প্রবন্ধ রচনাএকাদশ কম্পিউটারকম্পিউটারকম্পিউটার শিক্ষার আসর

কম্পিউটার প্রবন্ধ রচনা 600 শব্দের মধ্যে

[ কম্পিউটার প্রবন্ধ রচনা, কম্পিউটার রচনা, ছোটদের কম্পিউটার প্রবন্ধ রচনা , কম্পিউটার প্রবন্ধ রচনা PDF, কম্পিউটার রচনা pdf, ডাউনলোড কম্পিউটার প্রবন্ধ রচনা, কম্পিউটার রচনা ৫ম শ্রেণি, কম্পিউটার রচনা পঞ্চম শ্রেণী, কম্পিউটার রচনা ৩য় শ্রেণি, কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা রচনা]

গণনাযন্ত্র বা কম্পিউটার হল এমন একটি যন্ত্র যা সুনির্দিষ্ট নির্দেশ অনুসরণ করে গাণিতিক গণনা সংক্রান্ত কাজ খুব দ্রুত করতে পারে।  কম্পিউটার (computer) শব্দটি গ্রিক “কম্পিউট” (compute)শব্দ থেকে এসেছে। compute শব্দের অর্থ হিসাব বা গণনা করা। আর কম্পিউটার (computer) শব্দের অর্থ গণনাকারী যন্ত্র। কিন্তু এখন আর কম্পিউটারকে শুধু গণনাকারী যন্ত্র বলা যায় না। কম্পিউটার এমন এক যন্ত্র যা তথ্য গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন করে। সভ্যতার বিকাশ এবং বর্তমানে তার দ্রুত অগ্রগতির মূলে রয়েছে গণিত ও কম্পিউটারের প্রবল প্রভাব। বাংলাদেশে প্রথম কম্পিউটার আসে ১৯৬৪ সালে।

এই পোষ্টে সকল ছাত্র ছাত্রীদের জন্য কম্পিউটার প্রবন্ধ রচনা শেয়ার করা হল। কম্পিউটার সম্পর্কে কী কী ধরনের প্রবন্ধ রচনা আসতে পারে তা নিম্নরূপ-

১. দৈনন্দিন জীবনে কম্পিউটার

২. আধুনিক জীবনে কম্পিউটার

৩. কম্পিউটার ও আধনিক সভ্যতা

৪.  কম্পিউটার ও আধুনিক বিশ্ব

৫.  বিংশ শতকের বিস্ময় : কম্পিউটার

৬.আধুনিক জীবনে কম্পিউটার শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

কম্পিউটার প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা :

যন্ত্রপ্রকৌশল ও প্রযুক্তি-নির্ভর মানব সভ্যতার অগণিত আবিষ্কারের বিস্ময়ের ঘোর না কাটতেই বিষ শতকে যে মহাবিস্ময়কে মানুষ আলাদিনের চোগের মতো হাতের মুঠোয় পেয়েছে তার নাম কম্পিউটার। এ এক মহাপরাক্রমশালী অথচ অনুগত যন্ত্র যা মানুষের কর্মজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অবলীলায় অক্ষরে অক্ষরে প্রতিটি হুকুম পালন করে। আজকের দিনে তাই মানবসব্যতা হয়ে পড়েছে কম্পিউটার-নির্ভর স্বয়ংক্রিয়তা-কেন্দ্রিক। এবং এর ফলে মানুষের কর্মক্ষমতা, দক্ষতা ও নিয়ন্ত্রণশক্তি বেড়ে গিয়েছে বহু গুণ, বৃদ্ধি পেয়েছে উৎপাদন ক্ষমতা। অনেক সহজ হয়ে উঠেছে প্রশাসনিক কাজকর্ম ও হিসাব নিকাশের জটিলতা। অনাবশ্যক অনেক মানসিক শ্রমের হাত থেকেও রেহাই ফেয়েছে মানুষ।

কম্পিউটার কী? :

