কর্ম-শিক্ষাব্যবসা

স্ক্রিন প্রিন্ট কী? স্ক্রিন প্রিন্ট কিভাবে করবেন? বিস্তারিত Silk Screen Printing

সিল্ক স্ক্রীন ছাপা, সিল্কস্ক্রিন প্রিন্টিং সুবিধা? স্ক্রীন প্রিন্ট ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় স্থায়ী উপকরণ

স্ক্রিন প্রিন্টিং (সিল্ক স্ক্রীন ছাপা (Silk Screen Printing)) হচ্ছে একটি আধুনিক প্রিন্টিং পদ্ধতি। যেখানে আপনি কাপড়, কাগজ এমনকি কাঠের মধ্যে মেসের নির্বাচিত অঞ্চলে কালার স্থানান্তরের মাধ্যমে, আপনার কাঙ্খিত ডিজাইন (নকশা) বা ছবি তৈরি করা হয়। মেসের নির্বাচিত অঞ্চল ছাড়া অবশিষ্টাংশ বিশেষ ধরনের স্টেনসিল বা ফটো ইমালশন দ্বারা মন্থর করা হয় ।ঐতিহ্যগতভাবে এটিকে সিল্ক স্ক্রিন প্রিন্ট বলা হয় কারন শুরুর দিকে সিল্ক বা রেশম মেস হিসাবে ব্যবহৃত হত। এই পদ্ধতিটি সেরিগ্রাফি হিসেবেও পরিচিত। এটি একটি অত্যন্ত আধুনিক পদ্ধতি।

স্ক্রিন প্রিন্ট কিভাবে করবেন? বিস্তারিত Silk Screen Printing

এই ছাপা পদ্ধতির জন্য প্রয়োজন ( স্থায়ী উপকরণ )

  • ১) রেশমি পর্দায় ছাপার ফ্রেম,
  • ২) রবারের পাতলা গান যন্ত্র Squeez
  • ৩) ছুরি
  • ৪) কাপড় ছাপার রং
  • ৫) টুসকী,
  • ৬) শিরিষ আঠা,
  • ৭) কেরোসিন,
  • ৮) তুলো,
  • ৯) পুরানো কাপড়,
  • ১০) বাটি,
  • ১১) সমতল টেবিল বা বিছানা,
  • ১২) জল,
  • ১৩) তাৰ্পিণ তেল,
  • ১৪) আঠা ও
  • ১৫) তুলি।

পদ্ধতি

মূলতঃ তিনটি পদ্ধতির দ্বারা সিল্ক স্ক্রিন প্রিন্টিং করা হয়। যেমন –

  • ১) ব্লক স্টেনসিল
  • ২) তুসকি স্টেনসিল এবং
  • ৩) ফটো স্টেনসিল।

বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যকে স্ক্রিনের উপরে লাগিয়ে প্রয়োজনীয় স্টেনসিল প্রাপ্ত হয়। স্কুলের বিভিন্ন রকমের পতাকা তৈরী করতে বা বাণিজ্যিক বিভিন্ন কাজে যেমন পোষ্টার বা ব্যানার প্রভৃতি তৈরী করতে সিল্ক স্ক্রিন প্রিন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। রেশমি কাপড় বা নাইলনের কাপড়ে (অধুনা ব্যবহৃত) লম্বালম্বি তানা ও চওড়াদিকে পড়েনসুতো থাকে । দুটো তানা এবং পড়েন সুতোর মাঝখানে চৌকোন প্রায় বর্গাকার গর্ত থাকে। এরপর একটি সিল্কের কাপড়কে ফ্রেমে টাইট করে বাঁধলে অনেক গুলো গর্ত পরিস্কার ভাবে দেখা যাবে। কাপড়ের কোন একটি অংশের গর্তগুলোকে রাসায়নিক দ্রব্য বা পাতলা কাগজ দিয়ে আটকালে বাকি গর্তগুলো দিয়ে রং বেরিয়ে এসে কাগজে বা কাপড়ে ছাপা হয়ে যাবে। এই পদ্ধতিতে গর্ত বন্ধ করে রেশমি কাপড় বা নাইলনের কাপড়ে ডিজাইন করাকে বলে স্টেনসিল।

স্টেনসিলের সিল্ক স্ক্রিন প্রিন্টিংয়ে কী কী উপকরণ ব্যবহৃত হয় ?

