
বন্যা সমস্যা ও প্রতিকার: বন্যা সমস্যার একটি আরও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হল বন্যা প্রভাবিত অঞ্চলের জন্য উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পদ নষ্ট হওয়া। এই সমস্যার সমাধান হল উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পদ সংরক্ষণের জন্য বন্যা সংরক্ষণ প্রকল্পের উন্নয়ন।
বন্যা প্রতিরোধের জন্য, স্থানীয় সরকার ও অন্যান্য সংস্থাগুলি বন্যা প্রতিরোধের জন্য নির্দিষ্ট করে কর্মসূচি গ্রহণ করছে। এছাড়াও, সুষ্ঠু বন্যা পূর্বাভাস এবং বিশ্লেষণ পরিচালনায় দক্ষ মানব কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বন্যা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলি সরবরাহ করা হয়েছে, যেমন বন্যা বিপদ নির্দেশক পদক্ষেপ।
এছাড়াও, বন্যা সমস্যার সমাধানের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ এবং বাণিজ্যের উন্নয়নের মধ্যে সমন্বয় করা প্রয়োজন। এই সমস্যার সমাধানের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ প্রকল্পে অবদান রাখা হচ্ছে, যেমন বন্যা প্রাকৃতিক প্রতিরোধ বিধ্বস্ত করা।
বন্যা কী?
বন্যা হলো একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা জলপ্রপাত, জমিদারির ভাঙচুর কর্তব্য, নামধাম ও আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে ঘটে। এটি সাধারণত উপস্থিতি ও বাণিজ্য সংক্রান্ত কাজে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত করে। বন্যা সাধারণত আমাদের জীবনকে জটিল ও অস্থির করে তুলে ধরে। এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হওয়া সাথে সাথে সামাজিক, আর্থিক এবং রাজনৈতিক সমস্যার উৎপন্ন করে। তবে বন্যা সমস্যার সমাধান ও প্রতিরোধের ক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে এবং একটি পরিস্থিতির উপকারী সম্ভাবনাও রয়েছে।
বাংলাদেশের বন্যা সমস্যা ও প্রতিকার
সূচনা : বাংলাদেশ নদীবহুল দেশ। কাজেই বর্ষা ঋতুতে এই নদীগুলি যখন অতিরিক্ত জলোচ্ছ্বাসে গ্রাম ও নগর ভাসিয়ে ফসল নষ্ট করে অগ্রসর হয়, তখন মানুষ আতঙ্কে দিন গণনা করতে থাকে। এ বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে এক অভিশাপ বিশেষ।
বন্যার কারণ :
বন্যার কারণ নানাবিধ। প্রথমত, অতি বর্ষণের ফলে জল নদ-নদী, খাল-বিল, ডোবা-নালা, মাঠ-প্রান্তর ছাপিয়ে গ্রামান্তরে প্রবেশ করে। দ্বিতীয়ত, হিমালয় পর্বতের তুষার রাশি পলিত হয়ে নিম্নভূমির দিকে ধাবিত হয় এবং ওই নদীতে মিসে বন্যার আকার ধারণ করে। কেউ কেউ অনুমান করেন আসামের প্রবল ভূমিকম্প বাংলাদেশের বন্যার একমাত্র কারণ। ভূ-তত্ত্ববিদরা অনুমান করেছেন আসামের বিগত ভূমিকম্পের ফলে বাংলাদেশের নদীগুলির তলদেশ অনেকখানি উচ্চতা প্রাপ্ত হয়েছে। এতদ্ব্যতীত বিগত কয়েক বছর নদীগর্তে কোন সংস্কার সাধিত হয় নি। তার ফলে নদীগর্ভ ভরাট হতে চলেছে। বন্যা হলে জল নদীনালা ছাপিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে। আগে নদীগর্তগুলির সংস্কার সাধিত হত; তখন বন্যা কখনও এমন মারাত্মক আকার ধারণ করত না।