আভিধানিক অর্থে কম্পিউটার হলো এক ধরনের গণক যন্ত্র। কিন্তু আজকাল কম্পিউটারকে কেবল গণনাকারী বলা চলে না। এখন তা এমন এক ইলেকট্রনিক যন্ত্রের ধারণা দেয় যা অগণিত তথ্য বা উপাত্ত গ্রহণ করে অত্যন্ত দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে সংরক্ষণ, গণনা, বিশ্লেষণ ইত্যাদি করতে পারে এবং সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করতে পারে। কম্পিউটার আসলে এক ধরনের যন্ত্র-মস্তিস্ক। মানুষ যেমন করে মগজে ধরে-রাখা স্মৃতি, অভিজ্ঞতা, তথ্য ও তত্ত্ব কাজে লাগিয়ে সমস্যার সমাধান করে, কম্পিউটারের কাজও তেমনি। কম্পিউটারকে তথ্য ও নির্দেশনা প্রদানের জণ্যে যে বিশেষ ভাষা ব্যবহার করা হয় তাকে বলা হয় ‘প্রোগামিং ল্যাংগুয়েজ’, আর এসব কিছুকে একত্রে অভিহিত করা হয় ‘কম্পিউটার সফ্টওয়্যার’। এছাড়া কম্পিউটারের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণকারী একটা কাঠামো থাকে, তাকে বলে ‘হার্ডওয়্যার’। কম্পিউটারের বড় উপযোগিত হলো তথ্য ও প্রোগ্রাামের রদবদল বা সংযোজন ঘটিয়ে একই কম্পিউটাকে দিয়ে নানারকম কাজ করানো চলে। কম্পিউটার যে আজকের দিনে বিস্ময়কর ও বিশ্বস্তভাবে সবধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে তার মূলে রয়েছে এর বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য। সেগুলো হলো : এক. অত্যন্ত দ্রুত গণনার ক্ষমতা, দুই. বিপুল পরিমাণ উপাত্তকে সুসংবদ্ধভাবে যন্ত্র-মগজে ধরে রাখার ক্ষমতা, তিন. তথ্য বিশ্লেষণের নির্ভুল ক্ষমতা, চার. ’ডেটা’ ও প্রোগ্রাম’ অনুসারে কাজ করার ক্ষমতা। মানুষের বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তি ক্রমেই পম্পিউটারের কার্যকারিতা ক্ষেত্রকে সম্প্রসারিত করছে।
উদ্ভাবন ও ক্রমোন্নতি : প্রাচীনকাল থেকে যান্ত্রিক গণনা পদ্ধতি ক্রমান্বয়ে ধাপে ধাপে বর্তমান কম্পিউটারের রূপ নিয়েছে। তবে আধুনিক কম্পিউটারের সূত্রপাত হয়েছে ১৮৩৩ সালে ব্রিটিশ গণিতবিদ চার্লস ব্যাবেজের গণকযন্ত্র অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন থেকে । এরপর ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর যন্ত্র আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে কম্পিউটারের ক্ষেত্রে ঘটেছে বৈপ্লবিক অগ্রগতি। প্রথমদিকে নির্মিত পেনসেলভিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এনিয়াক’ নামের কম্পিউটারের ওজন ছিল ত্রিশ টন, তার আয়তনও ছিল বিশাল। ৪০ ফুট লম্বা ও ২০ ফুট চওড়া ঘরের সবগুলো দেয়াল জুড়ে ছিল এর যন্ত্রপাতি। আর এখন এর আকার নেমে এসেছে হাতব্যাগের আকারে।

 শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটার :

আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির অনন্য বাহন কম্পিউটার। আজকের উন্নত বিশ্বে কম্পিউটারের ব্যবহার ছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থা কল্পনা করা অসম্ভব। এর মাধ্যমে অতি অল্প সময়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ করা সহজ হয়ে গেছে। প্রকাশনা শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছে কম্পিউটার। যার ফলে জ্ঞানচর্চার অন্যতম উপকরণ বই ঠিক সময়ে আমাদের হাতে পৌঁছে। বইয়ের বিষয়াবলি এখন কম্পিউটারের ডিস্কে জমা রাখা যাচ্ছে। কী বোর্ডের বোতাম টিপলেই এখন বিশ্বের সমস্ত জ্ঞানভাণ্ডার আমাদের সামনে মনিটরের পর্দায় ভেসে উঠছে। কম্পিউটারের আশীর্বাদে যেকোনো বিষয় এখন হাতের কাছে অবস্থান করে মানুষের জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করছে। এটি যেমন গ্রন্থাগারের ভূমিকা পালন করছে, তেমনি অভিজ্ঞ শিক্ষকের। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা আমাদের যেকোনো শিক্ষণীয় বিষয়কে চোখের সামনে পাচ্ছি। পৃথিবীর সমস্ত গ্রন্থাগার এখন আমাদের ঘরেই যেন অবস্থান করছে।

জনস্বাস্থ্যে কম্পিউটার :

