প্রবন্ধ রচনাজীবনী

নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু প্রবন্ধ রচনা 600 শব্দের মধ্যে

নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু  ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক চিরস্মরণীয় কিংবদন্তি নেতা। তিনি নেতাজি নামে সমধিক পরিচিত।স্বাধীনতার পূজারী নেতাজী সুভাষচন্দ্র এই পোষ্টে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু উপর ভিত্তি করে প্রবন্ধ রচনা শেয়ার করা হল। বিভিন্ন পরীক্ষায় এই প্রবন্ধ রচনাটি কাজে আসবে। নেতাজী সুভাষচন্দ্র প্রবন্ধ অনুসারে অনুরূপ প্রবন্ধ লেখা যাবে – দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র বসু; একজন আদর্শ দেশপ্রেমিক; একজন মুক্তি সংগ্রামীর জীবনকথা ; স্বাধীনতা-সংগ্রামের পথিকৃৎ সুভাষচন্দ্র বসু, নেতাজী সুভাষচন্দ্র জীবনী, স্বাধীনতার পূজারী নেতাজী সুভাষচন্দ্র ইত্যাদি। এটিও পড়ুন – সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচনা 700 শব্দের মধ্যে

নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু প্রবন্ধ রচনা

“Give me blood, I shall give you freedom.’

[ প্রসঙ্গসূত্রঃ ভূমিকা ; বাল্যজীবন ও সেবাব্রত ; ছাত্রজীবনের বলিষ্ঠতা ; স্বাধীনতা-সংগ্রাম জীবনেরব্রত;নরমপন্থীদের সঙ্গে মতানৈক্য ও নিজপথেসংগ্রাম; জন্মশতবার্ষিকীতে নেতাজীর স্মরণ-মনন ; উপসংহার।]

ভূমিকা

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অমর নায়ক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু। দেশমাতৃকার শৃঙ্খল মােচনের জন্য তার আমরণ লড়াই ঘটনাবহুল জীবনচচা, রুদ্ধশ্বাস সংঘাত আমাদের বিশ্ময় উদ্রেক করে। তার অনন্য সাধারণ নেতৃত্ব, সতীর্থ প্রীতি, অদম্য প্রয়াস, সহমর্মিতা প্রভৃতি গুণাবলী দেশবাসীর কাছে আদর্শ ও চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার শতবর্ষ পূর্ণ হয়ে গেল, সরকারী ও বেসরকারীভাবে ঘটা করে শতবার্ষিকী উদযাপিত হল। জন্মগত অধিকার স্বাধীনতার জন্য ত্যাগৱতী মহানায়ক সুভাষচন্দ্র জীবন পণ সংগ্রাম করেছেন, স্বাধীনতা সম্পদে গৌরবান্বিত ভারতবাসী নেতাজীর কাছে কৃতজ্ঞ, সশ্রদ্ধ চিত্তে তাকে স্মরণ ও বরণ করে।

বাল্যজীবন ও সেবাব্রত

নেতাজীর জীবননাট্য বিভিন্ন কৌতূহলােদ্দীপক ঘটনায় পূর্ণ। ১৮৯৭ খ্রীস্টাব্দে প্রবাসী বাঙালীর ঘরে ওড়িশা’র কটক শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাস ২৪-পরগনার কোদালিয়া গ্রাম। পিতার নাম নিকীনাথ বসু এবং মাতা প্রভাবতী দেবী। অতি শৈশব থেকেই তার মানবসেবার পরিচয় পাওয়া যায়। পিতামাতাকে লুকিয়ে তিনি ছাত্রাবস্থায় সঙ্গীদের সঙ্গে আর্ত পীড়িত রােগীদের সেবাশুশৃ করতেন। ছাত্র হিসাবে তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধা ও প্রতিভার অধিকারী। ১৯১৩ খ্রীস্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।

ছাত্রজীবনের বলিষ্ঠতা

সুভাষচন্দ্র দেশ ও দেশবাসীকে প্রাণভরে ভালবেসেছিলেন। দেশবাসীর দুঃখ-দারিদ্র্য ও শাসক সম্প্রদায়ের সীমাহীন ঔদ্ধত্য বাল্যেই তার জীবনের গতি স্থির করে দেয়। সাধারণের মত ভােগ-বিলাস ও ঐশ্বর্যের জীবন নয়-মাতৃভূমির বন্ধনমােচন ও আর্তমানবতার সেবায় তিনি জীবন উৎসর্গের সংকল্প গ্রহণ করেন। এ কারণেই প্রেসিডেন্সি কলেজে বি. এ. পাঠকালে অধ্যাপক ওটেনের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়ে তিনি নিজ ভবিষ্যৎকে জলাঞ্জলি দেন এবং ভারতীয় যুবকদের বহুকাঙিক্ষত আই. সি. এস.-এর লােভনীয় চাকরি হেলায় ত্যাগ করে রাজনীতিক দেশবন্ধুর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে বেছে নেন দুঃখ-দারিদ্র ও নির্যাতনের এক অনিশ্চিত জীবন। ভারতের ইতিহাসে রাজনীতিক সুভাষ এক কৃতী, সফল ও বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। বঙ্গীয় জাতীয় কলেজ, বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটি, দেশবন্ধুর ‘স্বরাজদল’ ও ‘ফরওয়ার্ড পত্রিকা পরিচালনা

