কৃষি

বাগানের পরিকল্পনা। বাগান তৈরি করার সঠিক পরিকল্পনা

বাগানের পরিকল্পনা (Planning of Garden)

বাগানের পরিকল্পনা সঠিক ভাবে না বাগান তৈরি করলে বাগান যেমন দেখতে সুন্দর হবে না তেমনি বাগান থেকে লাভবান হবার সম্ভাবনা খুব কম। নিম্নে সঠিক বাগানের পরিকল্পনা আলোচনা করা হল।

বাগান (Garden) একখণ্ড ভূমি যা ফুলঘাসগাছপালা, লতাপাতা উৎপাদনসহ অন্যান্য উদ্ভিদ সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত। ফুল, ফল প্রাপ্তির লক্ষ্যে এতে প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ, নিষ্কাশনসহ আগাছা উৎপাটন করা হয়ে থাকে। শখের বশবর্তী হয়েই মূলতঃ বাগান তৈরী করা হয়।

বাগানের পরিকল্পনা (Planning of Garden) :

বাগান করার মধ্যে ফুলের বাগান করে যতটা আনন্দ পাওয়া যায়, আর কোনো বাগান করে ততটা আনন্দ পাওয়া যায় কিনা সন্দেহ। তবে ফুলের বাগান কতটা ভালো হবে তা নির্ভর করে অর্থসম্বলের এবং জায়গার ওপরে। তবে এর সাথে রুচির যোগ হলে তা সত্যিই ফুলবাগানকে সৌন্দর্যময় করে তুলবে। এই রুচিবোধকে প্রধান করে খুব সাধারণ খরচে সুন্দর বাগান করা সম্ভব।

ফুলবাগানের কাজ সারাবছরের কাজ। যদিও বছরের কোনো কোনো সময় কাজের চাপ বেশি থাকে। তবে সারাবছরই ফুলবাগানের নিয়মিত পরিচর্যা করা উচিত। ফুলবাগানের লে-আউট বা বিন্যাস কীভাবে হলে ভালো হবে সে বিষয়ে বহু মত আছে। তবে এটা ঠিক যে, যিনি বাগান করবেন তার ব্যক্তিগত রুচির ওপর ফুলবাগানের বিন্যাস নির্ভর করবে। বাগান করার আগে একটি বাগানের নকশা করে নিতে হবে। জমি বর্গাকার কী আয়তাকার বুঝে বাগানের নকশা করতে হবে।

বাগানের জমিটিকে বিভিন্ন জ্যামিতিক আকারে ভাগ করে ফুলের বাগান করলে দেখতে ভালো লাগবে। তাছাড়া বাগানের প্রধান ও অপ্রধান পথগুলি একটু ঘুরিয়ে করলে বাগানকে আরও সুন্দর দেখাবে। এছাড়া বাগানের বিভিন্ন দিকে নানারকম ছোটো ছোটো ফুলের কেয়ারি করা যায়। বাগানের কোন দিকে কোন গাছটা লাগালে দেখতে সুন্দর হয়–সেটা নির্ভর করে বাগানের আয়তন ও আকৃতির ওপর। তাছাড়া বাগানে যেসব গাছপালা লাগানো হবে সেগুলি সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা দরকার।

যেমন কোনো একটি গাছ দুই বছরের আকৃতিতে কোনো ফুলবাগানের পক্ষে হয়তো ভালো আবার সেই গাছটিই দশ বছর পর সেই বাগানে বেমানান। বৃষ্টির দিনে বাগানে যাতে জল না জমে, তার জন্য বাগানের জল নিকাশের ব্যবস্থা থাকবে। প্রথম থেকেই থাকবে বাগানের বাড়তি জল বের করে দেবার ব্যবস্থা।

