মাদার টেরেসা প্রবন্ধ রচনা 600 শব্দের মধ্যে

অনুচ্ছেদ সমূহ
মাদার টেরেসা :মেরি টেরিজা বোজাঝিউ যিনি মাদার টেরিজা বা তেরেসা, নামে অধিক পরিচিত, ছিলেন একজন আলবেনীয়-বংশোদ্ভুত ভারতীয় ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী এবং ধর্মপ্রচারক। টেরিজার জন্মস্থান অটোমান সাম্রাজ্যের আলবেনিয়া রাজ্যের স্কপিয়ে। আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত তিনি সেখানেই কাটান। ১৯২৮ সালে তিনি আয়ারল্যান্ড হয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ উপনিবেশ ভারতে খ্রিস্টধর্ম প্রচার অভিযানে আসেন। জীবনের বাকি অংশ তিনি ভারতেই থেকে যান।
মাদার টেরেসা প্রবন্ধ রচনা অনুসারে অনুরূপ প্রবন্ধ রচনা লেখা যাবে – তােমার আদর্শ নারী, আধুনিক কালের কোন বিখ্যাত নারী-ব্যক্তিত্ব, সেবাব্রতে নারীর ভূমিকা, মাদার টেরিজা, এক মাতৃরূপী মহীয়সী নারী, সকলের মা মাদার টেরিজা, মা টেরিজাকে আমরা ভুলি নি, করুণাময়ী লোকমাতা মা টেরিজা, মা টেরিজা বিশ্বমাতা, শতাব্দীর জননী মাদার টেরেসা ইত্যাদি।
মাদার টেরেসা
[ প্রসঙ্গ সূত্রঃ ভূমিকা ; বাল্যজীবন ও কর্মজীবন ; সেবা কাজের পুরস্কার ; আদর্শ; উপসংহার ]
ভূমিকা
মানব চরিত্রের শ্রেষ্ঠ গুণ সেবা ও ভালবাসা। সেবা ও ভালবাসা দিয়ে যারা মানব সমাজে অমরত্বের আসন লাভ করে নিয়েছেন মাদার টেরেসা তাদের মধ্যে অন্যতম। স্থান-কাল-পাত্রের ক্ষুদ্র গণ্ডীর মধ্যে তার মানবসেবা সীমাবদ্ধ নয় ; কোন একটা বিশেষ দেশ, বিশেষ জাতি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে নয়, কোন একটা বিশেষ সময় বা মুহূর্তে নয়, তাঁর মানবসেবা সমগ্র পৃথিবীতে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত আর্তমানবের মধ্যে প্রসারিত। শৈশব থেকে আমৃত্যু তিনি ছিলেন মানবসেবায় ব্রতী। রােগগ্রস্ত দারিদ্র্য-পীড়িত শােক-সন্তপ্ত মানুষের কাছে তিনি সাক্ষাৎ সেবামূর্তি দেবী। তার সেবাযত্নে, আদর আর ভালবাসায় অগণিত মানুষ রােগমুক্ত হয়ে স্বস্তি পেয়েছে, অভিশপ্ত দারিদ্র্যের নাগপাশ মুক্ত হয়ে স্বপ্নময় ভবিষ্যতের জন্য কেউ কর্মব্রতী হয়েছে, তার স্নেহধন্য হয়ে কেউ পরম সুখে জীবনযাপন করছে। আর্তজনের অতি কাছের মানুষ মা টেরেসা।
বাল্যজীবন
মাদার টেরেসার পূর্বনাম অ্যাগনেস গােনাক্সা বেজক্সিহিউ। আলবেনিয়া পৈতৃক দেশ হলেও মা টেরেসা ১৯১০ খ্রীস্টাব্দের ২৭শে আগস্ট যুগােল্লাভিয়ার স্কপেজ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব শিক্ষার অব্যবহিত পরেই তিনি মাত্র ১৮ বছর বয়সে একটি খ্রীস্টীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত হন। মিশনারীর ব্রত নিলে তার নাম টেরেসা রাখা হয় ; ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ডাবলিনের লরেটো অ্যাবেতে ভারতের বৈচিত্র্যময় জীবনের কথা শুনে ভারতের প্রতি তিনি আকৃষ্ট হন। কলকাতার সেন্ট মেরী বিদ্যালয়ের শিক্ষিকার দায়িত্ব নিয়ে তিনি ১৯২৮ খ্রীস্টাব্দে ভারতে আসেন। প্রথমে কলকাতার সেন্ট মেরী বিদ্যালয়ে এবং পরে লরেটো বিদ্যালয়ে তিনি দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেন। ঐ শিক্ষকতার ফাকে তিনি এন্টালির মতিঝিল বস্তির দুঃস্থ, অসহায় মানুষদের সেবা করতেন।
