প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহাঃ এই পোষ্টে বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা প্রবন্ধ রচনা শেয়ার করা হ্ল।আশা করি বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা প্রবন্ধ রচনাটি সকল ছাত্রছাত্রীদের খুবই কাজে আসবে। ভালো ছাত্র-ছাত্রী হয়ে ওঠার গোপন টিপস   সকল ছাত্র ছাত্রীদের জন্য আলোচনা করা হয়েছে চাইলে দেখে নিত পারো।

বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা প্রবন্ধ রচনা অনুসারে আর অনুরূপ প্রবন্ধ  কী কী হতে পারে তা হল- বিজ্ঞানী মেঘনাদ ; শতবর্ষের আলােয় মেঘনাদ ; একজন বিশিষ্ট বাঙালী বিজ্ঞানী, মেঘনাদ সাহা উক্তি, বিজ্ঞান গবেষণায় বাঙালি রচনা  ইত্যাদি

[প্রসঙ্গসূত্র: সূচনা; বংশ-পরিচয় ; ছাত্রজীবন ; কর্মজীবন ; দেশপ্রেম; আবিষ্কার ; অবদান ; মৃত্যু; উপসংহার। ]

সূচনা

পরাধীন ভারতের একজন বিজ্ঞানী আমাদের গর্ব ও গৌরব, বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা তাঁদের অন্যতম। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি পুরােমাত্রায় ভারতীয় এবং বিজ্ঞানী, আপনার মৃত্যুর পরে কি এ ধারা লুপ্ত হবে? আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র পরম বিশ্বাসে যে মানস-সন্ততিদের নাম করেছিলেন, তারা হলেন মেঘনাদ সাহা, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, জ্ঞানচন্দ্র মুখােপাধ্যায়, দেবেন্দ্রমোহন বসু।

বংশ পরিচয়

মেঘনাদ সাহা অখণ্ড বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) ঢাকা জেলায় ১৮৯৩ খ্রীস্টাব্দের ৬ই অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। পিতা জগন্নাথ সাহা ছিলেন সামান্য ব্যবসায়ী। আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য সংসারে ছিল না বললেই চলে।

ছাত্রজীবন

শৈশবে তিনি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানকার পাঠ সাঙ্গ করে তিনি ভর্তি হন শিমুলিয়া গ্রামের মধ্য ইংরাজী বিদ্যালয়ে। এখান থেকেই তিনি মধ্যবৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ঢাকা বিভাগের মধ্যে প্রথম স্থান লাভ করায় বৃত্তি পান, যা তার পরবর্তী পড়াশুনার ক্ষেত্রে ব্যাপক সাহায্য করে। এরপর মেঘনাদ ঢাকার কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু স্বদেশী আন্দোলনের প্রতি যথেষ্ট অনুরাগ থাকায় ওই বিদ্যালয় থেকে তিনি বহিষ্কৃত হন। ১৯০৯ খ্রীস্টাব্দে ঢাকা জুবিলী স্কুল থেকে তিনি এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন তিনি। এরপর আই. এস-সি. পরীক্ষায় তৃতীয় হয়ে তিনি মাসিক পঁচিশ টাকা বৃত্তি লাভ করেন। এরপর মেঘনাদ ঢাকা থেকে কলকাতায় এসে প্রেসিডেন্সী কলেজে বি. এস-সি. পড়তে শুরু করেন। ১৯১৩ খ্রীস্টাব্দে তিনি গণিতশাস্ত্রে অনার্সসহ প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হন। ১৯১৫ খ্রীস্টাব্দে ফলিত গণিতশাস্ত্রেও অনুরূপ পারদর্শিতা দেখিয়ে তিনি এম. এসি. পাস করেন। চার বছর পরে ডি. এস-সি. ডিগ্রী ও পরে প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি লাভ করেন।

