
দাঁত আমাদের একটি অপরিহার্য অঙ্গ। দাঁতের সাহায্যে খাদ্য চর্বণ ও কর্তনের (কাটা) হয়। অধিকাংশ প্রাণীর দেহে দাঁতই হচ্ছে কঠিনতম অঙ্গ।
দাঁত মুখের সৌন্দর্য ঠিক রাখে। সেজন্য দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝা উচিত। এবং নিয়মিত দাঁতের যত্ন নেওয়া উচিত। দাঁতের যত্ন : প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে শুতে যাবার আগে নরম টুথব্রাশ ও টুথপেস্ট দিয়ে সঠিক নিয়মে দাঁত মাজুন।
দাঁতের যত্ন করার সঠিক পদ্ধতি
- দাঁত মাজার পর জল দিয়ে ভাল করে কুলকুচি করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এবং আঙুল দিয়ে মাড়ি মালিশ করুন ও জিভ ভাল করে জিভছুলি দিয়ে পরিষ্কার করুন।
- উন্নত মানের মাজন বা পাউডার দিয়ে দাঁত মাজুন। গুঁড়ো মাজন ব্যবহার করলে দেখবেন তা যেন নরম ও মিহি হয়। খরখরে মাজনে দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যায়।
- নিমের ডাল ধুয়ে ভাল করে চিবিয়ে ব্রাশ করা দাঁতের পক্ষে ভীষণ উপকারী।
- নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য ভাল কোম্পানীর মাউথ ওয়াশ কিনে এক গ্লাস জলে ১ চামচ লোশন মিশিয়ে কুলকুচি করুন। শরীরে ভিটামিনের অভাবে পেটের গোলমালের জন্য মুখে দুর্গন্ধ হয়। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন খান এবং পেটের রোগ সারান।
- পান, তামাক, বিড়ি, সিগারেট, দাঁতের খুব ক্ষতি করে। তাই যতটা পারুন এগুলোর অভ্যাস ত্যাগ করুন।
- পেট সবসময় পরিষ্কার রাখুন। যেন কোষ্টকাঠিন্যতা রোগ না হয়।
- দাঁত মজবুত রাখতে শক্ত খাবারের বিশেষ ভূমিকা আছে। ফল, সবজি, যত পারেন চিবিয়ে খাবেন। শশা, ডাটা, আম, পেয়ারা, আখ ইত্যাদি চিবিয়ে খেলে দাঁতের ভাল ব্যায়াম হয়। ফলে দাঁত শক্ত হয়।
- খুব গরম খাবার খেয়ে খুব ঠাণ্ডা খাবার বা ঠাণ্ডা খেয়ে গরম খাবার খাবেন না। এতে দাঁত ও মাড়ি দুয়েরই ক্ষতি হয়। এবং দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যায়।
- চকোলেট, লজেন্স, অতিরিক্ত মিষ্টি ও অতিরিক্ত টকও দাঁতের ক্ষতি করে। তাই যতটা সম্ভব এগুলি কম খান।
- যে কোন খাবারই খাওয়ার পর ভাল করে কুলকুচি করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। বেশী করে জল খান, লবঙ্গ বা যে কোন একটি ফল খান।
- প্রতিদিন খাওয়ার পর দাঁতের মধ্যবর্তী ফাকগুলো টুথপিক দিয়ে পরিষ্কার করুন। এবং মূল আহার গ্রহণের পর দুবেলাই ছোট এক গ্লাস ঈষৎঊষ্ণ জলে এক চিমটে ফিটকিরি গুঁড়ো বা নুন দিয়ে জোরে জোরে কুলকুচি করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি মাউথ ওয়াশের কাজ দেবে।
- কখনোই সেফটিপিন, দেশলাইকাঠি, আলপিন দিয়ে দাঁত খোঁচাবেন না। এতে দাঁতের সারির বিন্যাস নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- নোংরা অপরিষ্কার দাঁত থেকে পেটের রোগ, অ্যাসিড বা অম্ল ইত্যাদি রোগ হতে পারে। এছাড়া দাঁতের নানা রোগ হতে পারে। দাঁত দিয়ে রক্ত পড়া বা পায়োরিয়া, দাঁতে পোকা লাগা, দস্তক্ষয়, মাড়িতে ব্যাথা, অসময়ে দাঁত পড়ে যাওয়া দাঁতে হলদে বা কালচে ছোপ ছোপ দাগ হওয়া।
