প্রবন্ধ রচনা

একটি নদীর আত্মকথা প্রবন্ধ রচনা

একটি নদীর আত্মকথাঃ এই পোষ্টে একটি নদীর আত্মকথা প্রবন্ধ রচনা শেয়ার করা হল। এই প্রবন্ধ অবলম্বনে – একটি নদীর আত্মজীবনী, একটি প্রাচীন জলাশয়ের আত্মকথা রচনা, পদ্মা নদীর আত্মকথা, মজা নদীর আত্মকথা, একটি গাছের আত্মকথা, একটি নদীর গল্প, একটি দূষণময় নদীর আত্মকথা, একটি ছাত্রের আত্মকথা, আত্মকথা বিষয়ক রচনা লেখা যাবে। বাংলার সংস্কৃতি প্রবন্ধ রচনা নিয়ে এর আগের পোষ্টে আলোচনা করা হয়েছে চাইলে দেখে নিতে পারেন। ইংরেজি বিষয়ক প্রবন্ধ টিপস টুইট (tipstweet.in) এ আলোচনা করা হয়েছে চাইলে পড়ে নিতে পারেন। নিম্নে একটি নদীর আত্মকথা প্রবন্ধ রচনা আলোচনা করা হল-

একটি নদীর আত্মকথা

রচনা-সংকেত : ভূমিকা-উৎপত্তি-বিস্তার ও ব্যাপ্তি-দান-দূষণ- উপসংহার।

ভূমিকা

সুরলােকে সংগীতের মধুময় আসরে বিষ্ণুর পদবিগলিত ধারায় যার জন্ম সেই গঙ্গা আমি। নবজাতিকা বন্দিনি হল শিবের জটায়। ভগীরথের কঠোর তপস্যায় বন্দিদশা ঘুচল অভাগীর। ভগীরথের পথ অনুসরণ করে পথে ঐরাবতের বাধা টপকে, জহ্নমুনির জানু বিদীর্ণ করে কত বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে ভগীরথের একান্ত কামনায় মর্ত্য-অবতরণ হল আমার। তার উদ্দেশ্য আমার পূতধারার স্পর্শে তাঁর সগরবংশের অভিশপ্ত ও ভস্মীভূত যাট সহস্র সন্তানের মুক্তি ঘটানাে। তােমাদের বলতে শুনি আমি সেই পূতপ্রবাহিনী, মুক্তিদায়িনী, কলুষনাশিনী গঙ্গা।

উৎপত্তি

এ তােমাদের পুরাণবৃত্তান্ত। তােমাদের পণ্ডিতেরা বলেন, হিমালয়ের নন্দা ও ত্রিশূলের হিমবাহ থেকে আমার প্রকৃত উৎপত্তি। তােমাদের বিজ্ঞানাচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে সেই তত্ত্বই তাে শুনিয়েছেন তােমাদের। তিনি আমার চিরন্তন প্রবাহিত কলধ্বনির মধ্যে শুনেছেন আমার উৎপত্তি হল মহাদেবের জটায়। যাই হােক, গঙ্গা, ভাগীরথী, মন্দাকিনী, জাহ্নবী কত নামে আমি তােমাদের পূজ্য।

বিস্তার ও ব্যাপ্তি

আমি জানি হিমালয়ের বুক চিরে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হয়েছে আমাকে। দুপাশের ছােটোবড়াে বহু ধারাস্রোত এসে মিশেছে আমার মূলধারায়। তাদের প্রাণপ্রবাহ আমায় সঞ্জীবিত, আমায় উজ্জীবিত করেছে। আমি বিপুল জলরাশি নিয়ে উদ্দাম গতিতে পার্বত্যপথ থেকে নেমে এসেছি সমতল ভূমিতে, তােমাদের পুণ্যতীর্থ হরিদ্বারে। তারপরেও কত উপনদী ও শাখা নদীর বিস্তীর্ণ জালবিস্তার করেছি। মধ্য ও নিম্নগতির বিস্তৃত ভূভাগে। তােমাদের মুখে শুনতে পাই উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পায়ের তলার মাটি আমারই পলল মৃত্তিকার দান। তােমাদের কবি সত্যেন্দ্রনাথ বঙ্গভূমিকে বলেছেন গঙ্গাহদি বঙ্গভূমি। আমার প্রশস্তি গানে তাঁর কবিকণ্ঠে শুনতে পাই –

