প্রবন্ধ রচনা

শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ প্রবন্ধ রচনা 600 শব্দের মধ্যে

রামকৃষ্ণ পরমহংস সম্পর্কে রচনা । পরমপুরুষ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ সম্পর্কে রচনা

শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ বা রামকৃষ্ণ পরমহংস (Sri Sri Ramakrishna kathamrita) ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট ভারতীয় হিন্দু ধর্মগুরু। তিনি নিজের জীবন সম্পর্কে কিছু লিখে যাননি। তার শিষ্য ও প্রত্যক্ষদর্শীদের রচনা থেকে তার জীবন ও শিক্ষার কথা জানা যায়। রামকৃষ্ণের নথিবদ্ধ শিক্ষা মূলত তার জীবনের শেষ চার বছরের উক্তি থেকে জানা যায়।

পরমপুরুষ শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ

পরমপুরুষ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ প্রবন্ধ অনুসারে অনুরূপ প্রবন্ধ লেখা যাবে তোমার আদর্শ মহাপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণের ধর্মাদর্শ, একজন জগদ্বিখ্যাত ভারতবাসী।

[ প্রসঙ্গসূত্র: ভূমিকা; আবির্ভাবকাল ও বংশ পরিচয়; সমকালীন যুগপরিবেশ; সাধনার বৈশিষ্ট্য, মানবজীবনের সার্থকতাজ্ঞাপন; মনীষী ও ভক্ত সান্নিধ্য শ্রেষ্ঠ শিষ্য; উপসংহার। ]

“মনরে কৃষিকাজ জান না।

এমন মানব জমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলতো সোনা।।”

রামপ্রসাদ

ভূমিকা

ভারতে যুগে যুগে ইতিহাস-বিধাতার অদৃশ্য অঙ্গুলি হেলনে অনেক মহামানবের আবির্ভাব ঘটেছে। ভারতে এইসব মানুষকে অবতারের সম্মানে ভূষিত করা হয়। ধর্মের গ্লানি দূর করে জগতে একটি সুন্দর মানবসমাজ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষায় ঈশ্বর নরদেহ ধারণ করে পৃথিবীর মাটিতে অবতরণ করেন। ভারতে এরকম বারে বারে ঈশ্বরের মানবরূপে অবতরণ ঘটেছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর চতুর্থ দশকে আমাদের এই সুজলা-সুফলা বাংলার মাটিতে যে মহামানবের আবির্ভাব ঘটেছিল—তিনিই এ যুগের অবতার পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ। স্বামী বিবেকানন্দের ভাষায় তিনি ‘অবতার বরিষ্ঠ’—সমস্ত অবতারের শ্রেষ্ঠ ঘনীভূত প্রকাশ।

আবির্ভাবকাল ও বংশ-পরিচয়

বাংলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম হুগলী জেলার কামারপুকুর। তেজস্বী, ধর্মনিষ্ঠ, সত্যপরায়ণ ব্রাহ্মণ ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর ধর্মপ্রাণা সরলস্বভাবা সহধর্মিণী চন্দ্রমণি দেবীর নিবাস ছিল এই ছায়াশীতল পল্লীজননীর ক্রোড়ে। তাদের ধনের গরিমা ছিল না, ছিল চরিত্রের সম্পদ। এই সম্পদের উত্তরাধিকার নিয়েই ১২৪২ বঙ্গাব্দের ৬ই ফাল্গুন, বুধবার (ইংরেজী ১৮৩৬ খ্রীস্টাব্দের ১৭ই ফেব্রুয়ারি) শুক্লা দ্বিতীয়া তিথির ব্রাহ্মমুহূর্তে তাদের গৃহ আলোকিত করে যে শিশুর আবির্ভাব ঘটে তিনি আমাদের ভূবনবিদিত শ্রীরামকৃষ্ণ। বালা নাম ছিল গদাধর।

সমকালীন যুগপরিবেশ

গদাধরের আবির্ভাবকালের যুগপরিবেশ বাংলা তথা ভারতের এক আলোড়িত অধ্যায়। লর্ড মেকলে সবে কলকাতায় ইংরেজী শিক্ষার ভিত্তি রচনা করছেন। তার পরবর্তী কয়েক দশকে নব্যশিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী দেশীয় ধর্ম ও আদর্শে আস্থা হারিয়ে বিদেশের অনুকরণে মত্ত, একান্ত আত্মবিস্মৃত। এই যুগসঙ্কটে শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর সাধনা ও চরিত্রের অমল দ্যুতিতে দেশবাসীকে আবার নিজের ঐতিহ্য এবং সম্পদের দিকে আকৃষ্ট করেন।