এটিও পড়ুন – নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস …. ভাবস্প্রসারন

স্বাধীনতা-সংগ্রাম – জীবনের ব্রত

ও সংগঠনে তিনি বিস্ময়কর সাফল্যের নজির রেখেছিলেন। কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র হিসাবে তার কৃতিত্ব অসাধারণ। তার কাছে রাজনীতি ও দেশসেবা ছিল ঈশ্বর সেবারই নামান্তর। বিভিন্ন জায়গায় বারংবার তিনি বলেছেন যে, এই আদর্শই আমার জীবনের জপ-তপ ও স্বাধ্যায়।

নরমপন্থীদের সঙ্গে মতানৈক্য ও নিজপথে সংগ্রাম

চরমপন্থী যুব নেতা সুভাষচন্দ্রের কাম্য ছিল ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণমুক্ত পূর্ণ স্বাধীনতা–ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন নয়। এই মতাদর্শ নিয়ে জাতীয় কংগ্রেসের প্রবীণ নেতৃত্বের সঙ্গে তার সংঘাত বাধে। অপরপক্ষে, সরকারের চোখেও তিনি বিপজ্জনক ব্যক্তি হিসাবে চিহ্নিত হন। সদাসতর্ক পুলিশের দৃষ্টি এড়িয়ে বিপজ্জনক দুস্তর পথ পাড়ি দিয়ে তিনি ব্রিটিশের শত্রু-দেশ জার্মানীতে উপস্থিত হন। ভারতের মুক্তির জন্য জার্মান রাষ্ট্রনায়ক হিটলার তাকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিপদসঙ্কুল সমুদ্রপথে পাড়ি দিয়ে জার্মানী থেকে জাপানে এসে তিনি ‘আজাদ হিন্দ বাহিনীর দায়িত্বভার গ্রহণ করে ব্রিটিশ ভারতের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। আজাদ হিন্দ বাহিনী ও সরকারের পরিচালনা তার জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি। দেশনায়ক সুভাষ দুর্দম সাহস, অত্যুগ্র দেশপ্রেম, প্রগাঢ় আত্মবিশ্বাস, সীমাহীন ত্যাগ ও অবিচল আদর্শবাদের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আজাদী সেনাদলের কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে—“দিল্লী চলাে’—প্রেরণা তাদের নেতাজী। সমগ্র বিশ্বের জাতীয়তাবাদী মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব উদ্দীপক অভিযান।

১৮৯৭ খ্রীস্টাব্দের ২৩শে জানুয়ারি নেতাজীর জন্মের শতবর্ষ পূর্তি হল। এ উপলক্ষে দেশ বিদেশে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে নেতাজীকে সম্মান জানানাের ব্যাপক কর্মসূচী নেওয়া হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কলকাতায় যথোচিত মর্যাদার সঙ্গে বেশ কয়েকদিন যাবৎ নেতাজী জন্মশতবার্ষিকীতে জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের আয়ােজন করেছিল। আলােচনা-সভা, প্রদর্শনী, নেতাজীর স্মরণ-মনন মেলা, স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ এইসব অনুষ্ঠানের আকর্ষণীয় উপাদান ছিল। নেতাজীপ্রতিষ্ঠিত ফরােয়ার্ড রকপূথকভাবে জন্মশতবার্ষিকী পালনের বর্ষব্যাপী কর্মসূচী নিয়েছিল। নেতাজী জানতেন যে, স্বাধীনতা অর্জন যেমন কঠিন, তেমনি স্বাধীনতা রক্ষা করা আরও দুঃসাধ্য। এজন্যই একালের ভারতবর্ষে সাধারণ মানুষের সার্বিক মুক্তির জন্য তাঁর চিন্তাকে কর্মে রূপদানের প্রসঙ্গটিই শতবার্ষিকীর প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে রয়েছে।

উপসংহার

দেশের বরেণ্য নেতা সুভাষচন্দ্র বসুর অন্তর্ধান রহস্য দেশবাসীকে ভাবায়। এ নিয়ে বহু কমিশন বসেছে, প্রশ্নের মীমাংসা সূত্র পাওয়া যায়নি, বিভিন্ন তথ্য ও দৃষ্টান্ত সমস্যাকে আরাে জটিল করে তুলেছে, দেশবাসী আরো আলােড়িত হয়েছে। আজও নেতাজীর যথার্থ মূল্যায়ন হয়নি। কিন্তু একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, তার মৃত্যুঞ্জয় উপস্থিতি যুগ হতে যুগান্তরে মুক্তিসংগ্রামী মানুষের মনে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।

এটিও পড়ুন – পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম পঞ্চায়েত সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Back to top button