জানা অজানাপড়াশোনারূপচর্চা

মানবদেহর বিভিন্ন অংশের পরিচয়

মানবদেহ (Human body) হল মানব জীবনীর প্রাণী শরীর। এটি মানব জীবনীর বৈশিষ্ট্যগুলি ধারণ করে, যা সংক্ষিপ্তভাবে বিবেচনায় আসলে মানবদেহ হল একটি সৃষ্টিশীল প্রাণী যা বিভিন্ন অঙ্গ ও উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত।

মানবদেহের মূল অংশগুলি হল স্নায়ুসংক্রমণশীল পশ্চাতপক্ষ, হাড়, মাংসপেশী, হৃদয়, মস্তিষ্ক, কল্পনা শক্তি এবং ঘনত্ব। মানবদেহ একটি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং মানবকে তার কাজ সম্পাদনে সাহায্য করে।

মানবদেহ পরিচয়

মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গের সূক্ষ্ম ও স্থূল গঠন-প্রণালী সম্বন্ধে জানতে হলে ‘অ্যানাটমি’ এবং প্রতি অঙ্গকোষের ক্রিয়া সম্বন্ধে জানতে হলে ‘ফিজিওলজি’ পাঠের প্রয়োজন। দেহের কয়েকটি আভ্যন্তরীণ অঙ্গের ক্রিয়া এবং ঐ অঙ্গের রোগ সম্বন্ধে জানবার জন্য বিষয়টি সংক্ষেপে আলোচনা করা হোল।

মানবদেহর মস্তক :-

মাথার খুলির ভিতর একটি ত্রিভাজ শক্ত তন্তুময় থলির আবরণের মধ্যে মস্তিস্ক বা Brain থাকে। আঘাত, গুটিকাদোষ, জীবাণু সংক্রাণ প্রভৃতি কারণে মস্তিস্কাবরণ প্রদাহ বা মেনিনজাইটিস হতে পারে। ঐ তন্তুময় আবরণের ভাঁজের মধ্যে জল জমলে হাইড্রো কেফেলাস রোগ জন্মায় ।

মানবদেহর মস্তিস্কঃ-

মস্তিস্ক স্নায়ুকেন্দ্র অনুভূতি প্রদায়িনী স্নায়ু বা ‘সেন্সরী নার্ভ’ দ্বারা সমস্ত দেহের অনুভূতি মস্তিস্কে পৌঁছয় এবং ক্রিয়াবিধায়িনী স্নায়ু বা ‘মোটর নার্ভ’ দ্বারা মস্তিস্ক বা মেরুমজ্জ হইতে আদেশ সর্বাঙ্গে পৌঁছায়। মোটামুটি এইভাবে মস্তিস্ক দ্বারা জীবদেহের সমস্ত ক্রিয়া পরিচালিত হয়। মস্তিস্কের মধ্যে আবার পৃথক পৃথক অংশ পৃথক পৃথক স্নায়ু দ্বারা কার্য পরিচালনা করে। যেমন অর্ন্তদৃষ্টি, বহির্দৃষ্টি, বাকশক্তি, শ্রবণ শক্তি ইত্যাদি বিভিন্ন কার্যের অধিকারী মস্তিস্কের বিভিন্ন অংশ। সুতরাং মস্তিস্কের যে অংশটি বিকৃত হয় ঐ অংশের ক্রিয়া ব্যাহত হয়, ফলে বিভিন্ন স্নায়ুঘটিত রোগ জন্মায়। আঘাতপ্রাপ্তি, অত্যধিক শোক বা আনন্দ, ভয় রক্তের চাপ বৃদ্ধি, অত্যধিক মদ্যপান, অতিরিক্ত শুক্রক্ষয়,অতিরিক্ত মানসিক পরিশ্রম প্রভৃতি বিবিধ কারণে মস্তিস্কের বিকৃতি মৃগী, সন্ন্যাস, পক্ষাঘাত, উন্মাদ, জড়বুদ্ধি, দৃষ্টিহীনতা প্রভৃতি রোগ হয়।

