পূজার দিন ও তারিখ

2024 মাঘী পূর্ণিমা সময় ও সূচি | Magha Purnima

মাঘী পূর্ণিমার তাৎপর্য । মাঘ পূর্ণিমা কবে এবং তাৎপর্য

মাঘ পূর্ণিমা (Magha Purnima) যা মাঘী পূর্ণিমা নামে পরিচিত। মাঘ পূর্ণিমা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন। মাঘ মাসে পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালন করা। ধর্মীয় গ্রন্থে এই দিন পবিত্র গঙ্গায় স্নান এবং তপস্যার মহিমা বর্ণনা করা হয়েছে। এটি মাঘ মাসের বিশেষ দিন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন।

মাঘী পূর্ণিমায় গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থল প্রয়াগে লোকেরা পবিত্র স্নান, ভিক্ষা প্রদান এবং গরু ও হোমা দান করার মতো কিছু আচার পালন করে।

2024 মাঘী পূর্ণিমা সময় ও সূচি

উৎসবের নাম

উৎসবের তারিখ

উৎসবের সময়

মাঘী পূর্ণিমা ( Maghi Purnima Date )

শনিবার  24 ফেব্রুয়ারী 2024

বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে – ১১ ফাল্গুন, ১৪৩০

মাঘী পূর্ণিমার তাৎপর্য

শুভ মাঘী পূর্ণিমা বিশ্ব বৌদ্ধদের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এদিনে তথাগত বুদ্ধ ভিুসঙ্ঘের উদ্দেশ্যে প্রাতিমো উদ্দেশ ও বৈশালীর চাপাল চৈত্যে স্বীয় পরিনির্বাণ দিবস ঘোষণা করেন। তাই বিশ্বের বৌদ্ধরা এদিনটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করে থাকেন। বাংলাদেশের বৌদ্ধরাও তথাগত বুদ্ধের পরিনির্বাণ ঘোষণা দিবস হিসাবে বিভিন্ন বৌদ্ধ অধ্যুষিত এলাকায় গুরুত্ব সহকারে পালন করেন।

