ফুল ও ফল এবং শাক সবজি চাষ পদ্ধতি ও সংরক্ষণ
ফুল ও ফল চাষ এবং সংরক্ষণ এবং শাক-সবজির চাষ এর সঠিক পদ্ধতি

ফুল ও ফল এবং শাক সবজি চাষ সম্পর্কে আমাদের সকলের কম বেশি জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। সেজন্য অনেক পাঠক ও পাঠিকাদের অনুরোধে ফুল ও ফল চাষ এবং সংরক্ষণ নিয়ে পোস্ট শেয়ার করা হল। এই পোষ্টে কোন মাসে কোন শাক-সবজির চাষ করা হয় এবং কিভাবে চাষ করলে লাভবান হবেন তা বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
ফুল বা পুষ্প হল উদ্ভিদের বিশেষ একটি মৌসুমী অঙ্গ যা উদ্ভিদের প্রজননে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি উদ্ভিদের পরিবর্তিত বিটপ। ফুল এর সৌন্দর্যের জন্য জনপ্রিয়। ফুল থেকে উদ্ভিদের ফল হয়।
ফুল ও ফল এবং শাক সবজি চাষ পদ্ধতি ও সংরক্ষণ
আমরা যে সব শাক, ফল-মূল ইত্যাদি রান্না করে খাই তাদের সাধারণভাবে শাক-সবজি বলে। শাক হল—পালং, লাল শাক, নটে, পুনকো, কলমি, পুই ইত্যাদি। সবজি হল—আলু, বেগুন, ঢেড়স, পটল, মুলাে, ঝিঙে, কপি, বিট, গাজর, টম্যাটো, সিম ইত্যাদি।
বপনকাল অনুসারে শাক-সবজিকে নিম্নরূপ শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে, যেমন-
গ্রীষ্মকালীন (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস) : আলু, ঝিঙে, টেঁড়স, লাউ, পুই, বরবটি, লঙ্কা, কুমড়াে, পটল ইত্যাদি।
বর্ষাকালীন (আষাঢ়-শ্রাবণ মাস) : ফুলকপি, বাঁধাকপি, টেড়স, টম্যাটো, বেগুন, নটে, মুলাে, গাজর, শালগম, বিট ইত্যাদি।
শরৎকালীন (ভাদ্র-আশ্বিন মাস) : ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁয়াজ, লাউ, পালং, লঙ্কা ইত্যাদি।
হেমন্তকালীন (কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাস) : বিট, গাজর, কড়াইশুটি, পেঁয়াজ, মুলাে, আলু, পটল ইত্যাদি।
শীতকালীন (পৌষ-মাঘ মাস) : পেঁপে, তরমুজ, ফুটি, শসা, লঙ্কা, বেগুন, উচ্ছে, ঝিঙে ইত্যাদি।
বসন্তকালীন (ফাল্গুন-চৈত্র মাস) : বেগুন, নটে, কুমড়া, পুই, লঙ্কা ইত্যাদি।
সবজি চাষের জন্য যে সমস্ত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। সেগুলি হল :
বীজতলা কর্ষণ ও প্রস্তুতকরণ : কিছু কিছু সবজি প্রাথমিক পর্যায়ে বীজতলাতে চারা প্রস্তুত করে মূলজমিতে লাগাতে হয়। সেই কারণে বীজতলা তৈরির প্রয়ােজন হয়। চারা উৎপাদনের জন্য নির্বাচিত জমিকে বীজতলা বলে। বীজতলার জমিকে পাশের জমি অপেক্ষা অন্তত ১৫ সেমি উঁচু রাখতে হবে। বীজতলায় যাতে সূর্যকিরণ ভালােভাবে পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। একটি আদর্শ বীজতলার মাপ হবে লম্বায় ৩০০ সেমি এবং চওড়ায় ১২০ সেমি। বীজতলার চারধারে জলনিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বীজতলার মাটি হবে উর্বর ও নরম। গােবর সার, কম্পােস্ট সার, খােল, অ্যামােনিয়াম সালফেট, সুপার ॥ ফসফেট প্রভৃতি সার বীজতলায় প্রয়ােগ করতে হবে। বীজতলা তৈরি হয়ে যাবার পর মাটি সামান্য ভেজা ভেজা থাকার সময় পাতলা করে বীজ বপন করতে হবে।