মানবদেহর চক্ষুঃ-

চক্ষু দর্শনেন্দ্রিয়। চক্ষুর উপতারা বা আইরিসের পেছনের স্বচ্ছ কাচের মতো পদার্থের অস্বচ্ছতা ও কাঠিন্যবশতঃ ছানি বা ক্যাটারাক্ট রোগ হয়। এ ছাড়া বেরিবেরি রোগের ফলে গ্লুকোমা, সিফিলিস রোগের ফলে রেটিনাইটিস, আঘাত লাগা, স্নায়ু ও পেশী বৈকল্য ট্যারা দৃষ্টি প্রভৃতি কঠিন কঠিন চোখের রোগ হয়।

মানবদেহর কর্ণঃ-

কানের মধ্যে ঢাকের ছাউনির মতো একটি স্বচ্ছ পর্দা থাকে। কানের মধ্যে ঐ পর্দা এবং তিনটি ছোট্ট অস্থি ও স্নায়ুর সাহায্যে মস্তিস্কে শব্দ ধরা পড়ে। এই পর্দাটি বাইরে বা ভেতরদিকে বেঁকে গেলে নানারকম ভাবে শোনার ব্যাঘাত ঘটে। কর্ণ পটহের স্থূলতা, আকুঞ্চন ও ফুটো হওয়া প্রভৃতির ফলে কানে কম শোনা ও কানকালা রোগ দেখা দেয়।

অনেক সময় ডিপথিরিয়া টাইফয়েড বা পুরানো কানপাকা রোগের ফলে কানের ঠিক পেছনদিকে উঁচুমতো হাড়ের ভেতর ব্যথা ও পুঁজ জমে। একে ম্যাষ্টয়েড অ্যাবসেস বলে।

কানের নীচে চোয়ালের মূলে পেরোটিড গ্রন্থিতে পেরোটাইটিস বা মাম্পস নামক ছোঁয়াচে রোগ হয়।

মানবদেহর নাসিকাঃ-

দুটি নাসারন্ধ্রের মধ্যকার উপাস্থি ও নাসিকামূলের উপাস্থি ক্ষয় হইলে নাক বসিয়া যায়। একে নেজ্যাল-ক্যারাস বলে। নাকের ভেতরের . শিরা ফুললে নাসা রোগ হয়। ঐ নাসা ফেটে গেলে রক্ত পড়ে।

মানবদেহর মুখ ও গলামধ্যঃ-

জিভ, মাড়ী, টন্সিল, শ্বাসনালী মুখ, অন্ননালী, ঠোঁট প্রভৃতি যে কোন স্থানে ক্যান্সার হতে পারে। কর্ণমূল, চোয়াল ও জিভের নীচের স্যালাইভারী গ্ল্যান্ড থেকে এক প্রকার রস বের হয়। এই রস লালামুখের আবরক ঝিল্লী ভিজিয়ে দেয়। ফলে কথা বলতে পারা যায় এবং খাবারের কিছুটা অংশ গলে যায়। ইহা খাদ্যের গ্রাসটিকে ‘মিউসিন’ নামক পদার্থে পিছল করে দিয়ে গিলতে সাহায্য করে। লালার মধ্যে টায়েলিন নামক পদার্থ খাদ্যের -শ্বেত সার জাতীয় অংশ পরিপাকে সহায়তা করে। আজিভের পাশে টন্সিল নামক দুটো গ্ল্যান্ড আছে। যেকোন জীবানুকে ধ্বংস করাই টন্সিলের কাজ। টন্সিলাইটিস, মুখে ঘা, চোয়াল লেগে যাওয়া, দাঁতের ব্যথা প্রভৃতি • গলা ও মুখের উল্লেখযোগ্য রোগ।

