পড়াশোনাবাংলা ব্যাকরণমাধ্যমিকমাধ্যমিক সাজেশন

10+ গুরুত্বপূর্ণ ভাবসম্প্রসারণ

ভাব সম্প্রসারণ- VIII

সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে

মূলভাব : কেবল নিজের স্বার্থরক্ষাই মানব জীবনের লক্ষ্য নয়। পরস্পর পরস্পরের কল্যাণে ও উপকারের মাধ্যমেই গড়ে উঠেছে মানব সভ্যতা। পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতাই মানব জাতির সমাজ বন্ধনের ভিত্তি। এ পথেই মানুষ পায় বাঁচার আনন্দ, অর্জন করে জীবনের সার্থকতা।

সম্প্রসারিত ভাব : প্রাণীজগতে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের কারণ- মানুষ কেবল নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত নয়। অন্যান্য প্রাণীর মতো কেবল নিজের প্রাণ ও বংশ রক্ষাতেই সে ব্যাপৃত থাকে না, সমাজ-সভ্যতার অগ্রগতিতেও তাকে ভূমিকা রাখতে হয়। তার জীবন সমাজের সঙ্গে অচ্ছেদ্য বন্ধনে বাঁধা। সমাজ জীবনই ব্যক্তিমানুষের জীবনকে নিশ্চিন্ত, নিরাপদ, সুগম ও উন্নয়নমুখী করার নিশ্চয়তা দেয়। তাই সমাজবদ্ধ প্রতিটি মানুষ যদি সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের জন্যে নিজ নিজ সামর্থ্য ও যোগ্যতা অনুসারে মেধা ও শ্রম না দেয় তবে সমাজের অগ্রগতি ব্যাহত হয় এবং তা শেষ পর্যন্ত ব্যক্তির জীবনেও সংকট বয়ে আনে। সমাজে অবশ্য এমন কিছু আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপর লোক আছেন যাঁরা বৃহত্তর সমাজের কাছে তাঁদের অপরিসীম ঋণের কথা ভুলে যান। সমাজ যে মানুষের নিরাপত্তা, শান্তি-শৃঙ্খলা, সুখ-সমৃদ্ধি নিশ্চিত করে, বিপদে-আপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় এ সত্য তাঁদের মনে থাকে না। এঁদের এ ধরনের স্বার্থান্ধ মনোবৃত্তি সমাজের স্বার্থের বিরোধী। এঁরা কেবল যে সমাজের প্রতি দায়িত্বের কথা ভূলে যায় তা নয়, সমাজ বিচ্ছিন্নও হয়ে পড়ে। এঁদের জীবন অনেকটা গুটি বা খোলসের ভেতরে আবদ্ধ রেশম পোকার জীবনের মতোই বৃত্তবদ্ধ। এ জীবন টিকে থাকর মতো জীবন, বাঁচার মতো বাঁচা নয়। বস্তুত মানুষ সবার সঙ্গে সবার মধ্যে সবার জন্যে বাঁচে। সে বাঁচাই যথার্থ বাঁচা। যে সমাজ মানুষকে দেয় অনেক সেই সাজের জন্যে কিছু করতে পারলে জীবন কেবল সার্থক হয় না, পরের কল্যাণে আত্মত্যাগের অপরিসীম আনন্দে জীবন স্নিগ্ধ হয়। পরস্পরের মঙ্গলের চেষ্টাতেই সমাজের কল্যাণ হয়, মানুষের জীবন হয় সার্থক।

ভাব সম্প্রসারণ- IX

অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে
তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।

সুন্দর সমাজ গড়ার জন্য এবং সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মানুষ গড়ে তুলেছে অনুশাসন এবং ন্যায়-নীতির মানদন্ড। কিন্তু কিছু মানুষ রয়েছে যারা এসব ন্যায়-নীতি অমান্য করে অন্যায় ও অবৈধ কর্মতৎপরতায় লিপ্ত হয়। এরা সমাজের চোখে অন্যায়কারী এবং আইনের চোখে অপরাধী হিসাবে বিবেচিত। আবার যারা অন্যায়ের প্রতিবিধান বা বিরুদ্ধাচরণ করে না বরং শৈথিল্যের সাথে তা মেনে নেয়, সূক্ষ্ম বিচারে তারাও অপরাধী। কারণ অন্যায়ের বিচার না করলে তা প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে। আমরা জানি ক্ষমা একটি মহৎ গুণ। এ হিসাবে অপরাধীকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা যেতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে এমনটি মনে হলেও মনে রাখা দরকার যে, ক্ষমারও নির্দিষ্ট সীমা থাকতে হবে। তা না হলে অন্যায় বেড়ে গিয়ে সমাজ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। বিবেকবান মানুষ হিসাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার চেতনার অধিকারী হলেও অনেক সময় মানুষ নানা কারণে দিনের পর দিন অন্যায়কে সহ্য করে। সরাসরি অন্যায় না হলেও এটি অন্যায়কে সহযোগিতা করার নামান্তর। অনেকে বিপদের ঝুঁকি থাকায় নীরবে অন্যায়কে সহ্য করে চলে। এসব প্রবণতার কারণে আজ আমাদের সমাজে অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে অন্যায়কারী এবং অন্যায় সহ্যকারী উভয়ই সম অপরাধে অপরাধী।

এগুলিও পড়তে পারেন -

Previous page 1 2 3 4

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button