সঞ্জীবিয়া উভতীর, সঞ্চারীয়া শ্যাম-শস্য হাসি,

তরঙ্গে সঙ্গীত তুলি ছড়াইছে ফেন-পুষ্পরাশি

অরি সুরধুনী-ধারা! অমােঘ তােমার আশীর্বাদ।

দান

আশিস দান কিনা আমার নিজ মুখে সে-কথা বলতে পারব না, তবে তােমাদের মুখে শুনি আমার অকৃপণ সরসতা আর দানেই নাকি তােমাদের মৃত্তিকার উর্বরতা, সরসতা তারই ফলশ্রুতিতে মাঠে মাঠে শ্যাম-শস্যের অফুরন্ত হাসি। আরও শুনি আমার স্রোতধারায় বাণিজ্যপােত ভাসিয়ে তােমাদের ব্যাবসাবাণিজ্য, অসংখ্য নগর-গঞ্জ-বন্দরের উৎপত্তি, সভ্যতার বিকাশ, জনপদের বিস্তার। ছােটো বড়াে অংশ শহরসহ কলকাতার মতাে বন্দর ও মহানগরের পওন।

দষণঃ

জানি পুণ্য তিথিতে আমার স্রোতধারায় তােমরা পুণ্যস্নান করাে। কারণ আমি পাপ বিনাশিনী, কলুষনাশিনী। আমার তীরে শ্রাদ্ধ-তর্পণ করতে দেখি। আমার তীরে এককালে সতীদাহের নির্মম ক্রিয়াকাণ্ড করে অর্ধদগ্ধ  সতীদের ছঁড়ে ফেলেছে আমার জলে। আমার কাছে সন্তান কামনা করে সেই সন্তানকে নির্দয়ভাবে বিসর্জন দিয়েছে আমার বুকে। তােমাদের অত্যাচারে, পীড়নে কত অসহায় নারী আত্মবিসর্জন দিয়েছে আমার এই ব্যথা দীর্ণ বুকে। আমার উদ্দেশে তােমাদের পুজো তাই মনে হয় এত পরিহাস। তােমাদের কাণ্ডজ্ঞানহীন অপরিণামদর্শিতা আমার জল আজ আর বনাশিনী নয়, লুষিত, দূষণভারে জর্জরিত। আমার উভয়তীরে গড়ে-ওঠা অসংখ্য কলকারখানা থেকে পরিত্যক্ত বর্জাপদার্থ এসে মিছে আমার স্রোতধারায়। শহর-নগর থেকে পয়ঃপ্রণালী-বাহিত দূষিত জল ও আবর্জনা এসে মিশছে আমার জলে। ফালে জলজপ্রাণীর বিনাশ ঘটছে আকছার। উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষ সবার উপরে পড়ছে তার ভয়াবহ কুপ্রভাব। অথচ তােমাদের হুঁশ নেই। মাঝে মাঝে শুনতে পাই পরিবেশ বিজ্ঞানীদের গঙ্গাদূষণের হুঁশিয়ারি ও তার প্রতিকারের কত পরিকল্পনা। কিন্তু এ অভাগীর দূষণে জর্জরিত মর্মব্যথা প্রকৃত খবর কজনই বা রাখে !

উপসংহার

তােমাদের উন্নয়নের কথা ভেবে সেতুর পর সেতুর বাঁধন তুলছ আমার বুকে। ফারাক্কায় ব্যারেজ করে আমায় কীভাবেই না বেঁধে ফেলেছ। কিন্তু যত বাঁধনই দাও, তা কিন্তু বুমেরাং হয়ে একদিন তােমাদেরই সর্বনাশ ডেকে আনবে। প্রকৃতির ওপর খবরদারি প্রকৃতি সইবে না। সেদিন অপরিণামদর্শিতার ফল কড়ায় গন্ডায় চুকিয়ে দিতে হবে তােমাদের। তােমাদের অপকর্মের ফলে আমার গভীরতা কমছে, আমার প্রবাহ ক্ষীণতর হচ্ছে। কোনাে সময়ে অতিবর্ষণের ফলে মহাপ্লাবন ঘটলে, সেদিন কিন্তু পরিত্রাণ নেই, জনপদের পর জনপদ ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে যাবে। কলকাতার মতাে মহানগরীও রেহাই পাবে না। তােমরা ভাববে আমি কী নির্দয় ও নিষ্ঠুর। সত্যি কি তাই ? তাহলে তােমাদের কবি কেন আমার গুণগানে হলেন পঞ্চমুখ-

রিক্ত ছিল মহী, তাহে তব বর করিল উর্বর,

কৃতজ্ঞ মানব তাই কীর্তি জের গাহে নিরন্তর।

ট্যাগঃ একটি নদীর আত্মকথা প্রবন্ধ রচনা, জেনে নিন একটি নদীর আত্মকথা প্রবন্ধ রচনা, একটি নদীর আত্মকথা প্রবন্ধ রচনা PDF সহ।

এগুলিও পড়ুন

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button