পত্র রচনা

স্কুলের শেষ দিন সম্পর্কে তোমার মনোভাব জানিয়ে বন্ধুর নিকট পত্র লিখ

স্কুল হইতে বিদায় নেবার প্রাক্কালে তোমার মনের অবস্থা বর্ণনা করে প্রবাসী বন্ধুর নিকট একটি পত্র

স্কুলের শেষ দিন এ সম্পর্কে তোমার মনোভাব প্রকাশ করিয়া বন্ধুর নিকট পত্র লিখ। অথবা স্কুল হইতে বিদায় লইবার প্রাক্কালে তোমার মনের অবস্থা বর্ণনা করিয়া প্রবাসী বন্ধুর নিকট একটি পত্র লিখ।  অথবা স্কুল হইতে বিদায় নেবার প্রাক্কালে তোমার মনের অবস্থা বর্ণনা করে প্রবাসী বন্ধুর নিকট একটি পত্র।

স্কুলের শেষ দিন সম্পর্কে পত্র

হাসপাতাল পাড়া

কুশমণ্ডি, দক্ষিণ দিনাজপুর

৩১শে মার্চ, ১৯২১

প্রিয় রিমা

আমার প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিও। বেশ কিছুদিন হল তোমার কোন সংবাদ জানি না, আশা করি কুশলে আছ। তুমি জান যে, এইবার আমি সেকেণ্ডারী স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা দিতেছি। এই পরীক্ষায় অবতীর্ণ হবার আগে আমাদের স্কুলের একটি টেস্ট পরীক্ষা হয়। টেস্ট পরীক্ষা মানে মূল পরীক্ষায় বসিবার আগে, প্রতিভা যাচাইয়ের পরীক্ষা। এই পরীক্ষার আগে দশম শ্রেণীর ছাত্রীদের একদিন ঘটা করিয়া বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। কুশমণ্ডি হাই স্কুলে বেশ কয়েক বৎসর যাবত আমি পড়াশুনা করেছি। স্কুলের সহিত আমার মনের যেন গাটছড়া বাঁধা পড়েছিল। স্কুলের দরজা-জানালা, চেয়ার-টেবিল, ছাত্রী-শিক্ষিকা, খেলার মাঠ, স্কুলের ঘণ্টা পড়ার শব্দ-সবই যেন আমার একেবারে মুখস্থ। কাকেও আলাদা করে ভাবিতে পারি না, কেই আমার পর নয়। সুদীর্ঘ ছয়টি বৎসর একটানা সকাল দশটায় স্কুলে এসেছি, বিকেল পাঁচটায় স্কুলের আঙিনা ত্যাগ করে বাড়ির পথ ধরেছি। শীত নাই, গ্রীষ্ম নাই, বর্ষা নাই-সব ঋতুতেই স্কুলে গিয়েছি, লেখাপড়া করেছি। এই ছয় বৎসরে কয়েকজন শিক্ষিকা বিদায় নিয়া চলে গিয়াছেন। তাদের যাবার সময় দুই চোখ ছাপাইয়া অশ্রু ঝরিয়াছে, সংবরণ করিতে পারি নাই।

অবশেষে সেইদিন আসল যেইদিন আমি স্কুল হতে বিদায় লিলাম। যেইদিন আমাদের বিদায় সংবর্ধনা জানান হল, সেইদিন আমার মনের অবস্থা যে কি তাহা নিশ্চয় তুমি জানতে চাবে। তাই লিখিতেছি।

দশম শ্রেণীর বিদায়ী ছাত্রীদের পক্ষ হইতে কিছু বলবার জন্য আমাকেই অনুরোধ করা হল। সুতরাং না বললেই নয়। প্রথমে প্রধান শিক্ষিকা মহোদয়া আমাদের উদ্দেশ্যে উপদেশসহ বক্তৃতা দিলেন। তার পরই আমার পালা। আসন হতে উঠে দাড়াবার সময় আমার পা কাপিতে লাগল। নিজেকে সংবরণ করে নিয়ে ধীরে ধীরে কয়েকটি কথা বললাম। কিন্তু তখন আমার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরিতেছিল। এতদিনের সম্পর্ক স্কুলের ছাত্রী শিক্ষিকাবৃন্দের বুকভরা ভালবাসা ও স্নেহ-মমতার কথা কোন দিন ভুলিতে পারা যাবে কি? প্রধান শিক্ষিকার স্নেহ মাখান বকুনির কথা কি করে ভুলিব?

একবার আমি এক কঠিন পীড়ায় শয্যাগত ছিলাম। প্রধান শিক্ষিকা প্রত্যহ একবার করে আমাকে দেখতে যেতেন। সেইদিন বিদায়ের প্রাক্কালে তার স্নেহমাখা মধুর মূর্তি বারবার আমার মনের মুকুরে ছায়া ফেলিয়াছিল। সেদিন বিশেষ কিছু বলিতে পারি নাই। প্রিয়জনের কাছ হইতে বিদায় লইতে অনেককেই দেখিয়াছি। কিন্তু সেইদিন আমি যখন স্কুল হইতে বিদায় নিতেছিলাম তখন কেবল একটি কথাই উকি-ঝুঁকি মারিতেছিল যে, এখানে আর আমি আসিব না, পৃথিবীর বৃহত্তম ক্ষেত্রে বিচরণ করিবার এখন ছাড়পত্র পাইলাম। পরম করুণাময়ের ইচ্ছায় আমার বৃহৎ আকাঙ্খা যেন পরিপূর্ণ হয়, দেশ, সমাজ, জাতিকে যেন আমি আমার সামান্য শক্তি লইয়া সেবা করিবার যোগ্য হই।

আমার সেইদিনের মনের অবস্থার কথা এই হইতেই তুমি অনুমান করিতে পারিতেছ, আশা করি। শুভেচ্ছা নিও। ইতি ——

প্রীতিযুগ্ধ

হারাধন বিশ্বাস

প্রেরক

হারাধন বিশ্বাস

রায়গঞ্জ

ডাক টিকেট

প্রপক

রিমা সাহা

হাসপাতাল পাড়া

কুশমণ্ডি, দক্ষিণ দিনাজপুর

 

এটিও পড়ুন – তােমার এলাকার হাসপাতালের দুরবস্থা কথা জানিয়ে সভাপতিকে পত্র

ট্যাগঃ স্কুলের শেষ দিন সম্পর্কে পত্র রচনা, স্কুলের শেষ দিন কেমন কাটল তা জানিয়ে পত্র লিখ, বন্ধুকে স্কুলের শেষ দিন জানিয়ে পত্র । স্কুলের শেষ দিন জানিয়ে ইংরেজি পত্র লিখ।

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button