মানবদেহর বক্ষদেশঃ-

বুকের মাঝে একটু বামদিক ঘেঁষে হার্ট বা হৃদপিন্ড এবং হৃদপিন্ডের উভয় পাশে ফুসফুস অবস্থিত। প্রতিবার শ্বাসের সঙ্গে বায়ু হতে বিশুদ্ধ অক্সিজেন সংগ্রহ করে নিঃশ্বাসের সঙ্গে দুষিত কার্বন-ডাইঅক্সাইড বের করে দেওয়া ফুসফুসের প্রধান কাজ। হৃদপিন্ড থেকে অশুদ্ধ রক্ত ‘পালমোনারী আর্টারী পথে ফুসফুসে আসে বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণ করার জন্য এবং গ্রহণ করে রক্ত বিশুদ্ধ হলে আবার ‘পালমোনারী ভেন’ পথে হৃদপিন্ডে ফিরে যায়।

ফুসফুস দুটো প্লুরা দ্বারা আবৃত। পাঁজরার ঠিক নীচেই প্লুরা ও প্লুরার ভেতরে ফুসফুস থাকে। ঐ পর্দার প্রদাহ হয় প্লুরিসি রোগ। জোড়া লেগে যাওয়া হল প্লুরেল-অ্যাডিসন। ফুসফুস প্রদাহ (নিউমোনিয়া), ক্ষয় (থাইসিস), শ্বাসনালীর প্রদাহ (ব্রঙ্কাইটিস) শ্বাসনালী ও ফুসফুস উভয়ের প্রদাহ (ব্রঙ্কো- নিউমোনিয়া), ফুসফুস বা শ্বাসনালীর পচনশীল ক্ষত বা গ্যাংগ্রীন প্রভৃতি শ্বাসযন্ত্র ঘটিত রোগ।

হৃদপিন্ড একটি স্বয়ংক্রিয় পাম্প। সর্বাঙ্গ হতে শারিরীক ক্রিয়ার ফলে দেহতত্ত্বর ক্ষয়জনিত অশোধিত রক্ত ভেন বা শিরাপথের মাধ্যমে সংগ্রহ করে শোধন করবার জন্য ফুসফুসে পাঠানো আবার বিশুদ্ধ রক্ত আর্টারী বা ধমনীপথে সর্বশরীরে পাঠানোই হৃদপিন্ডের কাজ। হৃদপিন্ড পেরিকার্ডিয়াম নামক দ্বিভাজ পর্দাদ্বারা আবৃত থাকে। এই পর্দার প্রদাহকে পেরিকার্ডাইটিস বলে। হৃদপেশীর ও হৃদকপাটের বিবিধ রোগকে ভালভুলার ডিজিসেস বলে। হৃদপিন্ডের স্থান বিশেষের প্রসারনকে ডায়লেটেশন এবং হৃদশূলকে এঞ্জিনা- পেষ্টরিস বলে।

উদরঃ-

বক্ষদেশ ও উদর ব্যাবচ্ছেদকে পেশী ডায়াফ্রায়ামের প্রদাহ বা ডায়াফ্রামাইটিস বলে ও হঠাৎ সংকোচনকে হিক্কা বলে।

উদরগহ্বরে (১) পাকাশয়,(২) যকৃত (৩) ক্লোম (৪) প্লীহা (৫) ক্ষুদ্রান্ত (৬) বৃহদান্ত্র এবং নিম্নোদরে (১) মলান্ত্র (২) মূত্রাশয় (৩) মূত্রগ্রন্থি থাকে। স্ত্রীলোকের নিম্নোদরের নিম্নভাগে (১) যোনী (২) জরায়ু ও (৩) ডিম্বাশয় থাকে।

