প্রবন্ধ রচনা

একটি কলমের আত্মকথা রচনা 700 শব্দের মধ্যে | কলমের আত্মজীবনী

একটি কলমের আত্মকাহিনি রচনা। একটি বিশেষ কলমের আত্মকাহিনী

কলমের আত্মকথা । উকিপিডিয়া অনুসারে- কলম বা লেখনী বা Pen প্রধানত লেখালেখির কাজে ব্যবহৃত একটি উপকরণ। কলম দিয়ে কাগজ বা কোন পৃষ্ঠতলের উপরে কালি লেপনের কাজ করা হয়। নিম্নে একটি কলমের আত্মকথা শেয়ার করা হল।

একটি কলমের আত্মকথা

১৯৬০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্যের ফাউন্টেন পেন্‌স ওয়ার্কশপ আমার জন্মস্থান। যে বংশে আমার জন্য তার নাম সেফারস এণ্ড কোং। এটা একটি অভিজাত বংশ। এ বংশের নামাবলী গায়ে ধারণ করলে কদর বাড়ে। জন্মলগ্ন থেকেই এ নামাবলী রয়েছে আমার, কাজেই কদর বেড়েছে। আমার নাম ফাউন্টেন পেন, বাংলায় বলে ‘ঝরণা কলম’। ঝরণা কলম-এই চমৎকার নামে আমাকে যখন লোকে ডাকে তখন আমার আনন্দ দেখে কে? ওহ্ বলতে ভুলে গেছি যে, সেফারস করণা কলম তখনই কলম নামে আখ্যায়িত হয় যখন আমার বুকের মধ্যে এক রাশ কালো কালি পুরে দেওয়া হয়। কালো কালি ভর্তি করে নিলে আমার মুখ দিয়ে যে লেখাগুলি চেহারা নিয়ে উপস্থিত হয় তার মর্যাদা অপরিসীম। ওয়ার্কশপ থেকে বের হয়ে আমি প্রথমে সেফারস্ কোম্পানির নিজস্ব বিপণিতে স্থান লাভ করি। আমার বংশের আরো দু’শোটি সদস্যের সঙ্গে আমাকে শোকেসে রাখা হয়। Sheaffer নামযুক্ত একটি সুন্দর কভারের মধ্যে আমি মাত্র ক’টি দিন বন্দী হয়ে থাকি। সেখান থেকে জাহাজে চড়ে সোজা বাংলাদেশে পাড়ি জমাই। জাহাজ থেকে আমাকে মুক্ত করা হয় এবং প্রথমে চট্টগ্রামে, পরে ঢাকায় আসি। লরিতে চড়ে প্রখ্যাত পেন কর্পোরেশনের মালিক জনাব মীর জাহানের বিক্রয় কেন্দ্রে। এখানে আসার পর লোকে আমাকে মাঝে-মধ্যেই পরখ করে দেখে। আমার দাম জিজ্ঞেস করে। একদিনের সৌভাগ্যের কথা আমি আজো ভুলিনি। ভোলা যায় কী? সে কথা আমি কিঞ্চিৎ বলি ‘আপনাদের।

সেদিন বিকেলে ঘন মেঘপুঞ্জ যেন জমাট বেঁধেছে। নৈর্বকোণে ডেকে উঠলো গুড় -গুড় -গুড় । এক নব বিবাহিত দম্পতি এসেছেন মীর জাহানের বিক্রয় কেন্দ্রে। আমার গায়ের কালো রংয়ের অংশটি সেলুলয়েডে তৈরি। আমার মাথার দিকে শক্ত নিকেলের তৈরি ক্যাপ ঝলমল করে উঠলে গ্রাহকেরা আমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। নব দম্পতির স্বামী ভদ্রলোক কোন এক কলেজের অধ্যাপক। উনি মেঘে ঢাকা আকাশের নিচে স্ত্রীর হাত ধরে বললেন : তাড়াতাড়ি করো, পেন কর্পোরেশনে যাই, একটা ঝরণা কলম কিনতে হবে। বলা দরকার যে, সাম্প্রতিককালে সন্তা Filler কলমের দৌলতে আমাদের ঝরণা কলমের কদর একটু কমেছে বৈকি। অন্যদেশে ঝরণা কলমের কদর একেবারেই লোপ পেতে বসেছে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে তবু আমার নামটি শুনতে পেলাম। এখানে আদর আছে।