মানুষের রোগ নির্ণয় ও নিরাময়ে কম্পিউটার এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। রোগের কারণ ও প্রতৃতি বিশ্লেষণ করে এর প্রতিরোধ এবং প্রতিকারে কম্পিউটার এখন সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। কম্পিউটার প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ জটিল ব্যাধি থেকে নিরাময়ের পথনির্দেশ খুঁজে পাচ্ছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা নতুন নতুন জটিল রোগের প্রতিষেধক ও নিরাময়ের ওষুধ আবিষ্কারে কম্পিউটারের সাহয্য নিচ্ছে। কম্পিউটারের এই সহযোগিতা যথার্থ শিক্ষার মাধ্যমেই কাজে লাগানো সম্ভব।

তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে কম্পিউটার : কম্পিউটার এখন তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এক অবাক করা ভূমিকায় অভিনয় করছে। আধুনিক তথ্য যোগাযোগের জগতে ই-মেইল, ফ্যাক্স, ফোন, ইন্টারনেট প্রভৃতির প্রাণবায়ু হয়ে বিরাজ করছে কম্পিউটার। বিশ্বের আন্তর্জাতিক তথ্য প্রবাহের যুগে, অবাধ বিচরণের ক্ষেত্রকে কম্পিউটার অভাবিত প্রসারণ ঘটিয়ে বিপুল বিস্ময়ে কাজ করে যাচ্ছে। সাথে সাথে মানুষ স্ফীত করে তুলছে তার জ্ঞানভাণ্ডারকে। মানুষ তার অসীম আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে এখন এককভাবে নির্ভর করছে কম্পিউটারের ওপর এবং যথার্থভাবেই সে সাফল্য কুড়িয়ে নিচ্ছে। কম্পিউটার মানুষের দৈনন্দিন তথ্য আদান প্রদানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কম্পিউটারের একচ্ছত্র আধিপত্য এতটাই ব্যাপক ও দৃঢ়তার আস্থায় অধিষ্ঠিত যে, মানুষের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সে জড়িত হচ্ছে। হয়ে উঠেছে মানবসভ্যতার সিঁড়িতে সিঁড়িতে বিছানো লাল গালিচা বা কার্পেট। হয়ে উঠেছে মানুষের এক পরম সুহৃদ। কম্পিউটারের এ ভূমিকাকে দ্বিমত পোষণ করতে বোধ হয় এখনকার জগতে আর কেউ নেই।

কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব : বর্তমান যুগ কম্পিউটার যুগ। যুগের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিতে হলে কম্পিউটার শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাই জাতীয় উন্নতির কথা বিবেচনা করে প্রত্যেক শিক্ষিত ব্যক্তিকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা এবং তা প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের কল্যাণ সাধন করা উচিত। কম্পিউটারের কর্মক্ষেত্র প্রসারণের সাথে সাথে কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বেড়েই চলেছে। কম্পিউটার শিক্ষার মাধ্যমেই এর উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। কম্পিউটার শিক্ষার অভাব থাকলে এর কার্যকারিতা ব্যাহত হবে। তাছাড়া কম্পিউটারের কার্যক্ষেত্র সম্প্রসারণের সঙ্গে প্রয়োজনীয় প্রমিক্ষণপ্রাপ্ত জনশক্তির চাহিদাও বাড়ছে। তাই কম্পিউটার শিক্ষার ব্যাপক সম্প্রসারণ অত্যাবশ্যক।

