ভারতের জাতীয় সংহতি প্রবন্ধ রচনা

অনুচ্ছেদ সমূহ
ভারতের জাতীয় সংহতিঃ এই পোস্টে ভারতের জাতীয় সংহতি সম্পর্কে প্রবন্ধ রচনা শেয়ার করা হল। আশা করি সকল শিক্ষার্থী বন্ধুদের ভারতের জাতীয় সংহতি রচনাটি খুব কাজে আসবে। এই প্রবন্ধ রচনা ছাড়া আমারা আর কি কি প্রবন্ধ রচনা লিখতে পারবো তা নিম্নে আলোচনা করা হয়েছে। এটিও পড়ুন – বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনা 600 শব্দের মধ্যে
অনুরূপ প্রবন্ধ ও জাতীয় সংহতি; বিচ্ছিন্নতাবাদ ও তার প্রতিকার ; জাতীয় সংহতির বিপর্যয়, জাতীয় সংহতি সুদৃঢ় করার উপায়, National Solidarity of India।
ভারতের জাতীয় সংহতি
[ প্রসঙ্গসূত্র ও ভূমিকা ; বিচ্ছিন্নতাবাদের সূচনা ; বিচ্ছিন্নতাবাদের ভয়াবহ প্রকাশ; জাতীয় সংহতির উপায় ; উদার শিক্ষানীতি; ত্রিভাষা সূত্র ; সাম্য-প্রতিষ্ঠা ; সরকারের প্রতি আনুগত্য; ; জাতীয় প্রতীক প্রসার ; জাতীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন ; মেলা ও ভ্রমণ ; উপসংহার ।]“আমি ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই। বল মূর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী, ব্রাহ্মণ ভারতবাসী, চণ্ডাল ভারতবাসী আমার ভাই; …… ভারতবাসী আমার প্রাণ, ভারতের দেবদেবী আমার ঈশ্বর; ভারতের সমাজ আমার শিশু শয্যা, আমার যৌবনের উপবন, আমার বার্ধক্যের বারাণসী; বল ভাই—ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ। স্বামী বিবেকানন্দ।
ভূমিকা
জাতির সম্যক মিলন বা একত্রীকরণই জাতীয় সংহতি। ভারতে আর্য-অনার্য সম্মিলন ঘটেছে, শক হুণ দল পাঠান মোগল’ ভারতের লীন হয়েছে। পঞ্জাব-সিন্ধু-গুজরাট-মারাঠা-দ্রাবিড়-উৎকল বঙ্গ অঞ্চল বিশেষের নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান-এ বৈচিত্র্য থাকলেও বিবিধের মাঝে ভারতের মহামিলন গড়ে উঠেছে। এরা একের অনলে বহুরে আহুতি দিয়া, বিভেদ ভুলিল জাগায়ে তুলিল একটি বিরাট হিয়া। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ভারত-সংস্কৃতির মর্মবাণী।
বিচ্ছিন্নতাবাদের সূচনা
বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা লাভের প্রাক্কালে কুচক্রী ইংরেজদের ষড়যন্ত্রে হিন্দু ও মুসলমান এই দ্বিজাতির ভিত্তিতে ভারতবর্ষ দ্বিখণ্ডিত হয়। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, দেশ বিভাগের অব্যবহিত পরেই শুরু হয় হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ঈর্ষা, বিদ্বেষ, হানাহানি। এই দাঙ্গা-হাঙ্গামায় লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এই সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ সাময়িক শান্ত হলেও মাঝে মাঝে মাথা চাড়া দেয়। ইংরেজ প্রজ্জ্বলিত দ্বিজাতি তত্ত্বের আগুনে আজ আমরা পুড়ে মরছি।
এটিও পড়ুন – সুকুমার রায় সম্পর্কে প্রবন্ধ রচনা – Sukumar Roy
বিচ্ছিন্নতাবাদের ভয়াবহ প্রকাশ
দ্বিজাতি তত্ত্বের ফলশ্রুতিতে স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের আন্তঃরাজ্যে ভয়াবহ বিচ্ছিন্নতাবাদ প্রকট হয়। অন্ধ্রপ্রদেশ, অসম, পঞ্জাব প্রভৃতি রাজ্যে স্বাতন্ত্রের দাবি ধ্বনিত হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে হিন্দীকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে চাপিয়ে দেওয়ার ফলে তেলেঙ্গানায় ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠনের আন্দোলন রক্তক্ষয়ী রূপ নেয়। অখণ্ড পঞ্জাব ভাষাগত সংকীর্ণতায় হরিয়ানা ও পাঞ্জাব দ্বিখণ্ডিত হয়। মহীশূর-মহারাষ্ট্রের সীমানা-বিরােধ সংহতি-চেতনার পরিপন্থী। নাগাল্যান্ড স্বাধীন নাগা রাজ্যের দাবিতে সন্ত্রাসের সৃষ্টি করেছে। মিজোরাম উগ্র জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ ত্রিপুরা গেরিলা আক্রমণে সরকার বিভ্রান্ত। অসমে বিদেশী বিতাড়নের নামে চলেছে বাঙালী নিধন যজ্ঞ। বিদেশী সাহায্যপুষ্ট খালিস্তানীরা অস্ত্রসাজে সজ্জিত হয়ে নিরীহ নরনারী হত্যা করে হাত কলঙ্কিত করছে। সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষে সংখ্যাতীত মানুষ আজ গৃহছাড়া। আঞ্চলিক বিদ্বেষের অনলে পুড়ে ভস্মীভূত হয় আমাদের সম্প্রীতি, সৌভ্রাত্র। হরিজন বিদ্বেষে আমাদের মানবতা কলঙ্কিত, রাজনীতির সূক্ষ্ম ছুরিকাঘাতে সাংবিধানিক নিরাপত্তা প্রহসনে পর্যবসিত। আমাদের জাতীয় সংহতি আজ বিপন্ন।
