
অনুচ্ছেদ সমূহ
বই বলতে লেখা, ছাপানো অক্ষর, ছবি, ছবিবিশিষ্ট কাগজ অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে তৈরি পাতলা শিট বা ডিজিটাল পৃষ্ঠার সমষ্টিকে বোঝায়। যা এক ধারে বাঁধা থাকে এবং মলাটের ভেতরে রক্ষিত থাকে। এর প্রতিটি পাতলা শিটকে পৃষ্ঠা বা পাতা বলে। বইয়ের সমার্থক শব্দ গ্রন্থ, কিতাব, পুস্তক।
আমার প্রিয় গ্রন্থ প্রবন্ধ রচনা অনুসারে অনুরূপ প্রবন্ধ রচনা লেখা যাবে- আমার প্রিয় বই, তোমার প্রিয় বই, তােমার প্রিয় একটি বাংলা সাহিত্য গ্রন্থ, তোমার প্রিয় গল্পের বই, আলিফ লায়লা, আমার প্রিয় উপন্যাস রচনা, শখের বই ইত্যাদি।
আমার প্রিয় গ্রন্থ
সূচনা :
‘আলিফ লায়লা’ বইটি পড়তে আমার খুব ভাল লাগে। আমি ‘আলিফ লায়লা’র আধুনিক প্রকাশিত সংস্করণের চলত বাংলায় লেখা। বইয়ের কথা বলছি না। আমি পুঁথি ‘আলিফ লায়লা’র কথাই বিশেষভাবে বলছি। সেই পুঁথি ‘আলিফ লায়লা’ আমার সবচেয়ে ভাল লাগে; কারণ পুঁথির ভাষার যাদু আমার কাছে সেই অতীত যুগের সুপ্ত আরব সভ্যতাকে যেন ঘুম ভাঙ্গিয়ে তোলে। আধুনিক কালের ভাষায় যেন ‘আলিফ লায়লা’র সেই অতীত যুগ পরিবেশকে অনেকখানি নষ্ট করে দেয়। সেজন্য আমি পুঁথি ‘আলিফ লায়লার একজন ভক্ত। এ ধরনের গল্পের বই দেশ-বিদেশের সাহিত্য থেকে আমি অনেক পরেছি। জনাথন সুইফটের “গালিভারের ঘরের গল্প’, ড্যানিয়েল ডিফোর ‘রবিনসন ক্রুশো’, সারভেণ্টিসের ‘ডন কুইসট’, চশারের ‘কান্টারবারী টেলস’ ইত্যাদি অনেক বই আমি পরেছি। সেসব বই আমার ভাল লাগে না সেকথা আমি বলি না, কিন্তু ‘আলিফ লায়লা’র ভিতর আমি যে আনন্দ পাই এবং স্বপ্ন, বিষয়, ভয় ও রহস্যের যে পরিবেশে আমি ডুব দিতে পারি তেমন আর কোন বইয়ের ভিতর পারি না।
আনন্দের উৎস :
‘আলিফ লায়লা’ আমার কাছে আননের একটি নতুন জগৎ উন্মুক্ত করে দেয়। মানুষ ও প্রকৃতির সব জানাজানি, বাস্তব বিস্ময়ের মিতালী, সত্য ও রহস্যের অভাবিতপূর্ব পরিচয় আর কোন গ্রন্থে এর আগে আমি এমন করে পাই নি। শাহজাদী ও পরী’, ”মানুষ ও দৈত্য’, ‘ব্যবসায়ী ও ডাকাত’, ‘দৈত্য ও দরবেশ’, ‘শহর ও সাগরের কথা একসাথে একই বইয়ে যেন ভিড় করে আছে। স্বাভাবিকের সঙ্গে অস্বাভাবিকের কথাও এতে বলা হয়েছে, কিন্তু সঙ্গতির সূত্র কোথাও ক্ষুণ্ণ হয় নি। নিছক গল্প ও নিটোল গল্পের প্রবাহ একটার পর একটা করে ঊর্ণনাভের মতো শাহজাদীর মুখ থেকে অসংখ্য শাখা-প্রশাখায় উৎসারিত হয়ে চলছে। তাদের জেদ নেই, বিরতি নেই এবং কোথাও গল্পের তাল কাটছে না।