(১) পাকাশয়ঃ-

খাদ্য পরিপাকের জন্য পাকাশয়ের গ্রন্থিসমূহ হইতে যে রস বেরোয় তাকে গ্যাষ্ট্রিক যুস বলে। এই রস অম্লস্বভাবাপন্ন, এজন্য এই রস খাদ্যের শর্করা জাতীয় পদার্থ পরিপাকে সাহায্য করে। ইহা খাদ্যের সঙ্গে চলে আসা জীবানু ধ্বংস করে। শ্বেতসার জাতীয় খাদ্যের ওপর এর কোন ক্রিয়া নেই। এই রস দুধ জমাতে সাহায্য করে এবং প্রোটিন জাতীয় পদার্থকে কতকাংশে পরিবর্তন করে দেয়। গ্যাষ্ট্রিক পেন, গ্যাষ্ট্রিক আলসার, ক্যান্সার, গ্যাস্ট্রাইটিস, প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য রোগ।

(২) যকৃত বা লিভারঃ-

দক্ষিণ ফুসফুসের নিম্নভাগে এবং দক্ষিণ কুক্ষির ওপরে অবস্থিত শরীরের বৃহত্তম গ্রন্থির নাম লিভার। পিত্ত নিসঃরণ, ইউরিয়া নির্মাণ এবং শর্করা জাতীয় খাদ্য ও চর্বিজাতীয় খাদ্য পরিপাক ও নিয়ন্ত্রণ এবং অকর্মন্য রক্ত কণিকা ধ্বংস করাই যকৃতের প্রধান কাজ। হিপাটাইটিস (যকৃতে প্রদাহ), হিপাটিক অ্যাবসেস (স্ফোটক), হাইপাট্রোপি (বিবৃদ্ধি), অট্রোফি (সংকোচন), ক্যান্সার, বিলিয়ারী কলিক (পিত্তশূল) গলস্টোন কলিক (পিত্তপাথরী শূল) গলস্টোন (পিত্তপাথরী) ম্যারাসমাস (যকৃতের ক্রিয়া বিকৃতির জন্য শীর্ণতা), ড্রপিস (শোথ), অ্যাসাইটিস (উদরী) জন্ডিস (পান্ডু) প্রভৃতি লিভার ঘটিত রোগ।

যকৃত হইতে বাইল বা পিত্ত নামে একপ্রকার পীতাভ-হরি বর্ণের তিক্ত রস বের হয়ে গলব্লাডার বা পিত্তথলিতে সঞ্চিত হয়। এই রস ক্ষুদ্রান্তের প্রথমাংশে খাদ্যের সঙ্গে মিশে পরিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করে। এই রস পচননিবারক, ক্ষারপ্রধান, পাকাশয় রসের ক্ষমতাকারক, শ্বেতসারজাতীয় ও চর্বিজাতীয় পদার্থের পাচক ও শোষক। পিত্ত অন্ত্রের সঞ্চালন ক্রিয়া বাড়িয়ে দিয়ে পরিপাক ও শোষণকার্যে সহায়তা করে। শরীর রক্ষার জন্য যকৃত অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ।

(৩) ক্লোম বা প্যানক্রিয়াস :-

উদরের পেছনদিকে ও বক্ষোদরপেশীর নিচে অবস্থিত দীর্ঘ গ্রন্থিবিশেষের নাম প্যানক্রিয়াস বা ক্লোম। ক্লোমনলী পিত্তবাহীনলীর সঙ্গে মিলিত হয়ে ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথমাংশে মিলিত হয় এবং পিত্তরসের সঙ্গে ক্লোমরস মিশে অন্ধ্রে প্রবেশ করে। ক্লোমরস পালোজাতীয়, ছানাজাতীয় ও চর্বিজাতীয় খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। ক্লোম বা প্যানক্রিয়াসে প্রদাহ, বেদনা এবং ক্যান্সার প্রভৃতি রোগ দেখা দেয়।

(৪) মানবদেহর প্লীহা :-

উদরগহ্বরের বাম পাশে পাঁজরার নীচে প্লীহা বা স্পলীন নামে একটি নাতিবৃহৎ গ্রন্থি আছে। রক্তের শ্বেতকণিকা, রক্তকনিকা ও ইউরিক অ্যাসিড তৈরী করা ও রক্তসঞ্চয় করা প্লীহার প্রধান কাজ। ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর এবং পুরনো জীবাণুঘটিত রোগের জন্য প্লীহা বৰ্দ্ধিত হয়।