আমাকে তরুণ অধ্যাপক ভদ্রলোক কিনে নিলেন। তিনি তাঁর স্ত্রীর কাছে আমাকে পাচার ক’রে দিলেন। তাঁদের দু’জনের কাছে আমি বছর কয়েক আরামেই ছিলাম। অধ্যাপক সাহেব আমাকে বিশেষ যত্ন-আত্তি করতেন। জামার পকেটে করে কলেজে নিয়ে যেতেন, ক্লাসে নিয়ে যেতেন; রেজিস্ট্রি খাতায় ছাত্র-ছাত্রীদের রোল কল করার সময় যখন উপস্থিত অনুপস্থিত লেখার দরকার পড়তো তখন আমাকে জামার পকেট থেকে টুক্ করে তুলে নিতেন। স্বগর্বে আমাকে তিন আঙ্গুলে ধরে লিখে যেতেন খচ্‌থচ্ ক’রে। ছাত্ররা আমার দিকে তাকাতো মুগ্ধ দৃষ্টিতে। একবার কলেজে এক কবি এলেন। দেশ বরেণ্য কবি। হুমায়ূন রেজা চৌধুরী তাঁর নাম। অনেক বই লিখেছেন। অনেক উপন্যাস, ছোটগল্প লিখেছেন। অনেক নাটকের স্রষ্টা। “তিনিই প্রধান অতিথি হ’য়ে এলেন কলেজের আমন্ত্রণে। তিনি অনুষ্ঠানে এক আবেগময় ভাষণ দিলেন। কবি ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে অনেক উপদেশমূলক কথা বললেন। বললেন, দেশ স্বাধীন করা যেমন কঠিন, দেশ রক্ষা করা তদপেক্ষা কঠিন। আত্মত্যাগ করতে না পারলে কোন জাতি বড় হয় না। সব কথাই পুরানো পুরো বক্তব্যেই পূর্বসূরীদের কন্ঠস্বর শোনা গেল। না-শেষে তিনি নতুন কথা বললেন। বললেন, দেশে বিপ্লব দরকার। এ বিপ্লব সমাজ-সংস্কারের বিপ্লব। মনে হয় দেশবাসী নিজেদের মধ্যেই আগুন জ্বালাবে। হ্যাঁ, ভাঙা-গড়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের ইস্পাত কঠিন শপথ শোনা যাবে। অধ্যাপক মুগ্ধ হলেন। ছাত্ররা আনন্দে করতালি দিল। আনুষ্ঠানিকভাবে কলেজ অধ্যাপক কবিকে কিছু উপহার দিলেন। অধ্যাপক উত্তপ্ত হয়েছেন, তিনি নবচেতনায় উদ্দীপ্ত হয়েছেন। তিনি পকেট থেকে আমাকে মৃদুভাবে টেনে হাতের মুঠোয় নিলেন এবং কবিকে আমার সামান্য উপহার’ এ কথা বলে অধ্যাপক সাহেব আমাকে সবিনয়ে কবির প্রসারিত হাতের করপল্লবের মধ্যে অর্পণ করলেন। মুহূর্তের মধ্যে আমি উপলব্ধি করলাম যে, আমি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছি। আমার জীবন ধন্য হতে চলেছে।

সন্ধ্যা আসন্ন। অস্তোন্মুখ সূর্যের লোহিতাভা ভবন সম্মুখে তেঁতুলবৃক্ষের উপর দিয়ে ঠিকরে এসে পড়ছে। বাইরের হিমেল হাওয়া গায়ে মৃদু স্পর্শ বুলিয়ে দিচ্ছে। পাখিরা কুলায় ফিরছে। প্রকৃতির এই মনোরম মুহূর্তে আমি কবি রেজা চৌধুরীর হাতে বন্দী হলাম। আজ আমি গর্বিত যে, কবির হাতে বন্দী হয়েই আমি আমার প্রকৃত স্বরূপ আবিষ্কারের সুযোগ পেয়েছি; আমার সৌভাগ্য যে, কবি আমাকে ব্যবহার করবেন। কবি আমাকে দিয়ে লিখবেন। আমার বুক থেকে যে কালো কালি বেবোয় সেই কালো কালির হিরন্ময় স্পর্শে কাগজের উপর মহৎ সাহিত্য সৃষ্টি হবে। কবির খ্যাতি ও যশে দেশ ভরে উঠবে। কিন্তু সেজন্যে আপনারাই বলুন, আমারও ত গৌরববোধ করার কারণ আছে। তাই নয় কী? আমার জীবনের যে ক’টি বসন্ত কেটেছে তাতে দুঃখ বোধ করিনি। প্রাণের উপচে পড়া আনন্দ আমি পেয়েছি। জন্মলগ্ন আমেরিকায় ছিলাম, তখনো দুঃখ অনুভব করিনি। তেমনি বাংলাদেশে এসে অধ্যাপকের কাছে অথবা রেজা চৌধুরীর কাছে অনুরূপ সুখশান্তিই আমি পেয়েছি। আমার স্বভাবে স্বতঃস্ফূর্ততা আছে। কবি অনেক লিখেছেন; আমার জন্যে এন্তার সম্মান পেয়েছেন। অর্থ পেয়েছেন আকছার। সুতরাং মনে মনে আমার গর্ববোধ করার সংগত কারণ আছে। হ্যাঁ, আমি গর্বিত। আমি আনন্দিত, আমি পরিতৃপ্ত।

আমাকে ডান হাতের ক’টি আঙ্গুলের ফাঁকে ধারণ করে আপনারা কবি রেজা চৌধুরীর মতো অনন্য সাহিত্য সৃষ্টি করতে চান না কী? নিশ্চয় আশা করেছেন, আমাকে অন্তত একবার স্পর্শ করে দেখতে পারলে মন্দ হতো না। আমিও তাই বলি।

লেখা পাঠিয়েছে – রাসেল রানা, বাংলাদেশ

ট্যাগ – কলমের আত্মকথা, কলমের আত্মকথা রচনা, কলমের আত্মকথা প্রবন্ধ রচনা, একটি কলমের আত্মকথা PDF , জেনে নিন কলমের আত্মকথা রচনা 700 শব্দের মধ্যে, কলমের আত্মকথা Download।

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button