প্রবন্ধ রচনাবিজ্ঞান

বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রচনা 700 শব্দের মধ্যে

বিজ্ঞান শব্দটি সাধারিত ভাষায় প্রযোজ্য হলে এর অর্থ হলো প্রবিদ্ধ ও প্রাপ্তবয়স্ক সত্যের জ্ঞান বা প্রতিরূপক অধিগম ও প্রমাণের বিষয়ে ধারাবাহিক অধ্যয়ন বা তত্ত্ববাদ। এটি বিশ্বাস্ত এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অধ্যয়ন এবং পরীক্ষণ করা হয় যাতে সত্য বা জ্ঞানের মৌল্য বিবেচনা করা যায়।

বিজ্ঞান একটি ব্যাপক ক্ষেত্র, একটি পদ্ধতি, এবং একটি অধ্যয়নের চেষ্টা। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিষয় হিসেবে প্রস্তুত হতে পারে, যা বকেয়া হতে পারে কিংবা প্রযোজ্যতা হতে পারে, এবং এটি আমাদের প্রাকৃতিক এবং সামাজিক পৃষ্ঠভূমি আবিষ্কার করতে সাহায্য করে।

বিজ্ঞানের অধ্যয়নের কিছু উদাহরণ মধ্যে রয়েছে:

  1. পদার্থবিদ্যা (Physics): প্রকৃতির সৃষ্টি এবং তার গতি, শক্তি, এবং পরিবর্তন নিয়ে অধ্যয়ন করে।
  2. রসায়নবিদ্যা (Chemistry): মৌল, যাতে সমৃদ্ধি, সংযোজন, ও অণু সহযোগিতা করে, তার গঠন, বৈশিষ্ট্য, ও অবস্থান সহযোগিতা করে।
  3. জীববিদ্যা (Biology): জীবনের উৎপত্তি, বৃদ্ধি, এবং বিভিন্ন জীবনকে নিয়ে অধ্যয়ন করে।
  4. গণিত (Mathematics): সংখ্যা, সুত্র, ও গতি নিয়ে অধ্যয়ন করে, এবং তাদের ব্যবহার করে নিয়মিত ও তারকিক সমস্যাগুলি সমাধান করে।

এসব বিভিন্ন বিজ্ঞান শাখার মধ্যে পরস্পর সম্পর্ক রয়েছে এবং এটি একত্রে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পূর্ণকালীন সবজান্তা প্রদান করে। বিজ্ঞানের মাধ্যমে আমরা আমাদের পৃষ্ঠভূমি এবং সমাজের মধ্যে ঘটিত ঘটনাগুলির মূল কারণ বুঝতে পারি এবং তাদের জন্য পরিকল্পনা করতে পারি।

বিজ্ঞান শিক্ষা প্রয়োজনীয়তা

বিজ্ঞান শিক্ষা প্রয়োজনীয়তা অনেক দিকে প্রকাশিত হয়ে থাকে, কারণ এটি আমাদের জীবনে একটি মৌলিক অংশ গুলি উজ্জ্বল করে এবং আমাদের সৃষ্টির ধারণা, পরিবর্তন এবং নতুন উদ্ভাবনে প্রযুক্তির সাথে মিলে খুব সম্পূর্ণ ভাবে জড়িত।

এটির মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো:

  1. বৈজ্ঞানিক মনোভাব: বিজ্ঞান শিক্ষা আমাদের মানবিক উন্নতির দিকে একটি বৈজ্ঞানিক মনোভাব উন্নত করে। এটি একটি সমস্যা অনুসন্ধান এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে।
  2. তথ্য ও প্রযুক্তির বৃদ্ধি: বিজ্ঞান শিক্ষা তথ্য ও প্রযুক্তির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিজ্ঞানের প্রগতি ও উন্নতি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমাদের জীবনকে সহায় করে।
  3. বাহ্যিক পরিবার: বিজ্ঞান শিক্ষা প্রকৃতি, পরিবার, এবং মানব সম্প্রদায়ের সাথে একত্র করে আসে। এটি প্রকৃতির সংরক্ষণ, পরিবার পরিকল্পনা, এবং সমাজের উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা সরবরাহ করে।
  4. বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার: বিজ্ঞান শিক্ষা নতুন আবিষ্কারের জন্য শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করে এবং নতুন প্রযুক্তিতে আগ্রহ তৈরি করে। এটি পৃথিবীর বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রযুক্তি এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে অগ্রগতি করে।
  5. ভৌত এবং প্রাকৃতিক বিদ্যা: বিজ্ঞান শিক্ষা প্রাকৃতিক প্রস্তুতি, ভৌত বিদ্যা, আবদ্ধবীজগত, ও অদ্ভুত বৈজ্ঞানিক ঘটনা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচিত করা যায়, যা তাদের সম্পৃক্ত করে ও পৃথিবীর সৃষ্টির স্বভাব উজ্জ্বল করে।