রেশমি বা নাইলনের কাপড়ে ছাপানোর ফ্রেম, রবার পাতা লাগানো যন্ত্র স্কুয়ীজী, (Squeeze), কাপড় ছাপানোর রং, তুসকি, ছুরি, শিরিষের আঠা, কেরোসিন তেল, তুলো, পুরাতন ধুতী, বাটি, সমতল বিছানা, পুকুরের জল, তার্পিণ তেল ও গোলাকার তুলি

সিল্কস্ক্রিন প্রিন্টিং সুবিধা

ব্লক প্রিন্ট, বাটিক, টাই-ডাই ইত্যাদির পাশাপাশি বর্তমানে কাপড় ছাপার অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে স্ক্রিন প্রিন্ট। স্ক্রিন প্রিন্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল শুধু কাপড়ই নয়, কাগজেও ছাপা বা প্রিন্ট করা যায়। স্ক্রিন প্রিন্ট এক ধরনের ছাপার পদ্ধতি। স্ক্রিন প্রিন্ট অনেকদিন আগে থেকেই ছাপার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে বর্তমানে এটি খুবই জনপ্রিয়।

স্ক্রীন প্রিন্ট করার ধাপসমূহ

  • যে ডিজাইন ছাপা হবে তার পজেটিভ বা ট্রেসিং সংগ্রহ করতে হবে। তবে ছাপার ডিজাইন ট্রেসিং কাগজের চেয়ে ফিল্মে তৈরি করা ভালো। এতে ছাপা নিখুঁত হয়। কম্পিউটারের সাহায্য নিয়ে ট্রেসিং কাগজে ডিজাইন তৈরি করা যায়। আবার ট্রেসিং পেপারে লিখে এবং এঁকে নিজেই ডিজাইন তৈরি করা যায়। ফিল্মে ডিজাইন তৈরি করার জন্য জেলা শহরে যারা ডিজাইন তৈরি করে তাদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
  • এরপর ফ্রেম ও স্ক্রীন সংগ্রহ করতে হবে। স্ক্রীনের রঙ সাদা হয়। ১৪০ নম্বর স্ক্রীন সাধারণত কাগজ, প্লাস্টিক ও অন্যান্য শক্ত জিনিসের উপর ছাপ দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। কাপড়ে ছাপ দেওয়ার জন্য ৪০ নম্বর স্ক্রীন সংগ্রহ করতে হবে। স্ক্রীনটি কাঠের ফ্রেমের সাথে ছোট পেরেক দিয়ে আটকে রাখতে হবে। ফ্রেমটি চারকোণা ও কাঠের তৈরি হয়। ইচ্ছা করলে এই ফ্রেমটি যে কেউ নিজেরাই বানিয়ে নিতে পারে। এছাড়া তৈরি করা ফ্রেম কিনতেও পাওয়া যায়। ডিজাইনের মাপ অনুযায়ী বিভিন্ন মাপের ফ্রেম সংগ্রহ করতে হবে। ফ্রেমের কাঠটি মসৃণ ও মজবুত হলে ভালো হয়। তাহলে একই ফ্রেম দিয়ে, অনেক দিন কাজ করা যাবে। একটি স্ক্রীন নষ্ট হলেও একই ফ্রেমে নতুন স্ক্রীন আটকানো যায়।
  • এরপর স্ক্রীনটিকে একটা অন্ধকার ঘরে নিতে হবে।
  • একটি পাত্রে এক আউন্স সেনাকোটের সাথে ৪/৫ ফোঁটা পটাশিয়াম বাই ক্রোমাইট মিশিয়ে নিয়ে স্ক্রীনসহ ফ্রেমটিতে ভালোভাবে লাগিয়ে নিতে হবে। তারপর স্ক্রীনটিকে বাতাসে শুকিয়ে নিতে হবে।
  • স্ক্রীনের উপর ছাপ দেওয়ার জন্য ফিল্মের পজেটিভ বা ট্রেসিংটি কেমিক্যাল লাগানো স্ক্রীনের উপর রাখতে হবে।
  • ফিল্মের পজেটিভ বা ট্রেসিং কাঁচ দিয়ে ঢেকে রোদে বা বৈদ্যুতিক আলোয় দিতে হবে। রোদে দিলে এক মিনিটের কাছাকাছি ও বৈদ্যুতিক আলোয় ৪ থেকে ৫ মিনিট সময় রাখতে হবে।
  • স্ক্রীনটি ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে তারপর শুকিয়ে নিতে হবে।
  • স্ক্রীনসহ ফ্রেমটি টিবিলের উপর ভালোভাবে আটকিয়ে নিতে হবে। তারপর এর নীচে যে কাপড়ের উপর ছাপ দেয়া হবে সেটা রাখতে হবে।
  • স্ক্রীনের যে অংশে লেখা বা ছবি আঁকা হবে সেখানে স্কুইজার দিয়ে রঙ লাগাতে হবে। ফ্রেম উঠিয়ে নিলে দেখা যাবে কাপড়টির উপর ছাপ ফুটে উঠেছে। বহু রঙে ছাপাতে হলে একই নিয়মে ভিন্ন ভিন্ন রঙের ছাপ দিতে হবে।