৫) মানবদেহর অন্ধ্র :-

পাকাশয় থেকে মলদ্বার পর্যন্ত প্রসারিত। অস্ত্রের প্রথমাংশ এলোমেলোভাবে সাজানো। এই অংশকে ক্ষুদ্রান্ত বলে। অস্ত্রের শেষাংশ অপেক্ষাকৃত চওড়া ও একটি খিলানের আকারে থাকে। উদরের ডানদিকে ক্ষুদ্রাস্ত্র ও বৃহদান্ত্রের মিলনস্থলে একটি ক্ষুদ্র অস্ত্র থাকে। ইহাকে উপাঙ্গ বা অ্যাপেণ্ডিক্স বলে। পুরনো কোষ্ঠকাঠিন্য, উদরাময়, অত্যধিক মাংস খাওয়া, খাবারের সঙ্গে চুল, নখ, পিন, কীটপতঙ্গ প্রভৃতি পেটে গিয়ে অ্যাপেন্ডিক্সে ঢোকার জন্য যে প্রদাহ হয় তাকেই অ্যাপেণ্ডিসাইটিস বা টিস্ফাইটিস বলে।

পাকাশয় ও মুখে, পাকাশয় রস ও লালার সাহায্যে ভুক্ত খাদ্য, অনেকটা জীর্ণ হয়ে অস্ত্রে আসে। সেখানে যকৃত রস, ক্লোমরস, অস্ত্রগ্রন্থি রস একসাথে খাদ্যের ছানা ও পালোজাতীয় এবং শর্করা ও চর্বিজাতীয় পদার্থ পরিপাকে সাহায্য করে। খাদ্যের কিছুটা অংশ মুখে ও পাকাশয়ে রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। বাকী অংশ অস্ত্র থেকে যকৃতে যায়। সেখান থেকে শরীরের সব জায়গায় পৌঁছে যায়। অবশিষ্ট অনাবশ্যক অংশ মলরূপে দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। কলিক পেন (অস্ত্রে শূল), ইনটেষ্টিনাল আলসার (অস্ত্রেক্ষত), এন্টারাইটিস (প্রদাহ), ইনটেষ্টিন্যাল ক্যাটার (উদরাময়) ক্রিমি, ক্যান্সার, ইনটেস্টিনাল- অবস্ট্রাকশন (অস্ত্রাবরোধ), টিউমার, ক্ষয় প্রভৃতি অন্ত্রের রোগ। মলান্ত্রে অর্শ, অর্বুদ, মলদ্বারে শোথ, মলাচ্যুতি প্রভৃতি রোগ হয়।

পেটের ভেতরে, কাপড় পরবার স্থানের সমান্তরাল জায়গায় মেরুদন্ডের দু’পাশে দু’টি মূত্রগ্রন্থি বা কিডনি থাকে। মূত্রগ্রন্থি রক্তের অপ্রয়োজনীয় পদার্থ পৃথক করে দেয়। এই পৃথক পদার্থের নাম মূত্র। ঐ মূত্র কিডনি থেকে ইউরেটার পথে মূত্রাশয়ে আসে। মূত্রাশয় তলপেটের সামনের দিকে জননেন্দ্রিয়ের ঠিক ওপরে অবস্থিত। মূত্রাশয় থেকে সঞ্চিত মূত্র মূত্রনালী পথে বেরিয়ে যায়।

পেটের মধ্যের সকল পদার্থ পেরিটোনিয়াম নামক একটি দ্বিভাজ থলির মধ্যে থাকে। ঐ থলির প্রদাহকে পোরটোনাইটিস এবং ঐ থলির মধ্যে জল সঞ্চয়কে অ্যাসাইটিস বা উদরী রোগ বলে।

