প্রবন্ধ রচনাজীবনী

কবি সুভাষ মুখােপাধ্যায় প্রবন্ধ রচনা

কবি সুভাষ মুখােপাধ্যায়ঃ এই পোষ্টে কবি সুভাষ মুখােপাধ্যায় (Subhash Mukhopadhyay) প্রবন্ধ রচনা ৬০০ শব্দের মধ্যে শেয়ার করা হল। এই প্রবন্ধ রচনা অনুসরণে অনুরূপ প্রবন্ধ লেখা যাবে – তােমার প্রিয় কবি, পদাতিক কবি সুভাষ মুখােপাধ্যায় , বাংলা সাহিত্যে সুভাষ মুখােপাধ্যায়, প্রিয় ব্যাক্তি, বাংলার প্রিয় কবি, কবি সুভাষ মুখােপাধ্যায় ইত্যাদি।

কবি সুভাষ মুখােপাধ্যায়

[ রচনা-সংকেতঃ ভূমিকা—সংক্ষিপ্ত জীবন-পরিচিতি—কাব্যকৃতি—গদ্যচর্চা—উপসংহার। ]

রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতার ধারায় যেসব কবির নাম অনিবার্যভাবে উঠে আসে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন সুভাষ মুখােপাধ্যায়। তিনি যে-সময়ে কবিতা রচনা শুরু করেন তখন বাংলা কবিতায় রবীন্দ্রনাথের প্রভাব ছাড়াও ছিল নজরুল ইসলামের প্রভাব। কিন্তু তিনি প্রথম থেকেই ছিলেন বিশিষ্ট। তিনি অনায়াসে সমস্ত প্রভাব থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখে নিজস্ব ভঙ্গিতে কথা বলতে পেরেছিলেন। বাংলা কাব্যজগতে আবির্ভাবের সময়েই তিনি জানিয়ে দিতে পেরেছিলেন, তিনি আর পাঁচজনের মতাে নন, তিনি অনন্য, তিনি হাজির হয়েছেন অনেক অনেক সম্ভাবনা নিয়ে। আবির্ভাব-লগ্নেই তিনি বুঝিয়ে দিতে পেরেছিলেন তাঁর কবিতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া অসম্ভব।

Subhash Mukhopadhyay

সংক্ষিপ্ত জীবন পরিচিতি

সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের জন্ম ১৯১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে। অবশ্য পৈত্রিক বাড়ি ছিল বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার লােকনাথপুরে। তাঁর পিতার নাম ক্ষিতীশচন্দ্র মুখােপাধ্যায় এবং মায়ের নাম জানকীবালা মুখােপাধ্যায়। ১১ বছর বয়সে সুভাষ মুখােপাধ্যায় কলকাতায় আসেন। তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে। ম্যাট্রিক পাস করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যােগ দেন। ১৯৪১ সালে স্কটিশচার্চ কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে অনার্সসহ বি. এ. পাস করেন। ১৯৪২ সালে এম. এ. পড়ার সময় ভারত ছাড়াে’ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং কমিউনিস্ট পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী হন। দলের নির্দেশে তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। দলীয় মুখপত্র ‘গণদর্পণ ও ‘স্বাধীনতা’য় সাংবাদিকতার কাজ করেছেন তিনি, কখনও যুক্ত হয়েছেন কোনাে প্রকাশন সংস্থার সঙ্গে, সম্পাদনা করেছেন ‘পরিচয় পত্রিকা। তবে জীবিকার জন্য স্থায়ী কোনাে পেশাকে কখনােই তিনি বেছে নেননি। আমৃত্যু লেখাই ছিল তাঁর জীবিকার অবলম্বন। সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের জীবনের অভিজ্ঞতাও ছিল বহু-বিচিত্র। রাজনৈতিক কারণে তিনি জেল খেটেছেন, গ্রাম-গঞ্জের অসংখ্য মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন। রাজনীতি আর সাহিত্যচর্চা দুটিই তাঁর কাছে ছিল পরস্পরের সহায়ক ও পরিপূরক। তিনি বরাবর মানুষের পাশে থাকতে চেয়েছেন। মানুষের জন্য তিনি অনেক ত্যাগস্বীকার করেছেন। ২০০৩ সালের ৮ জুলাই তাঁর জীবনাবসান ঘটে।