কম্পিউটার শিক্ষাব্যবস্থা : কম্পিউটার এখন মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, কলকারখানা প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দীক্ষা গুরুর ভূমিকা পালন করছে, সেজন্য কম্পিউটার শিক্ষা ব্যাপক ও সামগ্রিক হওয়া প্রয়োজন। সে সরকারি প্রচেষ্টাতেই হোক আর বেসরকারি বা ব্যক্তিগত উদ্যোগ বা ব্যক্তিগত প্রচেষ্টাতেই হোক। এখনকার দিনের চাহিদা তথা যুগের দাবি মেটাতে কম্পিউটার শিক্ষাকে মানুষের হাতের নাগালে বা মানুষের দোর গোড়ায় পৌঁছে দিতে ব্যাপক আয়োজন দরকার। সেজন্য প্রয়োজন বিপুল জনশক্তি নিয়োগ। একটি জাতির দক্ষ জনশক্তি যখন কাজে নিযোজিত থাকে, তখন জাতি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। প্রতিটি মানুষের মাঝে কম্পিউটারের জ্ঞানকে সম্প্রসারিত করা এখনকার দিনের দাবি বা যুগের দাবি। এ লক্ষ্যে কম্পিউটার শিক্ষাকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। বর্তমানে সমস্ত বিশ্বে কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভরতে ব্যাপক তোড়জোড় চলছে, ফলে তারা এক্ষেত্রে বিপুল সাফল্যকে করায়ত্ত করে ফেলেছে। তাবৎ বিশ্বে এ ব্যাপারে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ইদানিং আমাদের দেশে অবশ্যই বিদ্যালয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে কম্পিউটার শিক্ষা। দেশের কারিগরি শিক্ষাবোর্ড অবশ্য প্রথম থেকেই তাদের শিক্ষা কারিকুলামে কম্পিউটারকে বাধ্যতামূলক করেছে। কম্পিউটার শিক্ষাকে শুধু মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখলেই চলবে না, উচ্চ মাধ্যমিক এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় মান পর্যন্তও চালু করা দরকার। বর্তমান বিশ্বে যা চলছে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কম্পিউটার শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হলে তা জাতির জন্য মঙ্গলই বয়ে আনবে বলে সকল বিদ্ব্যানজন বিশ্বাস করেন। কম্পিউটার শিক্ষাকে মানুষের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার সরকারি প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানানো যায় এ চেষ্টা যাতে ফলবতী হয় সেজন্য আমাদের সকলকে জাতীয়ভাবে সচেষ্ট হতে হবে।

সবকাজেই কম্পিউটার :

কম্পিউটার আধুনিক বিশ্বের এমন এক সবজান্তা বিস্ময়কর যন্ত্র যে সব কাজেই পারদর্শী। এমন কোনো কাজ নেই যা কম্পিউটার করছে না। মানুষের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বন্ধু ও সঙ্গী সে। কোটি কোটি সংখ্যার যে জটিল অঙ্ক কয়েকদিনে করে শেষ করা যায় না তা মুহূর্তেই নির্ভুলভাবে করে দিচ্ছে কম্পিউটার। কম্পিউটার এখন কলকারখানার উৎপাদন ও বণ্টন নিয়ন্ত্রণ করছে। ব্যাংক, বিমা, টেলিযোগাযোগ, রেল ও বিমান পরিবহন, ডাক ব্যবস্থা, গবেষণা, প্রতিষ্ঠান, তথ্যকেন্দ্র কোথায় কাজ করছে না কম্পিউটার? কম্পিউটার রোগ নিরূপণ করে দিচ্ছে। ব্যবসায়ের লাভ-লোকসানের হিসাব রাখছে। শিক্ষা ক্ষেত্রেও কম্পিউটার নিয়েছে শিক্ষকের ভূমিকা। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা সবই শেখাচ্ছে নিপুণ দক্ষতার সাথে। দাবা, ক্রিকেট, ফুটবলসহ নানারকমের ভিডিও গেম খেলছে কম্পিউটার। এসব খেলায় কম্পিউটার মানুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। খেলার তথা রেকর্ড করছে নপুণভাবে। কম্পিউটার এখন ছবি আঁকছে, পুরনো-ছবি পুনরুদ্ধার করছে, মানচিত্র তৈরি করছে। ভস্কর্য তৈরি করছে। ফিংগার প্রিন্ট ও ছবি বিশ্লেষণ করে অপরাধীকে খুঁজে বের করওে কম্পিউটার বাহবা কুড়াচ্ছে। মুদ্রণ জগতেও অনেক বিস্ময়ের জন্ম নিদয়েছে কম্পিউটার। ইন্টানেটের সাহায্যে ঘরে বসে মুহূর্তেই বিশ্বের যে কোন জায়গায় যে-কোন-তথ্য আদন-প্রদানের সুযোগ এনে দিয়েছে কম্পিউটার। কম্পিউটার চালিত ‘স্ক্যারাব’ সমুদ্র তলদেশ থেকে খুঁজে এনেছে আটলান্টিক মহাসাগরের ভেঙে-পড়া বিমানের ’ব্ল্যা বক্স’, নভোযানে বসে নিয়ন্ত্রণ করছে তার গতিবিধি, সেখান থেকে তথ্য পাঠাচ্ছে পৃথিবীর বুকে। মানুষের অসাধ্য ও বিপদজ্জনক কাজেও কম্পিউটার নিয়ে আসছে অকল্পনীয় সাফল্য। কম্পিউটারের এই অসাধারণ সাফল্যই একুশ শতকে পর্দাপণ করা বিশ্বকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে নতুন করে সাজানোর।

