প্রবন্ধ রচনা

ভারতে বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার রচনা 600 শব্দের মধ্যে

ভারতে বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার: এই পোষ্টে সকল ছাত্রছত্রিদের জন্য ভারতে বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার শেয়ার করা হল। আশা করি সকল ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা উপকৃত হবে। প্রণব মুখোপাধ্যায় এর বর্ণময় অধ্যায় নিয়ে প্রবন্ধ রচনা শেয়ার করা হয়েছে চাইলে দেখে নিত পারো।

ভারতে বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ অনুসারে আর কী কী অর্থাৎ অনুরূপ প্রবন্ধ লেখা যাবে তা হল – ভারতে কর্মহীনতার সমস্যা; পশ্চিমবঙ্গে বেকার-সমস্যা; ভারতে বেকার সমস্যা ও তার সামাজিক প্রতিক্রিয়া।

ভারতে বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার

[ প্রেসঙ্গসূত্র: ভূমিকা ; ভারতে বেকার-সমস্যার কারণ; বেকারের শ্রেণীবিভাগ ও কৃষক এবং মজুর শ্রেণীর বেকারত্ব; শিক্ষিত বেকার; বেকারীর সামাজিক প্রতিক্রিয়া ; সমস্যা সমাধানের প্রয়াস; উপসংহার।]

“নেহাত উপরে বসে আছেন এমন দু’একটি মানুষ ছাড়া দেশের বাকি লােকের অবস্থা অতি শােচনীয়। পেটের জ্বালায় গভীর হতাশায় অনেকেই আত্মহত্যা পর্যন্ত করছেন। জনগণ এখন জীবন ও মৃত্যুর মাঝামাঝি। প্রাণপণে তারা লড়াই করছে।”- সুভাষচন্দ্র বসু

ভূমিকা

মানুষের কর্মশক্তিকে বাস্তবায়িত করার মধ্যে নিহিত আছে জীবনের সার্থকতা। সেই শক্তি যদি কাজের ক্ষেত্র না পায়, তবে তার অপচয়। কোন দেশের সমর্থ মানবগােষ্ঠী যদি কর্মহীন থাকে, তবে জাতীয় মানব সম্পদের অপচয় যে ভয়াবহ আকার নেয়, তা আমরা ভারতবর্ষে দেখতে পাই। কর্মক্ষম মানুষ কাজ পাচ্ছে না। কাজের ইচ্ছা আছে, ক্ষমতা আছে, অথচ ক্ষেত্র নেই। এই অবস্থার নামই বেকার সমস্যা। বর্তমান ভারতের সবচেয়ে কঠিন সমস্যাগুলির একটি হচ্ছে এই বেকার-সমস্যা।

ভারতে বেকার সমস্যার কারণ

আমাদের ভারত পরাধীন যুগে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বহু চক্রান্তের শিকার হয়েছে। সেইসব চক্রান্তের একটি হল চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রবর্তনে ভূমিব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। যারা ছিল জমির পালক ও পােষক তারা রাতারাতি জমিদারের রায়তে পরিণত হল, ভূমির উপর অধিকার। হারাল; আর জমিদার ও সরকারী আমলাদের অত্যাচারে অনেক চাষী চাষের কাজ ছেড়ে দিয়ে ইংরেজদের গড়া কলকারখানায় মজুরের কাজ নিতে বাধ্য হল। দ্বিতীয়ত, ইংরেজ সুকৌশলে এদেশের কুটির শিল্প এবং দক্ষ কারিগরদের কর্মক্ষমতা বিনষ্ট করে দিয়ে নিজ দেশের শিল্পজাত দ্রব্য এদেশে বিক্রয় করে মুনাফা অর্জনে প্রয়াসী ছিল। কুটীরশিল্পে নিযুক্ত শিল্পীরাও কাজ হারিয়ে বেকার হল। মূলত, স্বাধীনতার পরেও ভারতে যে বেকার-সমস্যার বেঝা চেপে রয়েছে, তার স্রষ্টা ঐ সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ শাসকবর্গ। পৃথিবীর সমস্ত সাম্রাজ্যবাদী এবং ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চরিত্রই বুঝি এ-রকম। এছাড়া বেকার-সমস্যার আরেকটি বড় কারণ জনসংখ্যাবৃদ্ধি। জনসংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে তাল রেখে কর্মপ্রার্থী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং কাজের ক্ষেত্র সেই অনুসারে বর্ধিত না হওয়াএই হচ্ছে স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের বেকার-সমস্যার প্রধান কারণ।

