গর্ভবতী মায়ের খিঁচুনি হলে করণীয় । Eclampsia এক্লাশসিয়া
গর্ভবতী মায়ের উচ্চ রক্তচাপ এবং এক্লাশসিয়া হলে করণীয়

অনুচ্ছেদ সমূহ
এক্লাম্পসিয়া(Eclampsia) প্রি-এক্লাম্পসিয়ায় আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের খিঁচুনি হওয়াকে এক্লাম্পসিয়া বলে। প্রি-এক্লাম্পসিয়া হলোগর্ভবতী মহিলাদের এমন এক রোগ যেখানে রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং হয় প্রস্রাবেরসাথে প্রচুর প্রোটিন নির্গত হয় নতুবা অন্যান্য অঙ্গের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়। এটা শুরু হতে পারে সন্তান প্রসবের পূর্বে, প্রসবের সময় বা এর পরে।
গর্ভবতী মায়ের খিঁচুনি হলে করণীয়
প্রি এক্লাম্পসিয়া কী?
প্রি এক্লাম্পসিয়া একধরনের গর্ভধারণকালীন জটিলতা। যেটা সচরাচর উচ্চ রক্তচাপ এর শুরু এবং প্রসাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রোটিন বৃদ্ধি দেখে চিহ্নিত করা হয়। এই রোগের ফলে মা এবং শিশু উভয়ের জন্যই খারাপ ফলাফল বয়ে আনে। যদি চিকিৎসা না করা হয়, এর ফলে খিঁচুনি দেখা যেতে পারে যেটি এক্লাম্পসিয়া নামে পরিচিত।
প্রি-এক্লাম্পসিয়ার ঝুঁকির কারণের মধ্যে রয়েছে অতিস্থূলতা, বেশি বয়স, উচ্চ রক্তচাপ, এবং বহুমূত্র রোগ. এটি বেশি দেখা যায় নারীর প্রথম গর্ভধারণের ক্ষেত্রে এবং যদি সে যমজ বাচ্চা বহন করে।
প্রি-এক্লাম্পসিয়ার লক্ষণঃ
- ফুলে যাওয়াকে (বিশেষ করে হাত এবং মুখ)
- হাত, মুখ, পা অস্বাভাবিক ফুলে যায় এবং টিপে ধরে ছেড়ে দিলে যদি তা স্বাভাবিক হতে দেরি হয় তাহলে অবশ্যই স্বাস্থকর্মীকে জানাতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপ এবং এক্লাশসিয়াঃ নেলসন (1995) প্রদত্ত সংজ্ঞানুযায়ী গর্ভধারণের ২৪ সপ্তাহ পর প্রসারণকালীন রক্তচাপ 90 মিমি কিংবা তারও অধিক পারদ চাপে পৌঁছালে, মুত্রে প্রোটিনের উপস্থিতি থাকুক বা না থাকুক সেই আম্পাকে প্রাক এক্লাশসিয়া বলে। সম্ভবত অধিক নুন গ্রহণ এবং খাদ্যে প্রোটিন ও ‘বি’ ভিটামিনের অভাবই এর কারণ।
উপসর্গসমূহ
এক্লাম্পসিয়া গর্ভকালীন একটি সমস্যা যেখানে প্রি-এক্লাম্পসিয়ায় আক্রান্তগর্ভবতী মায়েদের খিঁচুনি হয়। সাধারণত খিঁচুনির পূর্বে গর্ভবতী মহিলাদের উচ্চ রক্তচাপও প্রোটিনিউরিয়া(প্রসাবের মাধ্যমে প্রোটিন বের হওয়া) হয়।
- দীর্ঘস্থায়ী(অবিরাম) মাথাব্যথা।
- চোখে ঝাপসা দেখা।
- ফটোফোবিয়া (অর্থাৎ উজ্জ্বল আলোতে অস্বস্তি)
- পেটব্যথা
- হয় এপিগ্যাস্ট্রিক অঞ্চলে (নাভির উপরে উদরের মধ্যভাগ)
- এবং/অথবা ডানদিকের ঊর্ধ্ব চতুর্থাংশে বা ডানদিকের বক্ষপিঞ্জরের নিচে
- পরিবর্তিত মানসিক অবস্থা(চিত্তবিভ্রম)
এই উপসর্গগুলোর যেকোনোটি খিঁচুনির পূর্বে বা পরে ঘটতে পারে। আবার এগুলোর কোনোটিই ঘটবে না এমনও হতে পার। অন্যান্য মস্তিষ্কের লক্ষণসমূহ যেমন বমনেচ্ছা, বমন, মাথাব্যথা ও অন্ধত্ব ঠিক খিঁচুনির পূর্বমুহূর্তে হতে পারে। বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্ষমতানষ্ট হলে আরো অনেক লক্ষণ প্রকাশ পায় যেমন পেটব্যথা, জন্ডিস, ঘনঘন শ্বাস ও প্রস্রাবের পরিমাণ হ্রাস পাওয়া। শোথ দেখা যায়, মুখ ও গোড়ালি ফুলে ওঠে।
