প্রবন্ধ রচনা

ছাত্রজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচার 700 শব্দের মধ্যে

ছাত্রজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচারঃ এই পোষ্টে ছাত্রজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচার প্রবন্ধ রচনা শেয়ার করা হল।আগমনী বার্তা অয়েবসাইটে যে টুলসগুলো ব্যবহার করা হয়এর আগের পোষ্টে আলোচনা করা হয়েছে চাইলে দেখে নিতে পারেন।

এই প্রবন্ধ রচনা অনুসারে যেসমস্ত প্রবন্ধ রচনা লেখা যাবে অর্থাৎ অনুরূপ প্রবন্ধ রচনা শিষ্টাচার ও সৌজন্যবােধ,  মানবজীবনে শিষ্টাচার ইত্যাদি।

ছাত্রজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচার

রচনা-সংকেত

ভূমিকা—সৌজন্য ও শিষ্টাচারের অর্থ ও তাৎপর্যবর্তমান সমাজজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচারহীনতা—ছাত্রজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচারের প্রয়ােজনীয়তা—প্রতিকারের উপায় উপসংহার।

ভূমিকা

মানুষ একসময়ে ছিল আদিম, বর্বর। তার জীবন কেটেছে গুহায় কিংবা অরণ্যে। সভ্যতার সেই আদি লগ্নে বেঁচে থাকাটাই ছিল তার কাছে একমাত্র লক্ষ্য। তাই তার সমস্ত, আচরণের পশ্চাতে ছিল প্রবৃত্তির তাড়না। শৃঙ্খলাহীন সংযমহীন মানুষ স্বভাবের দিক থেকে তখন ছিল জন্তুরই কাছাকাছি। কিন্তু ক্রমে মানুষের স্বভাবে পরিবর্তন ঘটতে থাকে। একটু একটু করে তার মধ্যে বিকশিত হয়ে উঠতে থাকে মানুষের প্রকৃত ধর্ম। ক্রমে সে হয়ে ওঠে সভ্য, সামাজিক। তার আচরণে দেখা দেয় সৌজন্য। শিষ্টাচারকে মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বলে সে উপলদ্ধি করতে শেখে। সৌজন্য ও শিষ্টাচার মানবসভ্যতার একটি বিশিষ্ট লক্ষণ।

সৌজন্য ও শিষ্টাচারের অর্থ ও তাৎপর্য

সৌজন্য ও শিষ্টাচার কথা দুটি প্রায় সমার্থক। দুটিতেই এক মানুষের প্রতি আর এক মানুষের সুভদ্র মার্জিত আচরণকে বােঝায়। তবু অনেক সময় দুটির মধ্যে একটি সূক্ষ্ম পার্থক্যরেখা টানা হয়ে থাকে। সৌজন্যের মধ্যে দিয়েই মার্জিতরুচি সহূদয় ব্যক্তির বিশেষ চরিত্রধর্মের প্রকাশ ঘটে। এর মধ্যে বাধ্যবাধকতার কোনাে ব্যাপার নেই। সৌজন্যের সঙ্গে তাই আন্তরিকতার একটি বিশেষ যােগ আছে। আর শিষ্টাচার হল সামাজিক মানুষের অলিখিত কিছু আচরণবিধি। যে আচরণ অন্যের স্বার্থ বিঘ্নিত করে না বা অন্যের মনে কোনাে ক্ষোভের সৃষ্টি করে না, তাকেই সাধারণভাবে শিষ্ট আচরণ বলা হয়ে থাকে। প্রত্যেকটি মানুষের কাছ থেকেই সমাজ শিষ্টাচার দাবি করে। এজন্য স্বতঃস্ফুর্তভাবে না হলেও কখনাে কখনাে মানুষকে শিষ্টাচার পালন করতে হয়। সৌজন্য ও শিষ্টাচারকে এভাবে আলাদা করা যাক বা না যাক, সুসভ্য মানুষের ব্যক্তিজীবনে ও সমাজজীবনে এ দুয়ের পরিচর্যা অত্যন্ত প্রয়ােজনীয়। সৌজন্য ও শিষ্টাচার আমাদের জীবনকে সুন্দর করে, মনুষ্যত্বকে গৌরবান্বিত করে। এর অভাবে প্রশ্রয় পায় আদিম বর্বরতা।