- দাঁতের ছোট খাটো যে কোন সমস্যা দেখা দিলে বেশীদিন ফেলে রাখবেন না। সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার দেখান। না হলে এই সমস্যাই একদিন বৃহৎ আকারে দেখা দিতে পারে।
- দাঁতের কোন সমস্যা না থাকলেও ছমাস অন্তর বা বছরে একবার কোন দপ্ত চিকিৎসক দিয়ে দাঁত ও মাড়ি পরীক্ষা করিয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করুন।
- সামান্য খাবার সোডা দিয়ে মাসে একদিন দাঁত মাজলে কালো ছোপ উঠে যায়। দাঁতে একটু করে পাতিলেবু ঘষলে দাঁত ঝকঝকে হয়।
- পেয়ারা পাতা দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের হলুদ ছোপ দূর হয় এবং ঝকঝকে হয়।
- তেল ও মিহিনুন একসঙ্গে মিশিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত পরিষ্কার হয়।
- দাঁত ব্যাথার জন্য কচি পেয়ারা পাতা জলে ফুটিয়ে সেই জলে মুখ ধুয়ে নিন।
- চা পাতা ফুটিয়ে সেই জলে কুলকুচো করলে দাঁত ব্যাথা কমে।
- লবঙ্গ গুঁড়ো করে দাঁত মাজলেও দাঁত ব্যাথা বা দাঁতের পোকা, পাইরিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- প্রতি তিন মাস অন্তর টুথব্রাশ পরিবর্তন করতে হবে। সম্ভব হলে এর আগেই টুথব্রাশ পরিবর্তন করা যেতে পারে।
- প্রতি ছয় মাস পরপর দন্তচিকিৎসকের সুপারিশ গ্রহণ করতে হবে।
- ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট বা মাউথওয়াশ ব্যবহার করা উচিত, যা দাঁতকে আরো সুরক্ষা করবে।
এটিও পড়ুন – জ্বর সর্দি কাশি রোগ এর লক্ষণ ও আয়ুর্বেদ চিকিৎসা
জেনে নিন – জেনে নিন দাঁতের যত্ন করার সঠিক পদ্ধতি, দাঁতের যত্ন গোপন টিপস, দাঁতের যত্ন করতে করণীয় কী কী?
দাঁত মাজার সঠিক পদ্ধতি
দাঁত মাজার আসল উদ্দেশ্য হল দাঁতকে পরিষ্কার রাখা এবং দাঁতের ওপর থেকে সব ময়লা ছোপ তুলে ফেলে দাঁত ও মাড়িকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা। তাই সঠিক পদ্ধতিতে প্রত্যেকের দাঁত মাজা উচিত। টুথপেষ্ট ও ব্রাশ ভিজিয়ে ব্রাশ মাড়ির উল্টোদিকে দাঁতের ওপর রাখুন। যাতে দাঁড়াগুলো মূলের দিকে থাকে। এবার ব্রাশ ওপরের পাটিতে ওপর থেকে নীচে এবং নীচের পাটিতে নীচ থেকে ওপরে চালান। একদিকের শেষ দাঁত থেকে প্রথম দাঁতে, অন্য দিকের প্রথম দাঁত থেকে শেষ দাঁতে এভাবে মাজুন। এই পদ্ধতি দাঁতের ভেতরেও বারবার প্রয়োগ করুন। শেষে কামড়ানো হয় যে তলগুলো দ্বারা সেই জায়গায় ব্রাশ সামনে ও পেছনে নিয়ে এসে মাজুন। কখনোও মাড়িকে আঘাত করবেন না। জোরে ব্রাশ চালিয়ে দাঁতের ফাঁকে ক্ষত তৈরী করবেন না। দাঁত মাজার পর জিভ ছোলা আলতো ভাবে টেনে জিভের ময়লা পরিষ্কার করে ভাল করে কুলকুচি করে মুখের ভেতরটা পরিষ্কার করে ফেলুন।
সোর্স – ইন্টারনেট