মানবদেহ স্ত্রী যন্ত্র :-

পুরুষ অপেক্ষা স্ত্রীলোকের বস্তি গহ্বর ও নিম্নোদর অধিকতর প্রশস্ত। গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসবের জন্য স্ত্রীলোকের বস্তিগহ্বরে জরায়ু, ডিম্বাশয়, ডিম্ববাহী নালী, যোনি প্রভৃতি অতিরিক্ত কয়েকটি যন্ত্র আছে।

মূত্রাশয়ের ঠিক পেছনে এবং মলান্ত্রের সম্মুখ ভাগে ও যোনিপথের উপরের দিকে সামনে ঝুঁকানো উল্টানো ঘটের আকারে জরায়ু অবস্থিত। জরায়ুর দুই পাশে দু’টো ডিম্বাকৃতি ডিম্বাশয়ের সহিত জরায়ুটি সংযুক্ত । প্রতি ঋতুস্রাব কালে একটি বা দুইটি পরিপুষ্ট ডিম্ব, ডিম্বাশয়ের দেহ ভেদ করে বেরিয়ে আসে এবং ফেলোপিয়ান টিউবের সাহয্যে জরায়ুর দিকে যায়। এই সময় পুরুষের সঙ্গমে পুরুষের শুক্রকীট জরায়ুতে প্রবেশ করে ফেলোপিয়ান টিউব পথে এগোতে থাকে। ফলে ফেলোপিয়ান টিউবের মধ্যে স্ত্রীডিম্ব ও পুরুষের শুক্রকীটের মিলন হয়। এই মিলিত ডিম্ব জরায়ুর তন্তুতে আটকে যায়। জরায়ুতে ২৮০ দিন ধরে এই ভ্রুণ বর্ধিত হয়ে পূর্ণ শিশু রূপে যোনিপথে ভূমিষ্ঠ হয়।

ডিম্বাশয় প্রদাহ (ওভেরাইটিস), ডিম্বাশয় শূল, ডিম্বাশয়ে টিউমার, ক্যান্সার ক্ষয় প্রভৃতি ডিম্বাশয়ের রোগ। জরায়ুর ক্ষয়, প্রদাহ, জরায়ুর টিউমার বিভিন্ন প্রকারের আবর্তন ও বক্রতা, শ্বেতপ্রদর, রক্তপ্রদর, অতিরজঃ স্বপ্নরজঃ, ঋতু শূল, জরায়ুচ্যুতি, ক্যান্সার, জরায়ু মুখের অবরোধ প্রভৃতি জরায়ুর রোগ।

যোনিতে উপদংশ ক্ষত (সিফিলিস), ক্ষত, যোনিভ্রংশ, অর্বুদ (টিউমার), প্রভৃতি রোগ হতে পারে।

কুঁচকি :-

গনোরিয়া, সিফিলিস, বা আঘাতজনিত কারণে বাগী, অস্ত্রচ্যুতি বা হার্নিয়া প্রভৃতি কুঁচকির সাধারণ রোগ।

কোমর :-

কটিশূল, বাত, রিনেল-কলিক প্রভৃতি কোমরের রোগ। লাম্বার- হার্নিয়া কোমরের একটি কঠিন রোগ। তবে এ রোগ খুব কম হয়। উরু :- হার্নিয়া এবং উরুর পেছন দিকে সায়েটিকা প্রভৃতি যন্ত্রণাদায়ক রোগ হয়।

মেরুদণ্ড:

ক্ষয়, ক্ষয়জনিত বক্রতা, মেরুমজ্জার টিউমার প্রভৃতি মারাত্মক রোগ মেরুদণ্ডে দেখা যায়।

হাত পা :-

হৃদপিণ্ডের রোগের জন্য হাতে স্নায়ুশূল, পক্ষাঘাত, বাত প্রভৃতি কঠিন রোগ হতে পারে। পায়ে উপদংশ ঘটিত নানাপ্রকার সঞ্চালন- বিকৃতি, গ্যাংগ্রীণ বা পচাক্ষত, রোনাল্ডস্ ডিজিস প্রভৃতি কঠিন ও দুরারোগ্য রোগের জন্ম হয়।

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button