আলিফ লায়লা গল্পের বৈচিত্র্য :
‘আরব্য উপন্যাস’ বা ‘আলিফ লায়লা’র এক একটা ছোট গল্পকে নিয়ে অনেক সাহিত্যে এক একটা বড় নাটক বা গল্পের বই রচনা করা হয়েছে। আলাদীন ও আশ্চর্য প্রদীপ‘, ‘আলীবাবা’, ‘সিন্দাবাদ হিন্দাবাদ’,-এর কাহিনীকে বড় করে ইংরেজী ও বাংলায় যে-সব বই তৈরি হয়েছে, সে সব বই হয়ত অনেকেই পড়েছেন। বহু সাহিত্যে, ‘আলিফ লায়লা’র একটি গল্প বা তাদের নায়কদেরকে পার করে নতুন নতুন প্রবাদ থাকা পর্যন্ত রচিত হয়েছে। আরব্য উপন্যাসে ‘আলাদীনের প্রদীপ’, আলু নাস্তরের হাওয়াই কেল্লা’ ও দিবা স্বপ্নের ভিত্তি হল ‘আলিফ লায়লা’। ‘আলিফ লায়লা’র গল্পগুলি একটার সাথে আর একটা যদিও যুক্ত কিন্তু তাদের প্রত্যেকটির স্বাতন্ত্র্য, মৌলিকত্ব বৈচিত্র্য এক পরম আশ্চর্যের বিষয়। এদিক থেকে এ বিশ্বসাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ, আর আরব্য প্রতিভার এক অক্ষয় অবদান: ‘আলিফ লায়লা’ আমাকে বলে দেয় আরব জাতির প্রথম জাগরণ ও সম্প্রসারণের কথা। আরব জাতি দিকে দিকে ছিল সেদিন অভিযাত্রী। সাধারণের বেশে, বিজয়িনীর বেশে, পরিব্রাজক, সওদাগররূপে দুনিয়াকে সেদিন আরব জাতি জানতে, চিনতে ও বুঝতে শুরু করছিল। অসীম কৌতূহল নিয়ে প্রকৃতি-বিস্ময়কে সে লক্ষ্য করছে ও তার রহস্যের অতলে ডুবে যাচ্ছে। কত দেশে কত কাস্তারে বনে, সাগরে মরুভূমিতে সে কত কি জানছে। মানুষের সঙ্গে সাত সাগরের এই মাঝিদের প্রথম জানাজানির কথা আরব্য উপন্যাসের এই গ্রন্থমালার ভিতর দিয়ে তারা বেঁধে রেখেছে তাদের মনের সীমাহীন কৌতূহল প্রকৃতির অনাবিষ্কৃত রহস্যের একটা মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে শান্ত হওয়ার চেষ্টা করছে। সেদিন আরব জাতির সেই মন, দৃষ্টি, সৌন্দর্য, কল্পনা ও রহস্যানুভূতির কথা স্তরে স্তরে সজ্জিত হয়ে আছে।
উপসংহার : ‘
আলিফ লায়লা’ আমার মনের চিন্তায় খোরাক যোগায়। এজন্য শুধু আমার একারই প্রিয় নয়-জগতের বহু লোকের প্রিয় এবং অন্যান্য বই ছেড়ে বিশেষ করে ‘আলিফ লায়লা’ আমার এ জন্যই এত ভাল লাগে।
সোর্স- লেখা- সুষমা দে, রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর
ট্যাগ- প্রিয় গ্রন্থ, প্রিয় গ্রন্থ সম্পর্কে রচনা, প্রিয় গ্রন্থ নিয়ে রচনা, প্রিয় গ্রন্থ সম্পর্কে প্রবন্ধ, প্রিয় গ্রন্থ পিডিএফ, প্রিয় গ্রন্থ প্রবন্ধ।