ভারতে কম্পিউটার :

ভারতের কম্পিউটার সফর শুরু হয় স্বাধীনতার পর। ১৯৫৫ ভারতের প্রথম আধুনিক প্রযুক্তির কম্পিউটার আনা হয় কলকাতা শহরের ‘ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউশনে’ । অবশ্য এই কম্পিউটারটি ছিল সম্পূর্ণরূপে বিদেশে নির্মিত এবং ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউশন, এই কম্পিউটারটিকে বিদেশ থেকে আমদানি করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই কম্পিউটারটির মডেল নাম্বার ছিল HEC-2M এবং এই কম্পিউটার মডেলটি একটি ব্রিটিশ কোম্পানি দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।
কিন্তু আশির দশকের আগে এদেশে কম্পিউটার বিষয়ে শিক্ষার কোনো সুযোগ সৃষ্টি হয় নি। নব্বইয়ের শুরু থেকে আনুষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কম্পিউটার শিক্ষা শুরু হয়। বর্তমানে কম্পিউটাররের দ্রুত ও ব্যাপক ব্যবহার ঘটছে। কম্পিউটার শিক্ষাও যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে। আমাদের দেশে কম্পিউটার বিজ্ঞান অধ্যয়নের সুযোগ অবশ্য এখনও যথেষ্ট সীমিত।

কম্পিউটার ও বেকারত্ব :

কম্পিউটার মানবশক্তির এক বিস্ময়কর বিকল্প। এর ক্ষমতা সাধারণ নজশক্তির চেয়ে বহুগুণ বলে কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে। কম্পিউটার মানুষের কাজ কেড়ে নিচ্ছে বলে ক্রমেই কর্মসংস্থানের সুযোগ কমছে ও বেকারত্ব বাড়ছে আমাদের মত জনবহুল দেশে কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহার বেকারত্বের আশঙ্কাকেই ক্রমেই বাড়িয়ে তুলছে।

কম্পিউটারজনিত অন্যান্য সমস্যা :

কম্পিউটার ব্যবহার শারীরিক দিক ‍দিয়েও কিছুটা ক্ষতিকর এর থেকে নির্গত তেজষ্ক্রিয়তা কখনো কখনো শরীরের জন্যে ক্ষতিকর হয়। ভাইরাস আক্রমণ যান্ত্রিক ক্রটি ইত্যাদির ফলে অনেক সময়ে কম্পিউটার বিপর্যয় ঘটে। ফলে অনৈক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মুহুর্তেই নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে প্রশাসন ও কর্মক্ষেত্রে বিরাট ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। সাম্প্রতিককালে পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণায় নানা যান্ত্রিক ক্রুটির ফলে বহু শিক্ষার্থী জীবন বিপর্যস্ত হয়ে গেছে।

উপসংহার :

কম্পিউটার আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে উন্নতি ও অগ্রগতির পথে অপরিহার্য উপাদান হিসেবে যেমন বিবেচিত হচ্ছে তেমনি এর ব্যাপক ব্যবহারে বিপুল সংখ্যক বেকারত্বের আশঙ্কাও আমাদের শঙ্কিত করে তুলছে। এজন্যে কম্পিউটারের পরিকল্পিত, ভারসাম্যমূলক ব্যবহার ও দেশে কম্পিউটার প্রযুক্তির উন্নয়ন, দরকার। তা না হলে একুশ শতকের চলার গতির সঙ্গে আমরা যেমন তাল মিলিয়ে চলতে পারব না, তেমনি অতিরিক্ত গতি নিতে গিয়ে তাল হারিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ব সংকটের আবর্তে। এক্ষেত্রে পরিণামদর্শী পদক্ষেপই হবে আমাদের অগ্রযাত্রার রক্ষাকবচ।

নোট- ছোটদের ক্ষেত্রে – শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটার , জনস্বাস্থ্যে কম্পিউটার, তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে কম্পিউটার, কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব, কম্পিউটার শিক্ষাব্যবস্থা এই কয়েকটি অনুচ্ছেদ বাদ দিতে পারেন।

 

ট্যাগঃ

কম্পিউটার প্রবন্ধ রচনা, মাধ্যমিক কম্পিউটার প্রবন্ধ রচনা, উচ্চ মাধ্যমিক কম্পিউটার প্রবন্ধ রচনা, বড়দের কম্পিউটার প্রবন্ধ রচনা, দৈনন্দিন জীবনে কম্পিউটার প্রবন্ধ রচনা

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button