কর্মজীবন
১৯৪৬ খ্রীস্টাব্দে দার্জিলিং যাত্রাপথে মাদার টেরেসার জীবনে এক ভাবান্তর দেখা দেয়। শিক্ষকতা ছেড়ে তিনি একমাত্র সেবাব্রত গ্রহণে মনস্থ করেন। পাটনা থেকে নার্সিং ট্রেনিং নিয়ে তিনি কলকাতায় ফেরেন। ১৯৪৮ খ্রীস্টাব্দে তিনি মতিঝিল বস্তিতে একটা বিদ্যালয় খােলেন। ঐ বছর তিনি ভারতের নাগরিকত্ব নেন। ভারত-ললনার মতাে তিনি শাড়ীকে অঙ্গভূষণ হিসাবে বেছে নেন। ১৯৫০ খ্রীস্টাব্দে তিনি মিশনারীজ অব চ্যারিটিজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। তার শুভ প্রচেষ্টায় ক্রমে গড়ে ওঠে কালীঘাটে মরণাপন্নদের জন্য আতুর ভবন নির্মল হৃদয়’, সােদপুরে ‘প্রেম নিবাস। “নির্মলা শিশুভবন, নির্মলা কেনেডি কেন্দ্রের মতাে অগণিত প্রতিষ্ঠান দুঃস্থ আতুর অসহায় মানুষদের সেবার জন্য মাদার টেরেসা গড়ে তােলেন। বর্তমানে কলকাতা, আসানসােল, শান্তিনগর, রাচী, দিল্লী, আগ্রা, মুম্বই, রায়গড় প্রভৃতি বিভিন্ন স্থানে মাদার টেরেসার প্রতিষ্ঠিত সেবাকেন্দ্র আর্তসেবায় নিয়ােজিত। ভারতের বাইরে সুইজারল্যাণ্ড, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, আমেরিকা, কানাডা, ইতালি প্রভৃতি দেশে তার সেবা প্রতিষ্ঠান ছড়িয়ে আছে। মাদার টেরেসার আদর্শে এই জাতীয় আরাে অজস্র সেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে বলে বিশ্বাস।
সেবাকার্যের পুরস্কার
১৯৬২ খ্রীস্টাব্দে ফিলিপাইন সরকার মাদার টেরেসার জন্য র্যামােন ম্যাগসেসে পুরস্কার ঘােষণা করেন। ঐ বছর ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৬৪ খ্রীস্টাব্দে পােপ জন পল তাকে একটি বহুমূল্য গাড়ি উপহার দেন। ঐ বিলাসবহুল গাড়ি নিজে ব্যবহার না করে তার বিক্রয়লব্ধ টাকা দিয়ে কুষ্ঠাশ্রম গড়ে তােলেন তিনি। ১৯৭১ খ্রীস্টাব্দে তিনি পােপজন শান্তি পুরস্কার পান। সেই পুরস্কারের টাকা কুষ্ঠকর্মকেন্দ্র স্থাপনে ব্যয় হয়। ঐ বছর তিনি আমেরিকায় ‘গুড সামারিটান পুরস্কার পান। পরের বছর তিনি জওহরলাল নেহেরু পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৩ খ্রীস্টাব্দে তিনি লণ্ডনে ‘প্রাইজ ফর প্রগেস ইন রিলিজিয়ান পুরস্কার পান। ১৯৭৫ খ্রীস্টাব্দে আন্তর্জাতিক নারীবর্ষে মেক্সিকোতে বিশেষ অতিথির আসন অলঙ্কৃত করেন ; ১৯৭৬ খ্রীস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে তিনি দেশিকোত্তম উপাধি লাভ করেন। ১৯৭৯ খ্রীস্টাব্দে তিনি নােবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮০ খ্রীস্টাব্দে ভারত সরকার তাকে ‘ভারতরত্ন’ উপাধি দেন। এভাবে একের পর এক বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তার মহৎ কাজের স্বীকৃতি দিয়েছে, পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করেছে। বিশ্ববন্দিত সেবিকাকে পুরস্কার দিয়ে দেশ ও জাতি ধন্য হয়েছে।