কর্মজীবন

মেঘনাদ সাহার কর্মজীবনের শুরু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক রূপে (১৯১৬-২৩ খ্রীঃ)। পরে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৯২৩-৩৮ খ্রীঃ) তিনি অধ্যাপনায় নিযুক্ত ছিলেন এবং পরবর্তীকালে আবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসেছিলেন। ১৯২৭ খ্রীস্টাব্দে তিনি রয়্যাল সােসাইটির সভ্য মনােনীত হন। পরে লন্ডনে অধ্যাপক ফাউলারের অধীনে ও জার্মানিতে অধ্যাপক নার্নস্টের অধীনে মেঘনাদ সাহা কিছুকাল গবেষণা করেন ও এইসময় বহু মূল্যবান বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ রচনা করেন। ১৯৩৮ থেকে ১৯৫৩ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এখানেই অধ্যাপনা এবং গবেষণাকর্ম পরিচালনা করেন। যাদবপুর ইণ্ডিয়ান অ্যাসােসিয়েশন ফর দি কালটিভেশন অফ সায়েন্স’ নামীয় গবেষণা সংস্থার পরিচালক হিসেবে তার কৃতিত্বের তুলনা নেই। অগণিত গবেষক ও ছাত্রকে তিনি অনুপ্রাণিত করেছেন, গবেষণাকর্মে পথ দেখিয়েছেন। ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স’ তাঁরই কল্পনা ও সদিচ্ছার বাস্তব রূপায়ণ। ভারতের গবেষণাকে ডঃ সাহা উচ্চতর মানে পৌঁছে দিয়েছেন ; পরে সে কাজে প্রগতি হয়েছে ডঃ হােমি জাহাঙ্গীর ভাবার নেতৃত্বে। মেঘনাদ সাহার মৃত্যুর পরে ভারত সরকার ঐ সংস্থাটি অধিগ্রহণ করে নতুন নাম দেন ‘সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স’।

মেঘনাদ সাহা কেবল একজন বিজ্ঞানসাধক ছিলেন না, স্বদেশ ও সমাজের দুর্গতিমােচনের একটা সামগ্রিক চেতনা থেকেই তিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির কথাও ভেবেছেন। দেশ স্বাধীন হবার আগেই কংগ্রেসে একটি পরিকল্পনা সাব কমিটি তৈরি হয়। সুভাষচন্দ্র ও মেঘনাদ সাহার যৌথ উদ্যোগেই দেশের সার্বিক কল্যাণের কথা মনে রেখে প্ল্যানিং উপসমিতি গড়ে ওঠে। কিন্তু অন্য প্রদেশের সহযােগিতা পাবার জন্য দুই বাঙালী ব্যক্তিত্বকেই সরে দাড়াতে হয়। পণ্ডিত জওহরলাল হলেন সেই উপসমিতির প্রধান। তার লেখাতেই এই নেপথ্য কাহিনীর স্বীকৃতি আছে।

দেশপ্রেম

বাংলা-বিহারের মার্জার বা একীকরণের প্রস্তাবে যখন বাঙালীর অস্তিত্বের সংকট দেখা দিয়েছিল, ডঃ শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতাে সাহিত্য-সমালোচক এবং ডঃ মেঘনাদ সাহার মতাে বিজ্ঞানসাধকও চার দেওয়ালের সুখী গৃহকোণ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন, মাঠে ময়দানে প্রতিবাদে সােচ্চার হয়েছেন। জনপ্রতিনিধি রূপে তিনি লোকসভার সদস্য হয়েছিলেন। দূষণ সংকট, জল সংকট, নদনদীর দুরবস্থা ইত্যাদি বিষয়েতার ধ্যান-ধারণা আজ আরও সত্য প্রমাণিত হয়েছে। ডঃ প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ এবং ডঃ মেঘনাদ সাহা অর্থবিজ্ঞানী না হয়েও পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা রচনায় ও সমালােচনায় বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। পার্লামেন্টের বিরােধী পক্ষে তিনি একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং শক্তিশালী বাগ্মী ছিলেন।

এটিও পড়ুন –

আবিষ্কার

তাপীয় আয়নবাদ প্রক্রিয়া তত্ত্বে মেঘনাদ সাহার অবদান চিরস্মরণীয়। তাপীয় আয়ন’-এর অর্থ তাপ প্রয়ােগে আয়নন প্রক্রিয়া। অধ্যাপক মেঘনাদ সাহা একটি সূত্র অবলম্বন করে বিভিন্ন উষ্ণতা ও চাপে বিভিন্ন পদার্থের আয়ননের মাত্রা গণ্য করেন। বিজ্ঞানের বিবিধ শাখায় এর যথেষ্ট প্রয়ােগ রয়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানেই প্রথম প্রয়ােগ করা হয় এই সূত্র এবং তা প্রয়ােগের মাধ্যমে জানা যায় সৌরমণ্ডলে রুবিডিয়াম, সিজিয়াম প্রভৃতি পদার্থ সম্পূর্ণ আয়নিত অবস্থায় থাকে। ডক্টর সাহা বর্ণালী নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা করেন এবং বিভিন্ন নক্ষত্রের আলাের বর্ণালী বিশ্লেষণ করে ওই সব নক্ষত্রের পৃষ্ঠ তাপমাত্রা নির্ণয়ে সক্ষম হন। সৌরচ্ছটা বিষয়েও তার গবেষণা অতি মূল্যবান। জ্যোতির্বিজ্ঞান ও বর্ণালী বিশ্লেষণের বিবিধ পরীক্ষা ও মৌলিক মতবাদের স্রষ্টারূপে মেঘনাদ সাহা সমগ্র পৃথিবীর বৈজ্ঞানিক মহলে স্বীয় প্রতিভার চূড়ান্ত স্বাক্ষর দিতে সক্ষম হন।

