প্রবন্ধ রচনাবিজ্ঞান

মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান রচনা

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান ( Science in human welfare)  বিজ্ঞান হলো মানবকে প্রাকৃতিক এবং মানবগঠিত বিষয়সমূহের উপর আধারিত একটি দ্রুতগতি লাভ করতে সাহায্য করা যায়। বিজ্ঞান প্রকৃতির ক্ষেত্রে এবং মানব সৃষ্ট বিষয়সমূহের ক্ষেত্রে দুটি বিভাগে বিভক্ত হয়। প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বর্তমানে পৃথিবী ও পরমাণু, তারকা, মহাকাশ এবং প্রাণী জীবনের সমস্ত বিষয়সমূহ নিয়ে গবেষণা করে। আর মানবগঠিত বিষয়সমূহের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি, চিকিৎসা, প্রাণী বিজ্ঞান, খনি ও উর্বরণ ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা হয়। এছাড়া বিজ্ঞান মানব জ্ঞানের একটি অংশ যা আমাদের জীবনে প্রতিফলিত হয়ে থাকে এবং প্রগতিশীলতার উন্নয়নের সাথে সাথে প্রভাব পড়ে। [মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান রচনা]

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান

বিজ্ঞান মানব কল্যাণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিভিন্ন বিজ্ঞান শাখার সমন্বয়ে আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নয়ন হয়েছে যা মানব সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখছে। বিজ্ঞান এমন একটি ক্ষেত্র যা মানব সমাজের প্রগতিশীলতার জন্য প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও সমস্যার সমাধান করে।

বিজ্ঞানের উন্নয়নের ফলে আমরা আধুনিক চিকিৎসার সুবিধা পাচ্ছি, নতুন উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, সমস্যার সমাধান করার জন্য উন্নয়ন হচ্ছে এবং মানব সমাজের ভিত্তিতে লেখাপড়া, শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রাপ্ত হচ্ছে।

এছাড়াও বিজ্ঞানের সাথে সাথে আমরা পরিবেশ সংরক্ষণের উপকারিতা পাচ্ছি এবং পরিবেশের দুষ্প্রভাব কমানোর জন্য অনেক পরিশ্রম করা হচ্ছে। সামাজিক বিষয়ে বিজ্ঞান আমাদেরকে মানব অধিকার ও ন্যায্যতা বিষয়ে উন্নয়নে সাহায্য করছে।

সুতরাং, বিজ্ঞান মানব সমাজ ও পরিবেশের ভালবাসার জন্য একটি অগুন উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়। [মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান রচনা]

মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান

ভূমিকা :

বর্তমান সভ্যতার সর্বত্রই বিজ্ঞানের অভিব্যক্তি। চারিদিকে বিজ্ঞানের বিজয়বার্তা ঘোষিত হচ্ছে। বিজ্ঞানের সাহায্যে মানুষ প্রকৃতিকে বশীভূত করেছে। আজ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে বিজ্ঞানেরই রাজত্ব চলছে। কিন্তু বিজ্ঞান মানুষেরই কল্যাণের জন্য, ধ্বংসের জন্য নয়। দৈনন্দিন জীবনে মানুষ বিজ্ঞানের অবদানে উপকৃত ও সমৃদ্ধ হচ্ছে। [মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান রচনা]

আধুনিক বিজ্ঞান :

সভ্যতার ক্রমবিকাশের পথে অগ্রসর হয়ে বিজ্ঞান বর্তমানে পূর্ণরূপে সমৃদ্ধি লাভ করেছে। ঊনবিংশ শতকের গোড়ার দিকে বিজ্ঞান নতুন শক্তি নিয়ে অবতীর্ণ হল। বিজ্ঞান শিল্পজগতে নতুন আলোড়নের সৃষ্টি করল। দ্রুত উৎপাদনের তাগিদে নতুন নতুন যন্ত্র আবিষ্কারের হিড়িক পড়ে গেল। এই যুগের মহিমায় সমস্ত কাজকর্মই যন্ত্রের সাহায্যে সম্পন্ন হচ্ছে। এই যন্ত্র বিজ্ঞানের দান বলে বর্তমান যুগকে বিজ্ঞানের ‘মানসপুত্র’ বলা হয়। বিজ্ঞানের অসীম শক্তিতে মানুষ প্রকৃতিকে যেন হাতের মুঠার মধ্যে এনে ফেলেছে। মানুষের মনে আজ আদিম যুগের সেই অসহায়তার ভাব আর নেই। বিজ্ঞান আজ মানুষের দুর্বলতা ও অসহায়তা দূর করতে সমর্থ হয়েছে; ও মানব কল্যাণে নিয়োজিত হয়েছে, ওর জয়যাত্রা অব্যাহতভাবে চলছে।

বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার :

আধুনিক বিজ্ঞান সময় ও দূরত্বকে জয় করেছে। জেমস্ ওয়ার্ট স্টীম ইঞ্জিন ও জর্জ স্টিভেনসন রেলগাড়ি আবিষ্কার করলেন। বৈজ্ঞানিক তাঁর বুদ্ধি ও যুক্তি খাটিয়ে ব্যোমযানের সাহায্যে বিহঙ্গের ন্যায় আকাশে উরে বেরাচ্ছে। উড়োজাহাজের সাহায্যে আমরা এখন ঘণ্টায় তিনশত মাইলের অধিক দূরত্ব অতি সহজেই অতিক্রম করতে পার। মাইকেল পাপুরের চিরন্তন ফ্যারাডে বিদ্যুৎ আবিষ্কার করলেন। টমাস এডিসন বিদ্যুৎকে কাজে লাগালেন। আলো জ্বলিল, ট্রাম চলল, পাখা ঘুরল, বিদ্যুৎ ভৃত্যের মত খাটতে লাগল। টেলিফোন, রেডিও, টেলিভিশন যন্ত্র প্রভৃতি বিদ্যুৎ তরঙ্গের রহস্যময় শক্তির উপর দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে মানুষের বহুবিধ দুরারোগ্য ব্যাধিকে দমন করার জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞান বিদ্যুৎশক্তির সাহায্য গ্রহণ করছে। আর এ সবই তো মানুষের সুখের জন্যে, মানুষের সমৃদ্ধির জন্যে। [মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান রচনা]

চিকিৎসা বিজ্ঞান :

বিজ্ঞানের সাহায্যে মানুষ মৃত্যুর কবল হতে ফিরিয়ে আসতে সমর্থ হচ্ছে। অধ্যাপক রঞ্জনের আবিষ্কৃত ‘রঞ্জন রশ্মি’ (X-Ray) অধ্যাপক কুরী ও মাদাম কুরীর আবিষ্কৃত ‘রেডিয়াম’ বিজ্ঞানজগতে যুগান্তর এনেছে। রঞ্জন রশ্মি এবং আলট্রাসনোগ্রাফীর সহায়তায় শরীরের অদৃশ্য বস্তু দৃশ্যমান হয়েছে। রেডিয়াম ক্যান্সারের মত ভয়ঙ্কর ক্ষতের মারাত্মক বিষক্রিয়াকে অনেকাংশে প্রতিহত করেছে। পেনিসিলিন, ক্লোরোমাইসিন ও স্ট্রেপটোমাইসিন ইত্যাদি মহৌষধ আবিষ্কারের ফলে কোটি কোটি মানুষ নানাপ্রকার দুরারোগ্য ব্যাধির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। একদা কুকুর শৃগালের দংশনে উন্মাদগ্রস্ত হয়ে কত লোক প্রাণ হারাত, পারের ইনজেকশন আবিষ্কৃত হওয়ায় ওর থেকে পরিত্রাণ লাভ করার সুযোগ ঘটেছে। দুরারোগ্য সংক্রামক ব্যাধি বসন্তের জীবাণু নিবারণের জন্য জেনর ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করেন। এইরূপে বিজ্ঞানের সহায়তায় মানুষ আজ মৃত্যুর সাথে লড়াই করতে সমর্থ হয়েছে। [মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান রচনা]

আণবিক শক্তির আবিষ্কার :