.
তথাগত বুদ্ধ পয়তাল্লিশ বর্ষা অর্থাৎ অন্তিম বর্ষা রাজগৃহের বেণুবনে অধিষ্ঠান করেছিলেন। সেই সময় তিনি বর্ষাব্রতের মধ্যে ভীষণভাবে রোগাক্রান্ত হন। তখন তাঁর বয়স আশি বছর। রাজগৃহের বেণুবনে বর্ষাব্রত পরিসমাপ্ত করে দেশভ্রমণে বহির্গত হয়ে ক্রমে বেণুবন বিহার হয়ে বৈশালীর চাপাল চৈত্যে উপনীত হলেন। প্রধান সেবক আনন্দকে বললেন –“হে আনন্দ! এই বৈশালীর উদয়ন চৈত্য, গৌতম চৈত্য, সপ্তআম্র চৈত্য, বহুপুত্রক চৈত্য, সারন্দন চৈত্য, চাপাল চৈত্য বড়ই মনোরম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। হে আনন্দ! চলো আমরা চাপাল চৈত্যে গিয়ে বিহার করি।” তখন আনন্দ সহ চাপাল চৈত্যে গমন করলেন। এসময় তথাগত বুদ্ধ আনন্দকে ইঙ্গিত করে বললেন, —“আনন্দ! তথাগতগণ ইচ্ছে করলে স্বকীয় ঋদ্ধি বলে এক কল্পকাল বর্তমান দেহে অবস্থান করতে পারেন। হে আনন্দ! তথাগতের চার ঋদ্ধিপাদ ভাবিত, বহুলিকৃত, রথগতি সদৃশ, অনর্গল, অভ্যন্তর, বাস্তুভূমি সদৃশ, সুপ্রতিষ্ঠিত, পরিচিত ও সম্যক নিষ্পাদিত হয়েছে। সে জন্য তথাগত ই”ছে করলে কল্পকাল অবস্থান করতে পারেন।”
.
মারদ্বারা প্রলুব্ধ প্রধান সেবক আনন্দকে তথাগত বুদ্ধ সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়া সর্ত্ত্বেও এ কথার তাৎপর্য বুঝতে অসমর্থ হলেন। দ্বিতীয়, তৃতীয় বার ইঙ্গিত দিলেও আনন্দ মারদ্বার অধিকৃত হয়ে তথাগত বুদ্ধের ইঙ্গিতের তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারলেন না। অতঃপর তথাগত বুদ্ধ বৈশালীর চাপাল চৈত্যে গিয়ে শুভ মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে স্মৃতিমান ও সম্প্রযুক্ত অবস্থায় স্বীয় আয়ুসংস্কার বর্জন করেনÑ” এখন হতে তিনমাস পর শুভ মাঘী পূণির্মা পর্যন্ত আমার প্রাণবায়ু চলতে থাকুক, সজিব, সচেতন থাকুক, তৎপর নিরুদ্ধ হোক”Ñ এরূপ সংকল্প করেন। অকস্মাৎ অতি ভীষণ ভূমিকম্প আরম্ভ হলো। মুহুর্মুহু প্রলয়ঘোর দেবগর্জন শ্রুত হতে লাগলো। এই আকস্মিক ভূমিকম্প ও বজ্রধ্বনীতে আনন্দের মনে ভীষণ ভয় ও বিস্ময়ের সঞ্চার হলো। তিনি তথাগত বুদ্ধের নিকট এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তদুত্তরে তথাগত বুদ্ধ বললেনÑ“শোন আনন্দ! বোধিসত্ত্ব যখন মাতৃকুি হতে ভূমিষ্ট হন তখন তাঁর পুণ্যতেজে ভূমিকম্প হয়। যখন বোধিসত্ত্ব সম্যক সম্বোধি লাভ করেন, তখন তাঁর জ্ঞানতেজে ভূমিকম্প হয়। যখন তথাগত বুদ্ধ ধর্মচক্র প্রবর্তন করেন, তখন পৃথিবী সাধুবাদ প্রদানে ভূমিকম্প হয়। যখন তথাগত আয়ুসংস্কার পরিত্যাগ করেন, তখন পৃথিবী কারুণ্যে কম্পিত হয়। আর যখন তথাগত পরিনির্বাণ প্রাপ্ত হন তখন পৃথিবী রোদনধ্বনীতে কম্পিত হয়।” অতঃপর বৈশালীর চাপাল চৈত্যে অবস্থানরত ভিুসঙ্ঘ ও বৈশালীবাসী শুভ মাঘী পূর্ণিমার জ্যোৎস্নাময়ী রাত্রীতে তথাগতের সমীপে সমবেত হলেন। তিনি ভিুসঙ্ঘের নিকট আপন আয়ুস্কাল নির্ধারণ পূর্বক পরিনির্বাণের দিন-তারিখ ঠিক করলেনÑ“এ মাঘী পূর্ণিমার তিনমাস পর শুভ বৈশাখি পূর্ণিমা তিথিতে পরিনির্বাণ লাভ করবেন।”
.
তথাগত বুদ্ধের নিকট তাঁর স্বীয় আয়ুষ্কাল পরিত্যাগের বার্তা শুনে আনন্দ একান্ত শোকাকূল হয়ে কাতর কণ্ঠে প্রার্থনা করলেনÑ ‘প্রভু! জগতের কল্যাণে আরো কল্পকাল অবস্থান করুন।’ তখন দৃঢ়তার সাথে আনন্দের প্রার্থনা প্রত্যাখ্যান করে শোকবিহ্বল আনন্দকে সান্ত্বনা প্রদানে উপদেশ দিলেন। ‘হে আনন্দ! আমি তোমাকে পূর্বেই বলেছি আমরা প্রত্যেকেই সকল প্রিয়বস্তু, সকল মনোপূত বস্তু হতে বিচ্ছিন্ন হতে হবে, বিরূপ অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। কোন মতেই তা অন্যথা হবে না। তথাগতের যা জাত, ভুত, সংস্কৃত বিপরিনামশীল পঞ্চস্কন্ধ তা নষ্ট হবে না, তাতো হতে পারে না। হে আনন্দ! তথাগত কর্তৃক যে অবশিষ্ট আয়ুষ্কাল পরিত্যাক্ত হয়েছে তিনি তিন মাস পর দেহত্যাগ করবেন বলে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তথাগত তা কোন মতেই প্রত্যাখ্যান করতে পারে না। এটা কিছুতেই সম্ভব নয়। অতঃপর তথাগত বুদ্ধ আনন্দকে সঙ্গে নিয়ে মহাবনে কুঠাগার শালায় গমন করলেন। তথা সমবেত ভিুসঙ্ঘকে তথাগত ৩৭ (সাইত্রিশ) প্রকার বোধিপীয় ধর্মের উপদেশ প্রদান করলেন। সঙ্ঘের উদ্দেশ্যে এটা তথাগত বুদ্ধের অন্তিম দেশনা, যা বৌদ্ধধর্মের সারমর্ম এতে নিহিত রয়েছে। হে ভিুগণ!