সহজভাবে বলতে, বিজ্ঞান শিক্ষা মানব সমাজকে বিজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে উন্নত করে এবং পৃথিবীকে বেতার করতে সাহায্য করে।

বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রচনা

সূচনা :

বিংশ শতাব্দী বিজ্ঞানের যুগ। অভূতপূর্ব বৈজ্ঞানিক উন্নতির ফলে মানুষের জীবনযাত্রায় আরাম-আয়েসের সুযোগ ঘটেছে। ব্যক্তিগত জীবনে তথা সমষ্টিগত জীবনে আমরা নিত্যই যে বিলাস উপকরণের সাক্ষাৎ পাই, তা বিজ্ঞানের দান। বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, গতি, আনন্দ। বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা, তাই অস্বীকার করার উপায় নেই।

সেকালের মানব সমাজ :

একদিন ছিল, যখন আমাদের পূর্বপুরুষ বনে জঙ্গলে বাস করতো, পাহাড়-পর্বতে আত্মগোপন করে থাকতো, পাথরের চকমকি দিয়ে আগুন জ্বালাতো, হিংস্র জন্তুদের পাথর ছুঁড়ে ঘায়েল করতো। বিজ্ঞানের বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আবিষ্কার তখন অজ্ঞাত, মানুষের চিন্তাধারার পূর্ণতাপ্রাপ্তি ঘটেনি। তারপর সভ্যতার ক্রমবিকাশে মানুষের চিন্তা-ভাবনা বেড়েছে, বুদ্ধি-জ্ঞানের বিকাশ সাধিত হয়েছে। বিজ্ঞানের ব্যাপক বিকাশে মানুষের প্রয়োজনীয়তার তৃষ্ণা মিটেছে। বর্তমান যুগে বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে বাঁচা আত্মহত্যার নামান্তর মাত্র।

বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা :

বিজ্ঞান আমাদের শিক্ষা দেয়—যে শিক্ষা ধারাবাহিক বিশ্লেষণপন্থী ও বাস্তব। একটি বাস্তব কার্যকারণ নিয়মের আবিষ্কার বিজ্ঞানের কাজ। কেন হচ্ছে, কি জন্য হচ্ছে, বিজ্ঞানই বলে দিতে পারে। বিজ্ঞানের ব্যাপক বিস্তারে, বিকাশে, রূপদানে যে-কোন জাতি বা দেশের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি নির্ভর করে। তাই বর্তমান যুগে যে দেশ যত উন্নত সে দেশ তত বিজ্ঞানের যাদুকরী শক্তিতে উন্নত। একটি দেশের শিল্প, বাণিজ্য, বড় বড় কল-কারখানা, বিরাট বিরাট বাড়ি, রাস্তাঘাট সব কিছু বিজ্ঞানের শিক্ষায়ই গড়ে উঠে।

“The study of science is an end as well as a means. ” প্রথমত, ইহা প্রকৃতির অনন্ত রহস্যের দ্বারোদ্ঘাটন করে, আবার এইভাবে যে জ্ঞান আহরিত হয় তা’ বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে মানুষের দুঃখ, কষ্ট ও রোগ দূর করে, সাহিত্য ও শিল্পের বিকাশ ঘটায় এবং নানারূপ বস্তু উৎপাদন করে মানুষের জীবনে সুখ ও আরাম আনয়ন করে। বিভিন্ন শিক্ষার আবশ্যকতার এই দ্বৈত ভূমিকা বস্তুজগৎ ও মানসিক জগতের উন্নতি বিধানে সহায়তা করে থাকে। যে দেশের ধনসম্পত্তি কম ছিল, যে দেশ শিল্পায়িত হয়ে উঠেনি—বিজ্ঞানের সাহায্যে সে দেশ আজ চরম উন্নতি করেছে।

কেবল ছোট বড় industry গড়ে তোলা বিজ্ঞানের কাজ নয়, কৃষির উন্নতির জন্যেও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয়ে থাকে। চাষবাসের উন্নতির জন্যে, নদীর ধারা নিয়ন্ত্রণের জন্যে, কুসংস্কার দূরীভূত, বেকারত্বের লাঘব ইত্যাদির জন্যে বিজ্ঞানের সাহায্য গ্রহণ করা হয়।

আমাদের দেশ অন্যান্য সভ্য জগতের তুলনায় অনেক পিছনে পড়ে রয়েছে। কৃষি ও শিল্পে সেই মধ্যযুগের কর্মপন্থাই গ্রহণ করা হয়ে থাকে। বর্তমান জগতের সঙ্গে পা মিলিয়ে চলতে গেলে, যে ব্যাপকতর বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজন তা যেন আমরা বুঝেও বুঝি না। মধ্যযুগের প্রচারের চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারণা প্রভৃতির মূলোৎপাটন বিজ্ঞান শিক্ষার উপর নির্ভর করছে। ব্যাপকভাবে বিজ্ঞান শিক্ষা দেওয়ার জন্য ভুল- কলেজ খুলতে হবে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এর প্রযোগ করতে হবে। আমাদের হাতে আলাদীনের চেরাগ নেই সত্যি কিন্তু বিজ্ঞানের সাহায্যে আমরা আলাদীনের চেরাগের চেয়েও দ্রুত অসম্ভব কাজ সম্পাদন করতে পারি।

