পড়াশোনাবাংলা ব্যাকরণমাধ্যমিকমাধ্যমিক সাজেশন

10+ গুরুত্বপূর্ণ ভাবসম্প্রসারণ

ভাব সম্প্রসারণ- VI

যে জন দিবসে মনের হরষে
জ্বালায় মোমের বাতি
আশু গৃহে তার দেখিবে না আর
নিশীথে প্রদীপ বাতি।

মূলভাব : মনের ক্ষণস্থায়ী আনন্দের জন্য বিলাসিতা করে অর্থ-সম্পদ অপচয় করা উচিত নয়। অপচয় না করলে সাধারণত অভাবও হয় না। অপরের সাহায্য ছাড়াই দুর্দিনে দারিদ্র্যের মোকাবিলা করা যায়।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষের অর্থ-সম্পদ সীমিত। আর সীমিত অর্থ-সম্পদ দিয়ে আমাদের অসীম অভাব পূরণ করতে হয়। যেমন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদি আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় অভাব। এসব অভাব দূর করতে না পারলে আমাদের জীবন চলতে পারে না। আবার কিছু অভাব আছে যেগুলো পূরণ না করেও আমরা চলতে পারি। যেমন বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, এসি, দামি পোশাক, দামি অলঙ্কার ইত্যাদি। কিন্তু যখন অর্থ-সম্পদ থাকে, তখন মানুষ ভবিষ্যতের চিন্তা না করে অপচয় করে। বিলাসিতা করে দিন কাটায়। বিলাসবহুল নিত্য নতুন জিনিসপত্র ক্রয় করে নিজের অর্থ-সম্পদ প্রদর্শনের জন্য। কিন্তু মানুষের জীবন সুখ ও সাফল্যে শেষ নাও হতে পারে। জীবনে নেমে আসতে পারে দারিদ্র্য, ব্যর্থতা। তখন সঞ্চিত অর্থ দিয়ে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি খোঁজা যায়। কিন্তু যদি কেউ সব অর্থ-সম্পদ বিলাসিতা করে নষ্ট করে তাহলে একদিন তাকে দিশেহারা হয়ে যেতে হয়। যে কিনা সারাজীবন বিলাস-বহুল জিনিসের পেছনে ছুটেছে, সে জীবনধারনের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর অভাব মেটাতে ব্যর্থ হবে। তার জীবনে নেমে আসবে কেবল অভাব এবং দারিদ্র্য। বুদ্ধিমান ও সঞ্চয়ী মানুষ নিজের এবং পরিবারের কল্যাণে খারাপ সময় মোকাবিলার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সঞ্চিত রাখে।

ভাবসম্প্রসারণ- VII

শৈবাল দীঘিরে বলে উচ্চ করি শির
লিখে রেখো এক ফোঁটা দিলেম শিশির।

মূলভাব : মহৎ তারাই যারা মিথ্যে বাহাদুরির আশ্রয় নেন না। পরের কল্যাণ সাধনেই তাদের সুখ। আর অকৃতজ্ঞ ব্যক্তি সমাজের কাছে সব সময়ই মূল্যহীন। তারা কখনোই সমাজে বড় কিছু হতে পারে না।

সম্প্রসারিত ভাব : মহৎ মানুষ হিংসা, দীনতা, হীনতা ও স্বার্থপরতা থেকে নিজেকে দূরে রাখেন। উদার, মানব প্রেমিক এসব মানুষ সর্বদা সকল মানুষের মঙ্গল চিন্তা করেন। তাদের জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও কর্ম দিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণসাধন করেন। তারা কখনো আপন গৌরবের কথা, উপকারের কথা অন্যের কাছে গর্ব করে প্রচার করেন না। সমাজের মানুষকে তারা বটবৃক্ষ হয়ে আগলে রাখেন। তারা নিঃস্বার্থভাবে অপরের জন্য কাজ করে যান। বিপরীতে আমাদের সমাজে কিছু হীন, স্বার্থপর মানুষ আছে যারা সর্বক্ষণ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। অন্যের উপকারের কথা স্বীকার করতে চায় না। বরং কখনো যদি উপকারীর সামান্যতম উপকার করতে পারে, তবে তা অতিরঞ্জিত করে প্রচার করে। তারা কখনোই বুঝতে চেষ্টা করে না যে তারা কতটা ক্ষুদ্রমনা। এই অকৃতজ্ঞতাবোধের পরিচয় পাওয়া যায় শৈবালের জীবনে। শৈবালের জন্ম দীঘির জলে, দীঘির জলেই তার অবস্থান। দীঘি তাকে পরম মমতায় তার জলে স্থান দেয়। সেই জলেই শৈবালের বেড়ে ওঠা। শৈবালের উচিত দীঘির প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া। কিন্তু তা না করে মিথ্যে বাহাদুরি দেখায়। কেননা, শৈবালের ডগায় রাতের শিশির বিন্দু জমে। এক সময় তা দীঘির জলে পড়ে। অকৃতজ্ঞ শৈবাল তখন অহংকার করে এই বলে যে, সে দীঘিকে এক ফোঁটা জল দিয়েছে। তার এই এক ফোঁটা জল নিতান্তই তুচ্ছ যা দীঘির তেমন কোনো উপকারে আসে না। বরং এতে শৈবালের হীনমন্যতার পরিচয় পাওয়া যায়। আমাদের সমাজের অকৃতজ্ঞ মানুষগুলোও শৈবালের মতোই।

এগুলিও পড়তে পারেন -

Previous page 1 2 3 4Next page

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button