কৃষি

সরিষা চাষ এর সঠিক পদ্ধতি | Mustard Crop Cultivation in Bengali

সরিষা ফসলের আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি

সরিষা আমাদের ভোজ্যতেলের অন্যতম প্রধান তৈল বীজ ফসল। এর ইংরেজি নাম Mustard ও বৈজ্ঞানিক নাম Brassica spp. সরিষার তেল শহর থেকে গ্রাম সবখানে খুবই জনপ্রিয়। সরিষা গোত্রের একটি দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ। এটি একটি তৈলফসল। এর ডিম্বক বক্রমুখী ৷ সরিষার দানা মশলা হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। সরিষা শাক খুব জনপ্রিয়।

আমাদের দেশের অনেক জমিতে সরিষার চাষ হয়ে থাকে। এছারা বাংলাদেশেও সরিষা চাষ করা হয়। এই চাষ করা সরিষা থেকে প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ টন তেল পাওয়া যায়। আমাদের দেশের গ্রামের অধিকাংশ মানুষ ভোজ্য তেলের জন্য সরিষার উপর নির্ভর করে। আমাদের দেশে অনেক জায়গায় এখন ব্যবসায়িক ভিত্তিতে সরিষার চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে।

সরিষা বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর উৎপত্তিস্থল এশিয়া। ভারতীয় উপমহাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে শীতকালীন রবি শস্য হিসেবে সরিষার চাষ করা হয়। সরিষার গাছ দৈর্ঘ্যে ১ মিটার মত হয়, তবেরাই সরিষা ২ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে।

সরিষার পুষ্টিগুন

সরিষার বীজে গড়ে প্রায় ৪০-৪৪ ভাগ তেল থাকে। সরিষা যেভাবেই খাওয়া হোক না কেন? যেমন- সরিষার সস কিংবা সেদ্ধ  এর থেকে মিলবে আঁশ, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়ামসহ আরও অনেক পুষ্টিগুন। তবে সবচেয়ে বেশি যেটা পাওয়া যায় তা হল ক্যালসিয়াম।

  • দাঁতের মাড়ি ক্ষয় দূর করতে সরিষা মাজন হিসাবে ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।
  • দেহের ঝিনঝিনি দূর করতে
  • ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগ হলে খাঁটি সরিষার তেল খেলে উপকার পাওয়া যাবে।

সরিষার প্রকারভেদ

সাধারণত ৩ প্রকার সরিষার চাষ করা হয় যথা- ১) মাঘী সরিষা, ২) রাই সরিষা ও ৩) ধলি সরিষা। এছারাও বেশ কিছু উচ্চ ফলনশীল প্রজাতি উদ্ভাবন করা হয়েছে। যেমন- টরি-৭, কল্যাণীয়া, সোনালী  সরিষা, বারি সরিষা-৬, বারি সরিষা-৭ ও বারি সরিষা-৮, রাই-৫ এবং দৌলত  ইত্যাদি।

সফল ও অগ্রণী জাতের ফলন সর্বোচ্চ হেক্টর প্রতি ২.৪ থেকে ২.৭ টন। প্রচলিত অন্যান্য জাতের তুলনায় সফল ও অগ্রণীর গাছ মোটা ও শক্ত। গাছ সহজে মাটিতে ঢলে পড়ে না। অল্টারনারিয়া রোগ সহ্য ক্ষমতাসম্পন্ন।

সরিষা চাষে মাটি ও আবহাওয়া

সরিষা বেলে দোআঁশ মাটিতে ভাল জন্মে৷ মাঝারি ও মাঝারি উঁচু জমি এ সরিষার জাতের জন্য নির্বাচন করা উচিত৷ জলাবদ্ধতা অত্যন্ত ক্ষতিকর৷ সরিষা চাষের জন্য পর্যাপ্ত সূর্যকিরণ, কম তাপমাত্রা (২৫০ সেঃ এ কম) এবং জমিতে পর্যপ্ত রস থাকা প্রয়োজন ৷ তাপমাত্রা বেশি হলে ও খরা হলে বীজের আকার ছোট হয় ও বীজে তেলের ভাগ কমে যায়৷

মাটির ধরন :