তিনি আজ আমাদের মাঝে বিরাজমান না থাকলেও বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ের বেদিতে তিনি আজও আসীন। কবির ভাষায় বলা যায়—
“নয়ন সম্মুখে তুমি নাই
নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই।”
আদর্শ
আত্মপ্রচার বিমুখ মা টেরেসা অক্লান্ত পরিশ্রমে জগদ্বাসীর কাছে সেবার এক নতুন আদর্শ গড়ে তুলেছেন। শুধু সেবা নয়, তার সঙ্গে আন্তরিক ভালবাসা মানুষকে কাছে টেনে এনেছে। আর্ত শিশু, পঙ্গু তার কল্যাণময় মাতৃস্নেহে আপ্লূত । বাণী বা উপদেশ নয়, যে কোন অবস্থায় আর্তের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা ও ভালবাসা তার জীবনাদর্শ।
দ্বন্দ্বমুখর বিবদমান পৃথিবীতে মাদার টেরেসা ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের মত একটু শান্তি ও স্বস্তির জন্য অক্লান্ত সেবাকার্যে ব্যাপূতা। মহৎ কাজে তার সাধ ছিল, তাই সাধ্যের অকুলান হয়নি। তার সেবাদর্শ, মানবপ্রীতি সর্বকালের মানুষের প্রেরণা ও শক্তি জোগাবে। মূতিমতী সেবারূপা মাদার টেরেসা মানুষের মনের মণিকোঠায় চিরদিন পুজিত ও বন্দিত হবেন।
উপসংহার
মাদার একবার বলেছিলেন যদি আমার সাহায্যের কারাে প্রয়ােজন হয় তবে তার আহানে আমি চাদেও যেতে পারি। জানি না কোন সাহায্যের আহ্বানে শতাব্দীর জননী সারা বিশ্ববাসীকে কাদিয়ে ১৯৯৭ খ্রীস্টাব্দের ৫ই সেপ্টেম্বর মরলােক পরিত্যাগ করে অমরলােকে যাত্রা করলেন। কলকাতা ছিল মাদারের বড় প্রিয় শহর। তিনি বলতেন – এ শহর এখনাে ভালবাসে।সেই ভালবাসার টানেই বােধহয় ১৯৮৯ খ্রীস্টাব্দে প্রায় মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে এসেছিলেন। রসিকতা করে বলেছিলেন – ‘সেন্ট পিটার বােধহয় ঈশ্বরকে বলেছেন স্বর্গে কোনাে বস্তি নেই, কিন্তু কলকাতার মানুষের ওকে বেশি দরকার। সেই সদা শান্তিময় হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে চিরতরে অসীমে মিলিয়ে গেলেন। সারা বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রতিনিধিবৃন্দ তার প্রতি অন্তিম শ্রদ্ধা নিবেদন করতে কলকাতায় নেতাজী ইনডাের স্টেডিয়ামে মিলিত হয়েছিলেন। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় এই অন্তিম কৃত্য সম্পন্ন হয়। সেবা ও ভালবাসার মূর্ত বিগ্রহ মাদার প্রেম ও সেবার গুরু দায়িত্ব আমাদের উপর অপ্ণ করে গেলেন। তার সেবাধর্ম পালনই তার প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা নিবেদন।
তাঁর উত্তরাধিকার হিসাবে আমাদের হৃদয়ে সমাজসেবার চিন্তা ও চেতনা জেগে উঠুক এই যেন আমাদের প্রার্থনা হয়। যেন সকল চিত্তে জাগরূক হয় সেই অমর বাণী—
“বিশ্বজগৎ আমারে মাগিলে কোথায় আমার ঘর,
আমার বিধাতা আমাতে জাগিলে কে মোর আত্মপর।”
এটিও পড়ুন – ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রবন্ধ রচনা 600 শব্দের মধ্যে