১৯৫৪, ১৯৫৫, ১৯৫৮, ১৯৬৪, ১৯৭০ ও ১৯৭৪ সালের বন্যা মানুষের মনে এখনও বিভীষিকারূপে বিরাজ করছে। ১৯৮৭ সালের বন্যার ধাক্কা সামলিয়ে না উঠতেই আবার ১৯৮৮ সালে ব্যাপক আকারে সারাদেশব্যাপী বন্যা প্রলয়ংকরী রূপ -নিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে বন্যা যেন আমাদের দেশে একটি নিয়মিত দুর্যোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর হাজার হাজার বাড়িঘর নষ্ট হচ্ছে, সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, বিপুল প্রাণহানি ঘটছে। এদিক দিয়ে দেশের আর্থিক ক্ষতি সুবিপুল। ১৯৮৮ সালের বন্যা সর্বগ্রাসী হয়েছিল। জল রাজধানী ঢাকা শহরে প্রবেশ করেছিল। জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে আরম্ভ করে শহরের নানা অভিজাত এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, শিল্প এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল।
দেশী ও বিদেশী বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, বাংলাদেশের বন্যা বহুমুখী ও ভয়াবহ। এর কারণও অনেক। ১৯৮৮ সালের বন্যা ছিল স্মরণাতীতকালের মধ্যে ভয়াবহ। এই বন্যার ভয়াল মূর্তি ও ভয়াবহতার মোকাবেলায় ঢাকা ও এর কাছের অঞ্চলের মানুষজন এবং দেশের অন্য প্রান্তরে জনগণ সাহস ও আত্মপ্রত্যয় দেখিয়ে ঐক্যের পরিচয় দিয়েছে। ১৯৮৮ সালের সর্বনাশা বন্যায় পাঁচ কোটি লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
বন্যায় দুর্ভোগ :
আষাঢ়-শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল। আষাঢ়ের শুরু হতেই সমস্ত আকাশ মেঘাবৃত থাকে এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিপাত আরম্ভ হয়। বর্ষার প্রারম্ভেই আসাম ও পরে উত্তর বাংলা বন্যায় প্লাবিত হয়। তন্মধ্যে পাবনা, বগুড়া, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, সিলেট, রংপুর প্রভৃতি অঞ্চলে বন্যা ভীষণ আকার ধারণ করে। বর্ষার জল ক্রমশ স্ফীত হয়ে নদ-নদী, ডোবা-নালা, রাস্তা ঘাট, বন-জঙ্গল, ক্ষেত-খামার জলে ভাসিয়ে দেয়; পরে বারিঘর জলমগ্ন হয়ে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। কারও ঘর ভেঙ্গে পড়ে; বেড়া ভেসে যায়, ভেড়া, গরু, মহিষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। গরীব কিষাণ-কিষাণি খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে না। তারা খাদ্যাভাবে অস্থি চর্মসার হয়ে পড়ে। বন্যার ফলে গৃহস্থের দুর্দশা হয় অবর্ণনীয়।
বন্যার কবলে পড়ে সাপে-মানুষে একসঙ্গে বাস করছে। জন্তু জানোয়ারগুলি উঁচু ডাঙ্গায় আশ্রয় নেয়। বন্যায় বহু প্রাণী জলে ডুবে মরে। কোন কোন স্থানে শিশু মায়ের কোলে থেকে গড়িয়ে পড়ে মারা যায়; কেউবা মাছের ঝান্টানি ভেবে নিজের ছেলের বুকে কোচ বিদ্ধ করে।
বন্যার ফলে কত যে পাকা ধানের ক্ষেত, পাটের ক্ষেত সলিল সমাধি প্রাপ্ত হয় তার ইয়ত্তা নেই। এই সময় শহরেও লোকের দুঃখ-দুর্গতি চরম আকার ধারণ করে।
সরকারী ও বেসরকারী সাহায্যের ব্যবস্থা :
বন্যার কবলে পড়ে বহু লোক প্রাণ হারায়। যারা বেঁচে থাকে, তারা অর্ধাহারে, অনাহারে কঙ্কাল সার হয়ে পড়ে; কতজন অখাদ্য আহার করে প্রাণ বাঁচাতে চেষ্টা করে। তার পরিণাম অন্যরূপ ধারণ করে। দেশে মহামারীর হিড়িক পড়ে। ঐ সকল এলাকায় সাহায্যের জন্য নানাদেশের মেডিক্যাল মিশন, রেডক্রস মিশন আসে। তারা গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। সংক্রামক ব্যাধি যাতে মহামারীরূপে দেখা দিতে না পারে, সেইজন্য সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে ঔষধ ও ইনজেকশন বিতরণ করা হয়। তারা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ সংগ্রহ করে ও বন্যাপীড়িত ব্যক্তিদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা (প্রতিকার) :
বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য আশু ব্যবস্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ করে জাগায় জাগায় বিশাল জলাধারের সাহায্যে বন্যাকে প্রতিরোধ করা হয়েছে। প্রবল বারিপাতের ফলে নদীর পানি স্ফীত হয়ে গড়িয়ে পড়ে। সেই জলধারাকে যদি বিশাল জলাধারে সঞ্চিত করে রাখা হয়, তবে বন্যাকে প্রতিরোধ করা যায়। পক্ষান্তরে গ্রীষ্মকালে সেই সঞ্চিত জল কৃত্রিম খালের সাহায্যে কৃষিক্ষেত্রে দেওয়ার জন্য সুবন্দোবস্ত করা হয়। এও সত্য যে বহুকাল পর্যন্ত বাংলাদেশের নদীগুলির কোন সংস্কার সাধন করা হয় নি; সেইজন্য বর্ষার প্রারম্ভেই – এর ভরাট হয়ে প্লাবনের সৃষ্টি হয়। আধুনিক ‘ড্রেজার মেশিন’ দ্বারা এর সংস্কার সাধন করা যাতে পারে। বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হলে সার্ক অন্তর্ভুক্ত দেশগুলির আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রয়োজন। জাতিসংঘ ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের বন্যা সমস্যার সমাধানে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। জাতিসংঘ দুর্যোগ ত্রাণ সংস্থার প্রধান মিঃ ইসাফী বন্যার সময় বন্যার ভয়াবহতা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করার জন্য এদেশে আসেন। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্ব ব্যাংক ও আই. এম. এফ. বাংলাদেশের বন্যা সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, ইতালি, ইরাক, সৌদি আরব এবং অন্যান্য ভ্রাতৃপ্রতিম দেশগুলি বাংলাদেশের বন্যা সমস্যা সমাধানে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়াছেন।
বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের কর্মপ্রয়াস যতই ব্যাপকতর হোক না কেন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ সূত্রটি কিন্তু আমাদের আয়ত্তে নেই। নিয়ন্ত্রণের উৎসমূল রয়েছে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানার বাইরে ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনে। সরকারী পর্যায়ে মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে ২৬ দফা কর্মসূচী তৈরি করা হয়েছে ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ওর বাস্তবায়নের নির্দেশ নেওয়া হয়েছে।
উপসংহারঃ
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাছে মানুষের বুদ্ধি ও শক্তি নিতান্তই সীমাবদ্ধ। কিন্তু তাই বলে এই বৈজ্ঞানিক যুগে দৈবের উপর সব কিছু ছেড়ে দিয়ে বসে থাকলে চলবে না। তার প্রতিরোধের উপযুক্ত চেষ্টা করতে হবে। তবেই আমাদের দেশ বন্যা ও প্লাবনের হাত থেকে রক্ষা পাবে। লক্ষ লক্ষ নর নারীর বেদনাঘন মন আনন্দে ভড়ে উঠবে। সুখ-শান্তিতে তারা বাস করতে পারবে। দেশ ধনধান্যে পুনরায় ভড়ে উঠবে।
ট্যাগ- বন্যা সমস্যা ও প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা, বন্যা সমস্যা ও প্রতিকার নিয়ে রচনা।