বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য প্রবন্ধ রচনা

অনুচ্ছেদ সমূহ
বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যঃ বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য প্রবন্ধ রচনা নিয়ে এই পোস্টে। প্রিয় শিক্ষার্থীদের অনুরোধে এই প্রবন্ধ রচনাটি শেয়ার করা হল। আশা করি সকল শিক্ষার্থী বন্ধুদের কাজে আসবে । এই প্রবন্ধ রচনা উপর বেস করে আর কী কী প্রবন্ধ লেখা যায় তা আলোচনা করা হয়েছে। এটিও পড়ুন – ভারতের জাতীয় সংহতি প্রবন্ধ রচনা
অনুরূপ প্রবন্ধ ও জাতীয় সংহতি ; বিচ্ছিন্নতাবাদ ও তার প্রতিকার, Unity in diversity।
বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য
|প্রসঙ্গসূত্র ভূমিকা, প্রাচীন ভারতে ঐক্য ; ভারত দ্বিখণ্ডিত; অনৈকোর প্রচেষ্টা ; ঐকোর সামা প্রতিষ্ঠা সরকারের প্রতি আনুগত্য; জাতীয় দিন পালন; মেলা উপসংহার।]
বল মূর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী, ব্রাহ্মণ ভারতবাসী, চণ্ডাল ভারতবাসী আমার ভাই।” স্বামী বিবেকানন্দ
‘নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান
বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান।’
সূচনাঃ
ভারতের বিভিন্ন ভাষাভার্থী মানুষের বাস, তাদের বিভিন্ন ধর্ম, পােশাক-পরিচ্ছদে বৈচিত্রোের অন্ত নেই, তবুও অনৈক্যের মধ্যে একটা ঐক্য আছে। এই বৈচিত্রের মাঝে
প্রাচীন ভারতের ঐক্য
ভারতে আর্য-অনার্য সম্মিলন ঘটেছে, শক হণ দল পাঠান মােগল ভারতের বুকে মিলে মিশে লীন হয়েছে। ‘পঞ্জাব-সিন্ধু-গুজরাট-মারাঠা দ্রাবিড় উৎকল বঙ্গ অঞ্চলবিশেষ ভারতে একত্রাভূত। বিভিন্ন জাতি একের অনলে বহুরে আহুতি দিয়া, বিভেদ ভুলিল জাগায়ে তুলিল একটি বিরাট হিয়া। সুদূর প্রাচীনকাল থেকে ভারতের বুকে এই মহামিলন ক্রিয়া চলে আসছে। দেশ-বিদেশ থেকে বিভিন্ন জাতি ভারতে এসে ভারতবাসী বনে গেছে।
ভারত দ্বিখণ্ডিত
ভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের বিভিন্ন প্রদেশের মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামের শামিল হয়েছিল। কিন্তু ইংরেজ সরকারের ষড়যয়ে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রে ভারতকে দ্বিখণ্ডিত করে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। ভারতের মর্মবাণী ঐক্য ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। দেশবিভাগের অব্যবহিত পরেই শুরু হয় হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিদ্বেষ ও হানাহানি। এই বর্ণ-বিছেম শাস্ত হলেও মাঝে মাঝে মাথা চাড়া দেয়।
অনৈক্যের প্রচেষ্টা
স্বাধীনতার পর ভারতের আন্তঃরাজ্য ভয়াবহ বিচ্ছিন্নতাবাদ প্রকট হয়েছে। তেলেঙ্গানায় ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠনের আন্দোলন সর্বজনবিদিত। রাষ্ট্রভাষা হিন্দির বিরুদ্ধে তারা রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে নামে। ভাষাগত সংকীর্ণতায় পঞ্জাব ও হরিয়ানা দ্বিখণ্ডিত হয়। অসমে বিদেশী বিতাড়নের নামে চলেছে বাঙালী নিধন যজ্ঞ। বিদেশী সাহায্যপুষ্ট খালিস্তানীরা নির্বিচারে নরনারী হত্যা করে হাত কলঙ্কিত করছে। দার্জিলিং-এর পার্বত্য জাতির গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন, সাওতাল গােষ্ঠীর ঝাড়খণ্ড আন্দোলন ঐক্যের পরিপন্থী। ভারতের জাতীয় ঐক্য বা সংহতি আজ বিপন্ন।
এটিও পড়ুন – বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য প্রবন্ধ রচনা PDF সহ
ঐক্যের উপায়
আজ নতুন করে জাতীয় ঐক্য পুনরুদ্ধারের প্রয়ােজনীয়তা দেখা দিয়েছে। প্রকৃত শিক্ষা জাতীয় ঐক্য রক্ষা করতে পারে। ভারত-সংস্কৃতির মহিমা উপলব্ধি করলে মানুষ প্রীতির বাধনে আবদ্ধ হবে। মহাপুরুষদের মিলন-বাণী ঐক্যের অনুকল।
জাতীয় ঐক্যের মূলকথা সামাজিক ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক সমতা। দেশের মুষ্টিমেয় মানুষের উন্নতি শুধু নয়, দেশের সকল মানুষের কল্যাণ, দারিদ্র্যমুক্তি ও ন্যূনতম চাহিদা পূরণ না হলে ঐক্যের প্রশ্ন ওঠে না। জাতিবর্ণ-নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার বা মর্যাদা দান আশু প্রয়ােজন।
আনুগত্য
নির্বাচিত সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রয়ােজন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে সহনশীলতা, সরকারের প্রতি পারস্পরিক সহযােগিতা জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করে। ভারতের সংবিধানের প্রতি মর্যাদা জাতীয় ঐক্যের রক্ষাকবচ।
স্বাধীনতা দিবস ও প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রচারে জাতীয়তাবােধের সঙ্গে মানুষের ঐক্য ভাব জাতীয় দিন পালন জাগে, জাতীয় সংগীত স্বদেশ মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করে।
মেলা ও ভ্রমণ
রাজ্যে রাজ্যে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক মেলার প্রচলন করলে আঞ্চলিক মানুষ মিলিত হয়ে ভাব বিনিময় করতে পারে। তাতে মৈত্রী গড়ে ওঠে। পর্যটন শিল্পের প্রসারে এক অঞ্চলের মানুষ অন্য অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে।
উপসংহার
ভারতের মাটি শুধু মাটি মাত্র নয়, ‘ভারত জননী’, ‘দেশ মাতৃকা’। এই দেশের সব অঞ্চলের অধিবাসীই আমার ভাই, আমার আত্মীয় এই ভাব জাগাতে পারলে জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় হবে।
এগুলিও পড়ুন –
“রাষ্ট্রভাষা হিন্দী”-র মতো অসাংবিধানিক বক্তব্যকে ধিক্কার জানাই। ভারতের অনেক বৈচিত্র্যের মধ্যে এটাও একটা।