প্রবন্ধ রচনা

আমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা রচনা 600 শব্দের মধ্যে

তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা

এই পোষ্টে তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা শেয়ার করা হল । বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা উপর ভিত্তি করে রচনা লিখতে দেয়। [ ইংরেজি প্রবন্ধ রচনা, চিঠি ও প্যারাগ্রাফ পড়তে ভিজিট করুন -[ https://www.tipstweet.in ]

তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা

সেই ছেলেটা! সেই জবা গাছটা! চলতে চলতে আজও থেমে যাই তার তলায়, আর মনে পড়ে সেই দিনের কথা। ঢং ঢং ঢং ঢং ছুটির ঘণ্টা পড়লো। ঘণ্টা যেন বাজতেই চায় না। কি নিদারুণ উদ্বেগে আর আনন্দে যে স্কুলে প্রথম তিনটি পিরিয়ড কাটলো। মাস্টার সাহেবের ক্লাসের একটি কথাও কানে ঢোকেনি। স্কুলে গিয়েই যখন শুনলাম কে একজন অদ্ভুত ধরনের লোক আসবে নানা রকম আশ্চর্য জিনিস দেখাবে। মনে মনে ভাবছিলাম সেই Hameline-এর কথা। অদ্ভুত তার বেশভূষা, অদ্ভুত তার নাক, আরও অদ্ভুত তার কাজ। বেশ মনে পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণীর মধ্যে আমি সকলের আগে স্কুলে মাঠে দৌড়ে গিয়ে হাজির হলাম। তারপর সাবা স্কুলের ছেলে হৈ হৈ করে সেখানে এসে হাজির হলো।

ভুলের মাঠে ছেলে আর ধরে না। মাঠের এক কোণায় একটি লম্বা বাঁশ মাটি থেকে আকাশের দিকে উঠে গেছে। আসবার সময় সেটা দেখে আসি নাই বুঝলাম তখন পোতা হয়েছে: কি হবে কি জানি। সেদিকে নজর ছিল না; চঞ্চল চোখ চারদিকে কিসের সন্ধান করছিল। ছেলেরা গোলমাল করছে, নানারকম মন্তব্য করছে। তাদের গোলমাল ছাড়িয়ে-ডুগ ডুগডুগ ডুগ শব্দ হলো। “বাজীকর এসেছে!” “বাজীকর।”-একটা সাড়া পড়ে গেল। বাজীকর’। চমৎকার নাম তো।

লোকটিকে দেখলাম। মাথায় আধময়লা একটা পাপড়ি, তারই পাশ দিয়ে পাকা শণের মত লম্বা সাদা চুল দু’দিকে বাবরি করে নেমে এসেছে। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। লম্বা সাদা গোঁফ পাকিয়ে লতিয়ে গালের দু’পার্শ্বে ঝুলে পড়েছে। কোটরের ভিতর থেকে একটা চোখ জ্বল জ্বল করছে, আরেক চোখে ছানি পড়া। সে মুখটি আজো ভুলিনি-কোনদিন ভুলতে পারব কিনা জানি না। লোকটার পায়ে শতছিন্ন একটা কালো কোট-পরনে লুঙ্গির মত করে পরা একটা ময়লা চিরকুট কাপড়। কাঁধে হেলানো একটা লাঠিতে মস্ত বড়ো একটা ঝোলা ঝুলছে। লোকটার সঙ্গে একটা ছেলে। প্রথমে ছেলেটিকে চোখে পড়েনি, এবার দেখলাম ঠিক আমার বয়সের একটি ছেলে পরনে নীল হাফপ্যান্ট-গায়ে কিছু নাই। শুনলাম ছেলেটি বুড়োর নাতী। এরা দু’জনে দু’জনেরই আত্মীয়। এরা দু’জনে আশ্চর্য খেলা দেখায়। ছেলেটাও দেখাতে পারে। উঃ! এইটুকু ছেলে: আমার চেয়ে একটুও বড় নয়। আমিও যদি ওর মতো বাজীকর হতে পারতাম!

“শোন ছেলেরা,”- হেডমাস্টার সাহেবের গলা। সব চুপ ! তিনি বললেন, “এই লোকটি আমাদের আশ্চর্য রকমের খেলা দেখাবে। তোমরা কিছু কিছু পয়সা এদের দাও। এরা দু’দিন খায়নি।” ইস দু’দিন খায়নি। এই ছেলেটাও। চিনেবাদাম খাবার দশ পয়সাটা পকেট থেকে বের করলাম। সেই ছেলেটাই ভিড়ের মধ্যে ঘুরে ঘুরে হাত পেতে সকলের কাছ থেকে পয়সা নিচ্ছে। ‘বাবুজী’ বলে আমার সামনে এসে হাত পেতে দাঁড়াল। একটা গোটা টাকা সঙ্গে থাকলেও সেদিন ওকে দিতে একটুও দ্বিধাবোধ করতাম না।