বেকারের শ্রেণী বিভাগ ও কৃষক এবং মজুর শ্রেণীরবেকারত্ব

অর্থনীতিবিদগণ কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে বেকারের যে শ্রেণী নির্দেশ করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল(ক) মরসুমী বেকার; (খ) শিল্প ও অর্থনীতিতে মন্দাজনিত বেকার ; (গ) শিল্প ব্যবস্থা গত বেকার; (ঘ) আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার প্রয়ােগ-সৃষ্ট বেকার।

কৃষি ও কোন কোন শিল্প ক্ষেত্রে বছরের সব সময় শ্রমিক প্রয়ােজন হয় না, সেই সময় এদের কর্মহীন থাকতে হয়। এরা মরসুমী বেকার। অনেক শিল্প ও বাণিজ্যে মালিক শ্রেণী নিজের স্বার্থেই উৎপাদন কম করেন অথবা বাজারে স্বাভাবিক অবনতি বা মন্দা দেখা দেয়। তখন কর্মীরা বেকার থাকে। এরা শিল্পক্ষেত্রে মন্দাজনিত বেকার। শিল্প-ব্যবস্থায় যদি শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ হয়, অথবা যন্ত্রপাতি

মেরামতের প্রয়ােজন হয়, তবে মালিকেরা হঠাৎ কারখানা বন্ধ করে দেন অথবা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখেন। তখন শ্রমিক কর্মহীন হয়। এরা শিল্পব্যবস্থাগত বেকার। আর আধুনিক কালে কম্পিউটার ইত্যাদি নতুন ইলেকট্রনিক যন্ত্র ব্যবহারের ফলে হাতে কাজ করার লােকের প্রয়ােজন কমে যাচ্ছে। ফলে অনেক কর্মী উদ্বৃত্ত হয়ে ছাঁটাই হচ্ছে। এরা আধুনিক প্রযুক্তির ফলে সৃষ্ট বেকার।

এটিও পড়ুন – রূপসি বাংলা – নদ নদী ও পশুপাখি প্রবন্ধ রচনা

শিক্ষিত বেকার

এছাড়া সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ শিক্ষিত যুবগােষ্ঠীর বেকারত্ব ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। উচ্চশিক্ষা লাভ করেও ঘরে বসে থেকে পরিবার ও সমাজের বােঝা হয়ে দাড়াচ্ছে এবং নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে। আর বিভিন্ন ক্ষেত্রে অদক্ষ শ্রমিক ও কর্মীদের বেকারত্ব তাদের জীবনধারণ অসম্ভব করে তুলছে। ১৯৮৫ খ্রীস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গে কর্মসংস্থান-কেন্দ্রের নাম নথিভুক্ত করেছিল একচিল্লশ লক্ষ বারাে হাজার বেকার। এর মধ্যে সাড়ে ছ লক্ষের উপর ছিল স্নাতক, এক লক্ষ পাঁচ হাজার ডাক্তার এবং এক লক্ষ এক হাজার ইঞ্জিনীয়ার। সারা ভারতে এইরকম নথিভুক্ত বেকারের সংখ্যা পাঁচ কোটি ষাট হাজারের কাছাকাছি। বলাই বাল্য, গ্রামাঞ্চলে এবং শিল্পাঞ্চলে যারা কর্মসংস্থান-কেন্দ্রে নাম লেখায়নি তাদের সংখ্যা কম নয়। সুতরাং ভারতের প্রকৃত বেকারের সংখ্যা নির্ধারণ করাও এখন কঠিন। এই সংখ্যা দশ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা যায়।

বেকারীর সামাজিক প্রতিক্রিয়া

সহজেই অনুমান করা যায়, দেশের জনসংখ্যার এক বিপুল অংশ কর্মহীনতার অভিশাপে বিপর্যস্ত। এর মধ্যে শিক্ষিত এবং অল্পশিক্ষিত যুবকের সংখ্যা ভীতিজনক। জীবন ও জীবিকার তাগিদে এরা হতাশাগ্রস্ত। শুধু তাই নয়, এদের মুখ চেয়ে থাকা পরিবারের লােকেরাও চোখে অন্ধকার দেখছে। এর ফলে বিক্ষোভ, অসন্তোষ এবং ধ্বংসাত্মক প্রবণতা যুবগােষ্ঠীকে গ্রাস করে ফেলেছে। সমাজে এর বিষময় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি অবশ্যম্ভাবী। সমাজ কাঠামো ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