এটিও জেনে নিন –দাঁতের যত্ন করার সঠিক পদ্ধতি
উচ্চ রক্তচাপ এবং এক্লাশসিয়া হলে করণীয়
- গর্ভবতী মায়েদের যথাযথ যত্ন ও পরিচর্যা দরকার।
- বিকালে ২ ঘণ্টা বিশ্রাম এবং পর্যাপ্ত নিদ্রার প্রয়োজন।
- পরিমিত পরিমাণ নুন খাওয়া দরকার।
- কোষ্ঠকাঠিন্য : গর্ভাবস্থা যত এগোতে থাকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত মাতৃ জঠর অস্ত্রে চাপ প্রয়োগ করে তার স্বাভাবিক সঞ্চালন প্রক্রিয়ার বাধা দেয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যায়। এমতাবস্থায় : (i) পর্যাপ্ত সবজি এবং ফল ছাড়ায় খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। (ii) সমগ্র দানাশস্য জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। (iii) প্রাতঃরাশের পূর্বে 1/2 গ্লাস জল খেতে তা কোষ্ঠকাঠিন্য নিবারণে সাহায্য করে, ঠাণ্ডা জল অপেক্ষা উষ্ণ জলই ভালো। প্রতিবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পর এক গ্লাস জল খেতে হবে।
- গর্ভাবস্থার শেষ তিনমাস বুক জ্বালা, হজমের গোলমাল ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। (i) হজমের গোলমাল করে এমন খাবার বর্জন করতে হবে। (ii) কম কম করে অনেকবার খেতে হবে। (iii) বেঁকে কিংবা চিৎ হয়ে শোয়া যাবে না।
- সাধারণত গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতা এবং ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা যায়। শক্তির অভাব তেমন একটা দেখা যায় না। তাই দেহ সংরক্ষক এবং দেহ গঠনকারী খাদ্য, খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে অল্প, মাঝারি এবং অধিক মূল্যের খাদ্য তালিকায় যথাক্রমে সস্তা, মাঝারি এবং দামী খাদ্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সমগ্র দানাশস্য, শাক জাতীয় সবজি, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম, ফল এবং শুকনো ফল্ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
এক শতাংশ গর্ভবতী মহিলার মধ্যে মধুমেহ দেখা যায়। এক্ষেত্রে সরল, শর্করা খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। দানাশস্য রক্ত জাতীয় শর্করা খাদ্য গ্রহণ করা উচিত যা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে।
মধুমেহ হলে, নিয়মিত রক্ত cheque up করে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পর্যাপ্ত জল, পরিমিত নুন, বৃদ্ধি সহায়ক, দেহ সংরক্ষক, খাদ্যবস্তু সমৃদ্ধ সহজপাচ্য খাদ্য গ্রহণ এবং মশলা ও উগ্র গন্ধযুক্ত খাদ্য গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে বর্জন করা উচিত।
ট্যাগ- # গর্ভবতী মায়ের খিঁচুনি, জেনে নিন গর্ভবতী মায়ের খিঁচুনি হলে করণীয়, গর্ভবতী মায়ের খিঁচুনি হবার পূর্বের অবস্থা, কীভাবে বুঝবেন গর্ভবতী মায়ের খিঁচুনি হবে? গর্ভবতী মায়ের খিঁচুনি সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য।