কাব্যকৃতি

সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের প্রথম কাব্যগ্রন্থ পদাতিক’ প্রকাশিত হয় ১৯৪০ সালে। তখন তিনি কলেজের ছাত্র। এই প্রথম কাব্যগ্রন্থেই তাঁর প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। অনেক বড় বড় কবির ক্ষেত্রেও দেখা গেছে তাঁদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ তেমন উল্লেখযােগ্য নয়। কিন্তু সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের প্রথম কাব্য পদাতিক অনেক পরিণত। তাঁর দ্বিতীয় কাব্য ‘চিরকুট’। সারাজীবনে তিনি বহু কবিতা লিখেছেন, অন্য ভাষার বহু কবিতার অনুবাদ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যাও অনেক। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য কয়েকটি হল ‘অগ্নিকোণ’, ফুল ফুটুক’, ‘যতদূরেই যাই’, কাল মধুমাস’, এই ভাই’, ‘ছেলে গেছে বনে’, ‘একটু পা চালিয়ে ভাই’ প্রভৃতি। বাংলা কাব্যের ভাষায় ও ছন্দে সুভাষ মুখােপাধ্যায় যে অভিনবত্ব নিয়ে এসেছেন, এককথায় তা অসাধারণ। মৌখিক বাচনভঙ্গিকে ছন্দের নিয়মের মধ্যে রেখে যেভাবে তিনি পরিবেশন করেছেন তা ভাবলে সত্যিই বিস্মিত হতে হয়। আন্দোলন, মিটিং, মিছিল প্রভৃতি প্রসাও তাঁর সৃষ্টিপ্রতিভার গুণে রসােস্তীর্ণ কবিতা হয়ে উঠেছে। কখনও তাঁর কবিতায় ধ্বনিত হয় প্রতিবাদ, কখনও ঝলসে ওঠে বিদ্রুপ, কখনাে ফুটে ওঠে চলমান জীবনের টুকরাে টুকরাে ছবি। অতি সাধারণ ঘরোয়া কথাও তাঁর হাতে কবিতা হয়ে ওঠে। কবিতার আঙ্গিক সম্পর্কে তিনি ছিলেন তাঁর কবিতায় এক ধরনের নাগরিক সপ্রতিভতা লক্ষ করা যায়।

গদ্যচর্চা

সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের আসল পরিচয়, তিনি কবি। কিন্তু শুধু কবিতা নয়, গদ্যের জগতেও তিনি স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন। তিনি একজন সার্থক গদ্যশিল্পীও। হাংরাস’, ইয়াসিনের কলকাতা’, অন্তরীপ, ‘হ্যানসেনের অসুখ, ‘ঢােল গােবিন্দের আত্মদর্শন’ প্রভৃতি উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। উপন্যাস ছাড়াও তিনি ভ্রমণকাহিনি বা প্রতিবেদন জাতীয় গদ্যও অনেক লিখেছেন। কবিতার মতাে তাঁর গদ্যের ভাষাও স্বচ্ছ, সরল, তির্যক ও তীক্ষ্ণ।

উপসংহার

সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ সুভাষ মুখােপাধ্যায় অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। যেমন, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, আনন্দ পুরস্কার, কুমারণ পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার, অ্যাফ্রো-এশীয় সাহিত্য পুরস্কার, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার প্রভৃতি। এইসব পুরস্কার নিশ্চয়ই তাঁর প্রতিভার প্রতি সম্মান প্রদর্শন, তবে আমাদের মনে হয় অগণিত পাঠক-পাঠিকার ভালােবাসাই তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় পুরস্কার। সাধারণ পুরস্কারের স্মৃতি স্নান হয়ে যায় কিন্তু পাঠক-পাঠিকার হৃদয় প্রিয় কবিকে নিয়ত নতুনভাবে অনুভব করে চলে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস সুভাষ মুখােপাধ্যায় অগণিত পাঠক-পাঠিকার হুদয়রাজ্য অধিকার করে থাকবেন আরও অনেক অনেকদিন। এর চেয়ে বড় পুরস্কারের কথা কোনাে কবি কখনও প্রত্যাশা করতে পারেন কি?

এটিও পড়ুন – ছাত্রজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচার 700 শব্দের মধ্যে

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button