কৃষিপ্রবন্ধ রচনা

কৃষক রচনা ৮০০ শব্দের মধ্যে। কৃষক প্রবন্ধ রচনা

বাংলাদেশের কৃষক রচনা । বাংলাদেশের কৃষক রচনা class 8

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ যেখানে কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাংলাদেশের প্রায় একত্রিত কৃষক লাখ কোটির পর্যায়ে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কৃষক পেশাটি এখনও খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং উন্নয়নশীল বিষয় হিসাবে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশের কৃষকরা প্রধানতঃ ধান, পাট, তুলা, মসুর ইত্যাদি ফসল চাষ করে থাকেন। বাংলাদেশের কৃষকরা সাধারণত ছয়টি বৈদেশিক মুদ্রায় কৃষি করেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কৃষক ধান চাষ করেন। বাংলাদেশে প্রতি বছর ধান উৎপাদনের সংখ্যা বাড়ছে এবং এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

কৃষক রচনা

অথবা

বাংলাদেশের কৃষক

ভূমিকা :

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা এই বাংলাদেশের প্রান্তরে যে কৃষিদ্রব্য উৎপন্ন হয়, তাদের সাথে সমগ্র দেশবাসীর ভাগ্য জড়িত। বাংলাদেশের অধিবাসীর শতকরা প্রায় আশি জন কৃষিজীবী, বাকি বিশজন ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও বুদ্ধিজীবী। এরাও পরোক্ষভাবে কৃষককুলের উপরই নির্ভরশীল।

কৃষকদের অবস্থা :

পূর্বকালে দেশের জনসংখ্যা ছিল কম, সেই অনুপাতে জমির সংখ্যা ছিল বেশি, তখন জমির উর্বরা শক্তি ছিল অধিক, ক্ষেতে প্রচুর শসা উৎপন্ন হত, সেইজন্য তখনকার দিকে কৃষককুলকে দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হতে হত না। তাদের জীবনযাত্রার মান বর্তমানের ন্যায় এত নিম্নস্তরের ছিল না। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতার বিবরণ থেকে পূর্ব বাংলার যে পরিচয় পাওয়া যায় তা থেকে আমরা জানতে পারি, সে যুগের কৃষকদের অবস্থা কত সচ্ছল । তাদের গোলা ভরা থাকত ধান, গোয়াল ভরা থাকত গরু, পুকুর ভরা থাকত মাছ, তখন কৃষকরা তৃপ্তির সাথে আহার করত। সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করত। সেদিন তারা অন্তরে-বাইরে ছিল সুখী।

কিন্তু বর্তমানে কৃষকদের সে সুখের দিন আর নেই। তাদের বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ও দুঃখজনক, চরম দারিদ্র্যের সাথে সর্বদা তাদেরকে লড়াই করতে হয়। একবেলা খেয়ে, না খেয়ে, অর্ধনগ্ন থেকে, বর্ষায় ভিজে, শীতে কেঁপে তাদের দুঃখে জীবন-যাপন করতে হয়। রোগে, শোকে, দুঃখে ও পরিশ্রমে এক একজন কৃষক কঙ্কাল সার হয়ে অর্ধমৃত অবস্থায় দিন যাপন করছে। দারিদ্র্যের দুঃসহ পীড়নের ফলে সে রোগে ঔষধপথ্য কিনতে পারে না। শান্তিময় সচ্ছল জীবনের কণামাত্রও সে আস্বাদন করতে পারে না। দুঃখ-ক্লেশে ভারাক্রান্ত তার জীবন, মর্মদন্ত বেদনায় পঙ্গু। অবশেষে মৃত্যুর দ্বারে গিয়ে সে হাজির হয়। তখন দুর্ভাগা কৃষক উত্তরাধিকার সূত্রে আর কিছু রেখে যেতে পারে না, রেখে যায় কেবল পূর্বপুরুষদের দারিদ্র্য।

কৃষকদের দূরবস্থার কারণ :

বিজ্ঞানের ক্রমবিকাশের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষিকাজ পদ্ধতির দ্রুত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। কৃষিকাজের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে উন্নতশীল দেশগুলিতে। কিন্তু আমাদের দেশে কোন উন্নতি আজও সম্ভব হয় নি। প্রাচীনকালে আমাদের দেশে কৃষকেরা যে পদ্ধতিতে চাষাবাদ করত আজও সেই পদ্ধতির পরিবর্তন হয় নি। এখনও মান্ধাতার আমলের ভোঁতা লাঙ্গল, অর্ধমৃত গুরু আমাদের দেশে কৃষকদের প্রধান হাতিয়ার। কৃষকদের সংখ্যা বেরেছে দ্বিগুণ। সেই অনুপাতে জমির পরিমাণ বাড়ে নি। ফলে তারা পেটের অন্ন যোগাতে ব্যর্থ হয়। এই আমাদের দূরবস্থার প্রধান ও প্রথম কারণ।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের জমিতে জলসেচের কোন ব্যবস্থা নেই। এখনও অনাবৃষ্টির সময় আকাশের দয়ার দিকে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকতে হয়। অতি বৃষ্টির সময়ে জল নিকাশের কোন ব্যবস্থা নেই; ফলে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া কৃষকদের কোন উপায় থাকে না।

