বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রচনা 700 শব্দের মধ্যে
বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রচনা
সূচনা :
বিংশ শতাব্দী বিজ্ঞানের যুগ। অভূতপূর্ব বৈজ্ঞানিক উন্নতির ফলে মানুষের জীবনযাত্রায় আরাম-আয়েসের সুযোগ ঘটেছে। ব্যক্তিগত জীবনে তথা সমষ্টিগত জীবনে আমরা নিত্যই যে বিলাস উপকরণের সাক্ষাৎ পাই, তা বিজ্ঞানের দান। বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, গতি, আনন্দ। বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা, তাই অস্বীকার করার উপায় নেই।
সেকালের মানব সমাজ :
একদিন ছিল, যখন আমাদের পূর্বপুরুষ বনে জঙ্গলে বাস করতো, পাহাড়-পর্বতে আত্মগোপন করে থাকতো, পাথরের চকমকি দিয়ে আগুন জ্বালাতো, হিংস্র জন্তুদের পাথর ছুঁড়ে ঘায়েল করতো। বিজ্ঞানের বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আবিষ্কার তখন অজ্ঞাত, মানুষের চিন্তাধারার পূর্ণতাপ্রাপ্তি ঘটেনি। তারপর সভ্যতার ক্রমবিকাশে মানুষের চিন্তা-ভাবনা বেড়েছে, বুদ্ধি-জ্ঞানের বিকাশ সাধিত হয়েছে। বিজ্ঞানের ব্যাপক বিকাশে মানুষের প্রয়োজনীয়তার তৃষ্ণা মিটেছে। বর্তমান যুগে বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে বাঁচা আত্মহত্যার নামান্তর মাত্র।
বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা :
বিজ্ঞান আমাদের শিক্ষা দেয়—যে শিক্ষা ধারাবাহিক বিশ্লেষণপন্থী ও বাস্তব। একটি বাস্তব কার্যকারণ নিয়মের আবিষ্কার বিজ্ঞানের কাজ। কেন হচ্ছে, কি জন্য হচ্ছে, বিজ্ঞানই বলে দিতে পারে। বিজ্ঞানের ব্যাপক বিস্তারে, বিকাশে, রূপদানে যে-কোন জাতি বা দেশের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি নির্ভর করে। তাই বর্তমান যুগে যে দেশ যত উন্নত সে দেশ তত বিজ্ঞানের যাদুকরী শক্তিতে উন্নত। একটি দেশের শিল্প, বাণিজ্য, বড় বড় কল-কারখানা, বিরাট বিরাট বাড়ি, রাস্তাঘাট সব কিছু বিজ্ঞানের শিক্ষায়ই গড়ে উঠে।
“The study of science is an end as well as a means. ” প্রথমত, ইহা প্রকৃতির অনন্ত রহস্যের দ্বারোদ্ঘাটন করে, আবার এইভাবে যে জ্ঞান আহরিত হয় তা’ বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে মানুষের দুঃখ, কষ্ট ও রোগ দূর করে, সাহিত্য ও শিল্পের বিকাশ ঘটায় এবং নানারূপ বস্তু উৎপাদন করে মানুষের জীবনে সুখ ও আরাম আনয়ন করে। বিভিন্ন শিক্ষার আবশ্যকতার এই দ্বৈত ভূমিকা বস্তুজগৎ ও মানসিক জগতের উন্নতি বিধানে সহায়তা করে থাকে। যে দেশের ধনসম্পত্তি কম ছিল, যে দেশ শিল্পায়িত হয়ে উঠেনি—বিজ্ঞানের সাহায্যে সে দেশ আজ চরম উন্নতি করেছে।
কেবল ছোট বড় industry গড়ে তোলা বিজ্ঞানের কাজ নয়, কৃষির উন্নতির জন্যেও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয়ে থাকে। চাষবাসের উন্নতির জন্যে, নদীর ধারা নিয়ন্ত্রণের জন্যে, কুসংস্কার দূরীভূত, বেকারত্বের লাঘব ইত্যাদির জন্যে বিজ্ঞানের সাহায্য গ্রহণ করা হয়।
আমাদের দেশ অন্যান্য সভ্য জগতের তুলনায় অনেক পিছনে পড়ে রয়েছে। কৃষি ও শিল্পে সেই মধ্যযুগের কর্মপন্থাই গ্রহণ করা হয়ে থাকে। বর্তমান জগতের সঙ্গে পা মিলিয়ে চলতে গেলে, যে ব্যাপকতর বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজন তা যেন আমরা বুঝেও বুঝি না। মধ্যযুগের প্রচারের চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারণা প্রভৃতির মূলোৎপাটন বিজ্ঞান শিক্ষার উপর নির্ভর করছে। ব্যাপকভাবে বিজ্ঞান শিক্ষা দেওয়ার জন্য ভুল- কলেজ খুলতে হবে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এর প্রযোগ করতে হবে। আমাদের হাতে আলাদীনের চেরাগ নেই সত্যি কিন্তু বিজ্ঞানের সাহায্যে আমরা আলাদীনের চেরাগের চেয়েও দ্রুত অসম্ভব কাজ সম্পাদন করতে পারি।
