জীবনীপ্রবন্ধ রচনা

শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক প্রবন্ধ রচনা

ফজলুল হক রচনা ৭০০ শব্দের মধ্যে । A. K. Fazlul Huq

এ. কে. ফজলুল হক (A. K. Fazlul Huq) বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ, বিচারপতি এবং কবি ছিলেন। তিনি ১৮৭৩ সালে নরসিংদী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।

ফজলুল হক শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং কলেজে ভর্তি হন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ব্যাচেলর অব লস ডিগ্রি অর্জন করেন।

ফজলুল হক রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং মুসলিম লীগের সদস্য হিসেবে কাজ করেন। তিনি কলকাতার প্রথম মুসলিম মেয়র এবং নরসিংদী জেলার প্রথম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন।

ফজলুল হক পরবর্তীতে পূর্ব বেঙ্গল দলের প্রধান হিসেবে কাজ করেন এবং ১৯৩৭ সালে তিনি বাংলাদেশ হিসেবে পূর্ব বেঙ্গল সিপাহী পরিষদ প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন।

শেরে বাংলা হলো বিখ্যাত কবি এবং লেখক এ. কে. ফজলুল হকের একটি প্রসিদ্ধ কাব্য। এই কাব্যটি তিনটি পর্বে বিভক্ত হয়েছে এবং এর প্রতিটি পর্বে একটি ছন্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

শেরে বাংলা কবিতাটি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে লেখা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে কবি ফজলুল হক বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের জনপ্রিয় কবি হিসাবে পরিচিত হয়েছেন। এই কবিতায় তিনি বাংলাদেশের মানুষকে উৎসাহ দেতে চেষ্টা করেন এবং তাঁরা স্বাধীনতা জয় করে নেওয়ার প্রতি অভিমান ও প্রত্যাশা জাগ্রত করেন।

শেরে বাংলা একটি ঐতিহাসিক কাব্য, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের মাধ্যমে লিখিত হয়েছে। এই কাব্য বাংলাদেশের সংগ্রাম ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার একটি স্মরণীয় চিত্র রয়েছে।

শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক

ভূমিকা :

এই উপমহাদেশের প্রাচীনতম নেতা জনাব আবুল কাশেম ফজলুল হক (Abul Kasem Fazlul Huq) সাহেবের মহাপ্রয়াণে সমগ্র দেশ শোকে মুহ্যমান হয়েছিল। এই ব্যক্তিত্বসম্পন বিরাট পুরুষ এই দেশের গণমানবের আত্মার আত্মীয় ছিলেন।

জন্ম :

জনাব ফজলুল হক ১৮৭৩ সালের ২৬শে অক্টোবর বর্তমান পিরোজপুর জেলার অন্তর্গত ‘চাখার’ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৌলভী মুহম্মদ ওয়াজেদ আলী ছিলেন ভূতপূর্ব বরিশালের খ্যাতনামা আইনজীবীদের অন্যতম। তিনি প্রথমে কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি আরম্ভ করেন, পরে বরিশালে এসে সুনাম অর্জন ও বিপুল অর্থ উপার্জন করেন। দীর্ঘকাল তিনি বরিশালের সরকারী উকিলের পদেও নিযুক্ত ছিলেন।  বলা হত ‘টাইগার অব বেঙ্গল’ আর উত্তরকালে ফজলুল হক আখ্যা পেয়েছিলেন ‘শের-এ-বাংলা।’

পত্রিকা সম্পাদনা :

তিনি বরিশালে অধ্যাপনাকালে ‘বালক’ নামে ছোটদের একটি পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। অনেক কাল পরে তিনি কলিকাতা হতে ‘নবযুগ’ নামক দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন এর সম্পাদক।

হাইকোর্টে যোগদান :

১৯০৬ খ্রীস্টাব্দে তিনি আইন ব্যবসায় পরিত্যাগ করে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের পদ গ্রহণ করেন। সরকারের সাথে মতানৈক্যহেতু তিনি ১৯১১ সালে চাকরি ইস্তফা দিয়ে পুনরায় কলকাতা হাইকোর্টে যোগদান করেন।

