মাতৃভাষাকে উচ্চশিক্ষা এর বাহনরূপে গ্রহণ করা উচিত – সম্পাদকের কাছে একটি পত্র লেখাে
মাতৃভাষাকে উচ্চশিক্ষার বাহনরূপে গ্রহণ করা উচিত'—এই মতের সমর্থনে তােমার বক্তব্য জানিয়ে দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকের কাছে একটি পত্র লেখাে।

মাতৃভাষাকে উচ্চশিক্ষাঃ এই পোষ্টে সুপ্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুদের জন্য মাতৃভাষাকে উচ্চশিক্ষার বাহনরূপে গ্রহণ করা উচিত’—এই মতের সমর্থনে তােমার বক্তব্য জানিয়ে দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকের কাছে একটি পত্র শেয়ার করা হল। বিভিন্ন পরীক্ষায় এই পত্র রচনাটি কাজে আসবে। এটিও পড়ুন – ইংরেজি রিপাের্ট লেখার সঠিক নিয়মাবলী
মাতৃভাষাকে উচ্চশিক্ষা এর বাহনরূপে গ্রহণ করা উচিত
মাননীয় সম্পাদক মহাশয় সমীপেষু
উত্তরবঙ্গ পত্রিকা
৬, প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
শিলিগুড়ি-
সবিনয় নিবেদন,
গত ১৩ মার্চ আপনার পত্রিকায় ‘মাতৃভাষা ও উচ্চশিক্ষা শিরােনামে যে সম্পাদকীয় নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে তা অত্যন্ত সময়ােপযােগী এবং তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করি। উচ্চশিক্ষালাভের ক্ষেত্রে মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে আমারও কিছু বক্তব্য এই প্রসঙ্গে নিবেদন করতে চাই। নিজের মাতৃভাষাতেই মানুষ সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছন্দ। অন্য ভাষাতে তার যতই
অধিকার অর্জিত হােক না কেন, স্বতঃস্ফূর্ত ভাববিনিময়ের ক্ষেত্রে মাতৃভাষার কোনাে বিকল্প নেই। জন্মের পর থেকে মানুষ যে-ভাষাপরিবেশে বড় হয়ে ওঠে, যে-ভাষার সঙ্গে তার নাড়ির যােগ, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবেও সেই ভাষা সবচেয়ে উপযােগী। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আমাদের দেশে বিদ্যালয় স্তরে মাতৃভাষা গুরুত্ব পেলেও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এখনও তা অবহেলিত। অনেকে যুক্তি দেখান, আমাদের মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষার জন্য প্রয়ােজনীয় বইপত্রের একান্ত অভাব। সে কারণে বাধ্য হয়ে ইংরেজিকেই উচ্চশিক্ষার বাহনরূপে গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু এই যুক্তি আসলে আলস্যজড়িত আগ্রহহীনতার নামান্তর। সদিচ্ছা থাকলে প্রয়ােজনীয় বইপত্র মাতৃভাষায় অনুবাদ করা অসম্ভব নয়। তা ছাড়া অনেক যােগ্য ব্যক্তি আছেন যারা অনায়াসে জ্ঞান বিজ্ঞানের দুরূহ বিষয়কে নিজের নিজের মাতৃভাষায় আলােচনা করতে সক্ষম। পৃথিবীতে এমন অনেক উন্নত দেশ আছে যেখানে উচ্চশিক্ষার মাধ্যম মাতৃভাষা। অন্য দেশের মানুষ যদি পারে, তবে আমরাই বা পারব না কেন? স্বীকার করি, প্রথম দিকে হয়তাে কিছু কিছু সমস্যা দেখা দেবে। কিন্তু সমস্যার ভয়ে পিছিয়ে থাকলে কোনােদিনই আর এগােতে পারব না। কাজে নেমে সমস্যাকে অতিক্রম করার প্রচেষ্টার মধ্যেই আছে যথার্থ প্রগতিশীলতা।
উচ্চশিক্ষালাভের ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থীর কাছে পরদেশি ভাষা একটা বিশেষ বাধা হয়ে দেখা দেয়। নিজের ভাষায় শিক্ষণীয় বিষয় যত ভালােভাবে আয়ত্ত করা সম্ভব, অন্য ভাষায় ততখানি সম্ভব নয়। যার ফলে অনেক সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থী অনেক সময় ভাষাগত দুর্বলতার কারণে তাদের মেধার সম্পূর্ণ পরিচয় দিতে পারে না।
মাতৃভাষার মাধ্যমে মানুষের চিন্তাশক্তি ও বিশ্লেষণীশক্তি বিকশিত হবার সুযােগ পায় অনেক বেশি। আত্মপ্রকাশের যথার্থ স্বাচ্ছন্দ্যও আছে মাতৃভাষায়। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “দূরদেশী ভাষার থেকে আমরা বাতির আলাে সংগ্রহ করতে পারি মাত্র, কিন্তু আত্মপ্রকাশের জন্য প্রভাত-আলাে বিকীর্ণ হয় আপন ভাষায়।” উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে এই আপন ভাষার প্রভাত-আলাে’ অত্যন্ত প্রয়ােজনীয়।
পরাধীন ভারতবর্ষে উচ্চশিক্ষার একমাত্র মাধ্যম ছিল ইংরেজি। বর্তমানে অবশ্য এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষার স্বীকৃতি মিলেছে। কিন্তু ভালাে করে অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, উচ্চশিক্ষায় মাতৃভাষার প্রবেশ এখনও যেন কিছুটা কুণ্ঠিত। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, কয়েক বছর আগে একজন গবেষক বাংলায় লেখা গণিতের একটি গবেষণাপত্র জমা দিয়েছিলেন। উচ্চমানের গবেষণাপত্রটি কেবল বাংলায় লেখা বলে বেশ সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে, উচ্চশিক্ষায় মাতৃভাষাকে এখনও যথাযােগ্য মর্যাদা দেওয়া হয়নি। মাতৃভাষাকে মর্যাদা দেওয়া মানে কিন্তু ইংরেজি বর্জন করা নয়। ইংরেজি আমাদের খুবই প্রয়ােজন। শুধু ইংরেজি কেন, ইংরেজির সঙ্গে যদি কেউ আরও কিছু বিদেশি ভাষা আয়ত্ত করতে পারেন তবে তা নিশ্চয়ই বিদ্যাচর্চার বিশেষ সহায়ক হবে। দূরের জানালা সব সময়েই অবারিত রাখা দরকার। কিন্তু মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করে অন্য ভাষাকে বিদ্যাচর্চার মাধ্যম করলে তাতে লাভের থেকে লােকসানের সম্ভাবনাই বেশি। কেননা মাতৃভাষাতে আমাদের মন ও মননের অনুশীলন যতখানি সুচারুরূপে হতে পারে, বিদেশি ভাষাতে তা কখনােই সম্ভব নয়। এই সহজ সত্যটি আমাদের সকলেরই উপলদ্ধি করা দরকার।
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে শুধু কাগজে-কলমে মাতৃভাষার স্বীকৃতি থাকলে চলবে না। বাস্তবে তার প্রয়ােগ প্রয়ােজন। এর জন্য শুধু সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিদের সক্রিয়তাতে কাজ হবে না, এগিয়ে আসতে হবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকেও। যােগ্য পণ্ডিতজনকে ফিরে তাকাতে হবে নিজের নিজের মাতৃভাষার দিকে।
নমস্কারান্তে
বিনীত
অভিনব ঘােষ।
গদাধরপুর, বীরভূম
এগুলিও পড়ুন –
ট্যাগঃ মাতৃভাষাকে উচ্চশিক্ষা