.
তোমদেরকে যে ধর্মসমূহ আমি অভিজ্ঞানে দেশনা করেছি, সে সমুদয় তোমরা উত্তমরূপে আয়ত্ব করে সুন্দররূপে আচরণ কর। সে বিষয়ে গভিরভাবে চিন্তা কর, তৎসমুদয় সর্বত্র বিস্তার কর যেন এই র্ব্র্চয মূলক ধর্ম স্থায়ী হয়। চিরদিন বিদ্যমান থাকে এবং বহুজনের হিত ও সুখ হয়। দেবমানবের হিত সুখ সম্পাদিত হয়। ভিুগণ তোমাদেরকে প্রকাশ করছি যেÑবয়ধর্ম্মা সঙ্খরা অপ্পমাদেন সম্পাদেথÑ“সংস্কারসমূহ য়শীল অপ্রমাদের সাথে নির্বাণ সাধনায় ব্রতী হও।” “পরিপক্কো বয় মযহং পরিত্তং মম জীবিতং , পহায় বো গমিসসামি কত মে সরনমত্তনো” অর্থাৎ আমার বয়স পরিপূর্ণ হয়েছে, আমার আয়ু আর অল্পই অবশিষ্ট আছে, তোমাদেরকে ছেড়ে চলে যাবো। আমার আত্মপ্রতিষ্ঠার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। –
“অপ্পমত্তা সতিমন্তো সুসীলা হোথ ভিক্খবে
সুসমাহিত সঙ্কল্পা সচিত্তনুরক্খথ।”
অর্থাৎ যে ভিুগণ! তোমরা অপ্রমত্ত, স্মৃতিমান, শীলবান ও সুসমাহিত সঙ্কল্প হও এবং স্বীয় চিত্তকে সতত রা কর। –
.
“যো ইমস্মিং ধম্ম বিনয়ে অপ্পমতো বিহেস্সতি
পহায় জাতি সংসারং দুক্খসসন্তং করিস্সতি।
অর্থাৎ যে ব্যক্তি এই ধর্ম বিনয়ে অপ্রমত্ত হয়ে বিহার করবেন, সে জন্ম ও সংসার অতিক্রম করে দুঃখের অন্তসাধন করবেন। তথাগত বুদ্ধ কর্তৃক এ শুভ মাঘী পূর্ণিমা দিবসে স্বীয় পরির্নিবাণ দিবসের ঘোষণা ও ভিুসঙ্ঘের প্রাতিমো উদ্দেশ্য , এটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা । ভিুসঙ্ঘের উদ্দেশ্যে ধর্মদেশনা – এতে বৌদ্ধধর্মের সারতত্ত্ব নিহিত রয়েছে। তাই অতি তাৎপর্য মণ্ডিত মাঘী পূর্ণিমা বৌদ্ধরা অতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ ও পালন করে থাকেন।
বুদ্ধের শিায় আমাদের জীবনকে সুন্দর ও ঋদ্ধ করতে পারি। মানুষ হিসেবে আমাদের বাড়তি কিছু সুযোগ সুবিধা রয়েছে, শুধুমাত্র আত্ম স্বার্থ চরিতার্থ করাই নয়, অর্পিত দায়িত্ব সম্পাদনের প্রতি সবিশেষ মনোযোগ, সৎ ও নিষ্ঠার সাথে পালনীয়। সর্বজীবের প্রতি মানবিক কর্তব্য পালনের জন্য কারো নির্দেশের অপোয় থাকাটাও অনেক সময় অমানবিক। আমরা মানুষ হিসেবে, মানুষের গরজে মঙ্গলকর কর্তব্য পালন করবো এটা মা, মাটি মানুষের ধর্ম, এটা জগত ও জীবের প্রকৃতির সাথে সংগতিপূর্ণ ধর্ম। আমরা স্মরণ করতে পারি, এ বিষয়ে তথাগত বলেছেন: “মা” যে-ভাবে সকল আপদ-বিপদ থেকে নিজের সন্তানকে অপার মৈত্রীবন্ধনে বুকে জড়িয়ে রাখে, রা করে তোমরাও সেইরূপ মৈত্রীভাবে সকল জীবের প্রতি পোষণ করিও। এটি বুদ্ধের শিার অন্যতম মৈত্রী চর্চা।বুদ্ধের উপদেশ হলো—
.
হীনং ধম্মং ন সেবেয্য পমাদেন ন সংবসে
মিচ্ছাদিট্ঠিং ন সেবেয্য ন সিয়া লোকবন্ধনো।
হীন ধর্মে রত বা প্রমত্ত হয়ো না। মিথ্যা দৃষ্ঠি সম্পন্ন কি সংসারবর্ধক হয়ো না।
রূপ, রস, শব্দ, স্পর্শের আর্কষণে ইন্দ্রিয়ভোগ্য জগতে আবদ্ধ হয়ে থাকাই হীনধর্মে লিপ্ত হওয়া, সম্স্ত কুশল কর্মে নিরুৎসাহ হলো প্রমাদের লণ।ল্য, পথ, কুশল, অকুশল সম্বন্ধে ভ্রান্তধারণার নাম হচ্ছে মিথ্যা দৃষ্ঠি। মিথ্যা দৃষ্ঠিই মানুষের তৃঞ্চাকে উদ্দীপ্ত করে তাকে জন্ম মৃত্যুর কঠিন শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে। ঐ শৃঙ্খলে বাধা পড়ে বারবার সংসারে আসাই হলো লোকবর্ধন ।যারা মুক্তি কামী সত্বগণ সর্বদাই কুশল কর্মেরত থাকে।

2023 মাঘী পূর্ণিমা হয়েছিল

উৎসবের নাম

উৎসবের তারিখ

উৎসবের সময়

মাঘী পূর্ণিমা ( Maghi Purnima Date )

রবিবার  ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button