রাজনীতিতে প্রবেশঃ

১৯১৩ সালে তিনি সর্বপ্রথম ঢাকা বিভাগ হতে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তদবধি বাঙালীর প্রিয়তম জননেতা ‘হক সাহেব’ প্রতি নির্বাচনে বিপুল ভোটাধিক্যে জয়লাভ করেন।

লক্ষ্ণৌ চুক্তিঃ

১৯১৬ সালে তিনি লক্ষ্ণৌ নগরে লীগ-কংগ্রেসের যুক্ত অধিবেশনে যোগদান পূর্বক এক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন যে, ভারতের সকল ব্যবস্থাপক পরিষদে শতকরা তেত্রিশটি আসন মুসলিমগণ লাভ করবে। এই প্রস্তাব গৃহীত হলে এর ‘লক্ষ্ণৌ চুক্তি’ নামে অভিহিত হয়। ১৯১৮ সালে তিনি ভারতীয় কংগ্রেসের জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। এই বছরের তিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগেরও প্রেসিডেন্ট পদে বৃত হন। কংগ্রেসের সেক্রেটারি হিসাবে তিনি যে রিপোর্ট প্রস্তুত করেন এবং ১৯০৯ সালে লীগের প্রেসিডেন্ট হিসাবে যে ভাষণ দেন, তা ইতিহাসের পৃষ্ঠায় স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে। তিনি উভয়ক্ষেত্রে ব্রিটিশ শাসনের নৈরাশ্যজনক অবস্থার কথা বর্ণনা করেন। ১৯২০ সালে তিনি মেদিনীপুর প্রাদেশিক কংগ্রেস অধিবেশনের সভাপতির আসন অলঙ্কৃত করেন এবং এক হৃদয়গ্রাহী ও উদ্দীপনাময় ভাষণ প্রদান করেন।

শিক্ষানুরাগী :

১৯২৪ সালে দ্বৈত শাসনকালে তিনি শিক্ষামন্ত্রী হিসাবে কতিপয স্কুল-কলেজ স্থাপন করে দেশের শিক্ষার পথ সুগম করেন। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ লেডী ব্রাবোর্ন কলেজ, ঢাকার ইডেন কলেজের ছাত্রীনিবাস তাঁরই বিদ্যোৎসাহিতার পরিচয় বহন করে।

১৯৩৫ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর হক সাহেব লীগ-প্রজা সম্মিলিত মন্ত্রিসভা গঠন করেন। ছয় বছর কাল অবাধে ওর কার্য চলে। তদানীন্তন বাংলার গভর্ণর স্যার হার্বার্টের সঙ্গে তাঁর নীতিগত মতভেদ ঘটলে তিনি ১৯৪৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদ পরিত্যাগ করেন।

১৯৩৫ সালে তিনি কলকাতা করপোরেশনের কাউন্সিলারদের ভোটে মেয়র হন। তিনি তথাকার প্রথম মুসলিম মেয়র।

শের-এ-বাংলা’ উপাধি লাভ:

১৯৪০ সালে লাহোরে যে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অধিবেশন হয় তাতে তিনি পাকিস্তান প্রস্তাবের ব্যাখ্যা করে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেন এবং প্রেশ করেন। পাঞ্জাবের মুসলমানেরাই তাঁহাকে ‘শের-এ-বাংলা’ উপাধি দানে সম্মানিত করেন। তদবধি এই নামেই তিনি সুপরিচিত।

ঢাকায় প্রত্যাবর্তন :