প্রত্যেক ফুলবাগানে ছোটো একটু লন (Lawn) থাকা প্রয়োজন। ফুলের বাগানে জমির কিছুটা অংশ যদি নরম, সুন্দর ও পুরু ঘাস দ্বারা আবদ্ধ থাকে, তবে তাকে লন (Lawn) বলে। লন প্রস্তুতের জন্য সাধারণত দূর্বাঘাস ব্যবহার করা হয় এবং এটি খুব যত্ন করে প্রস্তুত করতে হয়। বাগানে লন না-থাকলে বাগানটি সম্পূর্ণ ও সর্বাঙ্গসুন্দর হয় না। কেয়ারিতে ফুল লাগানোর সময় বিভিন্ন রঙের ফুল মিলিয়ে লাগালে দেখতে ভালো লাগে। কখনো কখনো একই রঙের ফুল একটি কেয়ারিতে লাগানো যেতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের বাহারি পাতার গাছ বাগানে লাগানো যেতে পারে। বাগানকে সংরক্ষিত করার জন্য এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নানাবিধ সুন্দর পাতাবাহারি গাছের দ্বারা বেড়া দেওয়া যেতে পারে।

ফুলের ব্যবহার (Use of Flower)

  •  আমাদের এই সমতল বাংলায় ফুলের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় পুজোর কাজে। পুজোতে সাধারণ দেশি ফুল এবং সুগন্ধযুক্ত ফুল বেশি ব্যবহৃত হয়।
  •  বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে নানাভাবে ফুলের ব্যবহার হয়ে থাকে।
  • এছাড়া গৃহসজ্জায় বিভিন্নভাবে ফুলের ব্যবহার হয়ে থাকে। বিশেষ বিশেষ দিনে বা পূজাপার্বণের দিনে আমরা ফুল দিয়ে ঘর সাজাই। এছাড়া সারাবছর ধরেই কিছু কিছু ফুল ফুলদানিতে রাখা হয়। এ ছাড়াও ফুল ফুটেছে এরকম টবের গাছ দিয়ে ঘর চমৎকার সাজানো চলে।

জীবিকা হিসাবে ফুল চাষ

ফুলচাষ একটি জীবিকা হিসাবে পরিগণিত হতে পারে। ব্যাবসার ভিত্তিতে ফুল চাষ করলে এবং ঠিকমতো বাজার ধরতে পারলে ফুল চাষ একটি লাভজনক ব্যাবসা হতে পারে। এর কারণ পূজা ও বিভিন্ন উৎসব ইত্যাদিতে আমাদের জীবনে ফুলের ব্যবহার রয়েছে এবং বাজারে ফুলও কিনতে পাওয়া যায়। এর জন্য ফুলচাষিরা সারাবছর বাজারে ফুলের জোগান দিতে পারে।

ফুলদানি সাজাবার কাজে এবং পূজার অঙ্গন বা বিভিন্ন সভাসমিতির মঞ্চ সাজাবার কাজে ফুলের ব্যবহার যথেষ্ট হয়। এইসব ফুলের জোগান দেয় ফুলচাষিরা, অর্থাৎ যাদের ফুলচাষই একমাত্র বৃত্তি। এখন যেহেতু গৃহসজ্জায় ফুলের ব্যবহার বেড়েছে, তাই ব্যাবসার ভিত্তিতে ফুলচাষও লাভজনক হয়ে উঠেছে। এছাড়া কিছু কিছু ফুলের (যেমন গোলাপ) বিদেশেও চাহিদা বেড়েছে। তাই ফুলচাষিরা বিদেশেও রপ্তানি করছে। ব্যাবসার ভিত্তিতে ফুলচাষ করতে হলে অর্থাৎ ফুলের চাষ লাভজনক করতে হলে কয়েকটি দিকে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। যেমন-

  • এমন ফুল বাছতে হবে যেগুলি খুব সহজেই চাষ করা যাবে।
  • ফুলের এমন প্রজাতি বেছে নিতে হবে যেগুলি বেশি ফুল দেয়।
  • যে ফুলগুলির বাজারে বেশি চাহিদা সেগুলির দিকে নজর দিতে হবে।
  • যে ফুলগুলি অনেকদিন সুপ্রভ থাকবে, সেই ফুলগুলি বেশি চাষ করতে হবে।
  • ফুলগুলি এমন হওয়া দরকার, যা সহজেই দূরপ্রান্তে পাঠানো যেতে পারে।

জেনে নিন – সঠিক উপায়ে ফুল সংরক্ষণ করার পদ্ধতি

ট্যাগঃ বাগানের পরিকল্পনা, জেনে নিন বাগানের পরিকল্পনা, সঠিক উপায়ে বাগানের পরিকল্পনা, বাগানের পরিকল্পনা ও ফুলের ব্যবহার।

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button