জাতীয় সংহতির উপায় ; উদার শিক্ষানীতি
ভারতে আজ নতুন করে জাতীয় সংহতি পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বিংশ শতাব্দীতে আমরা বিজ্ঞানে বেশ অগ্রসর ডাক্তারি, কারিগরি, ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি অর্থকরী বিদ্যায় মনােনিবেশ করেছি, কিন্তু যে ইতিহাস, সাহিত্য, কলাবিদ্যা মানবিকতার উন্মেষ ঘটায়, তা অবহেলা করছি। আজ দরকার শিক্ষার সম্প্রসারণ । ভারত-সংস্কৃতির মহিমা সম্যক উপলব্ধি করলেই মানুষ সৌহার্দ্য
ও প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হবে। মহাপুরুষের প্রেমের বাণী ও শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের প্রয়ােজন। একই ধরনের জাতীয় শিক্ষা সংহতির অনুকূল।
ত্রিভাষা সূত্র
হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে চাপিয়ে দেওয়া হিন্দি ভাষাভাষীদের বিক্ষোভের কারণ হে দাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজী, রাষ্ট্রভাষা হিন্দী এবং আঞ্চলিক ভাষা এই ত্রি-ভাষা সূত্রে ভাষা সমস্যা কিছুটা লাঘব হতে পারে।
সাম্য প্রতিষ্ঠা
জাতীয় ঐক্যের মূলকথা সামাজিক ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক সমতা। দেশের মুষ্টিমেয় মানুষের উন্নতি শুধু নয়, দেশের আপামর জনগণের কল্যাণ, দারিদ্র্যমুক্তি, ন্যূনতম চাহিদা পূরণ না হলে সংহতির প্রশ্ন ওঠে না। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, অঞ্চল নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার দেওয়া আশু প্রয়ােজন।
সরকারের প্রতি আনুগত্য
ভারতে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা। নির্বাচিত সরকারের প্রতি সবার আনুগত্য প্রয়ােজন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে সহনশীলতা, পারস্পরিক সহযােগিতা গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় করে। অন্যের গণতান্ত্রিক ক্ষমতায় যথেচ্ছ হস্তক্ষেপ সংহতির পরিপন্থী। সংবিধানের প্রতি মর্যাদা জাতীয় সংহতির রক্ষাকবচ।
জাতীয় প্রতীক প্রসার
জাতীয় সংহতির আর এক উপায় প্রতীক বা Symbol প্রচার। জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হলে জাতির মধ্যে ঐক্য ভাব জাগে। স্বাধীনতা দিবস ও প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রচারে জাতীয়তাবােধের সঙ্গে মানুষের ঐক্য ভাব জাগে। জাতীয় সংগীত আমাদের স্বদেশ মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করে।
এটিও পড়ুন – বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা,
জাতীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন
জাতীয় প্রতিষ্ঠান গঠনের মধ্য দিয়ে জাতীয় সংহতি বজায় রাখা যায়। সাহিত্য একাডেমী, ললিতকলা একাডেমী প্রভৃতি জাতীয় সংহতি স্থাপনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে চলেছে।
মেলা ও ভ্রমণ
রাজ্যে রাজ্যে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক মেলার প্রচলন করলে আঞ্চলিক মানুষ মিলিত হয়ে ভাব বিনিময় করতে পারে। তাতে সৌভ্রাত্র, মৈত্রী গড়ে ওঠে। পর্যটন শিল্পের প্রসারে এক অঞ্চলের ভ্রমণকারী অপর অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে।
উপসংহার
ভারতের মাটি শুধু মাটি মাত্র নয়, ভারতজননী, দেশমাতৃকা’। এই দেশের সব অঞ্চলের অধিবাসীই আমার ভাই, আমার আত্মীয়এই ভাব জাগাতে পারলে জাতীয় সংহতি সুদৃঢ় হবে!
100+ ইংরেজি প্রবন্ধ রচনা পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এটিও পড়ুন – কম্পিউটার প্রবন্ধ রচনা 600 শব্দের মধ্যে