এভাবে বার বার যে কয়টি কাপড়ে প্রয়োজন তার উপর ছাপ দিতে হবে। ছাপ দেয়া শেষ হলে কিছু কাজ করতে হবে:

  • ছাপার কাজ শেষ হলে বেনজিন দিয়ে স্ক্রীনের রঙ পরিষ্কার করতে হবে। তুলোয় রিমুভার নিয়ে ঘষা দিলে স্ক্রীনের লেখা বা আঁকা ছবি উঠে যাবে।
  • স্ক্রীনে এক চিমটি ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে ১০/১৫ মিনিট ভিজিয়ে রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার করতে হবে। তাহলে এই স্ক্রীন আবার ব্যবহার করা যাবে।

এটিও পড়ুন – অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কী? শুরু করার সঠিক 5 টি পদ্ধতি

সাবধানতা অবলম্বন

  • রঙ ও অন্যান্য উপাদান ঠিকমতো মেশাতে হবে; নইলে ছাপার রঙ উজ্জ্বল হবে না।
  • ফ্রেম থেকে স্ক্রীন যাতে ছিঁড়ে না যায় তাই স্ক্রীন খুব সাবধানে ব্যবহার করতে হবে। স্ক্রীন দেখে শুনে কিনতে হবে। কারণ একটি স্ক্রীন দিয়ে অনেকবার কাজ করা যায়। কাজ শেষে স্ক্রীন পরিষ্কার করতে হবে।
  • রঙ ও অন্যান্য উপাদান শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে। রঙ ও অন্যান্য উপাদান খোলা যাবে না।

প্রশ্ন : স্ক্রীন প্রিন্ট কি ? 
উত্তর : স্ক্রীন প্রিন্ট এক ধরণের ছাপার পদ্ধতি। এক্ষেত্রে ছাপার মাধ্যম হিসেবে স্ক্রীন ব্যবহার করা হয়। তাই একে স্ক্রীন প্রিন্ট বলে।
প্রশ্ন : স্ক্রীন প্রিন্টের মাধ্যমে কি ছাপা যায় ? 
উত্তর : স্ক্রীন প্রিন্টের মাধ্যমে শুধু কাপড়ই নয়, কাগজ, প্লাস্টিকের জিনিস ইত্যাদি ছাপা যায়।
প্রশ্ন : স্ক্রীন প্রিন্ট এর ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় স্থায়ী উপকরণ কিনতে কত টাকার প্রয়োজন ? 
উত্তর : স্থায়ী জিনিস কিনতে আনুমানিক ১০৬৮ থেকে ১১৮৫ টাকার প্রয়োজন হতে পারে।

প্রশ্নঃ স্টেনসিল করার (কাপড়ের ফ্রেমে) কয়টি পদ্ধতি ও কী কী ?

মূলতঃ তিন প্রকারে স্টেনসিল করা যায়।

  • ক) ব্লক স্টেনসিল।
  • খ) তুসকি (Tousche) স্টেনসিল । এবং
  • গ) ফটো স্টেনসিল।

প্রশ্নঃ তুসকি (Tousche) পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য কী?

(i) তুসকি পদ্ধতি হল প্রতিযোজন পদ্ধতি (Adaptable method) গুলোর একটি। এটি একটি তেলের দ্রাবণ – যেটি রঙের দোকানে পাওয়া যায়।

মূলতঃ কাপড় রঙে ছাপানোর জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

প্রশ্নঃ সিল্কস্ক্রিন প্রিন্টিং কোথায় ব্যবহৃত হয় ৷

বিভিন্ন ক্ষেত্রে সিল্কস্ক্রিন প্রিন্টিং ব্যবহৃত হয়। যেমন বিদ্যালয় বা কোন ক্লাবের পতাকা বা ফেস্টুন তৈরী করতে বা কোন বাণিজ্যিক সংস্থার ব্যানার বা পোস্টার তৈরী করতে সিল্কস্ক্রিন প্রিন্টিং ব্যবহৃত হয়।

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button