মনীষীদের জীবনচরিত পাঠের উপযােগিতা নিয়ে বন্ধুর কাছে চিঠি লেখাে।
মনীষীদের জীবনী পাঠের উপকার জানিয়ে বন্ধু কিংবা বান্ধবীকে পত্র

মনীষীদের জীবনচরিতঃ জীবনী পাঠের গুরুত্ব জানিয়ে ছোট ভাই / বোন অথবা বন্ধু / বান্ধবীকে পত্র। অথবা মনীষীদের জীবনী পাঠের উপকার জানিয়ে বন্ধু কিংবা বান্ধবীকে পত্র।
মনীষীদের জীবনচরিত পাঠের উপযােগিতা নিয়ে বন্ধুর কাছে চিঠি লেখাে
কুশমণ্ডি, দক্ষিণ দিনাজপুর
২০ মে, ২০২০
বন্ধুবরেষু
সুরেশ, আজকে তাের চিঠি পেলাম। তুই লিখেছিস যে, মনীষীদের জীবনচরিত পাঠ সম্পর্কে তাের কোনাে আগ্রহ নেই। এতে নাকি শুধু শুধু সময় নষ্ট হয়। কিন্তু অশােক, তাের এই কথা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না। এ বিষয়ে আমার মত সম্পূর্ণ আলাদা। আমি মনে করি মনীষীদের জীবনচরিত পাঠ খুবই প্রয়ােজন।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে যারা মনীষীরূপে চিহ্নিত হয়ে থাকেন, তাঁদের জীবন আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতাে নয়। সহজাত প্রতিভার সঙ্গে কঠোর অধ্যবসায়, ধৈর্য ও সংযম যুক্ত হওয়ার ফলে কোনাে কোনাে মানুষ জ্ঞানসাধনার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে ওঠেন। কিন্তু কেবল জ্ঞানের চর্চা নয়, এইসব জ্ঞানতপস্বী কখনও প্রত্যক্ষভাবে, কখনও পরােক্ষভাবে বৃহত্তর মানবকল্যাণের সঙ্গেও যুক্ত থাকেন। সেজন্যই মানুষ তাদের মনে রাখে, বসিয়ে রাখে শ্রদ্ধার আসনে।
যাদের আমরা মনীষী বলে জানি, তাদের কেউ কেউ নিজেরাই নিজেদের জীবনচরিত লিখে গেছেন। আর যারা নিজেরা লেখেননি, তাদের হয়ে লিখেছেন অন্যরা। আত্মচরিতই হােক বা অন্যের লেখা জীবনীই হােক, প্রখ্যাত মনীষীদের প্রায় সকলেরই জীবনী আছে। এই জীবনীগ্রন্থগুলি পড়লে শুধু যে মনীষীদের জীবনের ইতিবৃত্ত জানা যায় তাই নয়, তাদের জীবন আমাদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করে। তাদের ত্যাগ, নিষ্ঠা, আত্মপ্রত্যয় আমাদের প্রেরণার অন্যতম উৎস হয়ে ওঠে। আমরা অনেক সময় বুঝে উঠতে পারি না জীবনের আদর্শ কী হওয়া উচিত। সেজন্য আমরা অনেকে জীবনপথে চলতে চলতে দিশা হারিয়ে ফেলি। মনীষীদের জীবনী আমাদের সেই দিশাহারা অবস্থায় দিক-নির্দেশকের ভূমিকা পালন করে। মনীষীদের জীবনচরিত পাঠে আমরা যে সবাই মনীষী হয়ে উঠব তা নয়, কিন্তু সাধারণ মানুষের সাধারণ জীবনযাপনের ক্ষেত্রেও প্রয়ােজন হয় নানান প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে এগিয়ে চলার। মনীষীদের জীবনকাহিনি থেকে আমরা সেই এগিয়ে চলার মন্ত্রে উজ্জীবিত হবার শিক্ষা পাই। বুঝতে পারি কীভাবে কঠিন সংকটকে অতিক্রম করে লক্ষ্যে পৌছােতে হয়। মনীষীরা কেবল জ্ঞানসাধক নন, ব্যাপক অর্থে তারা জীবনসাধক। তাদের জীবনচরিতে পাই জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তােলার অনুপ্রেরণা। আমি মনে করি, ব্যক্তিত্ব গঠনের ক্ষেত্রেও এই ধরনের জীবনী-পাঠ বিশেষ সহায়ক। মনীষীদের সকলেই সৎ সাহস, সততা, আত্মমর্যাদাবােধ প্রভৃতি গুণের অধিকারী হয়ে থাকেন। তাদের জীবনচরিতে যখন আমরা। এই গুণাবলির কথা পড়ি তখন কোনাে না কোনােভাবে আমাদের মধ্যে তার প্রভাব। পড়ে। মনীষীদের জীবনচরিত পাঠের আর একটি গুরুত্বের কথা উল্লেখ করা দরকার।
লক্ষ করলে দেখা যায়, এই ধরনের জীবনচরিত কেবলমাত্র একটি মানুষের ব্যক্তিগত কাহিনি নয়। এতে দেশ-কালের বহু প্রসঙ্গ জড়িয়ে থাকে। বহু ব্যক্তি, বহু ঘটনা ও বহু বিষয়ের প্রাসঙ্গিক উল্লেখ ও আলােচনা থাকার জন্য এই জীবনচরিতগুলি অনেক সময় দেশ-কালের ঐতিহাসিক দলিল হয়ে ওঠে। সেজন্য মনীষীদের জীবনচরিত পাঠ আমাদের ইতিহাস-চেতনাকেও প্রসারিত করে। এছাড়াও এইসব জীবনীগ্রন্থ নানাভাবে আমাদের জীবনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে থাকে।
সুরেশ, তাের সঙ্গে দেখা হলে এ নিয়ে আরও কথাবার্তা হতে পারে। আমি চাই মনীষীদের জীবনচরিত পাঠ সম্পর্কে তাের ধারণার পরিবর্তন ঘটুক। কয়েক দিনের মধ্যেই তাের কাছে একটি ছােট্ট বই পাঠাচ্ছি। বইটির নাম “বিদ্যাসাগর’, লিখেছেন শঙ্খ ঘােষ। আমার অনুরােধ, কষ্ট করে হলেও একবার পড়ে দেখিস। আজ এখানেই শেষ করছি।
ইতি
কমল
প্রেরক :
কমল রায় কুশমণ্ডি উত্তর দিনাজপুর |
ডাকটিকিট প্রাপক : সুরেশ দাস দেবীনগর পাে : দেবীনগর, রায়গঞ্জ জেলা : উত্তর দিনাজপুর |
এটিও পড়ুন –