একটি দেশ যদি উন্নতি ও সমৃদ্ধির সোপানে আরোহণ করতে চায়, তবে বিজ্ঞানের অনুশীলন প্রয়োজন। অবশ্য অনেক বাধা-বিপত্তি রয়েছে। সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে, আমাদের দেশের কিছুসংখ্যক লোকের দৃষ্টিভঙ্গি। বিদেশীরা চায় না উৎপাদন শক্তিরূপে আমাদের দেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। ধর্মীয় গোঁড়ামি দেশের উন্নতি সাধনের পথে এক মস্তবড় বাধা। আমাদের নির্বুদ্ধিতা ও অজ্ঞতা অগ্রগতিকে বার বার ব্যাহত করেছে। যতক্ষণ সরকার বিজ্ঞানের প্রতি দৃষ্টি না দিচ্ছেন, ততক্ষণ জাতির তথা দেশের সর্বাঙ্গীণ অগ্রগতির পথ সুগম হতে পারে না।
কারিগরি শিক্ষায় বিজ্ঞানের গবেষণা :
বিজ্ঞান শিক্ষার মাধ্যমেই আমরা সবকিছু দূর করতে পারি। ইঞ্জিনিয়ারিং ও কৃষি-কলেজে ছাত্ররা যে শিক্ষা পায় তার ব্যাপক ব্যবহারে দেশে ইঞ্জিনিয়ারিং কৃষিবিদ গড়ে উঠতে পারে। তারা যদি যথাযথ শিক্ষা পায়, তবে নতুন আবিষ্কার দ্বারা, নতুন নতুন গবেষণা দ্বারা দেশকে উন্নতি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। বিজ্ঞান-শিক্ষার ফলে অজ্ঞতা দূরীভূত হয়, স্বাস্থ্যরক্ষা, দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ইত্যাদি ক্ষেত্রে জনসাধারণ ওয়াকিফহাল হতে পারে।
পরিভাষার জন্য বোর্ড গঠন :
অতএব একটি দেশকে, জাতিকে, সে দেশের জনসাধারণকে উন্নতি ও প্রগতির পথে নিয়ে যেতে হলে, বিজ্ঞান-শিক্ষার আবশ্যকতা অপরিহার্য। কৃষি ও শিল্প প্রভৃতির ব্যাপক প্রসারের জন্য বিজ্ঞানের প্রয়োজন রয়েছে। আর এর জন্য দরকার স্কুল-কলেজে বিজ্ঞানশিক্ষা বাড়িয়ে তোলা, নতুন বৈজ্ঞানিক পরিভাষা সৃষ্টির জন্য ও বাংলায় বৈজ্ঞানিক বই রচনা করার জন্য বোর্ড গঠন করা। বৈজ্ঞানিক বিষয়ে বই-পুস্তক রচনার জন্য ঢাকার বাংলা একাডেমী ইতিমধ্যেই কাজে হাত দিয়েছে; এ বিষয়ে একাডেমীর প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। আশা করা যায় বৈজ্ঞানিক পরিভাষা সৃষ্টির কাজে বাংলা একাডেমীকে সাহায্য করবেন দেশের বৈজ্ঞানিক ও পণ্ডিতমণ্ডলী।
অন্য দেশে বিজ্ঞান চর্চা ও ইংল্যাণ্ড, আমেরিকা ও রাশিয়া বিজ্ঞানের শিক্ষার দ্বারাই এত বড় হয়েছে। আফগানিস্তান, চীন ও ভারত এই পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই মনে হয় বাংলাদেশও পিছিয়ে পড়ে থাকবে না; সভ্যজগতের সঙ্গে তাল মিলিযে চলবে। উন্নতি ও প্রগতির পথে দেশকে নিযোজিত করার জন্য বৈজ্ঞানিক শিক্ষার ব্যবস্থা করবেন দেশের সরকার। বর্তমান যুগে বিজ্ঞানশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান অস্বীকার করার অর্থই আত্মহত্যার নামান্তর। দেশ ও জাতিকে গড়ে তোলার জন্য ব্যক্তিজীবনে ও সমষ্টিজীবনে সুখ, শান্তি ও আরাম আনয়নের জন্য বিজ্ঞান-শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে; অতএব আমরা বিজ্ঞান-শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে নিয়ে উন্নতি ও প্রগতির পথে এগিয়ে যাব এবং এতে সরকার সাহায্য করবেন বলে। আশা করা যায়।