মাধ্যমিক সাজেশনপড়াশোনা
মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা

মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা। প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রী উক্ত নিয়মগুলি মেনে চললে আশাকরি প্রত্যকে ভালো ফল পাবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন কুশমণ্ডি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক কৌশিক কুজুর মহাশয়। [ দশম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ে কিছু কথা ]
মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা
প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ,
করোনা মহামারীর জন্য দীর্ঘদিন থেকে তোমাদের সঙ্গে সরাসরি দেখা-সাক্ষাৎ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যালয় গুলিতে পঠন-পাঠন বন্ধ। তা সত্বেও তোমরা যে মাধ্যমিক-২০২১ এর জন্য জোরদার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছো সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। আর মাধ্যমিকের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে যে মূল্যবান পরামর্শগুলো বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ প্রতিবার ছাত্র ছাত্রীদের দিয়ে থাকেন, ভাগ্যের পরিহাসে এবার তোমরা তা থেকে বঞ্চিত হয়ে চলেছো। তাই তোমাদের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বিশেষ করে “ভৌতবিজ্ঞান” বিষয়ে কি করে ভালো নম্বর পাওয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে দু-চার কথা লিখছি।
একটা সময় ছিল যখন বইয়ের পঞ্চাশটি মত সঙগা মুখস্থ করলেই অন্তত: পনেরোটি সঙগা কমন পাওয়া যেত। যা থেকে কমপক্ষে ২০-২৫ নম্বর পাওয়া যেত। কিন্তু বিগত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে , এখন বইয়ের সব সঙগা মুখস্থ করলেও ৫-৭নম্বরের বেশি পাওয়া যাবে না।
আমরা দেখি গুরুজনরা প্রায়ই বলেন যে প্র্যাকটিস কর, প্র্যাকটিস কর। কিন্তু ভৌত-বিজ্ঞান বিষয়টি এমন যে না বুঝে মুখস্থ করে প্র্যাকটিস করলে কোনো লাভ হবে না। কেননা এখনকার দিনে বই থেকে সরাসরি প্রশ্ন প্রায় আসেনা বললেই চলে। বইয়ের সব অনুশীলনী, টেস্ট পেপারের ১০ টি পৃষ্ঠা প্র্যাকটিস করার পরেও দেখা যায় ১০% এর বেশি কমন নেই। আবার আমরা দেখি কিছু ছাত্র-ছাত্রী টেস্ট পরীক্ষার পরে সাজেশান এর জন্য অপেক্ষা করে থাকে বা বাজারে প্রচলিত ছোটো ছোটো সাজেশান বই কিনে নেয়। কিন্তু মনে রাখবে ভৌতবিজ্ঞানে এখন সাজেশান ভিত্তিক পড়াশুনা করলে কিন্তু ঠকে যাবে। তাহলে উপায় কি??
ভৌতবিজ্ঞানে ভাল ফল করতে হলে যে ভাবে প্রস্তুতি নেওয়া উচিৎ তা হলো:
স্টেপ- ১) প্রথমেই সিলেবাস খুঁটিয়ে পড়বে। আমরা দেখি বেশির ভাগ ছাত্র ছাত্রী সিলেবাস না জেনে শুধু বইয়ের অধ্যায় গুলো পড়ে যায়। তা করলে কিন্তু হবে না। সিলেবাস প্রতিটি টেক্সট বইয়ের প্রথম দিকেই দেওয়া আছে।সিলেবাসে যা দেওয়া আছে সেই অনুসারেই প্রশ্নপত্র তৈরি হয়। আর সিলেবাস পড়ে দেখবে যে একটা টেক্সট বইয়ে সব কিছু কমপ্লিট হচ্ছে না । সে ক্ষেত্রে আরো দু একটা রেফারেন্স বই পড়ে নেবে।
স্টেপ- ২) সিলেবাস সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হলে তারপর পাঠ্য বই খুঁটিয়ে পড়বে। একটি অধ্যায় ভালোভাবে পড়া হয়ে গেলে সেই অধ্যায়ের একটি সংক্ষিপ্ত নোট তৈরি করবে। এই নোটে অধ্যায় সংক্রান্ত মূল তথ্য গুলো লিখে রাখবে।
স্টেপ- ৩) একটি অধ্যায় ভালোভাবে পড়া হয়ে গেলে বোর্ড নির্ধারিত প্রশ্নপত্রের নম্বর বিভাজন লক্ষ্য করবে। নম্বর বিভাজন মানে কোন অধ্যায় থেকে কত নম্বরের কয়টি করে প্রশ্ন থাকবে তার কাঠামো। এই নম্বর বিভাজন সহায়িকা বই বা কোয়েশ্চেন ব্যাংক এর প্রথম দিকে পাবে। অতিসংক্ষিপ্ত, সংক্ষিপ্ত, MCQ , রচনাধর্মী প্রশ্ন কয়টি করে থাকবে তা এই নম্বর বিভাজন থেকে জানতে পারবে। কারণ তোমরা হয়তো কোনো অধ্যায় থেকে বড় বড় কিছু প্রশ্নোত্তর রেডি করলে কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল সেই অধ্যায় থেকে শুধু ছোটো প্রশ্ন আসে। তাহলে তোমাদের পরিশ্রম বৃথা যাবে।
স্টেপ- ৪) এরপর যে অধ্যায় গুলো পড়া কমপ্লিট হয়ে গেছে সেই অধ্যায় গুলো থেকে বিগত বছরে (২০১৭-১৮-১৯-২০) কি কি প্রশ্ন এসেছে তার লিস্ট রেডি করবে। তাহলে আগামী বছরের প্রশ্নপত্র সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি হয়ে যাবে।
স্টেপ- ৫) এরপর সিলেবাস, নম্বর বিভাজন ও বিগত বছরের প্রশ্নপত্র মাথায় রেখে অধ্যায়টিকে আবার রিভিশন করো। দেখবে পুরো অধ্যায় সম্পর্কে এবার তোমাদের মনে একটা পরিস্কার চিত্র তৈরি হয়ে যাবে।
**** তাহলে সামগ্রিক ভাবে প্রস্তুতির ধরণকে সংক্ষেপে বললে বলা যায় যে– সিলেবাস—পাঠ্যবই—নম্বর বিভাজন—বিগত প্রশ্নপত্র– পাঠ্যবই।
এই ক্রমানুসারে পড়াশুনার অভ্যাস করলে ভৌতবিজ্ঞানে ভাল নম্বর পাওয়া সুনিশ্চিত। মাথায় রাখবে যে আমি কিন্তু পাঠ্যবই পড়ার উপরেই বেশি জোর দিচ্ছি, নোট বই নয়। বই খুঁটিয়ে পড়ার কোনো বিকল্প হয় না। আর মনে রাখবে তোমাদের সাহায্যের জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ সবসময় প্রস্তুত আছেন।
পরিশেষে সবাইকে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাই।
কৌশিক কুজুর। ২১/০৬/২০২০.
এগুলিও পড়ুন