এদিকে বুড়ো বাজীকর তার সরঞ্জাম ঝোলা থেকে বের করে সাজিয়ে ফেলেছে। আর একবার প্রাণ নাচানো শব্দ উঠলো, -ভূগ-চুপ-ডু। তারপর বুড়ো কত রকম অদ্ভুত ভঙ্গিতে বকে যেতে লাগলো।

খেলা শুরু হয়ে গেল। দেখতে দেখতে এক কৌটা চাল মুড়ি হয়ে গেল। উপর দিকে ছুঁড়ে ফেলা একটা সোনার আংটি গোটা বেগুনের ভিতর থেকে বেরিয়ো এলো। সেকেও মাস্টার সাহেবের ফাউন্টেন পেন হেডমাস্টার সাহেবের জামার পকেট থেকে বেরুলো। নিমাইয়ের সিল্কের জামাটা চেয়ে নিয়ে টুকরো টুকনো করে পুড়িয়ে ছাই করে, তারপর ঝোলার ভেতর থেকে আস্ত বের করে আনা হলো। ঝাঁপির মধ্যে বসে রইল ছেলেটা, “ঢাকনি চাপা দিয়ে। বুড়ো একখানা তলোয়ার এফোঁড়-ওফোঁড় করে চালিয়ে দিল তার মধ্য দিয়ে। ঢাকনা খুলে বের করা হলো একটা কালো ভেড়া-ছেলেটা কোথায়? খেলা চলছে ডুগডুগি বাজছে, সেই ছেলেটাও এসে দাঁড়ালো। ইচ্ছে হলো এই বুড়োর সঙ্গে বেরিয়ে পড়ি সমস্ত পৃথিবীটা যেন বুড়োর বশ।

হঠাৎ সকলে চুপ করে গেল শেষ খেলা শুরু হচ্ছে। একটা অধীর প্রতীক্ষায় ছেলেরা চেয়ে আছে সামনের দিকে। সেই ছেলেটা বাঁশ বেয়ে উঠে যাচ্ছে। প্রত্যেকে নিঃশ্বাস শুনতে পাচ্ছে। বুকের স্পন্দনটা নিজের কানে শোনা যাচ্ছে। পড়ে যাবে না তো? না ঠিক উঠেছে সাহস বটে-বাঁশটা দুলছে- ছেলেটা বাঁশের মাথায় – উঠে বসলো। তারপর অত উঁচুতে বাঁশের মাথায় বসে, শুয়ে, দাঁড়িয়ে নানারকম খেলা দেখাল। পরিস্থিতিটা সহজ হলেও তখনও বুক টিপ টিপ করছিল। মাষ্টার সাহেবরা বার বার ছেলেটাকে নামবার জন্য পীড়াপীড়ি করছিলেন, কিন্তু বুড়ো ছেলেটাকে আরও উৎসাহিত করছে। এইবার ছেলেটা বাঁশের মাথায় পেটের উপর ভর দিয়ে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো, কিন্তু উঠতে গিয়ে হাত ফসকে গেল। বাঁশ জোরে কেঁপে হাতের নাগালের বাইরে চলে গেল। গেল গেল সমস্বরে চীৎকার উঠলো। আমি ততক্ষণে চোখ বুঝে ফেলেছি। “দুদিন খায়নি, ‘নামিয়ে নিলেই হত, ঘাড়টা একেবারে ভেঙ্গে গিয়েছে, ‘মুখ দিয়ে অনেকটা রক্ত উঠেছে, ‘আহা মরে গেল, ‘কথাগুলা কানে এলো। চোখ মেলে দেখি একদল ছেলে তাকে বয়ে নিয়ে চলেছে হাসপাতালের দিকে। বোঁচকা-কুঁচকি ফেলে বুড়ো পাগলের মত ছুটছে তাদের পেছনে। বুড়োর গলা ভেঙ্গে গেছে অর্ধস্ফুটস্বর কানে এলো বাহাদুর ইব্রাহীম। মাঠ ফাঁকা হয়ে গেল। আমি একা দাড়িয়েছিলাম। মাঠের কোণে সবুজ ঘাসের উপর এক চাপ রক্ত। স্কুলের ছেলেরা সেই কোটিকে ঘিরে একটা জবাগাছ লাগিয়েছিল। আজো তার ফুলগুলি মনে হয় তারই রক্তে রাঙা হয়ে আছে। আর আমি কোনদিন বাজি শিখতে চাইনি। শুধু যতবার এইখান দিয়ে যাই, ততবারই মনে হয় এই গাছটা সেই ছেলেটা।

ট্যাগঃ তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা, Download তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা, Free তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা, জেনে নিন তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা, আমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button