আণবিক শক্তির আবিষ্কার বিজ্ঞানের আধুনিকতম গৌরব ও কৃতিত্ব। বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড যে অদৃশ্য শক্তি লুকিয়ে রেখেছে, আণবিক গবেষণার ভিতর দিয়ে বিজ্ঞানী একে আবিষ্কার করেছে। বৈজ্ঞানিকের এই আবিষ্কার সত্যই বিস্ময়কর। এই আবিষ্কারের সাথে অ্যাস্টন চ্যাডউইক, নিলসবোর, খাইথ ও অটোহান প্রমুখ বিজ্ঞানীর নাম জড়িত। আণবিক শক্তিকে মঙ্গলের কাজে লাগাতে পারলে পৃথিবী শস্য-সম্পদ ও প্রাচুর্যে একটি শান্তিপূর্ণ স্থানরূপে পরিণত হবে। আণবিক বা এটমিক রশ্মি নিয়ন্ত্রণের দ্বারা মানুষ বহু দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে রক্ষা পাবে বলে আশা করা যায়। আণবিক বোমার সংযত পরিচালনা দ্বারা বৈদ্যুতিক শক্তি সরবরাহ করা যাবে বলে বৈজ্ঞানিকরা আশা পোষণ করেন। [মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান রচনা]

মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের বিভিন্নমুখী অবদান :

বিজ্ঞানের কল্যাণে আমাদের বহু অভাব দূরীভূত হইয়াছে, আমরা আনন্দ লাভ করিয়াছি, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য পাইয়াছি।

সুতরাং আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞানের দান যথেষ্ট। সবাক চলচ্চিত্র, রেডিও, টেলিভিশন, টেলিফোন ইত্যাদির আবিষ্কার মানুষকে আনন্দ দান করেছে ও শিক্ষা প্রচারের ক্ষেত্রে নতুন যুগ আনয়ন করেছে। দূরবীক্ষণ যন্ত্রের অস্বাভাবিক দূরদর্শী শক্তির সাহায্যে আমরা আকাশের বহু গোপন রহস্যের আচ্ছাদন উন্মুক্ত করতে সমর্থ হয়েছিলো। বিজ্ঞানের সাহায্যে মানুষ অদৃশ্য জগতের অনেক রহস্য ও তথ্য উদ্ঘাটন করতে পেড়েছে। তার দৃষ্টি সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর লোকে পৌঁছেছে, জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত হয়েছে এবং শিক্ষা ও সভ্যতার ক্ষেত্রে প্রসার লাভ করেছে।

  • আধুনিক বৈজ্ঞানিকেরা প্রকৃতির উপর উরিয়ে দিয়েছে তাদের বিজয় কেতন, পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত নিত্য ঘোষিত হয়েছে বিজ্ঞানের বিজয়বার্তা। প্রকৃতির উপর আধিপত্য বিস্তার করে মানুষ আকাশে উরে বেড়ানোর জন্য আবিষ্কার করল বিমান, হেলিকপ্টার। কিন্তু এইসব ব্যোমযান লাভ করিয়াও তার দুর্দম আকাঙ্ক্ষার তৃপ্তি হইল না। ইহাদের দ্বারা দশ বারো মাইলের বেশি ঊর্ধ্বে উঠা যায় না। কিন্তু আজ মানুষ চাহিতেছে মহাশূন্যে পাড়ি দিতে। চন্দ্রলোকে পৌঁছিবার জন্যে আজ বিজ্ঞানীরা রকেট, স্পুটনিক লইয়া গবেষণায় রত। আমেরিকা ও সোভিয়েত বৈজ্ঞানিকগণ মহাশূন্যে মানুষ প্রেরণ করায় মানুষ চন্দ্রালোকে পৌঁছিবার জন্য একধাপ অগ্রসর হইয়াছে। এই গবেষণায় শুধু সাহায্য নয়, চন্দ্রপৃষ্ঠ মানুষের পদস্পর্শে ধন্য হইয়াছে একাধিকবার। বিজ্ঞানের সাহায্যে আরও সম্ভবপর হইয়াছে চাঁদে যাওয়ার প্রস্তুতিপর্বে নীলাকাশের নীলিমায় মানব সন্তানের সন্তরণ। আরও সম্ভবপর হইল আমেরিকার ও রাশিয়ার বৈজ্ঞানিকের পক্ষে চন্দ্রের কক্ষপথ প্রদক্ষিণ। [মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান রচনা]