বীজবপন : জীবাণুমুক্ত উন্নতমানের বীজ সংগ্রহ করে বীজতলায় বপন করতে হবে। মাটি সামান্য ভিজে থাকাকালীন পাতলা করে বীজবপন করতে হয়। বীজবপনের পর প্রত্যহ সকাল-বিকেল ঝাঁঝরি দিয়ে জল দিতে হবে। রােদের তেজ থেকে চারাকে বাঁচাতে ওপরে ঢাকা দেবার ব্যবস্থা নিতে হবে।
চারা লাগানাে : চারাগুলি দেড় ইঞ্চির মতাে লম্বা হলে বীজতলা থেকে চারা তুলে মূল জমিতে রােপণ করতে হবে। চারা তােলার আগে বীজতলাটিকে ভিজিয়ে রাখতে হবে। চারা রােপণের উপযুক্ত সময় হল বিকেল।
জলসেচ : চারাগাছ লাগানাের ১০-১৫ দিন পর থেকে প্রয়ােজন মতাে জলসেচ দিতে হবে।
সার প্রয়ােগ : চারাগাছ রােপণের কিছুদিন পর গাছের গােড়ার চারপাশে সার প্রয়ােগ করতে হবে। গােবর আর ও পচাপাতার সার প্রয়ােগ করলে মাটি সরল, সতেজ ও উর্বর থাকে।
আগাছা দমন : গাছের চারপাশ আগাছামুক্ত রাখতে হবে। কারণ আগাছা মূল উদ্ভিদ থেকে রস শুষে নিয়ে উদ্ভিদকে দুর্বল করে দেয়। ফলে ফসলের ক্ষতি হয় ও ফলন কমে যায়।
কীটনাশক ওষুধ প্রয়ােগ : গাছকে পােকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে মাঝে মাঝে কীটনাশক ওষুধ প্রয়ােগ করতে হবে।
এটিও পড়ুন – ফুল সংরক্ষণ করার সঠিক পদ্ধতি
পরিচর্যা ও আগাছা নিয়ন্ত্রণ : ফুল গাছের চারা রােপণ বা বপনের ২/৩ সপ্তাহের মধ্যে প্রতি প্লটের চারাগুলির গােড়া খুরপি দিয়ে খুঁড়ে দিতে হবে এবং সমস্ত আগাছা তুলে ফেলতে হবে। এইভাবে দুসপ্তাহ অন্তর ২ থেকে ৩ বার অন্তর্বর্তী কর্ষণ করতে হবে এবং গাছের গােড়ায় প্রয়ােজনমতাে সার দিতে হবে। কোনাে পােকামাকড় গাছের কাণ্ড বা পাতা নষ্ট করছে কিনা লক্ষ্য রাখতে হবে এবং তা রােধ করতে হবে।
আর্দ্রতা সংরক্ষণ (Mulching) : মাটি থেকে জল বা রস শােষণ করে গাছ খাদ্য তৈরি করে। যা গাছের বৃদ্ধি ঘটায়। কিন্তু অনেক সময় মাটিতে জলের ঘাটতি দেখা যায় কারণ মাটির নীচে যে জল থাকে তা মাটির মধ্যেকার pore-space বা রন্দ্রপথ দিয়ে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় উঠে যায়। এ জন্য দরকার জল সংরক্ষণ করা। মালচিং প্রক্রিয়ায় মাটিতে জল ধরে রাখা হয়। ফুল বা ফলগাছের চারদিকের মাটি ভালােভাবে খুঁড়ে ওলটপালট করে গুড়াে করে দিতে হয়। গাছের গােড়ার চার দিকে কাটা খড়, ছাঁটা ঘাস, শুকনাে পাতা ইত্যাদি ছড়িয়ে দিয়ে গােড়া ঢেকে রাখতে হয়। এতে নীচেকার জল বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় উঠে যেতে পারে না। আর্দ্রতা মাটিতে সংরক্ষিত হয়।
ট্যাগঃ ফুল ও ফল এবং শাক সবজি, জেনে নিন ফুল ও ফল এবং শাক সবজি পদ্ধতি, কোন সময় কোন ফুল ও ফল এবং শাক সবজি, ফুল ও ফল এবং শাক সবজি চাষ এর সঠিক পদ্ধতি।