সমস্যা সমাধানের প্রয়াস

এই সমস্যার আশু সমাধান কঠিন, আর সমস্যার সমাধান কেবল কিছু চাকরি সৃষ্টির সুযােগ করে দেওয়াতেই কখনাে হতে পারে না। চাকরির প্রতি অত্যধিক নির্ভরতা কমিয়ে ছােট ছােট শিল্প, বাণিজ্যিক উদ্যোগে রক্ত হওয়ার প্রয়াস চালানাে প্রয়ােজন। এ উদ্দেশ্যে অবশ্য সরকার স্বয়ং-নিযুক্তি-প্রকল্পের মাধ্যমে উৎসাহী তরুণ তরুণীদের আর্থিক সাহায্য দানের চেষ্টা করছেন। কৃষি ক্ষেত্রে ও ভূমিহীন কৃষকদের হাতে জমি দিয়ে তাদের কাজের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্য প্রয়াস চালানাে হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে প্রয়ােজন শিল্পক্ষেত্রে শুধু পুঁজি বাড়ানাের নতুন নতুন প্রয়াস না করে নতুন উৎপাদনমুখী পরিকল্পনার। পুঁজিনির্ভর অর্থনীতিতে ধনী ও মালিক শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষিত হয়, কিন্তু কর্মার্থী জনসাধারণ তাতে লাভবান হয় না। কর্মসংস্থানের সঙ্গে কর্মপ্রার্থী জনতার সমন্বয় ঘটানাে সম্ভব পরিপূর্ণ সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায়। কিন্তু ভারতে ব্যক্তিগত মালিকানা এবং সরকারী উদ্যোগের মিশ্র অর্থনীতি চালু আছে। সরকারী উদ্যোগেও পরিচালন ও পরিকল্পনাগত ক্রুটি থাকায় কাজের ক্ষেত্র বাড়ছে না, অথচ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধুনিক কমপিউটার ইত্যাদি প্রবর্তনের ফলে অনেক কর্মী ছাটাই হয়ে যাচ্ছে। এ কারণেই অটোমেশনের বিরুদ্ধে জনমত এখনাে প্রবল।

আশার কথা, সরকার এ সম্বন্ধে পূর্ণ সচেতন। এজন্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কাজ, খাদ্য ও শিল্প উৎপাদনের উপর গুরুত্ব আরােপ করা হয়েছে। কৃষি এবং শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা হলে স্বাভাবিকভাবেই কাজের সম্ভাবনাও বাড়বে এবং বেকার-সমস্যা অনেকখানি দূর হবে। এই পরিকল্পনায় মােট ব্যয় ধার্য হয়েছে ৩,২০,২০০ কোটি টাকা। সরকারী ক্ষেত্রে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা। কৃষিক্ষেত্রে ব্যয় হবে চার শতাংশ এবং শিল্পক্ষেত্রে সাত শতাংশ। এছাড়া শিক্ষা, সমাজ-উন্নয়ন, প্রতিরক্ষা উৎপাদনেও পূর্ববর্তী ছাটি পরিকল্পনার তুলনায় অনেক বেশি অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। শিক্ষাকে কর্মমুখী করে তােলার জন্য জাতীয় শিক্ষানীতিতে নির্দেশক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আশা করা যায়, এ-সব উদ্যোগ রূপায়িত হলে সপ্তম যােজনা শেষে বেকার-সমস্যার উল্লেখযােগ্য হ্রাস ঘটবে।

উপসংহার

উপসংহারে বলা যায়, শুধু সরকারের উপর ভরসা না করে সকলের স্বাধীন শিল্প ও ব্যবসায় পরিচালনার কাজে এগিয়ে আসতে হবে। এর জন্য সরকার থেকে ঋণগ্রহণ এখন সহজসাধ্য। ব্যক্তিগত এবং যৌথ প্রয়াসেই এই ভয়াবহ মানবিক শক্তির অপচয় বন্ধ করা সম্ভব। এতে দেশ এবং সমাজের কল্যাণ হবে।

ট্যাগঃ বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা ৬০০ শব্দের মধ্যে, জেনে নিন বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার, বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার PDF, Download বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার, রচনা বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার, ইংরেজি রচনা বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button