আমার গ্রাম প্রবন্ধ 600 শব্দের মধ্যে
আমার গ্রাম; গ্রামের প্রকৃতি ; দেখে এলাম একটি গ্রাম।

সকল শিক্ষার্থী বন্ধুদের জন্য গ্রাম বাংলার প্রকৃতি নিয়ে আমার গ্রাম প্রবন্ধ রচনা শেয়ার করা হল। এই প্রবন্ধ রচনা অনুসারে অনুরূপ প্রবন্ধ রচনা লেখা যাবে বাংলার একটি গ্রামের চিত্র, আমার গ্রাম; গ্রামের প্রকৃতি ; দেখে এলাম একটি গ্রাম, প্রিয় গ্রাম ইত্যাদি।
আমার গ্রাম
[ প্রসঙ্গসুত্রঃ ভূমিকা গ্রামের রূপ; গ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল ; জলনিকাশী ব্যবস্থা; গ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল ; পূজা-পার্বণ: গ্রামীণ জীবনের রূপান্তর ; উপসংহার।]“অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছায়ার মতন বড়াে পাতাটির নিচে বসে আছে
ভােরের দোয়েল পাখি—চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম-বট-কাঠালের-হিজলের-অশথের ক’রে আছে চুপ:
জীবনানন্দ দাশ
সূচনাঃ
‘বাংলার মুখ দেখিয়াছি’- সে বাংলা বিশ্বকবির ‘সােনার বাংলা’, নজরুলের বাংলাদেশ, জীবনানন্দের ‘রূপসী বাংলা। পল্লবঘন, ছায়া সুনিবিড় ছােট ছােট গ্রামগুলির একটি—আমার জন্মভূমি, আমার গ্রাম। অবারিত মাঠ সুনীল গগন তলে গাছ-গাছালি আচ্ছাদিত নীল-সবুজের শ্যামলিমায় আপ্লুত, পাখির কূজন ঝংকৃত, মলয় বাতাস প্রবাহিত সে গ্রাম গ্রামের রূপ আড়া পাঁচ’, ‘ঐখানেতে হৃদয় আমার গেছে চুরি। এই বেণুবনে মর্মর গ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল দক্ষিণ বায়’, “সজনে শাখার গলাগলি’, ‘ঘুটে ছাইয়ের গাদা’, বাবুদের তালপুকুর’, ‘ধনধান্যে পুষ্পভরা গ্রামের রূপে আমি মুগ্ধ। এই গ্রাম দেখে আমি বাংলাকে চিনেছি, দেশকে জেনেছি।
ঐ যে গাটি যাচ্ছে দেখা’তালপুকুরের পাড়ে,ঐটি আড়াপাচ। দক্ষিণ ২৪-পরগনার অন্তর্গত সােনারপুরের অনতিদূরে এক অখ্যাত গ্রাম-আড়াপাচ। রামচন্দ্রপুর, বেনেবে, গােপালপুর প্রভৃতি পাশের গ্রাম থেকে কয়েকটি আকাবাকা মেঠো পথ এ গ্রামে মিশেছে। একটি সুবিস্তৃত পাকারাস্তা গ্রামকে দ্বিখণ্ডিত করে চলে গেছে। পথের দুপাশে ভাট, আশসেওড়া, ভেরেণ্ডা, বাসক ও ছােটখাটো বাশবন চোখে পড়ে। শালুক, কলমী ও কচুরিপানায় লেকা ছােট-বড়াে পুকুর চোখ এড়াবে না। এই পুকুরপাড়ে সারিবদ্ধ ধ্যানরত তাল-খেজুরের গাছ-গ্রাম-বাংলার ছবি স্পষ্ট। চোখে পড়বে–“মধ্যে অথৈ শূন্যে মাঠখানি ফাটলে ফাটলে ফাটি।’ ঋতু বৈচিত্রে দেখা যাবে ধানের উপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস’, সােনালী ধানের সমারােহ।
দুরে দেখা যায়—“বাবলা বনের ধারে ধারে পাঁচন হাতে দারিদ্র্যপীড়িত শীর্ণ শরীর রাখাল ও ততােধিক রুশ গরুর পাল। উলু-খড়ে ছাওয়া মাটির বাড়ির সঙ্গে দু-একটি পাকাবাড়ি বিরাজ করে। কুটীরসংলগ্ন গুটিকয়েক নারিকেল ও কদলী বৃক্ষের দৃশ্য থেকে চোখ ফেরানাে যায় না। এই গ্রাম-জননীর স্নেহ-নীড়ে আমরা বাস করি আনন্দে। কৃষি জীবীদের মাঠে মাঠে বেলা কাটে, সকাল হতে সন্ধে। বিভিন্ন বর্ণের পল্লীবাসী ‘আবাদ করে বিবাদ করে সুবাদ করে তারা।
জলনিকাশী ব্যবস্থা
টালির নালা থেকে একটা সুবিস্তৃত গভীর খাল আড়াপাচের মধ্য দিয়ে এশিয়ার সর্ববৃহৎ পাম্পিং স্টেশনে উত্তরভাগে মিশেছে। এই জলপথ কৃষিনির্ভর গ্রামটিকে সজল ও সজীব রেখেছে। খালের উপরস্থ পাকারাস্তায় আছে সুইস গেট। এর দ্বারা জল নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
এটিও পড়ুন – বাংলার সংস্কৃতি প্রবন্ধ রচনা
গ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল
এই গেটের অনতিদুরেই রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের গােলাবাড়ি। প্রায় একশ একর জনি নিয়ে মিশন চাষের ক্ষেত গড়েছে। আধুনিক পদ্ধতিতে এখানে চাষ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে; গ্রামবাসীদের আর্থিক সহযােগিতার জন্য তাতবােনা, মুরগী পালন, মৎস্য চাষ এবং বৃক্ষরােপণ বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়। মিশন এখানে একটি ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছে। এখান থেকে একটু দুরে পূর্বতন জমিদারের কাছারি বাড়ি, এখন যেখানে রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম গড়ে উঠেছে। বয়স্ক শিক্ষা, বালােয়াড়ী সেন্টার ও সমাজসেবার বিভিন্ন কেন্দ্র মিশন পরিচালনা করছে। কয়েক বছরের মধ্যেই মিশন গ্রামবাসীর অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।
পূজা-পার্বণ
পাকারাস্তার উত্তর পাড়ে বুনিয়াদি বিদ্যালয়। দূরদূরান্ত থেকে শিশুরা এখানে পড়াশুনারতে আসে। স্কুলের পড়াশুনার মান খুব নিম্নস্তরের। স্কুল-সংলগ্ন মাঠেই ছেলেরা খেলাধুলা করে থাকে। ফুটবলের সঙ্গে সঙ্গে গাদি, কবাড়ি, বৌবসান্তি প্রভৃতি খেলাও জমে ওঠে। গ্রামের মাঝে পঞ্চাননতলা-এটি এ গ্রামের প্রাণকেন্দ্র। পৌষ মাসে এখানে পঞ্চানন পূজা উপলক্ষে মেলা বসে। যাত্রা, পুতুলনাচ, কবিগান কয়েকদিন ধরেই চলে। মেলায় বিভিন্ন দোকানদার তাদের পসরা সাজায়। ঢাক-ঢােল, কাসর-শহের সঙ্গে উচ্চৈঃস্বরে মাইকের গানও বাজে। ইদানীং সিনেমা ও ভিডিও চলতে দেখা যায়। পঞ্চানন মন্দিরের পাশেই গাজীবাবার স্থান–হিন্দু-মুসলমান সংস্কৃতির অপূর্ব সমন্বয়, সাম্প্রদায়িকতামুক্ত জীবনের বিচিত্র প্রকাশ।
পঞ্চাননতলার মাঠেই গড়ে উঠেছে ‘পঞ্চানন সেবাসংঘ। এখানে নৈশ বিদ্যালয় বসে। গ্রামের সেবা ও প্রগতিশীল কাজে এই সংঘের সদস্যরা নিবেদিতপ্রাণ। এখানেই একটি মুষ্টি গােলা তৈরি হয়েছে। গ্রামের লাক কিছু কিছু ধান এখানে জমা রাখে। অভাবের সময় এখন থেকে তারা তা নিয়ে থাকে বা ধার পেয়ে থাকে। এই মাঠের পাশে এখন দুর্গোৎসব, শিবের গাজন, গােষ্ঠলীলা এবং হরিসংকীর্তনের আসর বসে। দরিদ্র হলেও গ্রামবাসী বারাে মাসে তেরো পার্বণে আত্মমগ্ন থাকে।
গ্রামীণ জীবনের
কৃষি-সভ্যতাকে ধীরে ধীরে যন্ত্র-সভ্যতা গ্রাস করছে। গ্রামের তেমাথায় কিছু কিছু স্থায়ী দোকানপাট বসেছে, বাজারও বসতে শুরু করেছে। রিক্সা ও অটো স্ট্যাণ্ড হয়েছে। গ্রামের বুক চিরে হুস হুস করে মােটর, লরি ও বাস দর্ণিয়ে চলে যায়। রাস্তার পাশে নতুন নতুন বাড়ি উঠছে। অনতিবিলম্বেই আড়াপাচ বৃহত্তর কলকাতার অঙ্গীভূত হবে। গ্রামবাসীর আচার-আচরণে, পােশাক-পরিচ্ছদে এই শহুরে আচ লেগে গেছে।
উপসংহার
দুশ বছরের ইংরেজ শাসনে গ্রামীণ অর্থনীতি ভেঙে পড়ে। স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে গ্রামের চেহারা বদলাচ্ছে! তেভাগা আন্দোলন, কৃষিকে অগ্রাধিকার, গ্রামীণ ব্যাঙ্ক স্থাপন, পঞ্চায়েত প্রথা প্রবর্তন, বিদ্যুতের প্রসার, শিল্প স্থাপন প্রভৃতির মধ্য দিয়ে গ্রাম শহরের সঙ্গে পার্থক্য ঘুচিয়ে ফেলছে। সেই ছায়া সুনিবিড় গ্রামে এখন চুল্লীর ধােয়া বাতাস দুধিত করছে। ভাইয়ের-মায়ের এত সেহ ধন্য এপার বাংলার আড়াপাচ গ্রামে আমি বর্ধিত ও পুষ্ট । এর সুখ-দুঃখে আমি আনন্দিত ও ব্যথিত। এর গৌরবে আমি সম্মানিত। আড়াপাচ আমার ‘হৃদয় হরণ স্বর্গপুরী।
এটিও পড়ুন – ১০০০+ ইংরেজি প্রবন্ধ রচনা সহজ এবং সরল ভাষায়
সোর্স – অলিভিয়া সরকার ( কুশমণ্ডি উচ্চ বিদ্যালয় )
ট্যাগঃ আমার গ্রাম প্রবন্ধ 600 শব্দের মধ্যে PDF, আমার গ্রাম প্রবন্ধ রচনা, জেনে নিন আমার গ্রাম রচনা, আমার গ্রাম 600 শব্দের মধ্যে।