কৃষিপ্রবন্ধ রচনা

কৃষি উন্নয়নে বিজ্ঞান প্রবন্ধ রচনা

কৃষি উন্নয়নে বিজ্ঞান (Science in Agricultural Development) হলো বিজ্ঞানের একটি শাখা যা কৃষি এবং কৃষি-সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করা হয়। এটি কৃষির প্রকৃতি এবং প্রকৃতির প্রভাবে পরিবর্তনের প্রভাব, ফসল চাষ এবং ফসল সংরক্ষণ, পোকা-পচার নিয়ন্ত্রণ, মাটির উর্বরতা, জৈব পদ্ধতিতে খাদ্য উত্পাদন এবং প্রকৃতির সংরক্ষণের উন্নতি সম্পর্কে অনুশীলন করে।

কৃষি উন্নয়নে বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হলো খাদ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে অন্যত্র উন্নত করা এবং কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করার সাথে মিলিয়ে প্রকৃতির সংরক্ষণও নিশ্চিত করা। এটি বিভিন্ন প্রযুক্তি ও উপায়ে কৃষকদের সাথে সম্পর্ক করে, যাতে তারা প্রাকৃতিক দক্ষতা এবং প্রযুক্তির সাথে আমদানি করতে পারেন। এটি জৈব পদ্ধতিতে খাদ্য উত্পাদন বৃদ্ধি করতে কৃষকদের উপকরণ এবং প্রযুক্তি উপলব্ধ করার উদ্দেশ্যে সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ সরবরাহ করে।

কৃষি উন্নয়নে বিজ্ঞানের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়বস্তু রয়েছে, যেমন:

  • মাটি বিজ্ঞান: মাটির উর্বরতা, পুষ্টি, মাটির সম্পদ পরিচয়, মাটির জন্য উপযুক্ত খাদ্য মৃদুতা পরিচয় এবং মাটি প্রকৃতির সংরক্ষণ।
  • ফসল বিজ্ঞান: ফসল প্রযুক্তি, বীজ বিকাশ, ফসল পরিচয়, ফসল সংরক্ষণ ও ফসল প্রদর্শন এবং ফসল প্রকৃতির মধ্যে সাংগঠনিক পরিবর্তন।
  • জৈব পদ্ধতি: জৈব উদ্ভিদ প্রযুক্তি, পোকা-পচার নিয়ন্ত্রণ, ফসল সুরক্ষা, পরিবেশ সংরক্ষণ ও জৈব বৃদ্ধি পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য জৈবিক সংক্রান্ত বিজ্ঞান।
  • জলবায়ু বিজ্ঞান: বৃষ্টি প্রবাহ, জল ব্যবস্থাপনা, জলাশয় সংরক্ষণ, জলাশয় প্রদাবন্ধক ব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নির্ধারণে জলবায়ু বিজ্ঞান ব্যবহার করা।
  • প্রকৃতির সংরক্ষণ: প্রাকৃতিক সংস্থান, বন্যার সংরক্ষণ, বায়ু এবং জলমালিনীর সংরক্ষণ এবং প্রকৃতির সংরক্ষণে বিজ্ঞানের ব্যবহার।

এই বিভিন্ন বিজ্ঞান দ্বারা কৃষি উন্নয়নে নতুন উদ্ভাবনী পদ্ধতি, প্রযুক্তি এবং উপায় উন্নত করা হয়, যা কৃষকদের উত্পাদনকে বৃদ্ধি দেয় এবং প্রকৃতির সংরক্ষণ ও সমর্থন করে। এই উন্নত বিজ্ঞানের প্রয়োগ দ্বারা কৃষি উদ্যোগের সাথে সাথে খাদ্য নিরাপত্তা, খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা, এবং জনগণের আয় বৃদ্ধি সহায়ক হতে সক্ষম হয়েছে।

কৃষি উন্নয়নে বিজ্ঞান

সূচনা :

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। তার শতকরা ৮০ ভাগ অধিবাসী গ্রামে বাস করে। কৃষকেরা চাষাবাদের মাধ্যমে ফসল ফলায়; দুঃখের বিষয় হলেও একথা সত্য যে, এখনো এদেশের কৃষক সম্প্রদায় সেই চিরাচরিত প্রাচীন পদ্ধতিতে কৃষিকার্য করে চলেছে। ভাবতে অবাক লাগে যে, যখন প্রগতিশীল দেশ ও জাতিসমূহ মহাশূন্যে অভিযানের প্রতিযোগিতা চলেছিল তখন আমাদের দেশের কৃষিজীবীরা এখনো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষিকার্য করছেন না। সেই পুরানো পদ্ধতি — লাঙ্গল ও এক জোড়া গরু— কৃষিকার্য ব্যবস্থায় প্রধান হাতিয়াররূপে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে ফসল উৎপাদনে আশানুরূপ ফল লাভ করা যাচ্ছে না।’

বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার :

আমরা যদি আধুনিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, সার, জলসেচ ইত্যাদি প্রয়োগ ক’রে উৎপাদন বাড়াতে পারি, তাহলে দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার কিঞ্চিৎ সুরাহা হতে পারে। কলের লাঙ্গল ব্যবহার করে বর্তমানকালের বহু অগ্রগামী দেশ কৃষিকার্যে বিপুল অগ্রগতি সাধন করেছে; তারা বছরে ২/৩ বার ফসল উৎপাদন করতে সমর্থ হচ্ছে। জমিতে সার ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আমাদের কৃষক সমাজ মান্ধাতা আমলের গোবর সার ব্যবহার করছে। গোবর সার উত্কৃষ্ট সার তাতে দ্বিমতের অবকাশ নেই কিন্তু যেখানে হাজার হাজার (ELVN) একর জমিতে সার প্রয়োগ করা দরকার সেখানে বৈজ্ঞানিক সার ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে অপেক্ষাকৃত কম সময়ে বেশি ফসল ফলানো যেতে পারে। বৈজ্ঞানিক জৈবিক সার উৎপাদন, সরবরাহ ও প্রয়োগ ক’রে অনেক বেশি গুণ ফসল ফলানো সম্ভব। হাতে-কলমে কৃষকদের সে বিষয়ে শিক্ষাদান করা দরকার। বিশেষজ্ঞগণ গ্রামে গিয়ে কৃষির উন্নতি সম্বন্ধে নানা উপদেশ দেবেন।

অধিক খাদ্য ফলাও, শ্লোগান :

কৃষকেরা অর্থাভাবে হাল-গরু বিক্রি করে দিন-মজুরি করেন, অতি কষ্টে অন্ন-সংস্থান করেন। তারা দরিদ্র। কাজেই তারা অর্থ ব্যয় ক’রে চাষাবাদের উপযোগী আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে পারে না। আজ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শ্লোগান শোনা যাচ্ছে ‘অধিক খাদ্য ফলাও’। এ আন্দোলনকে ফলপ্রসূ করা সম্ভব যদি কৃষিকার্যে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। চাষের জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করে, ভাল সার ও বীজ সরবরাহ ক’রে সেচের পানির যোগান দিয়ে, কীট-পতঙ্গ নাশের কীটনাশক ব্যবহার করে কৃষিকার্যে দ্বিগুণ, তিনগুণ এমনকি চারগুণ উৎপাদন বাড়ানো বর্তমান যুগে কোন অসম্ভব ব্যাপার নয়। তবে সব কিছুই বৈজ্ঞানিক উপায়ে করতে হবে। বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও ব্যবস্থাদির উপর নির্ভর করা অতি জরুরী। উৎপাদন কার্যের জন্য বীজতলায় বীজ উৎপন্ন করার পর সেগুলিকে হিমাগারে সংরক্ষণ করতে হবে যেন প্রয়োজনের সময় জমিতে বীজ বপন করা যায়। ধান, গম, যব প্রভৃতি ফসল ফলানোর প্রয়োজনে কীটনাশক ছিটিয়ে শিশু গাছগুলিকে কীট-পতঙ্গ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যায়।

প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও বিজ্ঞান :

ধান উৎপন্ন হলে বিজ্ঞানের অবদান ধান মাড়াই-এর যন্ত্র দ্বারা ধান মাড়াই করা যেতে পারে। আরো একটা বিষয়ে বিজ্ঞানের উপর নির্ভর করতে হবে। প্রায় প্রতি বছর বন্যার ধ্বংসলীলায় দেশের চাষাবাদ ও কৃষি নষ্ট হ’য়ে যায়। এই ধ্বংসলীলাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিজ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে এবং তারই সাহায্যে বড় বড় বাঁধ নির্মাণ করার প্রয়োজন। তাতে জমির জলসেচ ও বন্যা নিরোধ ব্যবস্থা কার্যকর হওয়া সম্ভবপর। এই বাঁধ থেকে পানিবিদ্যুৎ উৎপন্ন হতে পারে। এই শক্তিকে, কৃষির উন্নয়নে ব্যবহার করা যেতে পারে।

ট্রাক্টর ও অন্যান্য বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিগুলি যাতে কম মূল্যে কৃষক সম্প্রদায়ের হাতে পৌঁছে সেদিকে তীক্ষ্ণ লক্ষ্য রাখা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। অধুনা দেশের কোন কোন অঞ্চলে জলসেচের জন্য Deep tube well এবং Shallow tube well সংযোজন করা হয়েছে। ফলে জমিতে উৎপাদন বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এ সবই কৃষিকার্যে বিজ্ঞানের ফলশ্রুতি। যে বিজ্ঞান না হ’লে আজ সমগ্র দুনিয়াই একপ্রকার তমাসাচ্ছন্ন সেই বিজ্ঞানের ব্যবহার আমাদের দেশের অনুন্নত কৃষিকার্যের সমৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

উপসংহারঃ

ফলত বিজ্ঞান সমৃদ্ধির চাবিকাঠি। কৃষির ক্ষেত্রেও তার ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। যেমন সোভিয়েট ইউনিয়নে কৃষিজাত ফসলকে কীট-পতঙ্গের হাত থেকে রক্ষার জন্য তারা বিমান থেকে ঔষধ ছিটিয়ে থাকেন। আমরাও যদি তদ্রূপ করতে পারি তবে দেশের সামগ্রিক কল্যাণ হবে।

ট্যাগ- কৃষি উন্নয়নে বিজ্ঞান প্রবন্ধ রচনা, কৃষি উন্নয়নে বিজ্ঞান প্রবন্ধ রচনা PDF, Free কৃষি উন্নয়নে বিজ্ঞান প্রবন্ধ রচনা, জেনে নিন কৃষি উন্নয়নে বিজ্ঞান প্রবন্ধ রচনা, ৬০০ শব্দের মধ্যে কৃষি উন্নয়নে বিজ্ঞান প্রবন্ধ রচনা

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button