অবদান

পঞ্জিকা সংস্কারে তার বৈজ্ঞানিক বিচার, আয়ন-মণ্ডল সংক্রান্ত গবেষণায় মেঘনাদ সাহা প্রদর্শিত পথে এখনও অনেক বিজ্ঞান সাধক অগ্রসর হচ্ছেন। লণ্ডনের রয়েল সোসাইটি মেঘনাদ সাহাকে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে বিশেষ সদস্য’ বা ফেলাে নির্বাচিত করেন।

এদেশে বিজ্ঞান চর্চার জন্য তিনি সায়েন্স অ্যাণ্ড কালচার’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রবর্তন করেন। ভারতে খরা ও বন্যার কোপে প্রায়শ কৃষিপণ্য নষ্ট হয়, কৃষিভিত্তিক আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা বিপন্ন হয়। নদী-পরিকল্পনা বিষয়ে তার প্রবন্ধগুলির সুপারিশ গ্রহণ করলে আমাদের নদ নদী এই দশা হত না। পরবর্তীকালে যে ‘দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন তৈরি হয়, তাতে বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার বৈজ্ঞানিক কল্পনার কিছুটা বাস্তব রূপায়ণ হয়েছে।

ইংরেজ বিজ্ঞানী জে. ডি. বার্নাল কেবল বীক্ষণাগারে অণু-পরমাণু নিয়ে গবেষণা করেন নি, মানুষের কল্যাণে বিজ্ঞান-প্রয়ােগের নানা দিক নিয়ে ভেবেছেন, মানুষের সভ্যতা ও সংস্কৃতি ধ্বংস করতে যারা বিজ্ঞানের অপপ্রয়ােগ করছে, তাদের ধিক্কার জানাতে আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। ঠিক তেমনি ডঃ মেঘনাদ সাহা নিছক বিজ্ঞানী নন, তিনি বীক্ষণাগারের বাইরে বিস্তৃত যে দেশ, অপবিজ্ঞান ও কুসংস্কার জীর্ণ যে দেশবাসী দারিদ্রে বঞ্চনায় পীড়িততাদের জন্য ভেবেছেন, রাজনীতির মিছিলে এসেছেন, আবার পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে গঠনমূলক কাজে আত্মনিয়ােগ করেছেন।

মৃত্যু

দেশপ্রাণ মেঘনাদ সাহার মৃত্যু খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তার শরীর খারাপ ছিল। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশনের জরুরী সভা দিল্লীতে। সেখানে তাঁর প্রস্তাব আলােচিত হবে সুতরাং তাকে যেতেই হবে। ১৯৫৬ খ্রীস্টাব্দ। উক্ত সভায় যাবার পথে তার অকস্মাৎ মৃত্যু ঘটে।

উপসংহার

বিজ্ঞানী মেঘনাদ আমাদের কাছে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দেশ-বিদেশের সম্মান-অর্ঘ্য পেয়েও তিনি পােশাকে-আশাকে, আহারে-বিহারে ছিলেন খাটি বাঙালী। সব স্তরের মানুষের সঙ্গে তিনি মিশতে পারতেন। ব্যক্তি মেঘনাদের এই দিকটি বিশেষ উল্লেখযােগ্য। সব ব্যাদে আছে—ভারতীয় প্রজ্ঞার এই সনাতনী রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে তার যুক্তি খুবই শানিত। সংখ্যাগুরু নিরক্ষর জনগণের সার্বিক কল্যাণে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহৃত হােক, ‘ভারত আবার জগৎ সভায়’ গণ্য হয়ে উঠুক এই ছিল তার জীবন-সাধনা। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিজ্ঞানের প্রয়োগ—মেঘনাদ সাহা পন্থা–আজও আমাদের কাছে লক্ষ্যে পৌছবার পথ।

এটিও পড়ুন – 10+ গুরুত্বপূর্ণ ভাবসম্প্রসারণ

ট্যাগঃ বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা রচনা, জেনে নিন বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা, ডাউনলোড বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা, বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা প্রবন্ধ রচনা PDF

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button