এটিও জানুন- বিজয়ার চিঠি বন্ধুর কাছে বন্ধুর চিঠি

সাধনার বৈশিষ্ট্য

পিতার মৃত্যুর পর যুবক গদাধর অগ্রজ রামকুমারের সঙ্গে কলকাতায় আসেন। রামকুমার গঙ্গাতীরবর্তী দক্ষিণেশ্বরে রানী রাসমণি প্রতিষ্ঠিত কালীবাড়িতে প্রথম পূজারী নিযুক্ত হন। একুশ-বাইশ বছর বয়সে গদাধর নিজে পূজক নিযুক্ত হলেন। শুরু হল তাঁর সাধন-জীবন। মায়ের পূজায় শাস্ত্রীয় বিধি-নিষেধ তাঁর কাছে তুচ্ছ ছিল। শুধু মায়ের দেখা পাওয়ার জন্য তীব্র আকুলতা। দীর্ঘ বারো বছর সাধনার শেষে সিদ্ধি তাঁর করায়ত্ত। এ এক অপূর্ব সাধনা। সব ধর্মমতের সাধন করে দেখলেন, সকল ধর্মের মূলীভূত সত্য এক–পথ শুধু আলাদা। ঘোষণা করলেন—’যত মত, তত পথ।’ শুধু তাই নয়, সমস্ত জীবের মাঝে শিবের অস্তিত্ব উপলব্ধি করে এ যুগের মানুষকে নতুন মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করলেন। রচিত হল ধর্মসমন্বয়ের এক নতুন যুগ—সহিষ্ণুতার নবদিগন্ত।

মানবজীবনের সার্থকতা জ্ঞাপন

দক্ষিণেশ্বরে সাধনকালে আত্মীয়রা তাঁকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার চেষ্টা করেন। বাঁকুড়া জেলার জয়রামবাটী গ্রামের রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের পঞ্চম বর্ষীয়া কন্যা সারদামণির সঙ্গে তাঁর পরিণয় হয়। যৌবনপ্রাপ্তা স্ত্রী যখন দক্ষিণেশ্বরে এলেন তখন তাকে প্রশ্ন করে জানতে পারলেন, তিনি তাঁকে সংসারবন্ধনে আবদ্ধ না করে ইষ্টপথে সহায়তা করতে এসেছেন। এই মহীয়সী নারীই আজ বিশ্ববন্দিতা মা সারদাদেবী—শ্রীশ্রীমা। এই দম্পতি তাদের তপস্যাপৃত জীবন দিয়ে জগতের ভোগসর্বস্ব মানুষকে দেখালেন যে, মানবজীবনের সার্থকতা ঈশ্বরলাভে, আত্মসুখে নয়, বিশ্বকল্যাণে।

মনীষী ও ভক্ত সাধ্যি

সে যুগের বিখ্যাত প্রায় সব মনীষী তাঁর সংস্পর্শে এসেছেন। অনেক উচ্চশিক্ষিত তরুণ তাঁর প্রতি অনুরাগে ত্যাগব্রতী হয়েছেন। মহাকবি মধুসূদন, মনীষী বঙ্কিমচন্দ্র, মানবদরদী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখ ব্যক্তি তাঁর সান্নিধ্যে এসে মুগ্ধ হয়েছেন। মধ্য কলকাতায় বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন (মেন) -এর প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত (শ্রীম) তাঁর অমৃত বাণীকে ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত’তে ধরে রেখেছেন। এই অমৃতবাণীতে মানুষ জীবনের সকল সমস্যার সমাধান খুঁজে পায়।

শ্রেষ্ঠ শিষ্য

সে যুগের উচ্চশিক্ষিত যুবক নরেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর পুণ্যপ্রভাবে স্বামী বিবেকানন্দে পরিণত হয়ে গুরুর আদর্শে মানবকল্যাণে জীবন উৎসর্গ করেন।

উপসংহার

শেষ জীবনে দুরারোগ্য কর্কটরোগে আক্রান্ত হয়ে উত্তর কলকাতার কাশীপুর নামক স্থানে এক উদ্যানবাটীতে চিকিৎসার জন্য আনীত হন। কিন্তু ঐ অশক্ত শরীর নিয়ে দিনে প্রায় কুড়ি ঘণ্টা সমীপাগত মানুষকে ঈশ্বরলাভের উপদেশ দিতে থাকেন। কণ্ঠে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, কিন্তু কথামৃত বর্ষণে ক্ষান্তি নেই। অবশেষে ১২৯৩ বঙ্গাব্দের ৩১শে শ্রাবণ (১৮৮৬ খ্রীস্টাব্দের ১৬ই আগস্ট) কাশীপুর উদ্যানবাটীতেই এই পরম প্রেমিক মহাসাধক মর্ত্যালীলা সম্বরণ করেন।

ট্যাগ- শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ প্রবন্ধ রচনা, শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ প্রবন্ধ রচনা PDF, শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ অনুচ্ছেদ, জেনে নিন শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ সম্পর্কে।

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button