উপসংহার :

মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের দানই সর্বশ্রেষ্ঠ। এইজন্য বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীর কাছে মানুষ চিরঋণী। বিজ্ঞানের দানে সত্যই মানুষ বিশ্বজয়ী হয়েছে; “গুহাশ্রয়ী মানুষ থেকে আরম্ভ করে আধুনিক যুগের হাল ফ্যাশনের মানুষ পর্যন্ত । সভ্যতার ক্রমোন্নতির ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের তুলনা নেই। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয়, কতকগুলি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার মানুষের যুগযুগান্তরের কীর্তিকে নিশ্চিহ্ন করে দিবার সহায়ক হয়েছে। গত দুইটি মহাযুদ্ধে বিজ্ঞান-শক্তির ভয়াবহ ধ্বংসলীলা মানুষের মনে আতংকের সৃষ্টি করেছে। বিজ্ঞানকে ধ্বংসের কাজে প্রয়োগ না করে যদি কল্যাণের কাজে প্রয়োগ করা যায়, তবে মানব সভ্যতার ইতিহাসে অত্যুজ্জ্বল এক নতুন অধ্যায় সংযোজিত হবে। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকবে।

সুতরাং আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞানের দান যথেষ্ট। সবাক চলচ্চিত্র, রেডিও, টেলিভিশন, টেলিফোন ইত্যাদির আবিষ্কার মানুষকে আনন্দ দান করেছে ও শিক্ষা প্রচারের ক্ষেত্রে নতুন যুগ আনয়ন করেছে। দূরবীক্ষণ যন্ত্রের অস্বাভাবিক দূরদর্শী শক্তির সাহায্যে আমরা আকাশের বহু গোপন রহস্যের আচ্ছাদন উন্মুক্ত করতে সমর্থ হয়েছিলো। বিজ্ঞানের সাহায্যে মানুষ অদৃশ্য জগতের অনেক রহস্য ও তথ্য উদ্ঘাটন করতে পেড়েছে। তার দৃষ্টি সূক্ষ্ম হতে সূক্ষ্মতর লোকে পৌঁছেছে, জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত হয়েছে এবং শিক্ষা ও সভ্যতার ক্ষেত্রে প্রসার লাভ করেছে। [মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান রচনা]

আধুনিক বৈজ্ঞানিকেরা প্রকৃতির উপর উরিয়ে দিয়েছে তাদের বিজয় কেতন, পৃথিবীর একপ্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত নিত্য ঘোষিত হচ্ছে বিজ্ঞানের বিজয়বার্তা। প্রকৃতির উপর আধিপত্য বিস্তার করে মানুষ আকাশে উরে বেড়ানোর জন্য আবিষ্কার করল বিমান, হেলিকপ্টার। কিন্তু এইসব ব্যোমযান লাভ করেও তার দুর্দম আকাঙ্ক্ষার তৃপ্তি হল না। এদের দ্বারা দশ বারো মাইলের বেশি ঊর্ধ্বে উঠে যায় না। কিন্তু আজ মানুষ চাইছে মহাশূন্যে পাড়ি দিতে। চন্দ্রলোকে পৌঁছানোর জন্যে আজ বিজ্ঞানীরা রকেট, স্পুটনিক নিয়ে গবেষণায় রত। আমেরিকা ও সোভিয়েত বৈজ্ঞানিকরা মহাশূন্যে মানুষ প্রেরণ করায় মানুষ চন্দ্রালোকে পৌঁছিনোর জন্য একধাপ অগ্রসর হয়েছে। এই গবেষণায় শুধু সাহায্য নয়, চন্দ্রপৃষ্ঠ মানুষের পদস্পর্শে ধন্য হয়েছে একাধিকবার। বিজ্ঞানের সাহায্যে আরও সম্ভব হয়েছে চাঁদে যাওয়ার প্রস্তুতিপর্বে নীলাকাশের নীলিমায় মানব সন্তানের সন্তরণ। আরও সম্ভব হল আমেরিকার ও রাশিয়ার বৈজ্ঞানিকের পক্ষে চন্দ্রের কক্ষপথ প্রদক্ষিণ। [মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান রচনা]

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button