প্রবন্ধ রচনাপড়াশোনা

প্রতিবন্ধীদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রবন্ধ রচনা

এই পষ্টে সকল ছাত্র ছত্রীদের জন্য- প্রতিবন্ধীদের প্রতি কর্তব্য, প্রতিবন্ধীদের প্রতি দায়িত্ব, প্রতিবন্ধীদের ছবি, এদের প্রতি করণীয়, এদের প্রতি সামাজিক কর্তব্য রচনা, এদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রবন্ধ রচনা,  এদের প্রতি কর্তব্য অনুচ্ছেদ,  সমস্যা, এদের নিয়ে উক্তি, সংজ্ঞা, এদের নিয়ে কবিতা, এদের প্রতি করণীয় ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। [ এটিও পড়ুন- বাংলার পল্লি সমাজ সম্পর্কে প্রবন্ধ রচনা ] ফেসবুকে আগমনী বার্তা পড়তে এখানে ক্লিক করুন

রচনা-সংকেত : ভূমিকা—আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী বর্ষ ও তার তাৎপর্য প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন সমস্যা (ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক—তাদের সমস্যা দূরীকরণে দেশ ও জাতির কী করণীয়—ভারতে এ নিয়ে কাজ কীভাবে এগােচ্ছে-তােমার মতে কীভাবে কাজ চলা বাণী উপসংহার

প্রবন্ধ রচনা

সূচনা :-

মানসিক বা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যাদের মধ্যে রয়েছে তাদেরকে আমরা প্রতিবন্ধী বলি । প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ মানুষ । যে মানুষের মধ্যে অস্বাভাবিকতা কিছু বেশি থাকে অর্থাৎ চলাফেরায় বা কথাবার্তায় যে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয় সেই প্রতিবন্ধী। কিন্তু এরাও সমাজের অন্তর্ভুক্ত । এদেরকে অবহেলা করে বা এদের প্রতি মুখ ফিরিয়ে চললে কখনই সমাজের উন্নতি সাধন করা যায় না । এদের কে সঙ্গে নিয়েই আমাদের চলতে হবে ।

আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী বর্য ও তার তাৎপর্য

সম্মিলিত রাষ্ট্রপুঞ্জের আবেদনে ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দ বিশ্ব প্রতিবন্ধী বর্ষ রূপে উদযাপিত হয়েছে। বিশ্ব-প্রতিবন্ধী বর্ষ উদ্যাপনের তাৎপর্য হল সমাজের ওই অবহেলিত অনাদৃত হতভাগ্যদের প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা, তাদের জীবনেও সার্থকতার স্বাদ এনে দেওয়া, সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতাে তাদেরও সমাজের অঙ্গীভূত করা। তারা যে দয়ার পাত্র নয়, দেশের নাগরিক হিসাবে তাদেরও যে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ন্যায্য অধিকার আছে, তারাও যে সুযােগসুবিধা পেলে সাফল্যের মুকুট পরতে পারে— এই বােধ, এই আন্তরিকতা, এই প্রয়াস-প্রচেষ্টা জনগণের মধ্যে জাগিয়ে তােলা।

শ্রেণীবিভাগ :-

প্রতিবন্ধীদের দুটি শ্রেণী – (১) শারীরিক এবং (২) মানসিক । অন্ধ, বোবা, বধির, খোঁড়াদের বলা হয় শারীরিক প্রতিবন্ধী আর যাদের মানসিক ভারসাম্য নেই, বোকা, উন্মাদ তাদেরকে মানসিক প্রতিবন্ধী বলা হয় । কেউ কেউ জন্ম থেকে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয় আবার কেউ মারাত্মক অসুখে ভুগে বা বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে হয় । যে কোনো প্রতিবন্ধকতা মানুষের কাছে অবাঞ্ছিত এবং দুঃখজনক । শত দারিদ্রের মধ্যেও স্বাভাবিক জীবনের অধিকারী যে সে সুখী আর বিপুল ঐশ্বর্যের মধ্যে থেকেও একজন বিকলাঙ্গ বা প্রতিবন্ধী কখনই সুখী হতে পারে না ।

আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য :-

প্রত্যেক প্রতিবন্ধীই এই সমাজের অন্তর্ভুক্ত । তারা অন্য কোনো গ্রহের অন্য কোনো জীব নয় —একথা সবার প্রথমে আমাদের মনে রাখতে হবে । অনেক আছে যারা মানসিক ভাবে দুর্বল হলেও শারীরিক দিক থেকে বেশি সক্ষম । তাদের সেই সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের বেঁচে থাকার আশ্বাস যোগাতে হবে । তাদের পাশে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া প্রতিটি মানুষের একান্ত কর্তব্য । যে শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী যেমন অন্ধ, খোঁড়া তাদের প্রতি আমাদের সহৃদয় হওয়া একটা সামাজিক কর্তব্যের মধ্যে পড়ে । ‘অন্ধজনে দেহ আলো’ —আলো না দিতে পারি ভালবাসা তো দিতে পারি ।

পুনর্বাসন :-

বর্তমানে উন্নত চিকিৎসা বিদ্যার সাহায্যে বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধকতার চিকিৎসা করে প্রতিবন্ধকতা দূর করা সম্ভব হচ্ছে । কৃত্রিমভাবে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের সফল প্রয়োগে অনেকে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাছে । অনেকে শ্রবণ ক্ষমতাও ফিরে পাছে । আবার জটিল মানসিক প্রতিবন্ধী সুস্থ হয়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসছে । তবে সে সুযোগ বা সুবিধা খুব কম সংখ্যক মানুষ উপভোগ করছে । [  এটিও পড়ুন- শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায় সম্পর্কে প্রবন্ধ রচনা ]
সরকারি বা বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে এদের সমস্যা অনেকটা দূর করার চেষ্টা চলছে । এদের জন্য পদ সংরক্ষণ করে অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানে এরা চাকরি করে নিজেদের জীবন নির্বাহ করছে । আমাদের কোলকাতা শহরে ‘ডিফ এন্ড ডাম্ব’ স্কুল বেহালার ব্লাইন্ড স্কুল, নরেন্দ্রপুরে রামকৃষ্ণ মিশনের ব্লাইন্ড স্কুল বিভিন্ন এন.জি.ও. বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে এদের স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করে চলেছে। এভাবে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি আমাদেরও এদের পাশে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে । এটাই আমাদের সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে ।

উপসংহার :-

জীব সেবা মানেই শিব সেবা । মানবসেবা হল পরম সেবা । কারণ ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’ —একথা সকল মানব প্রেমিকেরাই বলে গেছেন । তাই এদের পাশে থেকে তাদের বন্ধু হয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে । যদি আমরা তাদের ভালোবেসে কাছে টেনে না নিই তাহলে তাদের চোখের জল আমাদের মসৃণ পথ পিছিল করে দেবে ।
এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button