একটি দেশ যদি উন্নতি ও সমৃদ্ধির সোপানে আরোহণ করতে চায়, তবে বিজ্ঞানের অনুশীলন প্রয়োজন। অবশ্য অনেক বাধা-বিপত্তি রয়েছে। সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে, আমাদের দেশের কিছুসংখ্যক লোকের দৃষ্টিভঙ্গি। বিদেশীরা চায় না উৎপাদন শক্তিরূপে আমাদের দেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। ধর্মীয় গোঁড়ামি দেশের উন্নতি সাধনের পথে এক মস্তবড় বাধা। আমাদের নির্বুদ্ধিতা ও অজ্ঞতা অগ্রগতিকে বার বার ব্যাহত করেছে। যতক্ষণ সরকার বিজ্ঞানের প্রতি দৃষ্টি না দিচ্ছেন, ততক্ষণ জাতির তথা দেশের সর্বাঙ্গীণ অগ্রগতির পথ সুগম হতে পারে না।

কারিগরি শিক্ষায় বিজ্ঞানের গবেষণা :

বিজ্ঞান শিক্ষার মাধ্যমেই আমরা সবকিছু দূর করতে পারি। ইঞ্জিনিয়ারিং ও কৃষি-কলেজে ছাত্ররা যে শিক্ষা পায় তার ব্যাপক ব্যবহারে দেশে ইঞ্জিনিয়ারিং কৃষিবিদ গড়ে উঠতে পারে। তারা যদি যথাযথ শিক্ষা পায়, তবে নতুন আবিষ্কার দ্বারা, নতুন নতুন গবেষণা দ্বারা দেশকে উন্নতি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। বিজ্ঞান-শিক্ষার ফলে অজ্ঞতা দূরীভূত হয়, স্বাস্থ্যরক্ষা, দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ইত্যাদি ক্ষেত্রে জনসাধারণ ওয়াকিফহাল হতে পারে।

পরিভাষার জন্য বোর্ড গঠন :

অতএব একটি দেশকে, জাতিকে, সে দেশের জনসাধারণকে উন্নতি ও প্রগতির পথে নিয়ে যেতে হলে, বিজ্ঞান-শিক্ষার আবশ্যকতা অপরিহার্য। কৃষি ও শিল্প প্রভৃতির ব্যাপক প্রসারের জন্য বিজ্ঞানের প্রয়োজন রয়েছে। আর এর জন্য দরকার স্কুল-কলেজে বিজ্ঞানশিক্ষা বাড়িয়ে তোলা, নতুন বৈজ্ঞানিক পরিভাষা সৃষ্টির জন্য ও বাংলায় বৈজ্ঞানিক বই রচনা করার জন্য বোর্ড গঠন করা। বৈজ্ঞানিক বিষয়ে বই-পুস্তক রচনার জন্য ঢাকার বাংলা একাডেমী ইতিমধ্যেই কাজে হাত দিয়েছে; এ বিষয়ে একাডেমীর প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। আশা করা যায় বৈজ্ঞানিক পরিভাষা সৃষ্টির কাজে বাংলা একাডেমীকে সাহায্য করবেন দেশের বৈজ্ঞানিক ও পণ্ডিতমণ্ডলী।

অন্য দেশে বিজ্ঞান চর্চা ও ইংল্যাণ্ড, আমেরিকা ও রাশিয়া বিজ্ঞানের শিক্ষার দ্বারাই এত বড় হয়েছে। আফগানিস্তান, চীন ও ভারত এই পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই মনে হয় বাংলাদেশও পিছিয়ে পড়ে থাকবে না; সভ্যজগতের সঙ্গে তাল মিলিযে চলবে। উন্নতি ও প্রগতির পথে দেশকে নিযোজিত করার জন্য বৈজ্ঞানিক শিক্ষার ব্যবস্থা করবেন দেশের সরকার। বর্তমান যুগে বিজ্ঞানশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান অস্বীকার করার অর্থই আত্মহত্যার নামান্তর। দেশ ও জাতিকে গড়ে তোলার জন্য ব্যক্তিজীবনে ও সমষ্টিজীবনে সুখ, শান্তি ও আরাম আনয়নের জন্য বিজ্ঞান-শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে; অতএব আমরা বিজ্ঞান-শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে নিয়ে উন্নতি ও প্রগতির পথে এগিয়ে যাব এবং এতে সরকার সাহায্য করবেন বলে। আশা করা যায়।

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button