপ থেকে প্রত্যাবর্তন করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমেরিকা চলে যায়। সেখান থেকে বিপুল সম্মান লাভ করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘ডক্টর অব লিটারেচার’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯১৫ খ্রীস্টাব্দে ইংরেজ গভর্নমেন্ট তাঁকে ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৪০ খ্রীস্টাব্দে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে ‘ডি লিট’ উপাধি প্রদান করা হয়। ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট ৮১ বছর বয়সে কবি পরলোকগমন করেন।
তাঁহার অবদান :
দীনা বাংলা সাহিত্য আজ বিশ্বসাহিত্যের রাজসভায় আসন পেয়েছে। এর মূলে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর সাহিত্যিক অবদান। বাণীর বরপুত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সারা জীবন একনিষ্ঠ সাধনায় লেখনী চালনা করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের মর্যাদা বারিয়ে দিয়েছেন। তাঁর অফুরন্ত দানের কথা বক্ষ্যমান ক্ষুদ্র প্রবন্ধে বলে শেষ করা যাবে না। শুধু একটি কথা বললে যথেষ্ট হবে যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবির্ভাব না ঘটলে বাংলা সাহিত্য আজ গৌরবময় ঐতিহ্যের অধিকারী হত না।
উপসংহার :
রবীন্দ্রনাথের কবিত্বশক্তি ও প্রতিভা সম্বন্ধে বেশি কিছু বলা নিষ্প্রয়োজন। বাংলা সাহিত্যের সকল বিভাগে তাঁর দান অতুলনীয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্যক্তিত্বে রবীন্দ্রনাথের একটি শালীনতাবোধ ছিল। তাই যিনি একবার তাঁর সান্নিধ্যে এসেছেন তিনি সারা জীবন কিছুতেই কবিকে ভুলতে পারেন নি।
কবি গুরু রবীন্দ্র ঠাকুর সম্পর্কিত যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর এখানে