বর্তমান সমাজজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচারহীনতা

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, বর্তমান সমাজজীবনের সর্বক্ষেত্রে সৌজন্য ও শিষ্টাচারের দারুণ অবনতি ঘটেছে। অবিনয়, অভদ্রতা ও অশ্রদার উৎকট প্রাদুর্ভাবে মানবতা আজ লাঞ্চিত। মানুষের মধ্যে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা যত বাড়ছে ততই মানুষ হয়ে উঠছে সৌজন্য ও শিষ্টাচারবর্জিত। এই ব্যাপারটি বেশি করে চোখে পড়ে প্রবীণদের প্রতি নবীনদের আচরণে। একসময় বয়স্কদের প্রতি অল্পবয়সিদের যে শ্রদ্ধা ও সম্রমের ভাব ছিল, এখন তা অনেকটাই দূরীভূত। এখন তরুণ প্রজন্ম অনায়াসে শ্রদ্ধেয় প্রবীণদের অবজ্ঞা ও অসম্মান করতে পারে। ছাত্রদের হাতে শিক্ষকের মর্যাদাহানির ঘটনা তাে এখন একটি স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে মানুষ বড় বেশি অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। রাস্তাঘাটে, ট্রেনেবাসে, লেকলেজে, অফিসে কিংবা অন্যত্র প্রতিনিয়তই লম্বিত হয়ে চলেছে সৌজন্য ও শিষ্টাচার। সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে পারস্পরিক কটুক্তিবর্যণ ও কলহের দৃষ্টান্ত আজ সর্বত্রই প্রত্যক্ষ করা যায়। সবচেয়ে লজ্জার কথা, ভারতবর্ষের সংসদও আজ অসৌজন্য ও অশিষ্টাচার প্রদর্শনের অন্যতম স্থান। সেখানে মাননীয় মন্ত্রী ও সাংসদগণের কেউ কেউ অনেক সময় বিতর্ককালে পরস্পরের প্রতি যে ভাষায় ও ভঙ্গিতে কথা বলেন, যেভাবে কেউ কেউ উত্তেজিত অবস্থায় পরস্পরকে আক্রমণ করতে উদ্যত হন, তাতে কোথাও সৌজন্য ও শিষ্টাচারের দেশমাত্র থাকে না।

ছাত্রজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচারের প্রয়োজনীয়তা

সৌজন্য ও শিষ্টাচার পালনের অভ্যাস প্রতিটি মানুষের জীবনেই অপরিহার্য। তবু আজকের দিনে বিশেষভাবে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সৌজন্য ও শিষ্টাচারের অনুশীলন অত্যন্ত প্রয়ােজনীয় হয়ে উঠেছে। ছাত্রছাত্রীরাই দেশের ভবিষ্যৎ। আর ছাত্রজীবন হল মানুষের প্রস্তুতিপর্ব, চরিত্রগঠনের উপযুক্ত সময়। নবীন শিক্ষার্থীদের মন এই সময় যে-কোনাে বিষয়কে খুব সহজে গ্রহণ করতে পারে। বিদ্যাচর্চার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে যদি সৌজন্য ও শিষ্টাচার সম্পর্কে সচেতন করে তােলা হয় তাহলে নিশ্চয়ই তারা তা আয়ত্ত করতে পারবে। ছাত্রজীবনে ভদ্রতাবােধ, বিনয়, শ্রদ্ধাবােধ প্রভৃতি গুণ চরিত্রের অন্তর্গত হয়ে উঠলে পরবর্তীকালে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবেও তাদের মধ্যে সেইসব গুণের প্রকাশ নিশ্চিতভাবে ঘটবে। কাজেই ভবিষ্যৎ সমাজকে সুন্দর করার জন্য ছাত্রজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচার পালনের অভ্যাস গড়ে তােলার কোনাে বিকল্প নেই। শুধু ভবিষ্যতের কথা ভেবেই নয়, ছাত্রজীবনটিকে সুন্দর করে তােলার জন্যও মার্জিত আচরণের অনুশীলন প্রয়ােজন। ছাত্রছাত্রীরা যদি তাদের সতীর্থ, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের প্রতি আচরণে সৌজন্য ও শিষ্টাচার প্রদর্শন করে তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে তৈরি হবে চমৎকার একটি সুশৃঙ্খল, স্বাস্থ্যকর এবং আনন্দময় পরিবেশ।

প্রতিকারের উপায়

শুধু আইনের কঠোরতা দিয়ে মানুষকে সৌজন্য ও শিষ্টাচার শেখানাে যাবে না, তার জন্য চাই অন্য ব্যবস্থা। প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শুর পর্যন্ত প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। দায়িত্ব এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি। পুথিগত পাঠের সঙ্গে সঙ্গে সৌজন্য ও শিষ্টাচারের পাঠও যাতে ছাত্রছাত্রীরা পায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে। বাড়িতে শিশুবয়স থেকেই সম্ভানসন্ুতি যাতে সদাচারের শিক্ষা পায়, সে বিষয়ে মা-বাবা বা অন্য অভিভাবকদেরও সচেতন হওয়া দরকার। বিভিন্ন ক্লাব ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে সৌজন্য ও শিষ্টাচার পালনের বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে। এককথায় ঘরে বাইরে, সমাজের সর্বস্তরে সৌজন্য ও শিষ্টাচারকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।

উপসংহার

চতুর্দিকে সৌজন্যহীনতা ও শিষ্টাচারহীনতা যেভাবে প্রকট হয়ে উঠছে তাতে মানবসভ্যতা হয়তাে একদিন ভয়ংকর এক সংকটের মুখােমুখি হয়ে উঠবে। সুতরাং যে-কোনাে মূল্যেই হােক এই পাশবিক প্রবণতার অগ্রগতিকে প্রতিরােধ করতেই হবে। আচরণের রূঢ়তা ও অশালীনতা বর্বরতারই নামান্তর। মানুষ বহুকষ্টে যে বর্বরতাকে অতিক্রম করে এসেছে তাকে আবার প্রশ্রয় দেওয়া মানে মনুষ্যত্বকে অপমানিত করা।

এটিও পড়ুন – ইউটিউবার দের জন্য সেরা 5 টি রেকর্ডিং মাইক

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button