১৯৪৮ সালে তিনি কলকাতা পরিত্যাগ করে স্থায়িভাবে ঢাকায় বসবাস করতে থাকেন এবং ঢাকা হাইকোর্টে আইন ব্যবসায়ে ব্যাপৃত হন। ১৯৫২ সালে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের এ্যাডভোকেট জেনারেল পদ প্রাপ্ত হন। ১৯৫২ সালের নির্বাচনের পূর্বে হক সাহেব ‘কৃষক-শ্রমিক দল গঠন করেন। তাঁর এই দুলের সঙ্গে ‘আওয়ামী লীগ’, ‘নেজামে ইসলাম’ দলের সংযোগ সাধন করে তিনি ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠন করেন এবং নির্বাচনী সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। এই নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের কাছে মুসলিম লীগ শোচনীয়রূপে পরাজিত হয়। অতঃপর তাঁর অধিনায়কত্বে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ গত হতে না হতে তাঁর মন্ত্রিসভা বাতিল হয়ে যায় এবং এদেশে ১২ (ক) ধারা প্রবর্তিত হয়। এই ধারা কয়দিন পর প্রত্যাহৃত হলে পুনরায় পার্লামেন্টারী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু তিনি এই সময় নবগঠিত মন্ত্রিসভায় যোগদানে বিরত থাকেন। পরবর্তীকালে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর পদ লাভ করেন। তৎপর শাসনতন্ত্র প্রণয়নের পর ১৯৫৬ সালে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর নিযুক্ত হয়ে উক্ত পদে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত সমাসীন থাকেন।

মৃত্যু :

১৯৬২ সালে ইউরেশিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার্থে ভর্তি হন। চিকিৎসায় স্বাস্থ্যের কিঞ্চিৎ উন্নতি হলেও পরে অবনতি ঘটে। ১৯৬২ সালের ২৭শে এপ্রিল শুক্রবার মধ্যাহ্নকালে এই জনপ্রিয় জননায়কের জীবনাবসান ঘটে। সেদিন প্রভাতে তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় মোনাজাত করেন, ‘আল্লাহ, আর কষ্ট সইতে পারি না, তোমার কাছে নিয়ে চল।’ সমগ্র বাংলায় শোক প্রকাশের জন্য সমুদয় সরকারী ও বেসরকারী ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়। পরদিন পূর্বাহ্ণে সাড়ে দশটার সময় ঢাকার বহিরস্থ ক্রীড়াভূমিতে (outer stadium) লক্ষাধিক লোকের সমাবেশে মহামান্য নেতার জানাযা অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় এবং ঢাকা হাইকোর্টের এলাকায় তার মরদেহ সমাহিত হয়।

দরিদ্রের বান্ধৰ :

তিনি ছিলেন দরিদ্রের বাস্তব। তিনি বিনা ফিসে নিপীড়িত দরিদ্র মক্কেলের মরুদ্দমা করে দিতেন। এমনও হয়েছে যে, তাঁকে মকদ্দমার শেষে ধার করে মফস্বল থেকে ফিরতে হয়েছে। তিনি দরিদ্র ছাত্রদের যথাসাধ্য সাহায্য করতেন। শুনা গিয়েছে প্রয়োজনবোধে তিনি স্বীয় পত্নীর অলংকারও বন্ধক রেখেছিলেন। তিনি বাংলার প্রধানমন্ত্রীরূপে ‘মহাজন আইন’, ‘কৃষিখাতক আইন’ প্রভৃতি প্রণয়নে নিপীড়িত জনগণের অশেষ কল্যাণ সাধন করেন। ঋণশালিশী বোর্ড প্রতিষ্ঠা করে তিনি বাংলার গরীব প্রজাদের অশেষ উপকার করেন। ন্যায়ের প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁর আইন ব্যবসায়ের একমাত্র লক্ষ্য।

উপসংহার :

উপমহাদেশের এই প্রাচীনতম নেতার বিদ্যাবুদ্ধি, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা যে কোন দেশের জননেতার গৌরবের সামগ্রী। মনীষা তাঁর নেতৃত্বের মূলীভূত কারণ ছিল না। আকাশের মত উদার ও বিরাট হৃদয় ছিল তাঁর জনপ্রিয়তার মূল হেতু। শিশুর মত নরম ছিল তাঁর অন্তর ; স্বভাবে, চিন্তা-ভাবনায়, চাল-চলনে তিনি ছিলেন অকপট। নিজের স্বভাব ধর্ম থেকে তিনি কদাপিও বিচ্যুত হন নি।। এইজন্যই এ দেশের মাটির মানুষের নাড়ীর সাথে আমৃত্যু তাঁর নিবিড় সংযোগ ঘটেছিলো।

এটিও পড়ুন – মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা রচনা 600 শব্দের মধ্যে

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button