তৃতীয়ত, কৃষিযোগ্য ভূমির উপর ক্রমাগত চাষ করতে করতে ভূমির উর্বরতা করে যায়। এতে কৃষিদ্রব্যের উৎপাদন আগের মতো হচ্ছে না। এতদ্‌সত্ত্বেও আমাদের দেশের জমির শস্যোৎপাদন শক্তি বৃদ্ধির জন্য গোবর ও অন্য প্রকার রাসায়নিক সার জমিতে দিবার ব্যবস্থা নেই।

চতুর্থত, আমাদের দেশে প্রায়ই শোনা যায়, পোকা-মাকড়ের উপদ্রব থেকে শস্যাদি রক্ষিত হয় না। এদের উপদ্রব থেকে শস্যাদি রক্ষা করতে হলে প্রয়োজনমত কীট-বিনাশী ঔষধাদি ক্ষেতে ছড়িয়ে দেবার ব্যবস্থা করা দরকার। কিন্তু এ ব্যবস্থাও আজ পর্যন্ত আমাদের দেশে কার্যকরী হয় নি।

পঞ্চমত, অজন্মা ও প্রতি বছরের বন্যা কৃষকদের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে ফেলেছে। আমাদের সরকার বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েও বন্যা নিয়ন্ত্রণের কার্যকরী ব্যবস্থা অবলম্বন করতে পারেন নি। সেইজন্য অবস্থা শোচনীয় আকার ধারণ করেছে।

দুরবস্থা দূর করিবার উপায় :

কৃষকদের দুরবস্থা লাঘব করতে হলে সর্বাগ্রে কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের ব্যাবস্থা করতে হবে। অনাবৃষ্টির সময়ে প্রকৃতির অনুগ্রহের প্রতি তাকিয়ে না থেকে কূপ খনন করেও জল সেচের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ভাল বীজ বুনতে হবে, অতি বৃষ্টির সময়ে জল নিকাশের সুব্যবস্থা করতে হবে, কীট-পতঙ্গের উপদ্রব থেকে ফসল রক্ষার জন্য প্রয়োজনবোধে কীট-বিনাশী ঔষধ শস্যক্ষেত্রে ছড়িয়ে দিতে হবে, অনাবাদী জমিগুলি পরিষ্কার করে আবাদের সুব্যবস্থা করতে হবে। বাইরের জগতের চাহিদার উপর নির্ভর করে রপ্তানি শস্যের উৎপাদন নিয়ন্ত্রিত করতে হবে। তুলা, তৈলবীজ প্রভৃতি আমদানি শস্যের চাহিদা কমাবার জন্য যতদূর সম্ভব শস্যবীজ বনার ব্যবস্থা করতে হবে।

কৃষকদের আর্থিক সাহায্যের জন্য সরকার থেকে ব্যাপকভাবে কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করা দরকার। অপেক্ষাকৃত সুসময়েও কৃষক যাতে উৎকৃষ্ট বীজ ক্রয় করতে পারে, জমির পরিচর্যা করতে পারে, আধুনিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে অল্প সময়ে, অল্প পরিশ্রমে অধিক কর্মক্ষমতা ও ফসল লাভ করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। তারা যাতে সাধারণভাবে গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা করে তাদের সমস্ত চিন্তাশক্তি ফসল উৎপাদনেই ব্যয় করতে পারে, তজ্জন্য সরকার হতে কৃষকদেরকে প্রথমে বিনা সুদে ও অল্প সুদে টাকা ধার দেওয়ার ব্যবস্থা করা অত্যাবশ্যক। বর্তমানে যে ব্যবস্থা চালু, তা নিতান্তই অকিঞ্চিৎকর।

উপসংহার :

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এখানে প্রায় সকল লোককেই কৃষিজাত দ্রব্যের উপর নির্ভর করতে হয়। সুতরাং যাঁরা এই কৃষিজাত দ্রব্যসমূহ উৎপন্ন করে এবং ঘোটা জাতির প্রাণ বাচিয়ে রাখে, তারা যাতে উন্নতি করতে পারে, সেই দিকে প্রত্যেকেরই মনোযোগী হওয়া উচিত। কৃষকদেরকে অবনতিতে আমাদের, জাতিরও অধঃপতন নিশ্চিত। শিক্ষিত, ধনী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী সব ।কেই কৃষকদের উন্নতির জন্য চেষ্টা করতে হবে। তাতেই দেশের ও জাতির প্রকৃত কল্যাণ সম্ভব।

ট্যাগঃ

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাংলাদেশের কৃষক pdf, বাংলাদেশের কৃষক, বাংলাদেশের কৃষক রচনা class 8, বাংলাদেশের কৃষক রচনা class 5, রচনা বাংলাদেশের কৃষক, বাংলাদেশের কৃষক রচনা ২০ প্যারা, বাংলাদেশের কৃষক রচনা উক্তি, বাংলাদেশের কৃষক অনুচ্ছেদ, বাংলাদেশের কৃষক রচনা class 7, বাংলাদেশের কৃষক নিয়ে উক্তি, বাংলাদেশের কৃষক রচনা, কৃষক রচনা, বাংলার কৃষক রচনা

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button