প্রবন্ধ রচনা

যখন সন্ধ্যা নামে প্রবন্ধ রচনা 500 শব্দের মধ্যে

যখন সন্ধ্যা নামে | সন্ধ্যা একটি সুন্দর মহুর্ত । আসলে সন্ধ্যা হচ্ছে ঠিক সূর্যাস্তের কয়েক মুহূর্ত পরে গোধূলির সময়ে রাতের ঠিক আগের অবস্থান। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় সন্ধ্যা হচ্ছে সেই সময়টি যা ঠিক সূর্যাস্তের পর ও রাতের ঠিক আগে ঘটে। গোধূলি বাসন্ধ্যা শব্দটি সাধারণত জ্যোতির্বিজ্ঞানকেন্দ্রিক সন্ধ্যা বা রাত শুরু হওয়ার আগের গোধূলির অন্ধকার অবস্থানকে বোঝায়।

যখন সন্ধ্যা নামে

 

ভূমিকা :

তপন সারাদিন সোনালী কিরণ-বিস্তার করেছে। সে সময় বিশ্বকে রূপালি আলোয় উদ্ভাসিত করেছে। প্রাণিজগৎ আপন আপন কর্মের বৃত্তে নিয়োজিত। কারো কোন দিকে ফিরে দেখবার সময় নেই। ধীরে ধীরে আলো ঝলমল তুবন সন্ধ্যার প্রাক্কালে স্তিমিত হয়ে আসে। সূর্য পশ্চিমগগণে ঢলে পড়ে। অল্পক্ষণের মধ্যে সূর্য যাবে পাটে। মানুষকে যে আনন্দ ও সজীবতা দেবার অঙ্গীকার নিয়ে প্রভাতবেলায় সূর্যের উদয় ঘটে, সেই সূর্য ডোবার পূর্বে পশ্চিম আসমান লোহিত বর্ণে ছেয়ে যায়। এই সূর্যের আকৃতি গোল, ষোল কলায় পরিপূর্ণ একটি লাল সূর্য ধীরে ধীরে অস্তমিত হচ্ছে দিক চক্রবালে। এখনই সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসবে। এক আনন্দিত মুহূর্তে গোলাকৃতি লাল সূর্যটাকে এক উন্মুক্ত প্রান্তরে দাঁড়িয়ে অবলোকন করা যায়। অথবা নদীতীরে বেঞ্চিতে উপবেশন ক’রে অবলোকন করতে পারা যে কোন ব্যক্তির জন্যই আনন্দের ব্যাপার।

গ্রামাঞ্চলের চিত্র

এ-সময় পাখিরা কুলায় ফেরে। গ্রাম-গঞ্জের কিষাণ কিষাণীরা মাঠের কাজ সমাপন ক’রে তাদের নিজ নিজ বাড়ীতে প্রত্যাবর্তন করে। সারাদিনের ক্লান্তির সঞ্চয় নিয়ে তারা ঘরে ফিরে স্বজনের সঙ্গে মিলিত হয়। বিশ্রাম করে, পান্তাভাত বা অন্য কিছু খায় এবং পরম পরিতৃপ্তির সাথে তামাক সেবন করে। ইতিমধ্যে সূর্য ডোবে; সন্ধ্যারাণী তার নিকষ কালো জটাজাল বিস্তার ক’রে চতুর্দিক আচ্ছন্ন করে। সন্ধ্যারাণী রূপালি পৃথিবী আচ্ছন্ন করার পর দিনমনির উজ্জ্বলতার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। জনপদ নির্জন হতে থাকে। সবারই ঘরে ফেরার তাগিদ দেখা যায়। চারদিকে আলো জ্বলে ওঠে। শহরে জ্বলে ওঠে বিজলী বাতি।

নগর সভ্যতায় সন্ধ্যা :

আমার বাড়ী ঢাকা শহরের এক টেরেতে। সন্ধ্যে নামার সঙ্গে সঙ্গে নানান বিচিত্র রঙের টিউব লাইট, নিয়ন লাইট খচিত হয়ে রাজপথগুলো ঝলমল ক’রে ওঠে। ছেলেমেয়েরা মাঠে-ময়দানে বৈকালিক খেলাধুলা পরিত্যাগ করে, গৃহপাণে যায় এবং লেখাপড়ায় মন দেয়। কোন কোন বাড়ীতে বাটীস্থ সদস্যগণ আনন্দময় কোন টি.ভি. অনুষ্ঠান থাকলে সেদিকে মনোযোগ হয়। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা অনুষ্ঠান উপভোগ করে।

আকাশে বাঁকা চাঁদ উকি দেয়। আর একটি দুটি করে আকাশের গায় ফুটে উঠতে থাকে ঝিলমিলে তারা। ওরা মিটমিট করে জ্বলতে থাকে। মনে হয় ওরা নৃত্যপটিয়সী। ‘আকাশের ওই মিটিমিটি তারার সনে কইব কথা, নাইবা তুমি এলে ৷’

মানব মনের অনুভূতি :

ভাবপূর্ণ কথার মাধ্যমে পথ প্রদর্শন করাই হল বড় সান্ত্বনা। মানুষের হৃদয়াবেগ প্রশমনের জন্যে তারকার মিটিমিটি সন্ধ্যের আকাশের পানে তাকালে তার ঔদার্যের মধ্যে প্রগাঢ় শান্তি ও স্বস্তির আশ্বাস লাভ করা যায়। বয়স্ক ব্যক্তিরা দেহের জীর্ণতায় পীড়িত হয়; দুঃখ, বেদনা, হতাশায় নানা অভিযোগ উত্থাপন করে, কিন্তু যদি জীবনে বেঁচে থাকার স্বাদ পেতে হয় তা’হলে যখন সন্ধ্যে নামে তখন সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের মতো কোন এক মনোরম নির্জন স্থানে অবস্থান গ্রহণ করতে হয়, তখন জীবন-মরণের অনেক গূঢ় কথাই স্মরণ পথে পতিত হবে। দেখা যাবে গৃহ-সংসারের নিষ্পেষণে যে-সব কথা এক মুহূর্তেও মনে পড়েনি, সেই সত্যের উন্মোচন স্বস্তি এনে দেবে তাকে। সান্ধ্য আকাশ তার কাছে অকৃত্রিক বন্ধুত্বের হাত বাড়াবে এবং সেই সাথে নির্জন প্রকৃতি তাকে আনন্দিত কর্মপ্রবাহের গভীরে প্রবেশে সহায়তা দান করবে। তখন খুশিতে বলতে ইচ্ছে হবে :

“সন্ধ্যা হল গো—

ওমা, সন্ধ্যা হল বুকে ধরো।

অতল কালো স্নেহের মাঝে

ডুবিয়ে আমায় স্নিগ্ধ করো।

এটিও পড়ুন – ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা জানিয়ে বাবার কাছে চিঠি

ট্যাগ: যখন সন্ধ্যা নামে, যখন সন্ধ্যা নামে রচনা, যখন সন্ধ্যা নামে প্রবন্ধ রচনা, যখন সন্ধ্যা নামে রচনা PDF.

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button