  • উর্বর ও মধ্য উর্বর দোআঁশ ও পলি দোআঁশ মাটি সরিষা চাষের জন্যে উত্তম৷ মাটির বর্ণ গাঢ় ধূসর হওয়া ভালো৷ লালমাটি বা কাঁকড়যুক্ত মাটিতে সরিষার চাষ ভালো হয় না৷ মাটির অম্লমান ৬.০ থেকে ৭.০ এর মধ্যে থাকলে উত্তম৷ লোনা মাটিতে সরিষা ভালো হয় না৷ বর্ষায় পলি জমি এমন মাটি চাষের জন্যে ভালো৷ শুষ্ক অবস্থায় ফাটল ধরা মাটিতে সরিষা ভালো হয় না৷
  •  উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি সরিষার জন্যে ভালো৷ আগাম পানি নিকাশ হলে মাঝারি নিচু জমিতে চাষ করা যায৷ উঁচু-নিচু জমিতে সরিষার চাষ করা যায় না৷ জমি উন্মুক্ত স্থানে হওয়া দরকার, যাতে সেখানে সারাদিন রোদ পড়ে৷ বর্ষাকালে প্রধানত বোনা আমন ও রোপা আমনের জমিতে শীতকালীন ফসল হিসেবে সরিষার চাষ করা হয়৷ এছাড়া আন্তঃফসল হিসেবে উর্বর জমিতে এবং ফল বাগানে সরিষার চাষ করা যায়৷

সরিষা চাষে জমি তৈরী

সরিষার বীজ ছোট বিধায় ৪-৬ টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে জমি তৈরি করতে হয়৷ জমিতে যাতে বড় বড় টিলা ও আগাছা না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷

চাষের মৌসুম : 

বিভিন্ন অঞ্চলের তারতম্য এবং জমির জো অবস্থা অনুসারে টরি-৭, কল্যাণীয়া, সোনালী  সরিষা, বারি সরিষা-৬, বারি সরিষা-৭ ও বারি সরিষা-৮ এর বীজ মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য-কার্তিক মাস (অক্টোবর) পর্যন্ত বোনা যায৷ রাই-৫ এবং দৌলত কার্তিক থেকে অগ্রহায়ণ (মধ্য-অক্টোবর থেকে মধ্য-নভেম্বর) মাস পর্যন্ত বপন করা যেতে পারে৷

দেশের উত্তরাঞ্চলও দক্ষিণাঞ্চলে যথাক্রমে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সরিষার বীজ বুনতে হয়৷ দেশের মধ্যাঞ্চলে অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে বীজ বুনতে হয়৷ নেপাস জাতের সরিষা মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত বপন করা যায়

জমি তৈরি পদ্ধতি

জমিতে ৪-৬টি চাষ মই দিয়ে তৈরি করতে হবে৷ চাষ কম হলে সরিষা বীজের অঙ্কুরোদগমে বিঘ্ন ঘটে৷ মাটির জো অবস্থায় জমি চাষ দিতে হবে৷ এতে মাটিতে ঢেলা থাকবে না, মাটি সমতল হবে৷ জমি চাষ করর সময় আগাছা ভালোভাবে বাছাই করতে হবে, যাতে ফসলে আগাছার প্রকোপ কম হয়৷ সরিষা জমির চাষ ১০-১২ সেন্টিমিটার গভীরে হওয়া দরকার৷ সরিষা জমিতে চাষ করার ফাঁকে ফাঁকে রোদ লাগতে হবে৷ পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ দিলে ২-৩টি চাষই যথেষ্ট, তবে ভালোভাবে চাষ-মই দিয়ে জমি সমতল করতে হবে৷

বীজ বপন পূর্বে করণীয়

বীজ বপনের পূর্বে ভিটাভেক্স-২০০ অথবা ক্যান্টন দিয়ে (২-৩ গ্রাম ছত্রাক নাশক/ কেজি বীজ) বীজ শোধন করে বপন করতে হবে৷ বিনা সরিষার বীজ ব্যাভিষ্টিন (২.৫ গ্রাম/ কেজি) বা বেনলেট (১.৫ গ্রাম/ কেজি) দিয়ে শোধন করতে হবে৷

বীজ বপন 

বীজ বপন পদ্ধতি: বাংলাদেশ প্রধানত সরিষার বীজ ছিটিয়ে বপন করা হয়৷ তবে সারিতে বীজ বপন করলে ফসলের পরিচর্যা করতে সুবিধা হয়৷ অবশ্য সারিতে বীজ বুনতে কিছু অতিরিক্ত ব্যয় হয়৷

বীজের হার: প্রতি হেক্টর ৭-৮ কেজি, গাছ সংখ্যা প্রতি বর্গমিটারে ৪৫ থেকে ৬৫টি (গাছের ধরন অনুসারে)৷

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button